কথিকা-নো টেনশন
আজ সকালে ঘুম ভাংছে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে..কথিকা কাদছে আর আমি বলছি ব্যাপার না।।ও বলছে ব্যাপার। আমি পরীক্ষায় ফেল করেছি।আতকে উঠে আবার ওপাশ হইয়ে ঘুমালাম তারপর আবার স্বপ্ন দেখি ও গোল্ডেন এ প্লাস পায়ছে...
ক্লাস থেকে এসে বাসায় ফোনদিলাম আম্মাকে জিজ্ঞাসা করলাম ওর ভাব সাব কি??আম্মা কয় যথারীতি আছে... নো টেনশন মুডে। কেমনে পারে এইসব? আমার নিজেরই হাত পা শুকিয়ে আসতেছে আর ও বলে নো টেনশন মুডে আছে...এই হলো আমাদের কথিকা আমার একমাত্র ছোটবোন কথিকা...কাল ওর এস এস সি এর রেজাল্ট...
এইতো সেদিন এক রাতে আমি ঘুমাইছি বিটিভি তে নাটক দেখে হঠাৎ করে আমার পাশের বাসার খালাম্মা আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বললো এই কোলে নে তোদের বোন হইয়েছে।।আমি চোখ ডলতে ডলতে কোলে নিলাম কি সুন্দর পুতুল এর মতো একটা ছোট বাবু।আমার ছোট ভাই গলা ফাটিয়ে কাদতে শুরু করলো কারন ওরে নাকি আর কেও আদর করবে না এমনকি প্রথম প্রথম কেও কোলে নিলেও কাদতে শুরু করে দিতো সামনে যা পেতো তাই ভাংতো যদিও তখন ওর বয়স ছিলো সাত বছর।
কথিকা এর যখন মাসখানেক বয়স তখন ওর জন্ডিস ধরা পড়লো আম্মা সাথে সাথে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গেলো সেদিন আবার পুরা পাড়া মাথায় তুললো কেন ডাক্তার এর কাছে নিতে হবে ওর ধারনা ছিলো ডাক্তার এর কাছে নিলেই ও মারা যাবে কারন কিছুদিন আগে আমাদের পাশের বাসার এক বাবু মারা গিয়েছিলো হসপিটাল এ।
দিন যায় কথিকা বড় হয় ...সারাটাদিন আমার পিছ পিছ ঘুরে আমি যা বলি তাই করে রাতে আমার কাছে ঘুমাতে আসে কিন্তু মাঝ রাতে কোন একটা ব্যাপার নিয়ে সে ঝগড়া করে আম্মার কাছে ঘুমাতে চলে যেতো...যাওয়ার স্টাইলটা এখনো চোখে ভাসে দুই হাত দিয়ে বালিশ আর কোলবালিশ নিয়ে গালি দিতে দিতে যেত...
আম্মা প্রথমে ওরে একটা কিন্টার গার্ডেন এ ভর্তি করলো।।খুব ভালোমতো সবার মতো ফাস্ট হলো স্কুল থেকে প্রাইজ ট্রাইজ পেয়ে একাকার অবস্থা!!!!!!!!!মুডে পা মাটিতে পড়ে না এই রকম ভাব ভংগি।
পরের বছর সরকারী স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য আম্মা উঠে পড়ে লাগলেন ।ভাবটা এমন ছিলো স্কুলে ও না আম্মা ভর্তি হবে।কটকটা দুপুরবেলা এতটুকু পিচ্চিটাকে নিয়ে আম্মা কোচিং করাতে নিয়ে যেতেন।কি শিখতো না কোচিংএ...আমার মনে হয় ও ওইসময় বিসিএস এর প্রিলি দিলেও টিকে যেত। আম্মা আমাকে পড়াতে দেয় না আমি ওর সাথে পড়া বাদ দিয়ে নাকি খেলাধুলা বেশী করি আর এতে আমার আর ওর দুইজনেরই ভবিষ্যত নাকি কালো ঘুটঘুটা অন্ধকার হইয়ে যাচ্ছে।।
কোচিং এ সব মকটেস্ট এ ফাস্ট হতে লাগলো। বছর শেষে ভর্তি পরীক্ষা সামনে চলে আসলো আম্মা ওকে খুব সুন্দর করে সাজগোজ করিয়ে স্কুলে নিয়ে গেল ফরম তুলতে কিন্তু ফরম তুলতে গিয়ে লাগলো বিপত্তি সারাক্ষন আম্মার আচল ধরে রাখলো ওর চেনাপরিচিত কারো সাথে কোন কথাও বললো না।।সারাদিন কন্নাকাটি চলতে লাগলো সে স্কুলে ভর্তি হবে না।আম্মার মাথায় আকাশ ভেংগে পড়লো সারাদিন ও কান্নাকাটি করে আর আমি ওকে আম্মার হাত থেকে বাচানোর জন্য আমি কিছু মাইর খাই...
