ইউজার লগইন

বারিধারা - (ছোট গল্পের অপচেষ্টা)

ভোরের আলো ফুটবার আগে থেকেই বৃষ্টি টা আরম্ভ হয়েছে। জানালা দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ঢুকতেই অয়নের ঘুম ভাঙ্গে। এর আগে মেঘ ডাকার শব্দে কয়েকবার ঘুম ভেঙ্গেছিল তাঁর । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ছিটা বাতাসের সাথে সাথে জানালা দিয়ে ঢুকছে। মাথার কাছের জানালার গ্রীলের ফাঁক গলে সেই বৃষ্টির ফোঁটা এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে বিছানার চাদর , বালিশ , অয়নের ঘুম কাতুরে মুখ।

মেঘেদের জ্যামে আটকে গিয়েছিল সূর্যের আলোর পথ। ঝির ঝির করে বৃষ্টি প্রথমে আলপনা আঁকে গাছের ধূলা মাখা পাতায়, আলপনা আঁকে জানালার কাঁচে, কংক্রীটের শুকনো দেয়ালে। বেলা বাড়ে , সাথে সাথে বাড়ে আকাশে মেঘের ব্যস্ততা , বাড়ে বৃষ্টির ঝংকার। এক সময় বৃষ্টির হুংকারে স্তব্ধ হয়ে যায় অন্য সব জাগতিক শব্দ।

অনেকক্ষন বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে উঠে বসে অয়ন, মা'র ডাকে।
এই ঘোর বর্ষায়ও মা'র বিরাম নেই - উঠতে উঠতে ভাবে অয়ন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১০ টা বেজে ৩০।

বাইরের আলো দেখে বুঝার উপায় নেই এত বেলা হয়ে গেছে !!! জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় অয়ন । পাশের বহুতল ভবনের বন্ধ জানালা আর দরজা ছাড়া আর কিছুই দেখার নেই অবশ্য ।

নাস্তা শেষ করে অয়ন বসার ঘরে এসে বসে। জানালা খুলে দিয়ে আবার বাইরে তাকায় । অঝোর ধারায় তখনো চলছে বৃষ্টির তান্ডব। তাদের পুরানো একতলা বাড়ীর এই ঘর থেকেই শুধু বাইরের টা ভালো দেখায় ।

পিচ ঢালা চিরচেনা রাস্তা তখন খরস্রোতা নদীর মত। প্রবল বেগে কাদা মেশানো পানি ছুটে চলছে রাস্তার ডুবিয়ে। উপর থেকে আসা স্বচ্ছ পানির ফোঁটা এসে একাত্মতা ঘোষনা করছে সেই পানিতে, বাড়ছে ছুটে চলা পানি গতি । রাস্তার ওপাশের এক টুকরো খোলা মাঠে পানি জমেছে ঘাসের অলিগলিতে। সেখানে জলখেলায় ব্যস্ত কয়েকটা কিশোর। একটা রিকশা এর মধ্যে আরোহী নিয়ে চলে গেল খরস্রোতা রাস্তার উপর দিয়ে। ভিজে জুবুথুবু রিকশাচালক অনেক কষ্টে বয়ে চলেছে জীবনের ভার।

বৃষ্টির একটা বড় দোষ হলো, শুধু বাইরে ভেজায় না , মনের ভিতরটাও আর্দ্র করে তুলে, স্মৃতির কণা গুলো প্রচন্ড দাপাদাপি করে মাথার ভিতর। অয়নের ভিতরেও চলছে সেই ব্যস্ততা। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে ঘোর ভাঙে তাঁর।

এই বৃষ্টিতে আবার কে এল - ভাবতে ভাবতে দরজার দিকে এগোয় ।

দরজা খুলে স্থির হয়ে যায় । সম্বিত ফিরে পেতে সময় নেয় খানিকটা । সামনে দাঁড়িয়ে রুনা। পিছনে তখনো বৃষ্টির নাচন , পিচ ঢালা রাস্তায় স্রোতের বয়ে চলা। আর তারো পিছনে অয়নের স্মৃতির দপদপানি।

বছর দুয়েক আগে কোন এক শীতের দিনে অয়নকে এক ফেলে রুনা অন্য কারো হাত ধরেছিল উষ্ণতার খোঁজে। ২ বছর পর আজ সে। কয়েক দিন আগে সে আবার অয়নের জীবনে ফিরে আসতে চেয়ে টেক্সট করেছিল। সেই টেক্সট এর রিপ্লাই দেয়নি সেদিন ।

