ওড টু মাই ফ্যামিলি- ২
ঢাকা থেকে আগে গ্রামের বাড়ি যাওয়া একটা ঘটনা ছিলো।
সাত দিন আগে থেকে মা শুরু করতো, "আর ৬ দিন পর রাজশাহী যাবে তো তুমি, যাও এখন হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বস", কিংবা (অতি জঘন্য কোন খাবার দেখায়ে) "৫ দিন পর রাজশাহী, দুধটা শেষ কর"--- আমরা দাঁতে দাঁত চেপে কোনরকমে অপ্রিয় কাজগুলো করে ফেলতাম আর কতদিনে সাত দিন ঘুরে ৫, ৪, ৩, ২, ১ হবে তার অপেক্ষায় দিনানিপাত করতাম। সময় তখন বড়ই গাদ্দার ছিলো, এমন আস্তে কাটতো! আর এদিকে আমাদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের মত বাড়তেই থাকতো।
প্রথমবার বাড়িতে যাবার স্মৃতিটা কেমন ঝাপসা। যতদূর মনে হয় ট্রেনে করে গিয়েছিলাম।রিকশা করে কমলাপুর, ওখান থেকে ট্রেনে। কোন এক পয়েন্টে ট্রেন থেকে নেমে হেঁটে ফেরীতে উঠেছিলাম মনেহয়। পার হয়ে আরেক ট্রেন, শান্তাহার অথবা বীরকুতসা জংশন থেকে নৌকায় যশ'এর বিল পার হয়ে পাশের পাড়ার ঘাটে, ওখানে থেকে কোলে কোলে বাড়িতে। দাদী নানারকম পিঠা নিয়ে ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষায়। দাদা লোকজন নিয়ে হ্যাজাক বাতি জ্বলাতে ব্যস্ত। সেইরকম উৎসবের মৌ মৌ। আব্বার রাজনৈতিক সম্পৃকতার কারনে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে ৫০-৬০ লোকজন নিয়ে মিটিংয়ে বসতেন। মা ব্যস্ত হতেন রান্নাবান্না তদারকিতে। আর আমরাতো কোনরকমে বাড়িতে পা দিয়েই পাড়া বেড়ানো শুরু করতাম। এই বাড়ি ওই বাড়ী করে অন্য কারো বাড়িতে ক্লান্ত হয়ে ঘুম। কারো কোলে করে ঘুমন্ত আমাদের ফেরা হত বাড়িতে। ঢাকা'র লোক হিসাবে সবখানে আলাদা খাতির। দাদা বিকালবেলায় সাইকেল নিয়ে চলে যেতেন হাটখোলার বাজারে, ফিরে আসার সময় পকেটে থাকতো প্লাস্টিকের ব্যাগে একটা চিনিজাম ধরনের মিষ্টি। এটা ছিলো আমার মা'র জন্য শ্বশুরের বিশেষ বাজার। খেলায় খেলায় দিন কেটে যেত বটে, তবে আমার বন্ধু বানেছা'র কাছে বউচি'তে এমন হার হারতাম যে ঢাকাবাসী হবার গৌরব নিয়মিত লিচুবাগানের ধুলায় মিশে যেত। সময়ের গাদ্দারী এবার ভিন্নরুপ নিত, যেন হাওয়ার উড়ে উড়ে দিন চলে যেত। ১০-১৫ দিন পরে ঢাকা ফেরার সময় ৩ ভাইবোনই কৃশকায় ও কৃষ্ণকায়। আর গ্রাম থেকে ফেরার পর প্রতিবারই আজিমপুরের ফ্ল্যাটটা মনে হত এই মাত্র রঙ করা হয়েছে। দেয়ালগুলো সেইরকম ঝকঝকে লাগতো।
