"ভেবে বলুন তো? "
"ভেবে বলুন তো? "
কবে যে চুলগুলো সাদা হয়ে গেল
টেরই পেলাম না।
উপজাতি পাড়ার,
উরাও ও সাওতাল বন্ধুদের সাথে
হা-ডু-ডু খেলা চলছে
একগেম দুদিন হলো কোন দল হারে না।
খেলা চলছে।
এরই মাঝে
কবে যে চুলগুলো সাদা হয়ে গেল
টেরই পেলাম না।
খেলা নিয়া কাইচাল
দক্ষিণ পাড়ার পোলাদের মারতে হবে
কত জোগাড় যন্ত্র,
মাঝের ঢালী বাড়ির পোলারা কার পক্ষ নিবে
এর জন্য দেন দরবার চলছে
কোনই সুরাহাই হলো না।
এরই মাঝে
কবে যে চুলগুলো সাদা হয়ে গেল
টেরই পেলাম না।
সিংগিয়ার সাথে চন্ডিপুরের ফুটবল খেলা
খেলার মাঠ ছোট খোচাবাড়ি
খেলার দিনের জন্য সাজ সাজ রব
খেলা তো হবে
কিন্তু মারামারি যদি লেগে যায়
তাই
দুটোর প্রস্তুতিই চলছে সমান তালে।
দক্ষিনপাড়া উওরপাড়া,উপজাতি পাড়া
সবাই আজ এক।
নেই কোন মারামারি
নেই কোন রেষারেষি।
চন্ডিপুরেকে জিততে হবে।
গোলকিপার ৭ ফুট লম্বা রাব্বানের (মরহুমের নামটা আজ মনে নেই)
বড় ভাই যে গফুর বাদশা বানেছা পরীর
যাত্রাপালায়, স্টেজ কাপানো দৈত্যের পাট করেছিলেন, তিনি।
সে দুর্ভ্যদ্য
সেই আমাদের সবচেয়ে বড় ভরসা
ভাগ্যের কি পরিহাস তারই হাত ফসকে
বল চন্ডিপুরের জালে।
এক গোলে হেরে গেল চন্ডিপুর।
সব আয়োজন ব্যর্থ।
এক একটা যেন জিন্দামৃত লাশ।
চন্ডিপুরের সমর্থকরা বাড়ি ফিরছে।
সেই যে বাড়ি ফিরতে ফিরতে,
কবে যে চুলগুলো সাদা হয়ে গেল
টেরই পেলাম না।
শীতের দিন, বামন পুকুরে কচুরিপানা টেনে
মাছ ধরা হয়।
সেদিন, মাহমুদ, জয়নাল ও আমি
খুব সকাল সকাল
গেলাম মাছ ধরতে।
আওলা ঝাউলা কতগুলো কচুরিপানা
টেনে তুলে যেই না ঝাড়া দিছি
বেশ বড় একটা শোল মাছ লাফাতে লাগল
যেই না ধরছি, যেন আমাকে এক লাথি মেরে
পানিতে নেমে উধাও।
হারানো শোল মাছের শোকে সেদিন আর মাছ ধরাই হলো না।
শুধু কি সেদিন, সদা সর্বদা সেই শোল মাছ আমাকে
লাথি মারতে লাগল।
এমনকি স্বপ্নেও সেই শোলের লাথি খেতে খেতে
কবে যে চুলগুলো সাদা হয়ে গেল
টেরই পেলাম না।
স্কুলের ঘরে সন্ধা নামতেই
নাটকের রিহার্সাল শুরু হয়।
মেঝো ভাইয়ের ভয়ে
খড়ের বেড়ার ফাক দিয়ে রিহার্সাল দেখি
নাটকে ছোট্ট একটা ছেলের পাঠ আছে।
আহ্ আমাকে যদি এই পাঠটা দিত।
কাইয়ুম ভাই(পরলোকগত) চাচাতো বোনের দেবর
একদিন ডেকে বলল এই নাটকে পাট করবি।
মেঝো ভাই মেরে ফেলবে।
সেটা আমি দেখবো, তুই সন্ধায় আয়,
পাঠ যদি বলতে পারিস তবে
আমি মনে মনে বললাম।
ওসবতো আমার মুখস্থ।
দিনাজপুর থেকে আসা কি যে সুন্দর নায়িকা
তিনি ছিলেন আমার মা।
সর্গ সুখানুভূতি পাওয়া সেই মায়ের সাথে
অভিনয় করতে করতে
কবে যে চুলগুলো সাদা হয়ে গেল
টেরই পেলাম না।
শিশু ও কৈশোরের জীবন নামক নাট্য মঞ্চের
নাটকে অভিনয় করতে করতে কবে যে যৌবনটা
চলে গেল
কবে যে চুলগুলো সাদা হয়ে গেল
টেরই পেলাম না।
আমানারা কি টের পেয়েছেন
ভেবে বলুন তো?
আবুল হোসেন
অক্টোবর ১০,২০২০ খ্রীঃ
মন্তব্য করুন