ইউজার লগইন

অনুগল্পঃ ঘুনপোঁকা

দোতালা বাড়ী। বিশাল টানা বারান্দা। আশি সালের দিকে তৈরী করা এই মফস্বল এলাকার প্রথম বড় বাড়ী। লতা পাতার ডিজাইনে বারান্দার গ্রীল। বড় বড় কক্ষের লাল মেঝে তে কালো বর্ডার।

রুদ্র দুপুর থেকেই চুপ করে বসে আছে এই দোতলা বাড়ীর দ্বীতিয় তলার টানা বারান্দায়। পুরো বাড়ী যথারীতি নিরব। চোখ বুজে বসে আছে সে, তাঁর দাদার আরাম কেদারায়। রুদ্রর দাদা যতদিন বেঁচে ছিলেন, প্রতিদিন নিয়ম করে বিকাল হলে এই আরাম কেদারায় এসে বসতেন। নানান লোকজন আসতো তাঁর কাছে। ভিতর থেকে রুদ্রর দাদী পান বানিয়ে দিতেন তাদের জন্য। দাদা মারা যাবার পর থেকে কেউ আর আসেনা , আর তাঁর দাদীও অসুস্থ্য হয়ে এখন বিছানায় শুয়ে থাকেন সারাক্ষন। পাচুর মা'ই এখন সব সামলায়। দোতলার পুরো বাড়িতে এই তিনটি প্রানী। নিচ তলা ভাড়া দেয়া একটা এন জি ও এর কাছে। অফিসের কারনেই সেখানে কিছুটা লোকজন আসা যাওয়া রয়েছে।

বারান্দার সামনে একটা অনেক আগের জলপাই গাছ। শীতকাল বলে এখন ডাল ভেঙ্গে জলপাই ধরেছে। কয়েকটা ডাল এসে নুইয়ে পড়েছে বারান্দার দিকে।গাছের ডালে ডালে শিশির জমতে শুরু করেছে। রাত্রি গভীর হলে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরবে, কান্নার মত।

শীতের বিকেলে ঝুপ করেই নামে, আর বিকাল নামতেই সন্ধ্যা । সন্ধ্যা নামতে না নামতেই চারপাশ কুয়াশা । পাচুর মা ঘরের বাতি জ্বালায়। রাত্রের রান্নার যোগাড় করতে যায় রান্নাঘরে। রুদ্র একই ভাবে বসে আছে আরাম কেদারায় । সামান্য নড়া চড়াও নাই। তাঁর মন খারাপ কি না সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সে চোখ বুঝে।

রুদ্রর বাবা- মা'র ডিভোর্স হয়ে যাবার পর থেকে সে দাদা দাদীর কাছেই বড় হয়েছে। আর বাবা-মা'র ডিভোর্সের গ্লানি তাঁকে ঘিরে রেখেছে ছোট বেলা থেকেই। আর সে কারনেই সে দূরে দূরে রেখেছে নিজেকে সবার কাছ থেকে। একটা সময় মনে হয়েছে, বাবা-মা মারা গেলে, বাবা-মা হারানোর কষ্ট টা এই থেকেও না থাকার কষ্ট থেকে ঢের ভালো, ঢের সম্মানের !!!

রুদ্রর আড়াই বছর বয়সেই তাঁর বাবা-মা'র ডিভোর্স হয়ে যায়। তার মা আরেক জনের সংসারে আর বাবা আরেকটা বিয়ে করে ঢাকাতে স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে নাম লেখিয়েছে। কেউ তাঁর খোজ নেয়নি , নেবার প্রয়োজনও মনে করেনি। তাঁর দাদা মারা গেলে তাঁর বাবা একবার এসেছিলেন। বুদ্ধি হবার পর সে সময় তার প্রথম দেখা তাঁর জন্মদাতা কে। সে প্রথম দেখায় আলাদা কোন আবেগ ছিল না, জন্মদাতার প্রতি ছিলনা কোন টান। অন্যসব অতিথি দের থেকে আলাদা করে মনে হয়নি তাঁর!

তাঁর বাবা মা'র বিয়ের কোন ছবিও ছিলনা । এই মফস্বলে তখন ছবি তোলার মত চিন্তাও কেউ করেনি। তাই জীবনের ২৪ বছর পার হলেও তাঁর জন্মদাত্রীর চেহারা দেখেনি সে। তিনি হয়তো ভুলেই গেছেন তাঁর একটা ছেলে জন্মেছিল কোন এক কালে !!!

