ইউজার লগইন

শ্যাওলা

দুইজন চুপচাপ বসে আছে। পার্কের এদিকটায় অন্য লোকজন একটু কম আসে। জোড়াদের ভারি পছন্দ। নিরিবিলি। শান্তি করে বসা যায়।এখানে জায়গা পাওয়াটা ভারি ভাগ্য। মাঝে মাঝে অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকতে হয়।
দুই জন চুপচাপ বসে। মাথার উপর ঝাপড়া গাছের ছায়া। ডালের উপর বসে একটা কাক ডাকছে অনেক্ষন ধরে। ছেলেটা উদাসীন। মেয়েটা সাবধান ।কাক যদি ইয়ে করে দেয়, তো ভারি বিপদ। কাছে পিঠে কোথাও পানিও নেই।
দুইজন চুপচাপ।একজন বলল-‘শুধু প্রেম করলে কেমন হয়? ডেট না, সেক্স না, বিয়ে না…কক্ষনো দেখা করতে হবে না…ফোন, এসএমএস, ই মেইল না…শুধু আমরা দুজন জানবো আমাদের ভেতর অনেক প্রেম…একজন আরেকজনের জন্য বেঁচে আছি…কেমন হয়?’
ছেলেটা কিছু বলে না। ছেলেটা কিছু ভাবেও না।বসে বসে বেঞ্চের শ্যাওলা নখ দিয়ে খোটে।আর মেয়েটার কথা শোনে শুধু। মেয়েটা বলে যায়-‘তাহলে আমাদের কেউ সন্দেহ করবে না…তোমার কথা আমি কোনদিন কাউকে বলবো না…তুমিও বোলনা…’
ছেলেটা শুকনো মুখ করে বলে-‘মানে তোমার স্বামী টের পাবে না…সেইটা বলছো?’
মেয়েটার গলা চড়ে যায়, সামান্য ক্ষ্যাপাটে শোনায়-‘শোন এখনো বিয়ে হয়নি…কাজেই সে আমার স্বামীও হয়নি।’
ছেলেটা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, বলে-‘এখনো হয়নি…পরশু রাত থেকে হয়ে যাবে…।’
মেয়েটার চোখ টলমলে, গলায় ক্ষীন কাপুনি-‘যখন হয় তখন বোলো…’
ছেলেটা মুখ ফেরায়-‘কি লাভ…?’
মেয়েটা বলে-‘মানে …?’
ছেলেটা আবার বলে-‘কি লাভ মনে রেখে…? বাবা মা বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। স্বামী সাথে করে বিদেশ নিয়ে যাবে। তোমার সাথে আমার আর কোনদিন দেখা হবে না।’
মেয়েটা কিছু বলে না। ছেলেটাও কিছু বলে না। বসে বসে কেবল বেঞ্চের শ্যাওলা তোলে নখের আগা দিয়ে।
এইভাবে অনেকক্ষন কেটে যায়। একসময় মেয়েটা বলল-‘উঠি…মা খোজ করতে শুরু করে দিয়েছে এতক্ষনে।’
ছেলেটা ফোস করে একটা শ্বাস ছাড়ে। মেয়েটা উঠে ব্যাগটা কাধে ঝোলায়। ছেলেটা প্যান্ট ঝেড়ে উঠে দাড়ায়।তারপর দুইজন দুদিকে হাটা দেয়।কেউ জানে না তাদের আবার দেখা হবে কিনা।হয়তো হবে হয়তো হবে না। শ্যাওলা তুলে তুলে ছেলেটা যে বেঞ্চের গায়ে দগদগে ঘা করে দিল, নতুন শ্যাওলা জমে একদিন সেই ঘা আবার ভরে যাবে। সব কিছু আবার হয়ে যাবে আগেরই মতন। কেননা কোথাও না কোথাও দুজন মানুষ তৈরি হচ্ছে এই বেঞ্চটাতে বসার জন্য। তাদেরই কোন একজন এখানে বসে শ্যাওলা তুলতেও পারে নাও তুলতে পারে।কিন্তু বেঞ্চটা ঠিকই প্রস্তুত হয়ে থাকবে…আরেকটা দগদগে ঘা দিয়ে লিখে রাখবে দুইজন মানুষের বিচ্ছেদের অতিসংক্ষেপ ইতিহাস।

পোস্টটি ১২ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

বিষাক্ত মানুষ's picture


বাহ ! ভাল লিখছেন ...

দু’টো মানুষ
এসাথে কত পথ চলা
হাতে হাত রেখে কথা বলা
কেন সব করে অবহেলা
কেন শেষ-মেষে এসে বিদায়

লীনা দিলরুবা's picture


লেখাটা খুব ভাল লেগেছে।

জেবীন's picture


ভালো লিখেছেন! .।.। Smile

অনেকসময় এমনো হয়। কেবল মেয়েটা নয় ছেলেরাও এমনি করে মনে রাখে সেই তারে যার কথা কাউকে বলা যায় না, যাকে মন দিয়ে চেয়েও পাওয়া যায় না, কিন্তু যার স্মৃতি কখনো অম্লান হয় না, এবং স্পষ্টভাবে জানে অন্যপক্ষও একই পরিস্থিতিতে পথ চলছে।

জ্যোতি's picture


খুব ভালো লাগলো গল্পটা।

টুটুল's picture


চমৎকার লেখা

আরাফাত শান্ত's picture


মুগ্ধ হলাম!

সুদূরের পিয়াসী's picture


শ্যাওলা খুটে দগদগে ক্ষত
রক্তক্ষরণ চলে অবিরত
আরো চলে যায় দুটি দেহ দুরে
বাধা পড়ে থাকা দু'হৃদয় পুড়ে !

মীর's picture


আমার ধারণা, আপনে স্বাধীনতা স্তম্ভের পেছন দিককার কথা বলেছেন।
ধারণা অবশ্য ভুলও হতে পারে। Smile

একজন মায়াবতী's picture


ছোট্ট লেখা কিন্তু খুব ভালো লেগেছে। Smile

১০

তানবীরা's picture


লেখাটা খুব ভাল লেগেছে।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

কাওছার শাকিল's picture

নিজের সম্পর্কে

...একজন সাদা-মাটা, ছোট-খাট লোক।

সাম্প্রতিক মন্তব্য

kawsershakil'র সাম্প্রতিক লেখা