৯৬-৯৭'র দিকে আমরা যখন গ্রামের বাড়িতে গেলাম, আমার ছোট ফুপু তখন সেখানে ছিলেন। দীর্ঘদিন সংসার করার পরে স্বামী তাকে তালাক দিয়েছেন। এবং এই ট্রমা তার অসুস্থতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার ফুপাকে আমি দোষ দিতে পারিনা কারন মুকুল ফুপু ক্রনিক স্ক্রিতজোফ্রেনিয়ার রুগী। তার স্প্লিট পার্সোনালিটি -- মাঝে মাঝে দুই স্বরে কথা বলেন। রাতের বেলা শুনি উনি কাকে যেন ভয়ানক গালাগালি করেন, আবার তার কাছেই কাকুতি মিনতি। সে এক ভয়ানক ব্যাপার। প্রায় এক বছর মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরে এই খরচ আর চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে আব্বা তাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। সেটা নির্বাচনের বছর, তাই বাড়িতে ব্যস্ততা আরো অনেক বেশী ছিলো। এরমধ্যে মুকুল ফুপু'র থাকাটা কেন জানি নাটকীয়তা বাড়িয়েই দিয়েছিলো। উনাকে ভয়ে ভয়ে এড়ায়ে চলতাম আমরা। কখন কি করে বসেন ঠিক নাই। বেশি পাগলামি করলে ঘুমের অসুধ দিয়ে ঘুম পাড়ানো হত তাকে। একদিন আমি কলতলায় যাচ্ছি, হটাত হাত ধরে আটকালেন। আমি তো মোটামুটি জমে বরফ, মারবে টারবে নাকি! "শর্মি, তুমি কি মাথায় তেল দাওনা?" আমি বললাম, মাঝে মাঝে দিই। মনেমনে মা'কে খুজছি, ত্রানকর্তা প্রয়োজন। ফুপু বললেন এক্ষনি আসো, আমি তোমার মাথায় তেল দিয়ে দিব। এরপরের দৃশ্য হলো, উনি এক কৌটা তেল নিয়ে আমার মাথায় কষে দিচ্ছেন। আর আমি নিরুপায় হয়ে কাঁদোকাঁদো চেহারায় বসে আছি। পাড়ার বন্ধুরা এদিন ওদিক থেকে উঁকিঝুকি দিচ্ছে। কিন্তু পাগলের সাথে কে ঝামেলায় যেতে চায় বলেন? এক পর্যায়ে যখন আমার মাথার তেল ও চোখের পানি একইসাথে বহমান, হটাত উনার কি মনে হল, আমাকে এক ধাক্কা দিয়ে বললেন যা, যা এখান থেকে। আমি একদৌড়ে চৌকাঠ পার হবার সময় শুনলাম, উনি গালাগালি দিয়ে আমার ১৪ গুস্টি উদ্ধার করে দিচ্ছেন।
এরমধ্যে আমার বাড়ীতে সস্ত্রীক বেড়াতে এলেন আব্বার খালতো ভাই, ফিরোজ কাকা। লম্বা, দোহারা গঠনের মানুষটি মধ্যবয়সেও ভয়ানক সুপুরুষ। দেখলাম আমার মা উনাদের যথেষ্ট খাতির যত্ন করেলেও বাবা গম্ভীর হয়ে দু-একটা কথা বলে চলে গেলেন। বিকালে যখন আমি খেলতে যাচ্ছি মা ডেকে পরিচয় করালেন আমাকে উনাদের সাথে। মুকুল ফুপু তখন ঘুম থেকে উঠেছেন। উনাকে দেখে কাকা-কাকি মনে হল একটু অপ্রস্তুত হলেন বা ভয় পেলেন। পাগল কাছ থেকে দেখলে যা হয় আরকি। মা ডাকলেন, "মুকুল এটা কে চিনতে পারিস?" ফুপু কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললেন, "না চিনতে পারিনা, স্লামালিকুম, ভাবী শিং মাছগুলো আমি কাটি?" "হ্যা কাট, হাত কাটিস না আবার।" আমি খেলতে চলে গেলাম, শুনলাম কাকা-কাকী ২-৩ দিন থাকবেন বলে এসেছেন। আমাদের বাড়িতে ৪ টা ঘর। একটাতে আমরা থাকি, পাশের ঘরে দাদা-দাদী, উঠানের ঐপারের এক ঘরে মুকুল ফুপু থাকেন, তার পাশের ঘরে ফিরোজ কাকা আর কাকীকে থাকতে দেয়া হয়েছিলো। উনারা অবশ্য ১ দিন থেকেই ফিরে গিয়েছিলেন।