রুদ্র চুপ করেই বসে আছে দুপুর থেকে। মনের ভিতর একটা চিনচিনে ব্যাথা, কোথাও একটা কষ্ট তাঁকে অনবরতঃ খোঁচাচ্ছে ভিতরে। নিজেকে বুঝাচ্ছে, কষ্ট পাবার মতন কিছুই ঘটেনি এখানে। তবুও সে কষ্ট পাচ্ছে। নিজেকে বার বার বোঝাচ্ছে , কষ্ট পাবার কিছু নাই, যাকে সে কোনদিন দেখিনি তাঁর জন্য কষ্ট পাবার কিছু নেই ।

দুপুরে কে একজন এসে রুদ্রর দাদীর সাথে দেখা করে। তারপর তাঁর দাদী তাঁকে ডেকে নিয়ে পাঠায় পাচুর মা'রে দিয়ে । রুদ্র জানতে পারে গতকাল তাঁর জন্মদাত্রী মারা গেছেন।

রুদ্র নিজেকে জিজ্ঞাসা করে, তাঁর কি কষ্ট পাওয়া উচিত ???

নিজের করা প্রশ্নের উত্তর নিজেই খুঁজে বেড়ায় !!!

পোস্টটি ৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

রাসেল আশরাফ's picture


মনের ভিতর একটা চিনচিনে ব্যাথা, কোথাও একটা কষ্ট তাঁকে অনবরতঃ খোঁচাচ্ছে ভিতরে। নিজেকে বুঝাচ্ছে, কষ্ট পাবার মতন কিছুই ঘটেনি এখানে। তবুও সে কষ্ট পাচ্ছে। নিজেকে বার বার বোঝাচ্ছে , কষ্ট পাবার কিছু নাই, যাকে সে কোনদিন দেখিনি তাঁর জন্য কষ্ট পাবার কিছু নেই ।

এই লাইনগুলো খুব ভালো লাগছে।

সাঈদ's picture


ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

নাজমুল হুদা's picture


যে মা ছিলই না কোনদিন, সে মা চলে যাওয়াতেও কষ্ট! রুদ্রের জন্য কষ্ট পাচ্ছি । না-থাকা মায়ের তবুও তো না-থাকার একটু অনুভূতি ছিল! এই শীতের সকালে মনটা খারাপ করে দিলেন, সাঈদ ।

সাঈদ's picture


মন খারাপ করে দেবার দুঃখিত ভাই।

ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

হালিম আলী's picture


রুদ্র নিজেকে জিজ্ঞাসা করে, তাঁর কি কষ্ট পাওয়া উচিত ??? এলাইন অনেক দূরে নিয়ে গেলো।

সাঈদ's picture


ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

সাহাদাত উদরাজী's picture


(মন্তব্য নাই)

সাঈদ's picture


( আমিও কিছু বল্লাম না )

মেসবাহ য়াযাদ's picture


চুপচাপ পড়ে গেলাম...

১০

সাঈদ's picture


পড়ার জন্য ধন্যবাদ

১১

শওকত মাসুম's picture


চুপচাপ পড়ে গেলাম...

১২

সাঈদ's picture


পড়ার জন্য ধন্যবাদ

১৩

জ্যোতি's picture


Sad

১৪

সাঈদ's picture


Stare

১৫

তানবীরা's picture


লেখক সাঈদ বহুদিন পর আবার উঁকি দিয়ে গেলেন।

আমিও অনেক সময় অনেক ব্যাপারেই নিজেকে জিজ্ঞেস করি, আমি কেনো কষ্ট পাচ্ছি? জানি না কিন্তু কষ্ট হয়

১৬

আবদুর রাজ্জাক শিপন's picture


সাঈদ, গল্প পড়লাম ।
ভালো লাগলো ।

কিছু কমন বানান বিভ্রাট দেখা যাচ্ছে, সময় পেলে ঠিক করে নেবেন

১৭

নীড় সন্ধানী's picture


মন খারাপ হয়ে গেল Sad

১৮

জেবীন's picture


উত্তর খুজঁতে গিয়ে নিজের কাছে নিজেই মনে হয় অসহায় রুদ্র...

লেখা ভালো লাগলো...

১৯

রুমিয়া's picture


মন খারাপ হয়ে গেল..Sad
লেখাটা ভালো লাগলো.।

২০

নাহীদ Hossain's picture


লেখা দারুন হইছে। তবে আর কোন রুদ্র তৈরী না হোক ... Frown

২১

ঈশান মাহমুদ's picture


মন খারাপ করা গল্প।

২২

ফিরোজ কবীর's picture


পড়লাম। Sad

২৩

সাঈদ's picture


সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। ঢাকার বাইরে ছিলাম বলে যথাসময়ে রিপ্লাই দিতে পারি নাই। একবারেই তাই জানালাম।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

সাঈদ's picture

নিজের সম্পর্কে

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,
মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়।

আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মত দাঁড়িয়ে থাকি।
সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না।
কী করে তাও বেঁচে আছি আমার মতো। অবাক লাগে।