আসে যায়
আমি সরলা। আমরা তো গরীব তাই আমাদের বাড়িতে কোন বিড়াল থাকে না।
আমাদের চার পাঁচটা বাড়ির পরে দত্তদের বাড়ি। ওদের বাড়িতে চার পাঁচটা দুধ সাদা বিড়াল। আমি স্কুল যাওয়ার পথে দেখতাম বেড়ালগুলো ওদের বাইরের সোফায় বসে থাকত। কখনো বা গিন্নীমার পায়ে পায়ে ঘুরত। কোন কোন সময় ওদের পরীর মত মেয়েটা টেবিলে বসিয়ে ওদের খাওয়াত।
যেদিন স্কুল থেকে ফেরার পর ঘরে দেখতাম একটুও খাওয়ার নেই তখন ওই খাওয়ারের কথা মনে পড়ত। আহা রে! বিড়ালও খেতে পাচ্ছে। রাতে বাবা চাল ডাল আনলে সেই ভাতের গন্ধে আমি দাদা দিদি গোল হয়ে উনুনের পাশে বসতাম। দূরে একদিন একদিন দেখতে পেতাম বিড়ালের চোখ।
ভয় পেতাম না। কেন না খাওয়ার সময় এলেও কাছে ঘেঁষত না। তখনই বুঝতে পারতাম এ দত্ত বাড়ির বিড়াল। রাতে একটু টহল দিতে বেরিয়েছে।
একদিন দিদির পেছনে পেছনে একটা দুটো বিড়াল আসত। দিদি মুড়ি দিত খেত না। বিস্কুট দিত খেত না। তারপর মিউ মিউ করে চলে যেত। দিদি রেগে মেগে বলত - যাহ। ভাগ এখান থেকে।
কিন্তু বিড়াল বেশিদূর যেত না। তার সাথে দেখি আরো দু একটা আসে আবার চলে যায়।
এর মাঝে আমার স্কুল ক'দিন বন্ধ। আমিও আর ঘর থেকে বেরই না। আমি একদিন পড়ছি দেখি একটা একটু দূরে দাঁড়িয়ে। আমি বিস্কুট এনে মিউ মিউ করে ডাকলাম। বিড়ালটা এল। কিছুক্ষণ দেখল। তারপর খাব না খাব করেও বিস্কুট খেল।
দিদি দেখতে পেয়ে বকা দিল - কি রে খেতে দিলি?
তারপর থেকে একটা দুটো করে প্রায় তিন চারটে হাজির। আমাদের বাড়িতে থাকে না। তবে আসে। খাবারের গন্ধ পেলে দাঁড়ায়। আমি একটু আধটু দিই।
সেদিন দত্তদের বাড়ি পেরিয়ে পুকুরে কলমী শাক তুলতে গিয়ে দেখি দত্তদের বাড়ি বন্ধ।
আমার মা বলল - ওরা শহরে চলে গেছে আর আসবে না।
সেই থেকে বিড়ালগুলো আমাদের বাড়িতে প্রায়ই আদর খেতে আসে।
মন্তব্য করুন