বৃষ্টি ও অন্যান্য..
তাড়াহুড়া করে চা'য়ের কাপে চুমুক দিতেই ঠোট পুঁড়ে গেল অনীতার।মেজাজ এমনিতেই খারাপ,আরো খারাপ হয়ে যায়।
মেজাজের দোষ দিয়ে অবশ্য লাভ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছে অনীতা,আজ ছিল তৃতীয় সেমিস্টারের শেষ দিন।আগেই ঠিক করা ছিল,আজ ক্লাস শেষে তিনটা'র ট্রেনে বাড়ি যাবে।ছুটির দিনগুলি হলে বসে বসে পড়াশোনা করে নষ্ট করার কোন মানে হয়না!ট্রেনের টিকেট-ও আগেই কাটা।
ক্লাসগুলো ভালোই মজা করে কাটছিলো,সবার মাঝেই ছুটির আগাম ফূর্তি।শেষ ক্লাসে এসে শুধুশুধুই ঝাড়ি খেতে হল,তা-ও আবার অনীতার সবচেয়ে প্রিয় স্যারের কাছে।কারন কী,অনীতার পাশের সিটের মেয়েটা কি যেন জানতে চাইছিল বারবার।হায় রে বিচার!
যাই হোক,ক্লাস শেষে হলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বের হতেই।নিমিশেই শরতের আকাশ মেঘে মেঘে অন্ধকার।শাহবাগ পর্যন্ত আসতেই,বৃষ্টিতে একেবারে কুকুর বিড়াল অবস্থা।কেমন যে লাগে।
একটা সিএনজি-ও নেই।দুপুর দুইটা বাজে,অথচ রাস্তা পুরা খালি।অসময়ের বৃষ্টিতে মনেহয় রোজকার জ্যাম-ও ভেসে গেছে!অনেক বলে কয়ে এক রিকশায় কমলাপুর রেলস্টেশন আসতেই,একদম ভেজা কাক।
পৌনে তিনটা বাজে।গা একটু গরম করতে চা নেওয়া।আর,তাতেই..উফ..এখনো জলছে ঠোট টা..।
চারদিকে ভিড় আর ভিড়।কোনমতে গা বাচিয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা।
হঠাৎ পিঠে একটা হাত..'মা,একটা কথা শুনবে একটু?'..।
বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে ফিরে চায় অনীতা।
একজন বৃদ্ধ লোক,বেশ ভদ্র চেহারা।সাথে এক বৃদ্ধা,ওনার স্ত্রী বোধহয়।
'মা..আমরা কুমিল্লা যাব,,নাতিটা খুব অসুস্থ,ক্যানসার।ডাক্তার বলেছে খুব বেশি দিন নাকি বাকি নেই..আমার মেয়ে কাল ফোন করে বলল,ও নাকি বারবার আমাদের দেখতে চাইছে..তাই,হঠাৎ করেই যাওয়া।টিকেট তো কাটলাম,কিন্তু সিট নেই।আমি দাড়িয়েই যেতে পারব,কিন্তু ওর আবার হার্টের অসুখ..'পাশের বৃদ্ধার দিকে মুখ কাচুমাচু করে চায় বৃদ্ধ।
'তুমি আমার নাতনীর বয়সী-ই হবে..একটু দেখবে,কিছু করা যায় কি না..?'
অসহায় মুখে আবার বলেন বৃদ্ধ।
তখনি আবার স্টেশনের মাইকে শোনা যায়..'ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলী ট্রেন ইঞ্জিনসল্পতার কারনে এক ঘন্টা লেটে বিকেল চারটায় ছেড়ে যাবে'..।
বৃদ্ধ-বৃদ্ধা চেয়ে আছেন এখনো।হঠাৎ করে ওর নিজের নানা-নানুর কথা মনে পড়ে যায় অনীতার।আর ইতস্তত করে না,নিজের টিকেটটা বের করে বৃদ্ধর হাতে ধরিয়ে দেয়।
এতক্ষনে হাসি ফুটে উঠে পাশে দাড়ানো বৃদ্ধার মুখে।অনীতার কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে বলেন..'আল্লাহ তোমার ভাল করুন..বেঁচে থাকো,মা..'।
মৃদু হেসে স্টেশন থেকে বের হয়ে পাশের বাস স্টেশনে গিয়ে কুমিল্লার বাসে উঠে বসে অনীতা।মেজাজ খারাপের রেশ কেটে গিয়ে বেশ ভাল লাগছে এখন।
রাস্তায় বাসের চাকা পাংচার হয়ে অনেকটা সময় নষ্ট হল,বাসায় ঢুকতে ঢুকতে সন্ধ্যা সাড়ে সাত টা।হালকা গোসল সেরে টিভির সামনে বসতেই মা চা'য়ের কাপ নিয়ে এসে রাখে ওর সামনে।আহ,মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে অনীতার।
চ্যানেলে চ্যানেলে ঘুরতে ঘুরতেই চোখ পরে টিভি স্ক্রিনের নিচের দিকে লাল বর্ডারে চলমান ব্রেকিং নিউজে..'আখাউড়া স্টেশনের অদূরে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলীর সাথে মালবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ,শতাধিক আহত-নিহত..রেল যোগাযোগ ব্যাহত..প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রীর শোক প্রকাশ..উদ্ধারকার্য অব্যাহত..তদন্ত কমিটি গঠন..’
টিভি স্ক্রিন টা কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসে চোখের সামনে।কানে ভেসে আসছে কমলাপুর স্টেশনে বৃদ্ধার কথাগুলো..'আল্লাহ তোমার ভাল করুন..বেঁচে থাকো,মা..'।
হাতে ধরা চা’য়ের কাপে আর চুমুক দেয়া হয়না।
মা জানালা টা বন্ধ করতে উঠে যায়,বৃষ্টি শুরু হয়েছে বুঝি আবার…।।
মন খারাপ করেন কেন ভাই?
এইটা তো এম্নি এম্নি গল্প!
এই গলপটা দারুন হয়েছে -----ফাটাফাটি
অনেক অনেক ধইন্যা,আফামনি!
সুন্দর গল্প।

ঠ্যাং খাও প্রিয় প্রিয়পু!

মন খারাপ হয়ে গেলো
দুঃখিত
আপনার লেখনি খুব ভালো। এরকম আরও লেখা আশা করছি আপনার কাছ থেকে।
মন খারাপ হয়ে গেলো। কই থেকে কই নিয়া গেলেন
কি করব বলেন, আপু? গল্প খুবি আজব একটা জিনিস! মাথায় আসেই খুব কম। আসলেও মনে থাকেনা বেশি ক্ষণ। তাও লেখা শুরু টাই থাকে আমার হাতে, বাকিটা লেখা তার নিজের তালে চলতে থাকে। আমার বেশির ভাগ গল্প লেখার সময় আমি নিজেই জানিনা শেষে কি হবে। শুরুটা হয় যেমন ভাবি তাই, অর্ধেক পেরুতেই নিজের মতন চলা শুরু করে দেন তিনি!আজব!!
ভাল লিখেছেন । নিয়মিত লেখা আশা করি
ধন্যবাদ।
হ্যাপি এনডিং দেওয়া যাইতো না???????

কি করব বলেন, আমরা যা যা দেখি তাই তো আমাদের লেখায় উঠে আসে তাই না? যখন লাইফ হাসবে তখন না হয় গল্পেও হ্যাপি ইন্ডিং আসবে!
আপনাকে তো আজকাল দেখাই যায়না।ভাল আছেন তো?
ভাই, আছেন কিরাম?
ভালাঅই!চলে আর কি!
মন্তব্য করুন