ওকে কোন মতে স্কুলের কথা বলা যায়না বললেই বলে সে স্কুলে ভর্তি হবে না স্কুলে গেলে নাকি কেমন জানি গমগম আওয়াজ করে।পড়াশুনা সব বন্ধ আর এদিকে আমার মা প্রায় উন্মাদ এর মতো অবস্থা। হুজুরের কাছ থেকে পানি পড়া ওমুকের কাছ থেকে তাবিজপড়া সব নিয়ে এসে ওর গলায় ঝুলায় দিল কিন্তু স্কুলের কথা শুরু করলেই কান্নাকাটি...যাইহোক আমি আর আমার আরেকবন্ধু দুইজন মিলে প্রতিদিন ওকে স্কুলের বাইরে ঘুরাতে নিয়ে যেতাম আর ভাবতাম এতে যদি ভয় একটু কাটে কিন্তু কোন লক্ষনই দেখা গেলো না।।
পরীক্ষার দুইদিন আগে তুমুল জর আর বমি করতে শুরু করলো এদিকে আম্মারও প্রেশার বেড়ে গেল ওর এককথা ও স্কুলে ভর্তি হবে না আর আম্মার কথা ও যদি মরেও যায় তবুও ওর লাশ নিয়ে পি এন সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এ নিয়ে যাবে পরীক্ষা দিতে।।
পরীক্ষার দিন আমি ,আম্মা আর আব্বা মিলে পরীক্ষা দিতে নিয়ে গেলাম।আম্মা সাথে তজবি নিলো আর সেদিন রোজা রাখলো আর কি কি যেন মানত করলো।।অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে পরীক্ষার রুমে রেখে আমরা গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাক্লাম।কিছুক্ষন পরপর স্কুল থেকে মাইকিং করে বলে ওমুক বাচ্চা কান্নাকাটি করছে এসে নিয়ে যান।।আর আমরা দৌড়িইয়ে যাই দেখি কথিকা নাকি?????দেখি না...
পরীক্ষা শেষ করে বের হলো জিজ্ঞাসা করা হলো কেমন হলো পরীক্ষা ?বলে মোটামুটি।।কিন্তু হাড়ির খবর ফাস করে দিলো ওর পাশে যে মেয়ে বসেছিলো।সে অবলীলায় বলে দিলো আন্টি ‘কথিকা একটা অংক ভুল করেছে বিয়োগ না করে যোগ করেছে।আমি মানা করেছি বলেছি এটা বিয়োগ ও বলেছে আমার আম্মু কারো কথা শুনতে মানা করেছে’ আম্মা খুব মন খারাপ করে বাসায় আসলো বাসার অবস্থা এমন হলো যেন কিছুক্ষন আগে এই বাড়ির কারো জানাজা হয়ছে।।
পরেরদিন রেজাল্ট হলো যথারীতি দেখা গেলো সে সেই অংক ভুল করার সুবাদে তার সিরিয়াল অনেক নিচে নেমে গেল কিন্তু চান্স পেলো...
সেই কথিকার কাল এস এস হি রেজাল্ট যথারীতি নো টেনশনে আছে আর আম্মা রোজা ,নফল নামাজ আর কি কি মানত করছে আমার হাত পা শুকিয়ে আসছে আব্বা টেনশনে বেশী করে সিগারেট খাচ্ছে...
আমার বন্ধুরা দোয়া কইরেন ওর রেজাল্ট টা যেন ভালো হয়।।
হুমম; খুব আত্মবিশ্বাসী মনেহয় আপনার বোন; এটা হলে ভালো; ভালো থাকুন; কালকে রেজাল্টের পর মন্ডা-মিঠাই এর ছবি দিয়ে পোস্ট দিয়েন
আরে না.।কাল দেখা যাবে রেজাল্ট আম্মার মনমতো হয় নাই চিল্লায় বাড়ি মাথায় তুলছে আর ও ঠিক ওর মতো আছে।।.।মন্ডা মিঠাই কই পামু?????এখানে এইসব পাওয়া যায় না.।.।.।।।অবশ্য অরডার দিলে ক্যানের রসগোল্লা পাওয়া যায়.।তাও আবার ওভেনে গরম করে খাইতে হয়।
সেটাই তো ভালো; আব্বা-আম্মারা অনেক সময়ি বেশি বেশি করে
অনেক অনেক শুভকামনা ছোট্ট আপি কথিকার জন্য ....
