পঞ্চাশ বছর পর আজকের সুন্দর পৃথিবী
সম্ভবত ২৪ বছর পর গতকাল বাবুল ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা হল। এই যান্ত্রিক ও সীমাহীন ব্যস্ত জীবনে স্বার্থ ছাড়া খুব কমই আমরা কেউ কারও খোজ করি।আমিও তেমনই একটি স্বাথের জন্যই বাবুল ভাইকে ফোন করেছিলাম।
বাবুল ভাইকে বাবুল ভাই হিসেবে হয়ত খুব কম জনই চিনবেন কিন্তু যদি বলি আমিনুর রশিদ, আমার বিশ্বাস ফেবুর সকল বন্ধুরাই চিনবেন। উনি আমাদের প্রিয় বাবুল ভাই হলেও আজ উনি দেশের একজন বিশাল বিজনেজ ম্যাগনেট আমিনুর রশিদ। দেশের সুবিখ্যাত ও সুবিশাল কম্পানি Energypac এর সেলস ও মার্কেটিং এর প্রধান আর এই কম্পানিটি দেশের গন্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেও তার শাখা প্রশাখা বিস্তার করেছে।
আমেরিকান রাষ্ট্রদুত ডেন মজিনার সংগে উনার একান্ত বৈঠকের ছবি যেদিন ফেবুতে দেখলাম সেদিন গর্বে যেমন বুকটা ভরে উঠছিল তেমনি হিংসাও হচ্ছিল। উনি আজ এতদুর এগিয়ে গেল আমি কেন পারলাম না? তবে উনি ছাত্রবস্থাতেই আমার/আমাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল তাতে তো কোন সন্দেহ নেই। উনি মিছিলের অগ্রভাগে হাত দুটোকে মিছিলের অস্ত্র বানিয়ে দুর্বার গতিতে যেমন সামনে এগিয়ে যেতেন কর্ম জীবনে সেই গতিকে আরও বেশী গতিতে অব্যাহত রেখেছেন।
উনি আমার ফেবুর বন্ধু।কেমনে কেমনে হল মনে নেই। আমি ব্লগ বাদেও যে গ্রুপ গুলোতে লিখি ঐ লিষ্টে একদিন Radiovubon club নামক একটি গ্রুপ দেখলাম। তারপর থেকে ঐ গ্রুপে ভাঙ্গাচুরা যাই লেখি তাই পোষ্ট করতে লাগলাম।আর আমার একাউন্টেও রিতিমত উনার পোষ্টগুলো আসতে লাগল।
উনার বন্ধুদের যাদের আমি এখন চিনি তাদের সাথে ছবি দেখে চিন্তে পারলাম আমিনুর রশিদই আমাদের বাবুল ভাই।
আমার যে প্রয়োজনটির কথা লেখার প্রথমে লিখেছিলাম তার সমাধানে আমার বন্ধু মিজান মেকানিক্যকাল ইঞ্জিনিয়ার Energypac এ আছে তার কথা মনে পড়ল। সকাল সকাল ফোন দিলাম।
কিরে দোস্ত এত সকাল সকাল?
অফিসে গেলেই তো ডিজিটাল ব্যস্ততায় খুপড়িটা আওলা ঝাউলা হয়ে যায় তাই সকাল সকাল ফোন দিলাম।
অনেক কথা হল সাথে প্রয়োজনটির কথাও বললাম।
আমি নিজেই বাবুল ভাইয়ের প্রসংগ নিয়ে এলাম।উনার সেল নম্বরটা চাইলাম।
মিজান এস এম এস করে নম্বরটি দিল।
অফিস যেতে যেতে ভাবছিলাম আমার নম্বর তো উনি চেনে না।ধরবে কি না? নাকি এস এম এস করে, পরিচয় দিয়ে পরে ফোন করব।
আমি অফিসে পৌঁছে, প্রাথমিক কাজগুলো সেরে ঠান্ডা মাথায় ভাবলাম, প্রথমে ফোন দেই, না ধরলে পরে এস এম এস করব।
বাস্তব সত্য যা তা হল নম্বরটা পাবার পর থেকে উনার সাথে কথা বলার জন্য কেমন যেন ব্যাকুল হয়ে উঠলাম।
ডায়াল করলাম
রিসিভ করে, ভরাট কন্ঠের প্রত্যুত্তর, হ্যালো।
আমি আমার ছাত্রবাস্থার পরিচয় দিলাম। আমি ৮৫ সিরিজের জীবন বলছিলাম। এত বছর পর না চেনারই কথা।
অগত্যা বললাম, আমি ফেবুর আবুল হোসেন বলছিলাম।
ও আচ্ছা, তুমি লেখালেখি কর সেই আবুল হোসেন?
