একজন চির হাস্যেজ্বল মানুষ , গুরু আযম খান চলে গেলেন...
তখন উত্তর কমলাপুরে থাকতাম আমরা। জসিমউদ্দিন রোড ধরে হেঁটে হেঁটে যেতে হতো মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনীতে। কলোনীতে অবস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তাম। সে অনেক আগের কথা। ক্লাস ফোরের পর ছেড়েছি ঐ এলাকা , ও স্কুল। কিন্তু এখনও মনে পড়ে স্কুল যেতে আসতে প্রায়ই দেখতাম এক প্রিয মুখ। তিনি প্রিয় গুরু আযম খান। জসিমউদ্দিন রোডটার জসিমউদ্দিনের মেয়ের বাড়ীটার কোনাটা পেরোলেই চিটাগাং হোটলের আগেই ছিল গুরুর বাসা। হয়তো খুবই ছোট তখন আমি। কিন্তু গুরুর গানতো সেকালের একমাত্র টিভি চ্যানেল, বিটিভির বদৌলতে চেপে বসেছিল মাথায়। সেই সে গান...আলাল ও দুলাল ...সে কি ভোলা যায়।
তারপর কেটে গেছে অনেক বছর। এসএসসির পর মোশারফ সুইমিং সেন্টারে ( ঢাকা স্টেডিয়ামের সামনে যে সুইমিং পুল, আগে ঐ নাম ছিল)সাঁতার শিখতে যেতাম। গুরুর সাথে দেখা। তার ছেলে বা মেয়েকে সাঁতার শেখাতে আসতেন সম্ভবত। মুখচোরা ছিলাম বলে হয়তো তখনও কথা হয়নি। কেবল গুরুকে দেখেছি বিস্ময় চোখে। এক মহান মুক্তিযোদ্ধা। এক সংগীত গুরু।
তারপর নটরডেম থেকে এইচএসসি পাশ করে ফেলেছি। মতিঝিল ব্যাংক কলোনীতে কিছু বাল্য বন্ধু ছিল। তাছাড়া এক স্কুল বন্ধু ফরিদাবাদ থেকে মতিঝিল কলোনীতে চলে এসেছে। সন্ধ্যায় ওদিকে যাওয়া হলে কলোনীতে ঐ বন্ধূর বাসায় গিয়ে আড্ডা দেয়া হযেছে কয়েকদিন। এক শীতের সন্ধ্যা। বন্ধূটি তার কলোনীর কতিপয় বন্ধুর সাথে ব্যাটমিন্টন খেলার কোটে নিয়ে গেলো। বেশ কয়েকজন সেখানে আবার আমার সেই ছোটকালের পরিচিত মুখও পেলাম। আর পেলাম গুরু আযম খানকে। তিনি সব সমযই দেখেছি সব বয়সের সবার সাথে খেলতেন , আড্ডা দিতেন, মিশতেন। সেদিন গুরুর সাথে কথা হলো। কথা হবার কারন এক সাথে খেলায় নেমে পড়া। আমি আর গুরু এক দলে। গুরু আমার কোটে আমার পাশে খেলছেন। আমি অভিভূত। তিনি র্দীঘদেহী। একটা চাপ ফেরাতে গিয়ে গুরু পড়ে গেলেন। তবুও তিনি হাসছেন। এখনও মনে পড়ে। মনে পড়বে আজীবন। কিন্তু গুরু আর কোনদিন হাসবেন না। একজন চিরহাস্য মানুষ আজ চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।
হুম
এই মহান মুক্তিযোদ্ধা আর গুনী সঙ্গীত শিল্পির জন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধাঞ্জলী রেখে গেলাম । আল্লাহ ঊনার আত্নাকে শান্তি দিন !
কাল আজম খানকে নিয়ে নিয়ে রিপোর্ট লিখেছিলাম। বুক ভেঙে যাচ্ছিল। আবার গর্বও হচ্ছিল মুক্তিযুদ্ধে উনার গৌরবময় ভূমিকার জন্য।
অসাধারণ একজন মানুষ। এরকম মানুষ আর পাওয়া যাবে না।
আপনার লেখাটা ভালো লাগলো।
গুরুকে শ্রদ্ধা
মন্তব্য করুন