ধর্মের নামে ভন্ডামি এবং মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধ করুন !!!
’৭১ এর পরাজিত শক্তি জামায়াত শিবির এবং তাদের দোসর বিএনপি-বিশেষ করে বিএনপি জামাত ঘরোয়ানা গণমাধ্যম এই আন্দোলনের গায়ে নাস্তিকতার তকমা লাগিয়ে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য মিথ্যা অপবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে যে ’৭১ এর এই ঘাতকরা আন্দোলনকারীদের অন্যতম সহযোদ্ধা আহমেদ রাজীব হায়দারকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর মৃতব্যক্তিকে নিয়ে অপরাজনীতি শুরু করেছে। বিএনপি-জামাতের অভিযোগ প্রয়াত রাজীব হায়দার নাকি ইসলাম ধর্ম, ধর্মীয় অনুশাসন, এবাদত, নামাজ রোজা, হজ্জ যাকাত ইত্যাদি বিষয় এবং মহানবী(সা.) সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ লেখালেখি করেছে। অপরদিকে বাংলাদেশের ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞদের অভিমত শাহবাগের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ’৭১ এর পরাজিত শক্তি প্রয়াত রাজীবের নামে ভূয়া একাউন্ট খুলে তার নামে ইসলাম বিরোধী রচনাবলী পোষ্ট করেছে। তর্কের খাতিয়ে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, প্রয়াত রাজীব হায়দার একজন ইসলাম বিরোধী ব্লগার। তারপরও কোন সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে একজন মৃতব্যক্তিকে মুরদাত ঘোষণা করা ইসলাম অনুমোদন করে কিনা- কোরআন-হাদিসের (উইথ অথেনটিক রেফারেন্স) আলোকে বিষয়টি পরিস্কার করার জন্য বিএনপি জামাতের মহান বুদ্ধিজীবিদের প্রতি অনুরোধ করছি।
আমি কোন ইসলামী চিন্তাবিদ বা আলেম নই। তারপরও একজন প্রাক্টিশিং মুসলমান হিসাবে যা বুঝি তাহলো ইসলামের দৃষ্টিতে আমাদের জন্য প্রধানত: দুই প্রকার হক আদায় করা জরুরী। এক. বিশ্ব জগতের মালিক মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি হক আদায় করা। দুই. সৃষ্টিকুলের প্রতি হক আদায় করা। খুবই সংক্ষেপে বিষয় দুটি সম্পর্কে কিছু কথা বলব। একজন বান্দার প্রতি স্রষ্টার হক হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে একমাত্র মাবুদ (মালিক) বলে স্বীকার এবং আমরা কেবলমাত্র আল্লাহতায়ালার এবাদত করব এবং তার সাথে কাউকে শরিক করব না এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে আল্লাহতায়ালা কর্তৃক প্রেরিত রাসুল (বার্তাবাহক) বলে স্বীকার করব। কোনব্যক্তি যদি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে স্রষ্টা হিসাবে না মানে অর্থাৎ কেউ যদি “লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ(সা.)” এই কালেমা অস্বীকার করে তবে তাকে কাফের বলা যায়। একজন ব্যক্তি যদি কাফের বা অবিশ্বাসী নাস্তিক অবস্থায় মারা যায় তার শাস্তি কি হবে তা কোরআন মজিদে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। মহান দয়ালু আল্লাহু রাব্বুল আলামীন একজন বান্দাকে ইসলামের ছায়াতলে আসার জন্য মৃত্যুর পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত সুযোগ দিয়েছেন। অর্থাৎ মৃত্যুর আগমুহুর্তেও যদি কেউ স্রষ্টার প্রতি ইমান আনে তবে মহান রাব্বুল আলামীন তাকে মাফ করে দিতে পারে। এব্যাপারে কোরআন হাদিসের দলিলও রয়েছে। কিন্তু কোন মুসলমান যদি কোন কাফেরকে বিনা অপরাধে হত্যা করে তবে ঐ কাফেরের ইমান আনার সুযোগ থেকে তাকে বঞ্চিত করার জন্য ঘাতক মুসলমান দায়ী থাকবে। এক কথায় কেউ যদি স্রষ্টার হক আদায় না করে সেবিষয়ে ফায়সালা করার মালিক একমাত্র সৃষ্টিকর্তার। ইচ্ছা করলে দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে মাফ করে দিতেও পারে আবার তাকে শাস্তি হিসাবে দোজখে নিক্ষেপ করতেও পারে। ইমানদার মসুলমান হিসাবে আমাদের একমাত্র দায়িত্ব হলো- মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া। আবারও তর্কের খাতিয়ে ধরে নিলাম মৃত রাজীব হায়দার ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগার ছিল (যদিও একমাত্র অন্তর্যামী আল্লাহতায়ালাই জানেন রাজীব নাস্তিক নাকি কাফের নাকি আস্তিক ছিল) এবং কাফের অবস্থায় খুন হয়েছে। তাহলে তার বিষয়ে আর বিতর্ক করার কোন মানেই হয় না। কারণ (জামাত শিবিরের মতে) একজন কাফেরের অপমৃত্যু হয়েছে এবং সৃষ্টিকর্তা নিজে তার বিষয়ে ফায়সালা করবে যেহেতু রাজীব আর আমাদের মাঝে নেই। এতে তো জামাত শিবিরের ইমানদারদের খুশি হওয়ার কথা। তাকে নিয়ে পানি ঘোলা করে অপরাজনীতি করার তো কোন প্রয়োজন নেই। একজন মানুষ কোন ধর্মের অনুসারী অথবা তার কোন ধর্মে বিশ্বাস আছে কিনা সেবিষয়ে সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে তার পরিবারের লোকজন। যেখানে পরিবারের লোকজন বলছে রাজীব নাস্তিক ছিল না বরং তার বাবার মতে সে জামাত শিবিরের ভন্ডামির বিরুদ্ধে লিখতো। এইটাই ছিল তার অপরাধ। মোদ্দাকথা রাজীব আস্তিক নাকি নাস্তিক সেবিষয়ে এখন আর ফায়সালা করার কোন সুযোগ নেই। রাজীবের বিষয়টি স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার হাতে চলে গেছে। আর স্রষ্টা নিজে দেখবেন রাজীব স্রষ্টার হক আদায় করেছিল কিনা।
এখন আসি সৃষ্টির প্রতি মানুষের হক। সৃষ্টিকুলের প্রতি মানুষের প্রধান হক হলো একজন আরেকজনের কোন প্রকার ক্ষতিসাধন করবে না। সমস্ত মাকলুকাত মানুষের নিকট থেকে ভালো আচরণ পাবার দাবি রাখে। একজন মানুষ যদি আরেকজনের ক্ষতিসাধন করে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যতক্ষণ তাকে ক্ষমা না করবে ততক্ষণ সৃষ্টিকর্তাও তাকে ক্ষমা করতে পারবে না। এখন দেখা যাক আমাদের রাজনীতিবিদ এবং তাদের সন্তানদের বান্দার হক আদায়ের (জনগণের কল্যাণের) নমুনা। বাংলাদেশের আপোষহীন নেত্রী হিসাবে পরিচিত তিন বারের প্রধানমন্ত্রী (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী’র বিতর্কিত নিবার্চনসহ) বেগম খালেদা জিয়ার গুণধর পুত্রদ্বয় কোটি কোটি টাকার দূর্নীতি করে সাধারণ জনগণের হক মেরে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন সেখানে বিএনপি জামাতের ইসলাম রক্ষাকারী বুদ্ধিজীবিদের মূখে তালা কেন ? তখন ইসলামের কোন ক্ষতি হয় না। রাজীব যদি ইসলাম বিদ্বেষী হয়েও থাকে সে তো মানুষের কোন ক্ষতি করে নাই। আপনারা যে রাজনীতির নামে জনগণের রক্তচুষে খাচ্ছেন তাতে ইসলাম ধর্মের কোন ক্ষতি হয় না ? গতকালকে খবরে দেখলাম বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর দূর্নীতির আট কোটি টাকা বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য সিঙ্গাপুরের আদালত কর্তৃক আদেশ জারি করা হয়েছে। শাহবাগের আন্দোলনের মাধ্যমে কোন ব্লগার বা অনলাইন এ্যক্টিভিষ্ট ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং জাতির তো কোনো ক্ষতিসাধন করছে না বা আপনাদের মতো ক্ষমতার লোভও তাদের নেই। তাদের একটাই দাবি ৪২ বছরের কলঙ্ক থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। শাহবাগের আন্দোলনের সাথে সারাদেশের লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ সংহতি এবং একাত্মতা জানিয়েছে। এই লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে হাতে গোনা ২/৪ জন যুবক যদি ইসলাম বিরোধী হয়েও থাকে তারা কিন্তু আপনাদের মতো ভন্ড নয়। তারা ছলনার রাজনীতি করে না। তারা জামাত শিবিরের মতো মানুষ খুনের রাজনীতি করে না। আপনারা ক্ষমতার লোভে জনগণের এই আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে ধর্মের জিকির তুলে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চাচ্ছেন ? এখন রাজনীতিবিদ এবং তাদের তোষামোদকারী বুদ্ধিজীবিদের সময় এসেছে নিজেদেরকে সংশোধন করার। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ রাজনীতিবিদদের ভন্ডামী ও জনগণের চোখে ধুলা দিয়ে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি ধরে ফেলেছে। জনগণ এক ভয়াবহ শক্তি সেটা গত নির্বাচনে আপনারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সব সরকারের সময়ই পুকুর চুরি, খাল চুরি বিল চুরি বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতি হয়েছে। দূর্নীতি বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ মাঠে থাকবে সেটার নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি। কিন্তু আমরা যখন দেখি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি মন্ত্রী হয়েছে, লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই পতাকা যখন রাজাকারদের গাড়িতে উড়তে দেখি তখন নিজেদেরকে পুরুষ ভাবতেই লজ্জা লাগে। যারা বাংলা মায়ের স্বাধীনতার বাঁচানোর জন্য জীবন বাজি রেখে শত্রু সেনাকে পরাজিত করেছিল, বাংলার সেই সূর্য সন্তানেরা আজকে ক্ষমতার লোভে নপুংষ হয়ে গেলাম। বাংলাদেশের জনগণ যার পৌরষ্য ও বীরত্বের জন্য বঙ্গবীর উপাধি দিয়েছিল তিনিও আজকে জামাত বিএনপির সুরে কথা বলে। বাঙালী জাতির জন্য এই চেয়ে বড় লজ্জা আর কি হতে পারে ? রাজনৈতিক কারণে আদর্শের অমিল থাকতেই পারে তাই বলে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে আমরা এক হতে পারবো না কেন ? তাহলে আমরা নতুন প্রজন্ম কি ধরে নিবো আপনারা নিজেদের ক্ষমতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন ? দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য নয় ? আপনারা যদি সত্যিকার অর্থে পাকিস্তানের শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের প্রতি আমাদের শেষ অনুরোধ দেশ এখনও শত্রুমুক্ত হয়নি, পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা এখনও দেশকে পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য বানানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশকে রাজাকারমুক্ত শত্রুমুক্ত করার এই আন্দোলনে আমাদের সাথে শরিক হতে না পারলেও দয়া করে যুদ্ধাপরাধী স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের পক্ষ নিয়ে ধর্মের নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে আমাদের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে জাতি হিসাবে বাংলাদেশের জনগণ আপনাদেরকে কোনদিন ক্ষমা করবে না। দেশকে যুদ্ধাপরাধী স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারমুক্ত না করার পর্যন্ত নতুন প্রজন্মের এই যুদ্ধ চলবেই। কেউ আমাদের রুখতে পারবে না।
শুভ্র সরকার, জাপান।
দেশকে যুদ্ধাপরাধী স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারমুক্ত না করার পর্যন্ত নতুন প্রজন্মের এই যুদ্ধ চলবেই। কেউ আমাদের রুখতে পারবে না
লেখা ভাল লাগছে।
কেউ আমাদের রুখতে পারা উচিৎ নয়।
ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিকে জাগানো যায়, জেগে থাকা ব্যক্তিকে নয়। ধর্ম নিয়ে আর কতদিন রাজনীতি চলবে কে জানে?
মন্তব্য করুন