হ য ব র ল - ৫
১.
গত ৫দিন যাবৎ বিশাল দৌড়ের উপরে আছি। টার্ম পেপার, প্রেজেন্টেশন, টার্ম ফাইনাল, বৈশাখ, ঋহান, ঋহানের বাপ, সব নিয়া পুরা বেরাচেরা অবস্থা। তবুও মাঝে সাঝে ব্লগে এসে অফলাইনে দুই একটা লেখা পড়েছিলাম, কিন্তু কমেন্ট করা হয়নি। আজ যখন সব কমেন্ট করতে বসলাম, দেখি একটু পর পর বিদ্যুৎ মামা বেড়াইতে চইলা যান। এমন তো কথা ছিলো না।
২.
কথা ছিলো বুধবার আমার জামাই অফিস শেষে আমারে মটর সাইকেলে করে বসুন্ধরা পৌছায়া দিয়ে যাবে, আবার ক্লাস শেষে নিয়েও যাবে। কিন্তু স্যার আমাকে লোভ দেখালেন এই বলে যে, “দেখো তুমি যদি একাই চলে যেতে পারো তাহলে আমি ঠিক ৫টায় অফিস শেষ করেই ঋহানের কাছে চলে যেতে পারি। তাহলে বাবুটা এত লম্বা সময় একা থাকলো না”। আর আপনারা তো সবাই জানেন, নারী জাতি সবসময়ই লোভী। তাই, আমিও লোভ সামলাতে না পেরে তার কথায় রাজী হয়ে গেলাম। যদিও সেদিন বাসায় ফিরে জানতে পেরেছিলাম উনি বাসায় গিয়েছিলেন রাত ৮টার একটু আগে। সে যাইহোক, উনি কথা রাখবেন কি রাখবেন না সেটা উনার ব্যাপার। এদিকে আমি তার কথার লোভে পরে রওয়ানা হলাম বসুন্ধরার উদ্দেশ্যে। বড় রাস্তায় গিয়ে একটাও সি.এন.জি নেই। তাই বাধ্য হয়ে একটা বাসে চড়ে বসলাম। এই বাসে আগে বেশ কয়েকবার বসুন্ধরা গিয়েছি, কিন্তু ঋহান আসবে এটা জানার পর থেকে সেদিন অবধি আর বাসে চরা হয়নি। তো বাসে উঠার পর শুনলাম বাস তার শেষ গন্তব্যস্থল বদলে দিয়েছে। এখন তারা আর বসুন্ধরা যায় না, নতুন বাজারই তাদের শেষ গন্তব্য। এটা শুনে এম্নিতেই মেজাজ খারাপ তার মাঝে আরো মেজাজ খারাপ করতে এক বেটা বাসে উঠলো। সে উঠেই সামনে দাঁড়ানো সবাইকে ঠেলে মহিলা সিটের দিকে আসা শুরু করলো। আমি তখন বসার জায়গা না পেয়ে মহিলা সিট গুলোর পাশে দাঁড়িয়ে আছি। এদিকে লক্ষ্য করছি, সেই বেটা চোখে মুখে খুব বিরক্তি নিয়ে অন্যদের ঠেলে ঠুলে এগুচ্ছে আর বলছে “সবাই সামনে দাড়ায়ে থাকতে চায়, কেউ পিছে যায় না”। মানুষ পিছনে যেতে চায় না বলে উনি নিজেই আমার ঠিক পিছনে এসে দাঁড়ালেন। কারন, শত চেষ্টা করেও উনি আর পিছনে যেতেই পারছেন না, এই ভাব দেখিয়ে ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে পরলেন। তারপরের কাহিনী তো আর কারো কাছেই নতুন কিছু না। তবে আমি বুঝিনা, এইসব মানুষেরা এমন করে কি আনন্দ’টা পায়? তাদের এত নিম্ন মানের আনন্দ পেতে দেখে মানুষ হিসেবে নিজের উপর খুব লজ্জা লাগে। যাইহোক, আমি বেটার এই অবস্থা দেখে সেখান থেকে সরে মহিলা সিট আর ড্রাইভারের সিটের মাঝখানে এসে দাঁড়ালাম। ধরে দাঁড়ানোর কোন জায়গা নেই দেখে দাঁড়াতে পারছিলাম না ঠিক মত। তখনই সামনের সিটে বসা এক ভদ্র মহিলা আমার হাত থেকে বই আর ব্যাগ নিয়ে বললেন তুমি ঠিক মত দাঁড়াও আমি তোমার বই দেখছি। বেশ! ঠিক ভাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু বাসের ব্রেকের ঝাকুনিতে দাঁড়াতে পারছিলামন না। ঠিক তখনই ঐ সিট থেকেই আরেক ভদ্র মহিলা নেলে গেলেন, তো যিনি আমার বই হাতে বসে ছিলেন, উনি তাড়াতড়ি আমার জন্য জায়গাটা দখল করে নিলেন। বসলাম উনার পাশে। কিছুক্ষন যাওয়ার পর..