আজ সে অয়নের মুখোমুখি। কিংবা অয়ন তাঁর মুখোমুখি।

বাইরে তখনও বৃষ্টির অবিরাম ধারা ।।

পোস্টটি ১১ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

হাসান রায়হান's picture


অনেক দিন পর তোমার গল্প

সাঈদ's picture


জ্বী ভাই । সবার এত সুন্দর সুন্দর গল্প দেখে এখন সাহস পাইনা আর গল্প দেবার Sad

লীনা দিলরুবা's picture


গল্প চমৎকার। দৃশ্যকল্প চমৎকার। লেখার হাত পাকা।
গল্প শেষ- নাকী বাকী আছে? শেষ হলেও ঠিক আছে।

সাঈদ's picture


না এখানেই শেষ ।

প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ ।

নেয়ামত's picture


বৃষ্টির একটা বড় দোষ হলো, শুধু বাইরে ভেজায় না , মনের ভিতরটাও আর্দ্র করে তুলে

দারুন উপলব্ধি।

সাঈদ's picture


ধইন্যা পাতা

জেবীন's picture


রুনা ফিরেছে তাহলে! Smile কথায় আছে, যে যাইতে চায়, তারে যেতে দিন, ফিরে এলে সে আপ্নের! Laughing out loud
গল্পটা ভাল্লাগছে সরলভাবের কারনে।

সাঈদ's picture


যে একবার যেতে পারে, সে কি বার বার চলে যেতে পারে না ?

আনন্দবাবু's picture


একবার ভুল বুঝতে পেরে কেউ ফিরে আসলে সে আর ফিরে যেতে চায় না, যদি না তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়!

১০

তানবীরা's picture


বার বার যেতে পারে, বার বার ফিরতে পারে। যে কোনদিন যায়নি সেও চলে যেতে পারে। এগুলোর কোন ফিক্স রুল নেই বলেই জীবন এতো সুন্দর

বারিধারা আমার বেশ পছন্দ, জ্যাম কম শুধু অনেক এক্সপেন্সিভ Sad

১১

সাঈদ's picture


দারুন বলেছেন । এই জন্যই হয়তো জীবন সুন্দর , হয়তো না ।

১২

রায়েহাত শুভ's picture


ইমানে কই, গল্পের নাম দেইখা ভাবছিলাম ডিওএইচেস নিয়া গল্প Wink

লেখা দারূণ লাগছে...

১৩

সাঈদ's picture


ধইন্যা পাতা

১৪

স্বপ্নের ফেরীওয়ালা's picture


চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান Smile

~

১৫

সাঈদ's picture


ফিরে আসা মানে উপস্থিত । Smile

১৬

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


মেঘেদের জ্যামে আটকে গিয়েছিল সূর্যের আলোর পথ। ঝির ঝির করে বৃষ্টি প্রথমে আলপনা আঁকে গাছের ধূলা মাখা পাতায়, আলপনা আঁকে জানালার কাঁচে, কংক্রীটের শুকনো দেয়ালে। বেলা বাড়ে , সাথে সাথে বাড়ে আকাশে মেঘের ব্যস্ততা , বাড়ে বৃষ্টির ঝংকার। এক সময় বৃষ্টির হুংকারে স্তব্ধ হয়ে যায় অন্য সব জগতিক শব্দ।

Star Star Star Star Star

বৃষ্টির একটা বড় দোষ হলো, শুধু বাইরে ভেজায় না , মনের ভিতরটাও আর্দ্র করে তুলে, স্মৃতির কণা গুলো প্রচন্ড দাপাদাপি করে মাথার ভিতর।

টিপ সই

অসাধারণ

১৭

সাঈদ's picture


ধন্যবাদ ভাইডি ।

১৮

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


বছর দুয়েক আগে কোন এক শীতের দিনে অয়নকে একা ফেলে রুনা অন্য কারো হাত ধরেছিল উষ্ণতার খোঁজে

কত বাস্তব!

১৯

সাঈদ's picture


জ্বী ভাই। Smile

২০

প্রিয়'s picture


যাইতে চাইলেতো যে কেউ যাইতে পারে, আটকায় কি রাখা যায় ?

২১

সাঈদ's picture


সত্যি , কেউ কি আটকায়ে রাখতে পারে না কি ।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

সাঈদ's picture

নিজের সম্পর্কে

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,
মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়।

আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মত দাঁড়িয়ে থাকি।
সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না।
কী করে তাও বেঁচে আছি আমার মতো। অবাক লাগে।