একদিন আধোঘুমের মধ্যে শুনলাম দাদা মাকে বলছেন "ঐ ফিরোজের জন্যই আমার মেয়ের এই অবস্থা, বৌমা। ঐ হারামজাদার জন্য কেঁদে কেঁদে মুকুল আমার পাগল হছে।" মা বললেন "ওর সাথে বিয়ে তো আপনারাই দেননাই, আব্বা। এখন দোষ দিয়ে কি লাভ। পুরানো কথা না তোলাই ভালো। মুকুলতো ওকে চিনতেই পারেনি। থাক আব্বা, আপনি কষ্ট পেয়েন না।" দাদা বুক ভাঙ্গা এক হাহাকার করে বলে উঠলেন "আমার ছোট মেয়েটা, বৌমা, আমার কোলের মেয়েটা"
অনেক পরে শুনেছি, ফিরোজ কাকার সাথে মুকুল ফুপুর প্রেমটা আমার দাদাবাড়ির কেউ মেনে নিতে পারেনি। ফিরোজ কাকা দেখতে সুদর্শন হলেও মাথায় ছিলো গানের পোকা। সারাদিন গান গেয়ে বেড়তেন। ৭১'এ যুদ্ধ থেকে ফিরে মুকুল ফুপুকে বিয়ে করতে চাইলে পরিবারের লোকজন একরকম তড়িঘড়ি করে ঢাকায় থাকা চাকরিজীবি আমার ফুপার সাথে তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেন। ফিরোজ কাকা জানার আগেই ফুপুর বিয়ে হয়ে যায়। পাড়া সম্বন্ধীয় এক চাচী গল্প করেন, যখন মুকুলকে জিগেশ করলাম, তোর বর কেমনরে দেখতে। সে নাকি উত্তর দিয়েছিলো "পাতিলের তলা দেখিসেন? ওম লাকান।" আমার ফুপা ছিলেন খাটো ও কৃষ্ণকায়, খুবই সাধারন একজন চাকরিজীবি মানুষ। ২০ বছর ধরে প্রায় অপত্য স্নেহে ফুপুর দেখাশোনা করেছেন, চারটি ছেলে তাদের। একেবারে যখন বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন আমার ফুপু, ভালোমানুষটা তখন হাল ছেড়ে দেন। আমার বাবা উনাকে যথেচ্ছ দোষারোপ করলেও আমি কেন জানি কিছুতেই উনাকে দোষ দিতে পারিনা। প্রেমে ও জীবনে পরাজিত আমার ফুপু ধীরে ধীরে সম্পূর্নভাবে মানসিক ভারসাম্য হারান।
আমিই তো শুনেছিলাম সেদিন রাতে, মুকুল ফুপু খুব আদর করে আস্তে আস্তে বলছেন, "ফিরোজ, ফিরোজ, তুমি আমার সাথে এরকম করতে পারোনা, আমি কি করেছি বল? বল আমাকে। তুমি ভালোবাসনা আমাকে?" আবার পরমূহুর্তেই একদমই ভিন্ন এক গলায় চিৎকার করে উঠেন "শুয়োরের বাচ্চা! কুত্তার বাচ্চা! খানকির পুত! তোকে আমি মেরেই ফেলবো এরকম করবি আর আমার সাথে? বল শুয়োরের বাচ্চা! বল!" আমি আস্তে আস্তে মিলিয়ে নেই আমার ধাঁধাঁর উত্তর। কেন সেদিন অপ্রস্তুত হয়েছিলেন আমার বাবা। কেন মুকুল ফুপু রাত্রে দুই গলায় কথা বলেন। আর কেনই বা ফিরোজ কাকা আর তাঁর স্ত্রী একরাত্রের পর আর থাকেননি আমাদের বাড়ীতে।
সময়ের কোনো দোষ দেখি না আমি। স্মৃতির একটা ক্ষমতাশালি প্রভাব বলয় তৈরী হয় কারণ স্মৃতির চাইতে ভালো কিছু তো আর ঘটেনা বর্তমান কিম্বা ভবিষ্যতে...
একমত ভাস্কর ভাই। তবে সময়ের দোষের সাথে সাথে গুনও আছে। স্মৃতির ধাঁধাঁগুলোর উত্তর তো সময়ই দেয়।
মন্টাই খারারপ হয়ে গেলা লেখাটা পড়ে। মুকুল ফুপুর জন্য শুভকামনা। আর কারো জীবনে এমন না হোক।
আপনার লেখা আমার খুব ভালো লাগে।নিয়মিত লিখেন না কেন?
