বহ্নি জ্বালা
আজ বজ্র যেন হানিছে আঘাত
বহ্নি জ্বালায় জ্বলিছে দেহ মন
অবারিত অক্ষিদ্বয় যেদিকে তাকায় শুধুই শুন্যতা।
ক্ষনকাল অতীতেও যা ছিল
চাঁদ, তারা, নিহারিকা বা উদিয়মান সূর্যের
হাজারও আলোক রশ্মিতে আলোকিত,
ভোরের নির্মল শীতল সমীরণের পরশে
যেমন থাকে দেহমন পরিপূর্ণ।
এ কি কিছু হারানো ?
না কোন কিছু হারানো নয়
কখনও না হারানোর ব্যথাও যে বহ্নি জ্বালাকে হার মানায় আগে বুঝিনি।
দিন পনের ঢাকাতে হেড অফিসে ছিলাম বিভিন্ন কাজ নিয়ে, ডাইরেক্টার স্যার বললেন প্রজেক্ট তো শেষ প্রায়, মানষিক ভাবে প্রস্তুত থাক, অন্য প্রজেক্টে যেতে হবে,
জিজ্ঞেস করেছিলাম,কোথায় যেতে হবে, বললেন না,
তবে খুব যে বেশী দেরী হবে না তা নিশ্চিত হলাম। এত সুন্দর একটা প্রজেক্ট করলাম, ছেলেমেয়েকে দেখানো উচিত,তাছাড়া যমুনা রিসোর্ট, ইকো পার্ক ইত্যাদি জায়গা তো আছেই। গত বছর আমার সিরিজের বন্ধুরা যমুনা রিসোর্টে তিনদিনের পিকনিক টুরে এসেছিল, কিন্তু আমি সময়ের অভাবে তাতে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। প্রজেক্ট চলাকালীন কাজের চাপ এত ছিল যে পরিবার বা কোন আত্বীয়কে সময় দেবার কোন সুযোগ ছিল না।
টুনটুনির(স্ত্রী)সাথে কথা বললাম, ছেলেমেয়ের পড়াশুনা, পরীক্ষা, ওর ডিউটি সিডিউল সব হিসেব নিকেশ করে উপসংহারে যা পাওয়া গেল, তাতে বৃহস্পতিবার এসে শুক্রবারে(মার্চ,১৪,২০১৪) চলে যেতে হবে। বুধবার মেয়ের পরীক্ষা শেষ হবে,শনিবারে ছেলের ক্লাস পরীক্ষা আছে তাই ছেলে আসবে না,শুক্রবারে ওর প্রাইভেট ও কোচিং আছে আসতে হলে তা বাদ যাবে। তবুও ওকে বলা হল ক্লাস পরীক্ষা দশ নম্বরের কিছু হবে না।
ও বলল ক্লাস পরীক্ষায় দশে দশ পাওয়া সহজ আর এ নম্বর ফাইনালে যোগ হয়, তাই এর গুরুত্ব কম নয়। সাথে বই নিয়ে এসো। অগত্যা সে রাজী হল।
বৃহস্পতিবার সকালে ওদের বিমান বন্দর স্টেশনে থেকে ট্রেনে চড়তে বললাম, একমাত্র রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়া সকল ট্রেন যমুনার পশ্চিম পাড়ে সয়দাবাদ অথবা হাজী মনসুর আলী স্টেশনে থামে। কিন্তু ছেলে মেয়ের ঘুম থেকে উঠতে দেরী হবার কারনে ওদের রংপুর এক্সপ্রেসেই আসতে হল। অগত্যা আমাকে গাড়ি নিয়ে যেতে হল যমুনার পূর্ব পাড় থেকে নিয়ে আসার জন্য। আমি যতবার রংপুর এক্সপ্রেসে এসেছি ততবার বিমান বন্দর থেকে ছেড়েছে কোথাও না থেমে শুধু যমুনার পূর্ব পাড়ে এসে থেমেছে। সেদিন যখন ওরা টাংগাইল পৌঁছল তখন আমি গাড়ি নিয়ে বের হলাম। কিন্তু ষ্টেশনে গিয়ে শুনি ট্রেন টাংগাইলে আছে ক্রসিং হবে। আধ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ড্রাইভার বলল স্যার চলেন টাংগাইল যাই কখন ট্রেন আসবে তা কে জানে? আমি বললাম দাড়া আমি ষ্টেশন মাষ্টারকে জিজ্ঞেস করে নেই। মাষ্টার বলল টাংগাইল ছেড়েছে। যাক বাচা গেল।
ট্রেনের ক্রসিং পরে যমুনার পূর্ব পাড়েই হল অথচ মাঝখানে আধ ঘণ্টা একটি ট্রেনকে টাংগাইল কেন দাঁড় করিয়ে রাখা হল আমার মাথায় ঢুকল না। আমার কাছে মনে হয় রেলকতৃপক্ষের কাছে, আধ ঘণ্টা সময় সে আর কি?
