আর কি চাই
কখনও ফুটপাতে, কখনও ওভার ব্রিজের সিড়ির মুখে ক্রেচের উপর ভর দিয়ে এক পায়ে দাড়িয়ে, রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সাংবৎসর ভোরে সূর্য উঠার পর থেকে অর্ধ রাতের কিছু আগ অবধি চলে, হাত পেত্, পথ চলা মানুষের কাছ থেকে সৃষ্টি কর্তার দেয়া জীবনটাকে বয়ে বেড়ানোর জন্য জ্বালানী স্ংগ্রহের কাজ। শুধু সে কেন আরও কত রকমের বিকলাংগ প্রতিবন্ধী তার পেশার স্বজাতিকে দেখি, কিন্তু আমার কেন যে তার কথাই, এলোমেলো চুলের ভাংগা চোড়া খুপড়িটাতে বার বার উকি ঝুকি মেরে আঘাত করে। ফেব্রুয়ারী আসে ফেব্রুয়ারী যায় আমার তেমন অনুভূতি হ্য় না।বড় বড় অফিস গুলোয় সাড়া বছর চলে ইংরেজীর ভাষায় ব্যবসা বানিজ্যের লেনদেন, কি দেশীয় কি বৈদেশিক,ব্যক্তিগত মনের ভাব আদান প্রদানের কাজ। যারা যত বড় অফিসার, যে অফিস যত বড় সেখানে তার চর্চা প্রয়োজন বা অপ্রয়োজনেও চলে,নইলে যেন মর্যদার একটু বরখেলাপ হয় আর কি!
আমার কিছু বন্ধু, বড় ভাইয়েরা যারা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,বা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা,ফেবুতে সর্বদা উনাদেরকে ইংরজীতে পোষ্ট লিখতে দেখি,উনাদের মাঝে কেউ কেউ আবার আমেরিকার অত্যন্ত ভক্ত। ফাগুনের আগুন ঝড়া না হলেও নাতিশীতুষ্ণ প্রথম দিনটি উদযাপনের পোষ্টটিও উনারা ইংরেজীতেই দিয়েছেন।
তাই সাড়া দেশে ফেব্রুয়ারী নিয়ে মাতামাতি চললেও আমার তেমন অনুভুতি কখনও আসে না।ইংরেজীর দৌড়ের সীমাবদ্ধতার জন্যই কিনা জানি না আমার মনের ভাব বা কিছু একটা প্রকাশ করতে বাংলাই বেশী সাহায্য করে।একবার শুনলে বা পড়লেই কেন যেন আত্নস্থ হয়ে যায়।নিয়মিত চর্চা ও না লেখার কারনেই কিনা জানি না বানান ভূল আজও আমার পিছু ছাড়ছে না।
কালিয়া সোনারে,
গত নিশি কোথা ছিলে
তোমারও লাগিয়া মালাটি গাথিয়া
ছিড়ে ফেলেছি সকালে।
এটি একটি গানের স্থায়ী, দুটি অন্তরা আছে, একটি আ্মি আত্বস্থ করতে পারলেও এখানে দিলাম না।
ভিন্ন ধরনের সুর, গায়কের গায়কীর ভংগী, কথার যাদু, আমাকে প্রথম শুনাতেই মুগ্ধ করে ফেলে।ভাবছিলাম এবং আজও ভাবি আহা এমন একটি গান যদি লিখতে পারতাম।কিন্তু সবার দ্বারা কি সব হয়, তবে আমি লিখতে না পারলেও, শত, হাজার, লাখ লেখকের লেখায় বাংলার সর্ব শাখা যে কত সমৃদ্ধ তা অন্যান্য ভাষার সাথে তুলনা করার সাধ্য আমার না থাকলেও এমন আবেগময় সংগীত অন্য কোন ভাষায় আছে কি না আমার জানা নাই।
আরম্ভ করে ছিলাম এক পা ওয়ালা ক্রাচে ভর দিয়ে চলা ভিক্ষুক কে নিয়ে। আমি যখনি তাকে দেখি আমার সে সব দেশের কথা মনে পড়ে যাদের নিজস্ব ভাষা থাকলেও নেই নিজস্ব ভাষার বর্ণ মালা।অন্য সাহিত্যের বর্ণ ধার করে তারা তাদের মনের ভাব লিখনির মাধ্যমে প্রকাশ করে যেম্ন, ফিলিপিন, তাদের নিজস্ব ভাষা থাকলেও তারা লেখবার কাজটি করেন, ইংরেজী বর্ণমালায়।সেই রকমই আরও একটি ভাষা হল উর্দু। এটি একটি ভিন্ন ভাষা হলেও লেখনীর জন্য তাদের আরবী বর্ণের সহায়তা নিতে হয়।আর এ এক ঠেং ওয়ালা ভাষাটিকেই নাকি আমাদের এত সমৃদ্ধ বাংলা ভাষার পরিবর্তে আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল।
আমি যতটুকু জানি আরবী ভাষায় “প” বলে কোন বর্ণ নেই।“প”কে লিখতে হলে “ব” এর সাহায্য নিতে হয়। তা হলে কি হল, পাকিস্থান তাদের নিজের দেশের নামটি যখন আরবী বর্ণে লেখে তখন পাকিস্থান না লিখে লিখতে হয়, বাকিস্তান।
একুশে ফেব্রুয়ারী না এলে উর্দু যদি হত আমাদের রাষ্ট্র ভাষা, আর ১৯৭১ সালে আমরা যদি স্বাধীন হতে না পারতাম তাহলে দেড় পা বিহীন উর্দু ভাষায় আমাদের চলতে হলে প্রথম যেটা হত লক্ষ্য করুন।