ধন্যবাদ, জয়িতা। মন খারাপ হয়ছে শুনে এখন আমার খারাপ লাগছে। আসলে মস্করা টাইপ লেখা লিখতে শুরু করেছিলাম, কিভাবে যেন এরকম হয়ে গেল! গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের চাপে নিয়মিত লেখা হয়না। এছাড়া স্মৃতিচারনের কষ্টও কম না।
খারাপ কেন লাগছে?আপনার লেখা, স্মৃতিচারণ মন ছুঁয়েছে বলেই তো মন খারাপ হলো। সময় করে লিখবেন আশা করি।
অবশ্যই লিখার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ।
আপনার লেখা আমার ভালো লাগে, প্রান্জল।
ছোট বেলা আমরাও এভাবে নানা বাড়ী বেড়াতে যেতাম। মনে করিয়ে দিলেন।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারটা কিন্তু আসলেই সেরকম ছিল!
ইশ, সবার মন খারাপ করে দিলাম।
এরপরে আরেকটা কমেডি ব্লকবাস্টার দিতে হপে দেখছি!
হ। সঠিক পয়েন্টে হাত দেয়ার মতো পোষ্ট দিয়ে জাতির উপকার করেন।
তা যা বলেচেন, দিদি!
মন খারাপ, খারাপ কি। সবসময় আনন্দ নিয়েই থাকতে হবে এটিতো সম্ভব নয়। আপনার স্মৃতিচারণ চলুক......মন খারাপ, মন ভালো সব ধরণের লেখা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন
রাজশাহীর কোতি গো আপনার বাড়ি??আমার বাড়িও ঐদিকতো তাই শুধালাম।
আপনার আশেপাশেই হবে। আপনের বাড়ি কোথায়?
শালবাগান(লাশবাগান না কিন্তু।একবার পেপারে রিপোর্ট দেখেছিলাম আমাদের শালবাগান নিয়ে কিন্তু ছাপার ভুলের কারনে সেটা লাশবাগান হয়েগেছিলো )
নানাবাড়ি এখন ষষ্ঠীতলা, আগে ছিলো রানীবাজারে।
সাবলীল লেখা।
ধন্যবাদ।
এই তো শর্মির পোস্ট পেয়ে গেছি! সুন্দর করে সাবলীলভাবে গল্প বলবার অসাধারন ক্ষমতা আছে আপনার। এমন ভিন্ন স্বাদের গল্প পড়তে ভালোই লাগে ।
ধন্যবাদ, হুদা ভাই!
তারকাখচিত মেডেল দেখলে কেমন জানি মিলিটারি মিলিটারি লাগে.. মনে ভয় হয়।
পড়া শুরুর আগে ভাবনা ছিল - চুপচাপ পড়ে চলে যাব। চোখে পানি এসে যাওয়াতে থেমে গেলাম।
প্রেমের স্মৃতি একটি দগদগে ক্ষত হয়ে তাড়া করে তাঁকে, মুছে যায় সবকিছু, শুধু বেঁচে থাকে কষ্টের স্মৃতি। সময় আসলেও বড় গাদ্দার। বুকভাঙ্গা এই স্মৃতিগুলোকে কিছুতেই ভুলতে দেয়না। স্মৃতির ধাঁধাঁগুলোর উত্তর তো সময়ই দেয়।
না পাবার কষ্টের স্মৃতি তো সহ্য হয়ে যায় সময়ের সাথে সাথে, হঠাৎ মনে পড়ে গিয়ে না পাবার হা হুতাশ থাকলেও প্রচন্ড সুখ স্মৃতি নিয়ে ঠিকই কেটে যায় সময়, কিন্তু যদি অসহ্য সুখস্মৃতি গুলো যদি পরিনত হয় দুঃস্বপ্নে, তবে তা আদৌ মুছে কি যায় যতই সময় কেটে যাক না কেন... একজনের পরম অনুভূতিটাকে কি করে পারে অন্যকেউ শুধুই ফান হিসেবে নিতে, মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে করে এমনটা করে প্রতিষ্ঠা তো তারা পায়, কিন্তু প্রশান্তি কি খুজেঁ পায়... আবার লাগে হয়তো পায়...
গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাবার মজার অভিজ্ঞতাগুলো পড়তে শুরু করে একবারও ভাবিনি ঘটনা এমন কিছু হবে! খুবই কষ্ট লাগছে ফুপু'র জন্যে...
দারুন লেখেন আপনি...
ধন্যবাদ।
এটাকে অনায়াসে ছোটগল্প চালানো যায়। সত্যি দারুণ লিখেন আপনি। আরও নিয়মিত হন।
আমি একজনকে জানি, তিনি স্বামী ও সংসারের প্রতি কখনো অবহেলা করেন না, সংসারকে আগলে রাখেন। কিন্তু কখনো স্বামীকে ভালবাসতে পারেননি।
আমি এরকম অনেককেই চিনি।
লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
এসব ভালবাসার কাহিনী তাহলে সত্যি? নেচারাল সিলেক্শান না? আজীব ব্যাপার!
ট্রুথ ইস স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন, মাই ফ্রেন্ড!
আর আজীব তো বটেই।
স্কাইপে নাই?
আসতেসি, দাঁড়া।
হ, এই লেখাটা ভালো হইসে।
সিরিজ থামালে যে মাইর দেয়ার ইরাদা করসিলো সবাই, প্রানভয়ে ছিলাম মোটামুটি। মাইরের হাত থেকে আপাততঃ বাঁচা গেলো।
লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
এতো প্রাঞ্জল লেখা। তোমার দাদা বাড়ি বেড়ানোর স্মৃতির সাথে আমারো অনেক মিল আছে।
যা মনে আসে তাই লিখো। আনন্দ - দুঃখ সবই জীবনের অংশ।
ভালো থেকো।
আপনার দাদাবাড়ি কোথায়? নৌকা করে যেতেন?
আমরা ২-১ বার গরুগাড়িতে করেও গেসি। ব্যাপক অভিজ্ঞতা!
আমার দাদাবাড়ি ছোটবেলায় যেতাম লঞ্চে, এখন যাই গাড়িতে। কুমিল্লার বাটপাড় আমরা। ব্যাপক সেই অভিজ্ঞতা। এগুলো লিখে প্রকাশ করা যায় না।
সারাক্ষণ নদীতে পড়ে থাকতাম। পুকুরও ছিল, তাতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতাম। পুঁটি, ট্যাংরা এসব।
একটা রাখাল টাইপ ছেলে ছিল, যাকে কুমিল্লার অশীল (যা সুশীল নয়) ভাষায় বলা হতো মুনি। ও সারাবছর থাকতো। ওর একটা নৌকা ছিল, ছই ছাড়া। সেটা দিয়ে ও গরু ছাগলের জন্যে ঘাস আনতো চক (মাঠ) থেকে। আমি তক্কে তক্কে থাকতাম, ও নৌকা থেকে দুপুরে নেমে বাড়িতে ঢোকা মাত্র আমি বৈঠা নিয়ে উলটা পুল্টা চালিয়ে নদীর একদিকে যেতাম। নৌকা তেমন অবশ্য নড়তো না। আমি শহুইরা কাউয়া, আমার হাতে দেই জোর ছিল না, নৌকা চালানোর মতো।
রাতে চান্নীপর খেলতাম। চাঁদের আলোর সাথে। এগুলো কি এজীবনেই ঘটেছে কি না বলতে পারবো না। স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হয়। লিখতে গেলে উপন্যাস হয়ে যাবেরে তাই ক্ষ্যামা দিলাম
ক্ষ্যামা চাইনা, আপু। লিখে ফেলেন।
চান্নিপর নামটা চমৎকার। আগে শুনিনি কখনো। কিভাবে খেলে এটা?
