বাস্তবের রাক্ষস-খোক্ষস-ডাইনীরা
ইদানীং আমার সব কিছুই এলো মেলো । কিছুই গুচিয়ে করতে পারিনা । ভাবনারা জঠ পাকায় খালি । লেখালেখি হয়না বহুদিন, অথচ লেখার কত টফিক্স । কত কিছু ঘটে গেল গত দেড় দু’বছরে ! গত বছরের শেষ দু’তিন মাস এবং এ’ বছরের প্রথম মাসে কত সন্ত্রাস হল ! কত মানুষের জান গেল রাজপথে ! গুলিতে, বোমায় ! এরই মাঝে অতি আশ্চর্য একটা নির্বাচণও হল । পুরো দুনিয়া গণতন্ত্রের শিক্ষা এবং দীক্ষা পেল পুঅর বাংলদেশ থেকে । অথচ আমার কিছুই করা হলনা ! অবশ্য আমি একা নই, প্রিয় এ ব্লগটির দু’একজন ছাড়া আর কাউকে যেন ছুঁয়নি ঘটনাগুলো ! তা থাক ওসব ! তারচে বরং নিজের যন্ত্রণার কথা বলি ! আমি কিন্তু লিখতে চাই, নিজের অনুভুতিগুলো রেখে যেতে চাই প্রিয় ব্লগে । কিন্তু হয়না, লিখতে বসলে এলোমেলো হয়ে যায় সব ! চোখের সামনে শৈশবে শোনা রূপকথার দৈত্য-দানো, রাক্ষস-খোক্ষস আর ডাইনীদের বিকট বিকট হা গুলো ভসে উঠে ! অনিদ্য সুন্দর রাজকুমার-রাজকনেদের দেখিনা কোথাও !
শৈশবে খুব উৎসাহী পাঠক ছিলাম । শ্রদ্যেয় চৌধুরী স্যারের প্রিয়ও ছিলাম এ’কারণে । যে কোন প্রশ্ন করা যেত তাঁকে । একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম গল্পের রাক্ষস-খোক্ষসরা আদৌ কি কখনো ছিল বা আছে ? আমার প্রশ্ন শুণে হেসে উঠেছিল পুরো ক্লাশ । স্যার কিন্তু হাসেননি । সবাইকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, ‘হাসছো কেন ? আমাদের চার পাশেইতো উহারা আছে । যারা লিখেন তারা বাস্তবের নিরিখেই লিখেন । জীবনে যা ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা থাকে তাহাই লেখায় উঠে আসে । এখনো দেখার চোখ হয়নি তোমাদের, তাই দেখছনা । বড় হয়ে নিজেরাই দেখবে কত কত রাক্ষস আর ডাইনী চারপাশে’ ।
তো একদিন বড় হলাম । ’৭১ এ দেখলাম বিশাল এক রাক্ষসের [ জেনা বেহায়া] বিকট হা, বাংলাদেশের শ্যামল ক্যানভাস জুড়ে ] । আমার দেখা প্রথম রাক্ষস ! লাখ খানেক পাকি দৈত্য আর গু আজম, নিজামীদের নিয়ে আরো হাজারো দেশী খোক্ষস ! বন্দীনী মা আর গণমানুষের জকুমারকে মুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ল খালি হাতে লাখো মানুষ ! নিজেরা লহুলোহান হয়ে তাড়াল রাক্ষস-খোক্ষসদের । মুক্ত হলো বাংলাদেশ । হলো কি আসলে ?