বাংলায় প্রাণ লিখতে গিয়ে লিখতে হত ব্রাণ, আর এমন কোন শব্দ বাংলা অভিধানে আছে কি না আমার জানা নেই, আপনাদের কারও জানা থাকলে জানাবেন।আর যদি আপনাদেরও জানা না থাকে তবে কি হত দেহ সর্বস্ব বাংগালী জাতি থাকলেও তার প্রাণটা কিন্তু থাকতো না।প্রাণটা হয়ে যেত ব্রান যার কোন আভিধানিক অর্থ নেই।
তাই ফেব্রুয়ারী তোমার ত্যাগের মহিমা না পেলে ফাগুন কি এত রংগিন হত।বসন্ত কি এত রং পেত।
তোমার ত্যাগের মহিমার ছোট্ট চারাগাছটি আজ বড় হতে হতে দেশের সীমানা ছেড়ে ডাল পালা পত্র পল্লবে সাড়া পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
ছালাম, বরকত, রফি্ক জব্বার, মায়ের মুখের ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকারী মহানূভব হে অগ্রজেরা, তোমাদের শিরা উপশিরায় বহমান রক্ত, রক্ত কণিকাও কি শ্বেত কনিকা, লোহিত কনিকা, অনুচক্রিকা এ তিনটি কনিকাতেই সমন্বিত ছিল। আমার তা মনে হয় না।আমার মনে হয় তোমাদের রক্তে আর ও কিছু ছিল নইলে এ রক্ত যেখানে পড়েছিল সেখান থেকে কেমন করে আজ সারা দুনিয়াতে রক্ত স্রোত স্রোতস্বিনী নদীরমত প্রবাহিত হয়ে সবার রক্তের সাথে মিছে একাকার হয়ে গেছে।
পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতি গোষ্টি, ধর্ম বর্ণ বিভিন্ন উৎসব পালন করে। আমরা আমাদের দেশে ধর্ম বর্ণ গোত্র ভেদে বিভিন্ন উৎসব পালন তো করিই, কিন্তু আমরা যে প্রাণের বই মেলাটি পালন করি, তা ধর্ম বর্ণ গোত্র নয় সারা জাতি এমন কি পৃথিবীতে বাংলা ভাষাভাষি যারা আছে তারা সবাই শুধু উৎসব নয় মহা উৎসবে পালন করে।আর তা চলবে, পৃথিবী নামক গ্রহটির যতদিন অস্তিত্ব থাকবে,চন্দ্র সুর্য, গ্রহ, নক্ষত্র উদয়াস্ত হবে।পাখির কন্ঠের সুর বাতাসে বাতাসে ছড়িয়ে পড়বে উত্তর দক্ষিন পূর্ব পশ্চিমসহ দশ দিকে।তখন আমরা নিশ্চিত অবনী পরে থাকব না, কিন্তু আমার মায়ের ভাষা আমার মায়ের মুখের বোল পৃথিবী নামক গ্রহটির সর্বত্র বিরাজিবে।আর কি চাই।
ঢাকা, ফাল্গুন,০২,১৪২০।
ধন্যবাদ বন্ধু,
আপনার লেখাটা পড়ে অমর্ত্যসেন এর একটি কথা মনে পড়ছে। কোথায় যেন পড়েছিলাম। তিনি বলেছেন, পেশাগত কারণে ইংরেজিতে লিখি। কিন্তু মনে হয় বাংলায়-ই সবচেয়ে আবেগটা বেশি প্রকাশ করতে পারি। এমনকি ইংরেজি যখন পড়ি, আসলে সেটিকে নিজের ভেতর বাংলায়-ই বুঝি। বুঝতে হয়।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার বা চর্চার মধ্যে কোন ক্ষতি দেখি না। কিন্তু যখন অন্য একটি ভাষা নিজের মাতৃভাষার উপর প্রাধান্য পায় বা কর্তৃত্ব করতে শুরু করে তখনই সেটি বেদনার।
পোস্ট এর জন্য ধন্যবাদ।
আপনার সাথে আমি একমত। পেশার জন্য এক সময় আমাকে ইংলিশ থেকে হিন্দিতে
অনুবাদকের কাজ করতে হতো। দেশেও আমাকে ইংরেজীর ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু আমার কষ্ট লাগে বিনা কারনে যখন আমার বন্ধুদের ইংরেজীর দক্ষতা দেখাতে লিপ্ত হতে দেখি। আমার সুভাগ্য হয়েছে ইংরেজীতে বেশ কিছু নভেল, আত্নজীবনী ও যুদ্ধের উপর লেখা বই পড়তে। তাদের লেখা, বাচন ভংগি আমার যে ভাল লাগেনি, বলব না। তবে বাংলা ভাষা তার লেখকেরা, তাদের লেখা গান কবিতা গল্প আমাকে বেশি মুগ্ধ করে।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমি বাংগালী না হলে, রবী, নজরুল, লালন,হাছন রাজা, আব্দুল করিম সহ নাম না জানা অসংখ্য গীতিকারের আবেগাপ্লুত এত গান কোথায় শুনতাম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার লেখা পড়া ও মন্তব্য করার জন্য। ভাল থাকবেন।
মন্তব্য করুন