হুমায়ূন আহমদে অবশ্য এটাকে ভদ্রলোকি নাম দিয়েছিল "চান্নিপসর"। চান্নিপর মানে হলো জ্যোস্না। চাঁদের আলোয় থাকলে তোমাকে কেউ মারতে মানে ছুঁতে পারবে না আর যেই না তুমি অন্ধকারে গেলে তাহলে যদি তোমাকে কেউ ছুঁয়ে দেয় তাহলে তুমি চোর।
ব্যাসিকালি ছোঁয়াছুয়ি খেলা কিন্তু চাঁদের আলো এখানে মাষ্ট
পরের পর্ব ছাড়ো, কুইক
তুই আসলে রাজশাহী যাব আবার। গ্রামে যাইতে ইচ্ছা করতেছে অনেকদিন ধইরা। কিন্তু তোদের বাড়ি তো গ্রাম গ্রাম লাগেনা আমার ..নদীওয়ালা গ্রামের বাড়ি আছে এমন কাউরে চিনিস? নদীওয়ালা গ্রামে যাইতে চাই।
আপনে কি মাইনষের সাথে কথা বার্তা বন্ধ কইরা বোবা হইছেন?
আরে বরিশাইল্যা, নদী নদী করে মরা শুরু করলি।
আমারদের গ্রামে কি সুন্দর সুন্দর পুকুর আছে, বিল আছে, আমের বাগান আছে -- কিছুই ভালো লাগলোনা তোর? তোদের এত কষ্ট করে নিয়ে পুরা পয়সা লস হইলো। টাকা ফেরত দিবি। ১০০% মূল্য ফেরত। আর ৩ বছররের সুদ হিসাব করে দিস। নদীওয়ালা গ্রাম খুজলে পাওয়া যাবে নিশ্চয়। অবশ্যই যাবো।
নদী নদী করুমনা তো কি? নদীর তুই কি বুঝবি খরার দেশের মানুষ? এহ, পুকুরবিলের গল্প শুনাইতেছে, গরমের কথা বেমালুম চাইপা গিয়া। কি গরমের মধ্যে নিয়া ফেলছিলি মনে আছে? আর তোর আবার পয়সা ক্যামনে লস হইল? সব তো যার যার খরচ সেই সেই দিছি, আইয়া নে এইবার, তুই সব খরচ দিবি এই ট্রিপের।
আমার গ্রামে তো আমি ব্যান, নাইলে এইবার তোরে নিয়া যাইতাম আমার নানুবাড়ি। বাড়ির পাশে নদী
শুঞ্ছিলামন জয়ীতারো এক্টা নদী আছে
আমার নানুর বাড়ীর পাশে পুরুষ নদী। নদ। ব্রক্ষ্মপুত্র।আমাদের ছোটবেলার নদী।
আম খাইবেন আর গরম খাইবেন না তা তো হয় না।।
রাজশাহীর আমতো বরিশালেও বিক্রী হয় শুনছি...
হ। সেই আম আর রাজশাহীর আমের ম্যালা তফাত।না খাইলে বুঝবেন না।
তারমানে রাজশাহীর ব্যবসায়িরা দুই নাম্বার আম বিক্রী করে সারাদেশে!? এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাইতেছি...
আন্দোলন গড়ে তুলার আগে কার্বাইড মুক্ত আম রাজশাহী অথবা চাঁপাই থেকে খেয়ে আসুন।তাইলে বুঝবেন রাজশাহী-চাঁপাইয়ের আম আর সারা বাংলাদেশের কার্বাইড যুক্ত আমের কত তফাত।
যেখানে এখন গাছেই কার্বাইড ছিটানো হয় সেইখানে রাজশাহী আর ঢাকার মধ্যে পার্থক্য থাকে?
কার্বাইড মুক্ত আমও আজকাল পাল্লা লাগাইয়া বেচে সব জায়গায়...
পার্থক্য আছে কিনা সেটা বুঝার জন্য রাজশাহী-চাপাঁই যেতে হবে আম খেতে হবে। আমি থাকলে দাওয়াত দিতাম।
অফটপিকঃসেদিন সুপারশপে আম দেখলাম এক্টার ওজন খুব বেশি হলে ২০০ গ্রাম হবে দাম বাংলাদেশী টাকায় দুইহাজার টাকা।তাই আম নিয়ে এত প্যাচাল পাড়লাম।
তয় এইটা সত্য আমবাগানে গাছের ছায়ায় বইসা আম খাওনের অনুভূতিটা আসলে তুলনাহীন। ঐটা তো আর কোথাও পাওন যাইবো না...
ঠিক বলসেন!