মহিলাঃ তুমি করেই বললাম তোমাকে। তুমি কই যাচ্ছো?
আমিঃ ইউনিভার্সিটি।
মহিলাঃ কোন ইউনিভার্সিটি?
আমিঃ নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি।
মহিলাঃ তা তুমি এই বাসে উঠেছো কেন? এইটা তো বনানী যাবে না।
আমিঃ আমি তো বনানী যাবো না, আমি যাবো বসুন্ধরায়।
মহিলাঃ এই না বললে নর্থ-সাউথে ইউনিভার্সিটি যাবে?
আমিঃ হ্যাঁ।
মহিলাঃ তো?
আমিঃ তো? নর্থ-সাউথ তো এখন বসুন্ধরায়।
মহিলাঃ ও তাই? আমি তো জানতাম না। তা তোমার বাসা কোথায়?
আমিঃ আমার বাসা? আমার বাসা শ্যামলী।
মহিলাঃ ও মা! এত দূরে আসো?
আমিঃ জ্বী। তবে আমার তেমন অসুবিধা হয়না। বসুন্ধরায়-ই আমার বাবা’র বাসা আছে তো, তাই।
মহিলাঃ বাবার বাসা মানে? তাহলে তুমি শ্যামলী’তে কার সাথে থাকো?
আমিঃ কার সাথে? ওহ! আমার হাজব্যান্ডের সাথে।
মহিলাঃ ও আল্লাহ! তুমি ম্যারিড? আমি তো তোমাকে দেখে পিচ্চি একটা মেয়ে ভেবেছিলাম।
আমিঃ (চুপ)
মহিলাঃ আচ্ছা, তুমি কোন ইয়ারে এস.এস.সি পাশ করেছো?
আমিঃ ২০০২।
মহিলাঃ ২০০২? আল্লাহ! আমি এস.এস.সি পাশ করেছি ১৯৮৯ সালে। তাইলে তো আমার ধারনা ভুল না। তুমি তো পিচ্চিই!
আমিঃ আসলে আমার ৯ মাস বয়সী একটা ছেলেও আছে।
মহিলাঃ ও আল্লাহ তাই? কি বলো!
আমিঃ জ্বী!
মহিলাঃ তো এত জলদি বিয়ে করলে যে? আচ্ছা যাইহোক, বিয়ের কয়দিন হলো?
আমিঃ প্রায় আড়াই বছর।
মহিলাঃ বাহ! খুব ভালো, খুব ভালো। আসলে কম বয়সে বিয়ে করলেই ভালো। আর বিয়ের সাথে সাথে বাচ্চা নিয়ে নেয়া আরো ভালো, না হলে পরে যে কত সমস্যা হয়!
আমিঃ (মনে মনে) এই মহিলা এইমাত্র বললো এত জলদি বিয়া করলাম কেন? আর এখনি সুর পাল্টায়া বলে কম বয়সে বিয়ে করাই খুব ভালো?