জি, হ্যাঁ।
কেমন আছে?
ভাল আছি।
আপনি কেমন আছেন?
ভাল।
২৪ বছর পর কথা হলেও কোন না কোন পোষ্টে প্রতিদিনই আমাদের যোগাযোগ হয়। বিশেষ করে উনার Radiovubon club এর পোষ্ট গুলোর জন্য।উনি শুধু এ গ্রুপে লেখেন তাই নয় পোষ্ট গুলো পড়ে যা বুঝতে পারলাম উনি বা উনাদের কম্পানি এই গ্রুপ্টির কর্ণধার।অবশ্য এ কথাটা উনাকে জিজ্ঞেস করা হয় নি।
উনি বললেন, তোমার লেখাগুলো ভাল।
আমার সব চেয়ে দুর্বল স্থান। আমার লেখা খারাপ ভাল যাই হউক না কেন, কেউ যদি ভাল বলে আমার কাছে তা যে কতগুন ভাল লাগা হয়ে ফিরে আসে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।আমি অনেক জায়গায় লিখেছি আমি চেয়েছিলাম প্রকৌশলী হতে, হয়েছি, কিন্তু আজ আমার মনে হয় আমি যদি একজন ভাল লেখক বা কবি হতাম আমার নিজকে অনেক বেশী সার্থক মনে করতাম।ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যারিষ্টার হওয়া যদিও এত সহজ নয় তবু এ সব বিদ্যা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু কবি বা লেখক হবার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান আছে বলে আমার জানা নেই। আমার মনে হয় এটা আল্লাহ্ বা সৃষ্টি কর্তা প্রদত্ত। তাই চাইলেই তা হওয়া যায় না।
দুজনের মধ্যে অনেক কথা হল।
আমার মাথায় মাঝে মাঝে উদ্ভট উদ্ভট চিন্তা আসে। গতকাল যেটা মাথার মাঝে বেশী বেশী আঘাত করছিল তা হল, আচ্ছা আমাদের প্রজন্মের বয়সের লিমিট এখন পয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চান্ন এর ঘরে। আর পঞ্চাশ বছর পর আমাদের প্রজন্মের কেউ হয়ত থাকবো না। অগত্যা কেউ যদি থাকে তার কি আজকের মত এ সুন্দ্র পৃথিবীর সকল ভাল লাগা মন্দ লাগার অনুভুতিটা একই রকম থাকবে। তখন কার প্রজন্ম তাকে কি বয়স্ক মুরুব্বী বলে পাশ কাটীয়ে যাবে না। আজকের মত তার কি এতটা গ্রহন যোগ্যতা থাকবে।তখন কার প্রজন্মের কাউকে ফোন করলে সে কি এত উচ্চাস ভরে এত সময় নিয়ে কথা বলবে।
কেউ কি বলবে
তুমি মনের রংগে রং লাগালে
তুমি মর্মে এ সে ঘুম ভাংগালে
মনের রংগে রং লাগালে
আমার মনে হয় না এমন টা হবে, যেমনটা হল বাবুল ভাইয়ের সাথে কথা বলার প্র। আমাকে দেখতে উনার ইচ্ছা হচ্ছে, আমারও উনাকে দেখতে ভীষন ইচ্ছা হচ্ছে।আর এটা কোন সুপার ফেসিয়াল বা ম্ন রক্ষা করার ইচ্ছা নয়, এটা যে মস্তিষ্কের সেট্রাল সেল বা অন্তরের অন্তস্থল, (বটম হার্ট) থেকে, তাই হয়ত বা হুট করে একদিন কেউ কারও অফিসে চলেই আসব এবং সেটা ঘটবে অতি সত্তর আশা করছি।
মার্চ,২১, ২০১৪ খ্রীঃ ঢাকা।
মন্তব্য করুন