@ রাসেল আশরাফঃ দুইহাজার টাকাতেও যদি রাজশাহীর মত আম পাইতাম, নভেলটি হিসাবে কিনে খাওয়া যাইতো। গত সামারে আমার এক বন্ধু খাতির করে আমার জন্য ২টা মেক্সিকান আম নিয়ে আসছিলো, সেই বস্তু যে কি! রাজশাহীর গরু-ছাগলের মুখেও রুচবেনা।
এই আমেরও একি দশা।তাই নাড়াচাড়া করে দুই-চারটা জোড়ে করে টিপ দিয়ে রেখে দিসি।
@মৌসুমঃ তুহির শ্বশুরবাড়ীর লোকের ভয়ে না থেকে, রাজশাহীতে যদি আরামে ঘুরাঘুরি করা যাইতো তাইলে পদ্মাতে নিয়ে যাইতাম। এখন আমার দোষ দিতেসিশ, ভালো। ৩ বেলা যেরম আম খাওয়াইলাম তোদের, পুরাটাই লস!
সেবছর আমও প্রচুর হইসিলো, নারে? মনে আছে তোর?
হ, ছবিও তুলছিলাম না আমের? আম ক্যামনে ভুলুম, যেইখানেই যাই আম খাইতে দ্যায়, তারপর আবার আসার সময় ঝাকাভর্তি আম কিনা নিয়া আইলাম। ছাদে দাড়াইয়া কালবৈশাখী দেখছিলাম মনে আছে? আহারে, মাত্র একদিনের ব্যাপার, কিন্তু কত কত স্মৃতি! আমার ইস্পাত কঠিন হৃদয় আবার বিপদে পড়তেছে!
রাজশাহী শহরের প্রিয় বাড়িটা এখন শুধু স্মৃতিতেই আছে।
তবে ছবি গুলো খুঁজে পেলাম আজ বিকালে। তোর হৃদয়রে বিপদে ফালানর জন্যই তো এত কথাবার্তা। এবার রাজশাহী নিয়ে একটা লেখা লিখে ফেল, দোস্ত।
মাইনষে ক্যামনে যে এতো ভাল লিখে!
ব্রাভো, শর্মি!
ধন্যবাদ।
অসাধারণ একটা লেখা পড়লাম।
মানুষ আসলে সম্পর্ক নিয়ে বাঁচে না, বাঁচে সম্পর্কের স্মৃতি নিয়ে...
সম্পর্ক মানেই সম্পর্কের স্মৃতি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
পোস্ট করছেন ৪টা, লিস্টে আছে ৩টা। তারমানে হাইডিং সামথিং
জলদি পুস্ট করেন।
লিখতেসি ওটা। ড্রাফট রাখসি।
উত্তম। আমারও আপনার মতোন অভ্যাস আছে। তয় এই কাজ করতে গিয়া মাঝে মাঝে পুস্ট হারায় যায়। তাই প্রিভিউ দেখুন বা প্রকাশ করুন বাটনে টিপি দেওয়ার আগে লেখার কপি রাখতে ভুইলেন্না কিন্তু।
আর আপনে আছেন কিরাম?
একটা লেখা হারাইসি অলরেডি।
মন মেজাজ ভালো না।
খাইছে!!! মুকুল ফুফুর মত ক্যারেক্টার আামার আশেপাশে থাকলে তো আমি ভয়েই আধমরা হয়া যাইতাম ...
বর্ণনা'র ধরণে মুগ্ধ
আমিও আধমরাই হয়ে থাকতাম। জান হাতে নিয়ে চলাফেরা করতে হইতো। তবে এখন দূর থেকে ঘটনাগুলো দেখি বলে অন্যরকমভাবে বুঝতে পারি হয়তো।
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। বর্ণনার ধরন প্রায় একই, তাই অন্যলেখাগুলোও পড়ে নিয়েন।
মুকুল ফুফুর কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেল
কি আর বলব? মনটা তো আছেই খারাপ হবার জন্য।
ভালো থাকবেন।
প্রেম না হলে জীবনের স্বাদ মেক্সিকান আমের মতোই, আবার সব হারানো প্রেম হলে "মুকুল ফুপু"
পড়ছি, ভালো লাগছে
হুম।
আপু, লেখাটা টানছে প্রবল ভাবে। ৩য় পর্ব পড়তে ছুটছি..
দৌড়া, জলদি! জলদি!
মন্তব্য করুন