দীপঙ্কর বেরা'এর ব্লগ
আসে যায়
আমি সরলা। আমরা তো গরীব তাই আমাদের বাড়িতে কোন বিড়াল থাকে না।
আমাদের চার পাঁচটা বাড়ির পরে দত্তদের বাড়ি। ওদের বাড়িতে চার পাঁচটা দুধ সাদা বিড়াল। আমি স্কুল যাওয়ার পথে দেখতাম বেড়ালগুলো ওদের বাইরের সোফায় বসে থাকত। কখনো বা গিন্নীমার পায়ে পায়ে ঘুরত। কোন কোন সময় ওদের পরীর মত মেয়েটা টেবিলে বসিয়ে ওদের খাওয়াত।
যেদিন স্কুল থেকে ফেরার পর ঘরে দেখতাম একটুও খাওয়ার নেই তখন ওই খাওয়ারের কথা মনে পড়ত। আহা রে! বিড়ালও খেতে পাচ্ছে। রাতে বাবা চাল ডাল আনলে সেই ভাতের গন্ধে আমি দাদা দিদি গোল হয়ে উনুনের পাশে বসতাম। দূরে একদিন একদিন দেখতে পেতাম বিড়ালের চোখ।
ভয় পেতাম না। কেন না খাওয়ার সময় এলেও কাছে ঘেঁষত না। তখনই বুঝতে পারতাম এ দত্ত বাড়ির বিড়াল। রাতে একটু টহল দিতে বেরিয়েছে।
বইমেলার বিকিকিনি
- এই দিদিতা, এই বইটা কিনি? অল্প পয়সায় বেশ ভারিক্কি আছে।
- তুই কি পাগল হলি? মমিন। চিনিস ওই লেখককে?
- তা চিনি না। তবে নতুন লেখকের বই কিনলে লেখক উৎসাহ পাবে।
- ধ্যাৎ। কিসব লেখা!
- না পড়ে তো আর খারাপ ভাল বলা যায় না?
- কত লেজেণ্ট পড়ে আছে পড়া হয় না, তো এদের পড়ব কি না কে জানে? তাই নাম ভারিক্কি বই কিনি চল।
- ঠিক বলেছিস। তা না হলে, বইগুলো সাজিয়ে ফেসবুকে যখন পোষ্ট দেবো সবাই ছ্যা ছ্যা করবে? একটাও লাইক পাব না। প্রেস্টিজ চলে যাবে।
- যা বলেছিস? কবে পড়ব কিংবা আদৌ পড়ব কি ঠিক নেই।
- চল, বইমেলায় যখন এসেছি কিছু বই কিনেই ফেলি। লেটেস্ট।
দুজনে প্রসিদ্ধ প্রকাশনায় ঢুকে বইটই কিনে বেরিয়ে ফিস ফ্রাই খাচ্ছে। আবার দিদিতা - এসব প্রকাশনায় সেই পুরোন লেখক আর পুরোন বই রিপ্রিণ্ট হচ্ছে। নতুন লেখকদের এরা সুযোগ দেয় না। কি রে মমিন, তাহলে নতুন লেখকের বই কিনব কেন?
ময়লা
অফিস যাওয়ার জন্য বাস ধরতে আমি যেখানে অপেক্ষা করি তার পাশেই একটা বড় ড্রেন । ছেলেটা একটা লম্বা বাঁশের আগায় টিনের হাতল বেঁধে সেই ড্রেন থেকে নোংরা পরিস্কার করে জমা করে । একটু পরেই ঠেলা গাড়ি করে আর একজন সেগুলো তুলে নিয়ে যায় । তাতে কত সব দেখি । কি নেই ?
রাস্তাঘাটে ঘরে বাইরে যা দেখি সবই থাকে এর মধ্যে । পচা গন্ধ ছাড়ে কুকুর টানাটানি করে । ছেলেটি তাদেরকে তাড়ায় ।
আমি প্রায়ই দেখি । বাস আসতে দেরি । নাকে হাত চাপা দিয়ে কিছু বাক্যালাপ করি - আজকে যে আরো বেশি গন্ধ ছাড়ছে !
ছেলেটি দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল - কাল রবিবার গেছে । রাস্তার ধারের মাংস দোকানের সমস্ত পড়েছে ।
- কেন ? ওরা কি এ সব ?
হা হা করে হেসে ফেলল - এখানে ফেলার লাইসেন্স আছে যে । সবাই ফেলবে বলেই না আমরা কাজ পাই ।
আমি ভাবি তাই তো একজনের বেহিসেবী রাস্তা আর অন্যজনের হয়তো সাংসারিক হিসেব ।
হৃদয়ের দু চার টুকরো
তোমারই হাতে হাত ধরে
হাঁটতে হাঁটতে পেরিয়ে আসি
একটার পর একটা জীবন সীমানা ,
মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়া রাস্তায় দাঁড়াতে শিখে গেছি ।
কত রকমের ব্যাখ্যায় সূচিত জীবন
মেরুকরণ ঘটে যায় দিগন্তের আভায় ,
বুকের মাঝে পাথুরে সংসারেও গোলাপ ফোটে
হাট বাজার বসে যায়
মুক্তিতে মুক্তো মালা
পসরা সাজানো বাগান
কচি ঘাসের কান্নায় রোজ দিনবসান ঘটে যায় ।
তুমি মাড়িয়ে যাবে তাই শিশিরের মিছিলে
কেন জানি না বারে বারে হাহাকার ওঠে ;
বিষ হয়ে যায় অযাচিত যন্ত্রণা
বিকেলের রোদে ঘন আলোড়ন তুলে
কারা যেন কাক চিলের আড্ডা জমায় ,
আমাদের ভাঙা পাঁজরে আজ আবার আবাহন মন্ত্র
স্ব-উচ্চারণে যুগ ধ্বনিত করে
আর আমি তোমার হাত ধরে
পৌঁছে যাই অনিন্দ্য আলোর আপন বিভবে ।
-০-০-০-
শরৎ
১
কাশবনে ঢেউ খেল যায়
বুকের ভেতর বলে যায়
ওই এলো ওই এলো রে
আবার শরৎ এলো রে ।
২
পেঁজা মেঘের নাও ভেসে
যায় চলে যায় দূর দেশে
খুশির স্বপ্ন ভাসায় ভেলা
শিউলি ঝরে ভোরবেলা ।
৩
শাপলা ফোটে পুকুরে
হাল্কা রোদের দুপুরে
উচ্ছ্বাসে রঙ মাখছে
আগমনী সুর গাইছে ।
দুটি লিমেরিক
জীবন চিত্র
রঙের সাথে রঙের লাগিয়ে ক্যানভাসে ভাসে জীবন
সব রঙেতেই সাদার খেলায় ফুটে উঠছে ছবির মন
এক ফ্রেমেতে ভাবনা কত
লুকিয়ে আকাশ অবিরত
আঁকছে মানুষ হাজার বার্তা রোজ পথের অনুরণন ।
মেঘ তুই
আমার উঠোন ভিজিয়ে দিয়ে যাস কোথা তুই মেঘ
প্রেমের কদম ফুলেও যে তোর আঁচলভরা আবেগ
এ পাড়া আর ও পাড়াতে
যাস ছুটে তুই সই পাতাতে
আমার বুকে কান্নাতে ও মেঘ দে ঝরিয়ে সব উদ্বেগ ।
-০-০-০-