শুভ কামনা রইলো ছোট্ট আপুটার জন্য।
আশরাফ, ঐখানে মিষ্টি আছেতো। কোরিয়ান "তক", লাল-সবুজ-সাদা রং এর চালের আটার মিষ্টি।
ছোট্ট আপুটা যাই করুক, ভালো করুক, ভালো থাকুক, এই কামনা থাকলো।
এই মিষ্টি মানুষরা খাই?????চালের আটা আর ছাতু!!!!!!!!!!শালারা জিনিস পায় না কঞ্চি খায়!!!!!!!আমি সিউল থেকে রসগোল্লা আর পানতুয়া এনে খাই.।
মিষ্টির অপেক্ষায় থাকলাম। আপুটার জন্য শুভকামনা
নেন পাঠায়দিলাম.।
আপনার ছোট বোনটা তো দারুণ! আমার ছাত্রেরও রেজাল্ট দিবে, আমিও চিন্তায় আছি।
ও আসলেই একখান পিস.।.।.।কিছুক্ষন আগে বাসায় ফোন দিছি সে নাকি স্টারপ্লাস দেখতেছে.।।
ইনশাল্লাহ ভালো রেজাল্ট করবেনি ছোট্ট আপুমণিটা । শুভ কামনা থাকলো বোনের জন্য:)
কথিকার জন্য শুভকামনা। নামটা আনয়্যুসুয়াল। কখনো শুনিনি। একটু পরইতো রেজাল্ট জেনে যাবেন
সুখবরটা জানিয়েন।
কিছুক্ষন আগে ফোনদিলাম নেটে রেজাল্ট দেখে.।অভিনন্দন জানালাম।আমারে কয় আমি ব্যস্ত আছি স্কুলে ফটোসেশন করতে হচ্ছে.।.।।।তুমি পরে ফোন দিও।।
এই হচ্ছে আমাদের কথিকা.।.।.।।
ওহ সবাই নিজ দায়িত্বে মিষ্টি খেয়ে নিয়েন.।ও এ প্লাস পায়ছে.।.।।।
এত মায়া দিয়ে লেখছেন লিখাটা! মন ভরে গেলো।
আপনার আপুনিটাকে অভিনন্দন।আর মিষ্টি খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
মায়া দিয়া লিখছি কিনা জানিনা.।.।.।.।.।.।মিষ্টি খাওয়াতে চাই কিন্তু কেমনে খাওয়াব?উপায় বলেন।।
উপায় বলেন মানে?মিষ্টি পাঠান। এইটা কুনু ব্যাপর হৈলো?আপনার আপুনিটা এত ভালো রেজাল্ট করলো আর আমরা মি্টি খাব না তাই কি হয়?
চ্যং ব্যাং এর দেশ থিকা মিষ্টি পাঠামু কেমনে.।.।।ঠিকানা দেন আপনেরে রাজশাহীর মিষ্টান্ন ভান্ডার এর সন্দেশ পাঠায় দেই.।.।।।আর তা না হলে এক কাম করেন নিজের টাকা দিয়া খেয়ে নেন আমি টাকা পরে দিয়া দিমুনে.।.।।
এইটা ফাকিবাজী ... চলপে না...
মিষ্টি চাই
মিষ্টি খাওয়াইতে চাই.।
মিষ্টি চাই

পার্টি দেন, আমরা কথিকার জন্য দোয়া কইরা ভাসায় দিমু
দারুন...
শুভ কামনা।
মন্ডা-মিঠাই কই??

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ মার্কা একটা মিষ্টি পোস্ট চাই
অভিনন্দন আপুকে।
হুররেএএএএএএএএ...খুব ভালো খবর শুনলাম ব্লগে ঢুকেই ! ছোট্ট আপুটাকে অভিনন্দন !!!

মিষ্টি চাই, দিতেই হপেএএএএএএএ কুনু ছাড়াছাড়ি নাইইইইইই..
দারুণ খবরে অভিনন্দন ভাইবোন দু'জনকেই।
কনগ্রাটস ছোট্ট বোনডিরে....... মিষ্টিতে সয়লাব করো মিয়া......
বড়ভাই থাকতে ছুডূ ভাই ???????
ব্রাভো কথিকা দ্যা গ্রেট!!!
টেনশন লইয়া কবে কি হইছিলো?
অভিনন্দন ভাইবোন দুজনকেই
apnar bon onek lucky,onek suvokamona roilo bhai-boner jonne.
এক্সিলেন্ট
কথিকা এর যখন মাসখানেক বয়স তখন ওর জন্ডিস ধরা পড়লো আম্মা সাথে সাথে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গেলো সেদিন আবার পুরা পাড়া মাথায় তুললো কেন ডাক্তার এর কাছে নিতে হবে ওর ধারনা ছিলো ডাক্তার এর কাছে নিলেই ও মারা যাবে কারন কিছুদিন আগে আমাদের পাশের বাসার এক বাবু মারা গিয়েছিলো হসপিটাল এ।
এইটা বুঝলাম না। মাসখানেক বয়সে কথিকা না ছোট ভাই এ অবস্থার অবতারণা করেছিলো?
মন্তব্য করুন