’৭২ থেকে ’৭৫ এর আগষ্ট, গণমানুষের নেতার কিঞ্চিতাধিক সাড়ে তিন বছরের ট্যেনুর । লক্ষাধিক আদম সন্তান গেল মনুষ্যসৃষ্ট দূর্ভিক্ষের পেঠে এ’সময়ের মাঝে । সরকারের পেটোয়া বাহিনী [ রক্ষী বাহিনী, লাল বাহিনী ] উদরে হজম হলো ৩৯ লাখ বিরোধী নেতা-কর্মী [জাসদের দে’য়া পরিসংখ্যান] । রাজধানীতে প্রকাশ্যে বিক্ষোভরত কৃষকদের মিছিলে গুলি করে হত্যা করা হল ১৩ জন । লাখ লাখ বেল পাট ওপাড়ে পাচার করে গুদাম গুলো জ্বালিয়ে দেয়া হলো । মিল কারখানা গুলো বেসরকারী করণের নামে দলীয় লুঠেরাদের হাতে তুলে দেয়া হলো । আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এত বেসামাল হয়ে পড়েছিল যে সরকারি দলের আটজন এম পি দূস্কৃতিকারীদের হাতে নিহত হয়েছিল এ’সময়ের মাঝে । দেশ জুড়ে ছিল রাজনীতির রাক্ষস-খোক্ষস, দৈত্য-দানো, ডাইনী আর তাদের ছানা কোনার অবাধ বিচরণ । অদ্ভুৎ এক অন্ধকার গ্রাস করল দেশ । সাগর টাল মাটাল, নৌকা ডুবে ডুবে ! নেতা কিন্ত নির্বিকার ! শুভার্থীদের পরামর্শ, বন্ধুদের হুঁশিয়ারি কিছুই কানে নিলেননা । দুধ কলা দিয়ে পোষা সর্প যে ফণা তুলে তলে তলে তৈরী হয়ে আছে সে খবর রাখেননি কেউ । ভাবতে ভিষণ কষ্ট হয় আজো এই ভেবে যে এত এত চেলা-চামুন্ডা থাকতে পতনের পর এক বঙ্গবীর ছাড়া প্রতিবাদ করার সাহস কারো হয়নি আর !
অতঃপর যারা এলেন মুখোশের আড়ালে তারা যে রূপকথার রাক্ষস-খোক্ষস-ডাইনীদেরও বাড়া তা তাদের রক্ত পিপসাই সাক্ষ্য দেয় । মুক্তিযুদ্ধে ভুমিকার জন্য আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা ছিল এক জেনারেলের, মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ছিল, এখনো মনে হয় আছে । দেশ শাসন করলেন পাঁচ বছর । তার সততার কথা অনেকে এখনও বলেন । কিন্তু আমি ভেবে পাইনা কোন সততা বা আদর্শে তিনি গু’ আজম, শাহ আজিজ সহ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের পুনঃর্বাসিত করেছিলেন !
অপর জেনারেল ছিলেন অসম্ভব ধূ্র্ত, সীমাহীণ বেহায়া, নিষ্টুর আর অত্যচারী । ছিলেন নয় বছর । টিকে ছিলেন কথিত গণতন্ত্রের মানসকন্যার সদয় সহযোগিতায় । নুর হোসেন, রউফুন বসুনিয়া, ডাঃ মিলন সহ অসংখ্য বঙ্গ সন্তানের খুনে হাত রাঙিয়ে শেষ পর্যন্ত গেলেন লেংটা হয়ে তিনি । গেলেন কি আসলে ? নানা ভেল্কি, ডিগবাজি আর ছল ছাতুরির মাধ্যমে আজো তিনি টিকে আছেন বাংলাদেশের পঁচা রাজনীতিতে । শুধু টিকে আছেন নন, টিকিয়ে রেখেছেন গোপালী-গোলাপিদেরও । তিনি নাহলে প্রহসেনের নির্বাচনও এখন হয়না । ফাজলামির নির্বাচন জায়েজ করতে তার সমর্থন অতি অবশ্যি দরকার ।
দুই জেনারেলের সময়ে নিহত হয়েছিলেন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা । পাকি রাক্ষসরাও এত এত মুক্তিযোদ্ধা সাবাড় করতে পারেনি । আমার বলার কথা এইযে পাকিদের হাতে সাধারণ মানুষেরাই নিহত হয়েছিলেন বেশিরভাগ ।
এর পর পালা করে এলেন ডাইনীরা । ২০/২২ বছরে কত মায়ের বুক খালি হল তার হিসেব কে নেবে ! রাষ্টীয় তাবত ইনিস্টিটিউশন ধ্বংস করা হয়ে গেছে । বাকি ছিল বিচার বিভাগ । তারো জানাজা হয় হয় ।
আমীন আমীন করা ছাড়া আর করতে পারি আমরা ! আমীন ছূম্মা আমীন !
যাক ভালইতো বললেন। শুধু পড়লাম।
পড়লাম
পড়লাম।
মন্তব্য করুন