মহিলাঃ আচ্ছা, শোন তোমার সাথে হয়তো আর কোনদিন দেখা হবে না, তাই তোমাকে একটা অনুরোধ করবো। প্লিজ “না” করো না।
আমিঃ (আমি ভয়ে ভয়ে) জ্বী বলেন।
মহিলাঃ তোমার এই বেবীর বয়স যেদিন এক বছর পূর্ন হবে, ঠিক সেদিন থেকে আরেকটা বেবীর জন্য ট্রাই করা শুরু করবে।
আমিঃ (আমি তো হতভম্ব। কয় কি? )
মহিলাঃ তুমি হয়তো ভাববে আমি এভাবে বলছি কেন। আসলে আমার একটা মেয়ে তো, মেয়েটা যখন একা একা থাকে, তখন খুব কষ্ট হয়। মনেহয় আরেকটা ভাই-বোন থাকলে কত ভালো হতো।
আমিঃ হুমম।
মহিলাঃ তাই বলছিলাম, আমার মত ভুল করো না।
আমিঃ জ্বী, তবে এখনই না। আগে একজনকে বড় করে নেই। আর আমিও তো পড়া-লেখা করছি। চাকরীটাও করার ইচ্ছে আছে। নিজেকে গুছানোর সময় করতে পারছিনা। আগে নিজেকে গুছিয়ে নেই, তারপর।
মহিলাঃ না, না। এই ভুল করো না। নিজেকে গুছাতে গেলে দেখবে অনেক দেরী হয়ে গেছে। তুমি আমার অনুরোধটা রেখো, এই বাচ্চার বয়স এক বছর হলেই….
আমিঃ (বুঝলাম আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তাই মহিলার কথা মত রাজী হয়ে গেলাম। ) বললাম, জ্বী আচ্ছা!
তারপর আরো কিছু প্যাচাল চললো। কিছুক্ষন পর তিনি তার গন্তব্যে নেমে গেলেন। আমি ভাবতে থাকলাম,
হায়রে মানুষ! নিজে তো ঠিকই একটা বাচ্চা নিয়াই খেমা দিছে, আর এখন মাইনষেরে রাস্তা ঘাটে সু-পরামর্শ দিয়া বেরায়।
আর এদিকে আমার জামাই এই কাহিনী শুইনা মহা মহা মহা খুশি। বলে, দেখছো, সেদিন আমি তোমারে পৌছাইয়া দিলে এত্ত সুন্দর পরামর্শ কেমনে পাইতা? দেখো, রাস্তা ঘাটে মাইনষে তোমারে কত সুন্দর পরামর্শ দেয়, আর আমি এই কথা কইলেই তুমি খালি আমার সাথে ঝগড়া লাগায়া দেও......
আরে বেটা! নিজে তো বুইড়া হইয়া গেছো, শখ-আহ্লাদ সব শেষ। আর আমারে যে পিচ্চি কালেই মা বানায়া দিলা, সেই খবর কি তোমার আছে?
খাইছে !! আমিও তো ২০০২ এ এসএসসি..... বিবাহ নিয়া তো চিন্তা ভাবনাও শুরু করি নাই... এই মহিলা আমারে দেখলে কি বলবে !!
মানুষের গায়ে পড়া ভাব দেখলে কথা না বাড়ায়ে আমিও থামানোর চেষ্টা করি, কিন্তু এদের কিছু শুনায়ে ছাড়া উচিত !
আপনারে দেখলে বলবে, "কম বয়সে বিয়ে না করাই ভালো"
ভাবী ছাইড়া দিলাম কোন কমেন্ট করলাম না।
লেখা পড়ে

বড়টা একা থাকে এজন্য ছোট একটা নিয়ে আসলাম ,এখন দুইজনকে সামলাইতে জান ছেড়াবেরা
ভয় তো ঐখানেই
আসলেই তো অনেক পিচ্চি আপনি ।
হ
বড়দের কথা শুনতে হয় ছোটআপু
জ্বী আইচ্ছা বড় ভাইজান, শুনলাম।
ঋহানের যেদিন একবছর হবে ঠিক সেদিন থেকেই....
আরে বেটা! নিজে তো বুইড়া হইয়া গেছো, শখ-আহ্লাদ সব শেষ। আর আমারে যে পিচ্চি কালেই মা বানায়া দিলা, সেই খবর কি তোমার আছে?
কি বললি রে দোস্ত ।=)) 
যাহা বলিবো সত্য বলিবো
আপ্নে টুটুল্ভাইরে বুইড়া কৈলেন? কৈতে পার্লেন???