যেহেতু প্রজেক্ট শেষের দিকে তাই অনেক সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ইতিমধ্যে অন্য প্রজেক্টে চলে গেছে। যারা আছে তাঁদের মধ্যে টাংগাইলের জাহাঙ্গীর সবচেয়ে সিনিয়র এবং লোকাল হবার সুবাদে স্থানীয় সমষ্যা দেখার জন্য তাকে প্রজেক্টের তল্লীতল্পা গোছানো না পর্যন্ত থাকতে হবে। ওকে বললাম,ভাবিকে আসতে বল। ও নিজেও অনেকদিন আমার ফেমিলি নিয়ে আসতে বলছিল, তাই সাথে সাথে রাজী হল। আমরা আসার আধ ঘণ্টার মাঝে ভাবিও উনার দুই ছেলেকে নিয়ে উপস্থিত হলেন। দুপুরে খাবার টেবিলে সিদ্ধান্ত হল বিকালে যমুনা রিসোর্টে যাব। আমি এর আগে অনেকবার গিয়েছি, আমাদের ডাইরেক্টার একা বা ফরেনার কাউকে নিয়ে এলে ওখানেই রাত কাটান, তাঁর ব্যবস্থা করতেই আমাকে মাঝে মাঝে যেতে হয়।
বিকাল সাড়ে চারটার সময় আমরা যমুনা রিসোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমাদের সাথে আমার জেঠসের বড় মেয়ে IUBAT তে বি বি এ পড়ে অর্থি,যুনায়েদ মৌ সহ আমরা পাঁচজন, জাহাংগীরের দুই ছেলেসহ চার জন।
মাগরেবের নামাজের আগ পর্যন্ত রিসোর্টের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ছবি তোলে আরও যারা ওখানে এসেছে, তাদের মধ্যে ফুটবল বাস্কেট বল খেলা দেখে সে বিকালটা আর দশটা বিকালের চেয়ে আলাদা হয়ে ধরা দিল। দিন আসে দিন যায় সুর্য মামার আসা যাওয়ার পথে কখন ও দেখা হয় না। সে দিন তাঁর সাথেও যাওয়ার পথে দেখা হল।
আমরা যখন সুইমিং পুলে এলাকায় প্রবেশ করলাম, দেখি একটি দলের সবাই বয়ার সাহায্যে সাঁতার কাটছে। তাতে মনে হল কেউ সাঁতার জানে না। সাঁতার আমার ছেলে মেয়ে ও স্ত্রী কেউ জানে না? সাঁতার না জানার জন্য অনেক সময় অনেক প্রতিভাবান যুবক বুয়েট, রুয়েট, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পেশার লোকজন কে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে। আমার ছেলে মেয়েকে সাঁতার শিখাব শিখাব করে আজও শিখানো হল না। অথচ আমি সাঁতার শিখেছি মজা করতে করতে। যতদুর মনে পড়ে সাঁতার শিখার জন্য আমার কোন ওস্তাদ বা লাইবোট বা বয়ার প্রয়োজন হয়নি। গ্রামের বাড়ির পুকুরে কাটা কলার গাছ ফেলে রাখা হত। ওকে সহায়ক করে গোসল করার সময় হাত পা নাড়াতাম। তবে কলা গাছের সাহায্য ছাড়া একাই সাঁতার কাটার দিনটি আমার আজও পরিষ্কার মনে আছে। বর্ষাকাল, কয়েকদিন ধরে আকাশ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কেঁদে চলছে। পানি বাড়তে বাড়তে আমাদের বাড়ির বাহির আঙ্গিনায় চলে এসেছে। ধানের ক্ষেত সব পানির নিচে। সেদিন বৃষ্টি ছিল না। আমরা ঘরের দোড়ে পানি পেয়ে খেলায় মেতে উঠেছি, আমি আমার খালাত, চাচাত ভাইবোনেরাসহ পাড়া প্রতিবেসী সকলে দল বেঁধে লাফালাফি দাপাদাপি করছি। অনেকে সাঁতার কাটছে, আমি বাহির খোলায় কম পানিতে দাপাদাপি করতে করতে এক সময় দেখি আমি কোন কিছুর সাহায্য ছাড়াই পানিতে চলতে পারছি। চিৎকার করে উঠলাম আমি সাঁতার শিখে গেছি, আমি সাঁতার শিখে গেছি। সেকি পাওয়া, সেকি আনন্দ।
সেদিন যদি জানতাম,
ওরে ওরে ওরে
আমার মন মেতেছে
তারে আজ থামায় কেরে?
সে যে আকাশ পানে হাত পেতেছে
তারে আজ নামায় কেরে।
প্রাণ খুলে গেয়ে উঠতাম।। (চলবে)
মার্চ,২৪,২০১৪ খ্রীঃ
মন্তব্য করুন