উপস! ভুইলা গেছিলাম, কানারে কানা কইতে নাই
দিক্কার! টুটুলের মত সেমার্ট, হেন্ডসাম, ইয়াং ছেলেরে বুইড়া বলায় তীব্র দিক্কার জানাইলাম।
হ, দিক্কার দিক্কার
হায়রে মানুষ! নিজে তো ঠিকই একটা বাচ্চা নিয়াই খেমা দিছে, আর এখন মাইনষেরে রাস্তা ঘাটে সু-পরামর্শ দিয়া বেরায়।
সেদিনও দেখলাম এফ বি তে এক মেয়ে টুটুলরে আগুনের গোল্লা কইলো, আর তুমি বুইড়া কইতাছ?
বুড়া'রে বুড়া কমু না তো কি কমু?
না, না। এই ভুল করো না। নিজেকে গুছাতে গেলে দেখবে অনেক দেরী হয়ে গেছে। ------ এই বাচ্চার বয়স এক বছর হলেই….

হ আমাদের
ভাইস্তা-ভাতিজী চাই।
হাহাহাহাহা... এত্তো দারুন ইমো কই পাইলেন!!...
অসুবিধা কি? এবি'র সব বুড়া-বুড়ি'র পোলাপান'রে একত্রিত করলে এরকমই হইবো
আরে বেটা! নিজে তো বুইড়া হইয়া গেছো, শখ-আহ্লাদ সব শেষ। আর আমারে যে পিচ্চি কালেই মা বানায়া দিলা, সেই খবর কি তোমার আছে? -------
নাজ এটা কি করলা?
ঘরের কথা এভাবে পরেরে কইয়া দিলা
বালিকা বিবাহের & মা বানানির অপরাধে টুটুল বুইড়ার যাবত জীবন জেল হইতে পারে
টুটুল ইহা একটি নন বেল্যাবেল কেইস।।।।।।।.।।
সাবধান !!! >)
ভবিষ্যতে এই কাম কইর না
ভবিষ্যত?
কিছু না বলি !!!
বলেন না প্লিজ
হিন্দী সিনামার একটা ডায়লগ মনে পড়লো-
অর্থটা জানি কী হৈবো ?
ইয়ে, ঐ মহিলার ফোন নম্বর রাখেন নাই? উনার হয়তো কোনো হেল্প লাগবে, মেসবাহ য়াজাদকে পাঠাতাম।
ফোন নাম্বার?

আমি তো এই ভয়েই ভদ্র মহিলার কথায় রাজী হয়ে গেলাম
আমি অবশ্য এখনো শিশু। তাই অন্য পিচ্চিদের পেরেশানি দেখলে মজা পাই

টুটুল ভাই জিন্দাবাদ।
হ
বইসা ফিডার খাও।

আপনার বিয়া কৈরা বাচ্চা নেয়ার সময় আইসে পড়সে রাসেল ভাই।
বিয়া করতে পারলাম না আর বাচ্চা কাচ্চা!!!!!!!

আহা আক্ষেপ কেউ বুঝলো না
নাইলে কি আর সঙ্গে ফিডার নিয়ে ঘুরা লাগে।
আমি তো ভাবছিলাম আপনি নর্থ-সাউথের মাস্টার! তাইলে ক্যাম্নে কী!
মাস্টার বলেতো?
আমারে কি বুড়ি পাইছেন নি?
না রে ভাই, আমি এত মেধাবী না। আমি নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি তে কেবল এমবিএ করতেছি
বাসে আসলেই ব্যাপক মজা!... কতো জিনিস থুক্কু জিনিয়াস দেখা যায়!!...
ধিক্কার! এম্নে কইরা টুটুল্ভাইরে ভরা মজলিসে ন্যাক্কারমূলক কথা কইছো বলে!!...
ধিক্কার! ধিক্কার! ধিক্কার! ধিক্কার! ধিক্কার! ধিক্কার! ধিক্কার! ধিক্কার! ধিক্কার! ধিক্কার! ধিক্কার! ধিক্কার!
অনেক কিছু মনে পড়ে গেলোরে। শুধু আমিই তাহলে একা এমন খপ্পরে পড়ি না দেখা যাচ্ছে
মন খারাপ করা পর্বের পর মন ভালো হওয়া পর্বের জন্য
মন্তব্য করুন