ইউজার লগইন

দিনলিপি

বিশ্রী একটা সময় যাচ্ছে, সকল দরজার সামনে " অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন, আপনার কথাও আমরা শুনবো" সাইনবোর্ড ঝুলছে। খুব বেশী গভীর না হলেও আজকে দীর্ঘদিন পর তৃপ্তির ঘুম ভাঙলো যথারীতি ছেলে মেয়ের ঝগড়া শুনে। সেই ঝগড়া অগ্রাহ্য করে পাশ ফিরে শুয়ে থাকলাম। দুপুরে রোজার নিয়ম ভেঙে বাইরে বের হলাম। ঢাকা শহর মোটামুটি ফাঁকা। ব্যাংকের চাকুরীজীবী, গার্মেন্টস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ এবং যাদের গ্রামের ভিটার ঘুঘু চড়ছে তারা বাদ দিলে জীবিকা এবং শিক্ষাগত প্রয়োজন যারা ঢাকায় বসবাস করে তাদের অধিকাংশই দেশের বাড়ী চলে গিয়েছে।

এই কয়েক দিনের ঢাকা শহর দেখে বুঝা যায় শহরের অবকাঠামো খুব্ বেশী হলে এর দ্বিগুণ মানুষের ধকল সহ্য করতে পারে কিন্তু বাস্তবে ঢাকা শহরের ৮০% মানুষই বহিরাগত। সমস্ত কর্মকান্ডের কেন্দ্র ঢাকা ফলে এই বিপুল সংখ্যক মানুষের সাথে যুক্ত হয় আরও অসংখ্য মানুষের চাপ যাদের ঢাকায় আসার কোনো প্রয়োজনই হতো না যদি প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ যথাযথ হতো, যদি মফস্বলেও ঢাকার সমান মাণের চিকিৎসা পাওয়া যেতো, যদি সেখানেই ঢাকার সমান মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকতো।

সারা দেশেই নগরায়নের কোনো মহাপরিকল্পনা নেই, ডোবা আর চাষের জমি দাগ কেটে বিক্রী হচ্ছে- জমি ব্যবহারের মহাপরিকল্পনাতের জমির সর্বচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্যে চাষের জমি, মাছের জমি, ফলের জমি আর মূলের জমির সাথে আবাসনের জমিও চিহ্নিত করা থাকবে এমনটা সরকারের মহৎ পরিকল্পনার অংশ ছিলো- সেই মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদিত হওয়ার আগেই নদীর বুকে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্লট বিক্রী শুরু হবে।
যদি মাটির লোভের কাছে এভাবে প্রশাসন বিক্রী না হয়ে যেতো তাহলে আমরা স্থানীয় পরিবেশবৈচিত্র এবং পর্যটন সম্ভবনাকে কেন্দ্রে রেখে আমাদের নগর পরিকল্পনা এবং নাগরিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেলতে পারতাম। এমনটা ঘটে নি।

গতকাল রাতে দীর্ঘদিন পর সিনেমা দেখলাম। আসগর ফরিদীর দি পাস্ট। মূলত সংলাপনির্ভর ছবি- দাম্পত্য সম্পর্কে কত ধরণের খুচরো ঝামেলা থাকতে পারে এবং জীবনে কত অনর্থক ঘটনার অহেতুক জের টানতে হয় মানুষকে এসব সাম্ভাব্য ঘটনার চিত্রায়ন। ছবির সকল ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুটা এতই তুচ্ছ- সেই তুচ্ছ বিষয়টা যে এতগুলো জীবনের ভেতরে টানাপোড়েন তৈরী করতে পারে সেটুকু ভাবাও যায় না। তবে এইসব তুচ্ছ মনে হওয়া এবং মনে না হওয়া আসলেই অনেক ধরণের সম্পর্কে বিচ্ছেদও ঘটাতে পারে।
আজকে বসুন্ধরা মার্কেট থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় এক জুটির পেছনেপেছনে হাঁটতে হাঁটতে বের হলাম। সুশ্রী, সুতনু ধর্মপ্রাণ তরুনী তার প্রেমিককেনিয়ে বসুন্ধরা এসেছে যেখানে তার বাবার এবং শ্বশুরবাড়ীর আত্মীয়স্বজনেরাও কেনাকাটা করছে- মেয়েটার স্বামী মেয়েটাকে গুরুত্ব দেয়, দুই পরিবারের ভেতরেই সদ্ভাব আছে, দূর থেকে দেখলে এইরকম একজন তরুনীর অন্য কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। শাররীক চাহিদা পুরণের তীব্র কোনো তাগিদ নেই, মানসিক চাহিদা কিংবা নিজের রোমান্টিসিজম পুরণ করার কোনো লক্ষ্য থেকে যদি এমন কোনো সম্পর্ক তৈরী হতো- হয়তো সেই সম্পর্ক তৈরীর একটা কার্যকারণ খুঁজে পাওয়া যেতো। তাদের পারস্পরিক আচরণ দেখে মনে হয় নি শাররীক চাহিদা পুরণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাদের দুজনের ভেতরে আছে। অনেকগুলো সাম্ভাব্যকারণের ভেতরে একটা হতে পারে একটা মোটামুটি নির্বিষ অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার এক ধরণের উত্তেজনা আছে- এই উত্তেজনার ভেতরে প্রেম নেই, কামজ কোনো কিছুই নেই- মানসিক উত্তেজনা আছে নিশ্চিত ভাবেই। এই সম্পর্ক শুধু সেই মানসিক উত্তেজনার রসদ সরবরাহ করছে। আমি বিবাহিত অবস্থায় একটা সম্পর্কে জড়াতে পারি এবং নতুন একটা জীবন চাইলেই শুরু করতে পারি কিন্তু নেহায়েত চাইছি না বলেই করছি না ধাঁচের একটা পরিস্থিতি।

সেখান থেকে ইফতারীর আগে আগে গেলাম বেইলী রোডে, সেখানে বসবাস ছেড়ে দেওয়ার পর গত ৪ বছরে ৪ বারও যাওয়া হয় নি সেখানে। নতুন নতুন মার্কেট হয়েছে, আগের ঐতিহ্যগুলো টিকে আছে, নতুন খাওয়ার দোকান তৈরী হয়েছে, ঈদ মৌসুমে যথারীতি জমজমাট পরিস্থিতি। কর্মজীবী স্বাধীন নারীর বাংলাদেশের কান্ট্রি সিম্বল সম্ভবত সেলাই ম্যাশিন। একজন নারী উদ্যোক্তা বুটিক শপ আর বিউটি পার্লারের বাইরে গিয়ে কিছু ভাবতে পারে না। নারী উদ্যোক্তাদের নিয়মিত লক্ষ্য থাকে মিনা বাজার আয়োজনের। সব মিনাবাজারের চরিত্র একই রকম। একই রকম নারীরা, প্রায় একই রকম ডিজাইনের থ্রিপিস, ব্যাগ আর হাঁড়িপাতিল নিয়ে একই ধরণের দোকান সাজিয়ে বসে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী লেখিকা সংঘের মতো নারী উদ্যোক্তা পরিষদও এক ধরণের অথর্ব প্রতিষ্ঠান। ১৪০০ রপ্তানীমুখি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ২টি গার্মেন্টসের মালিক নারী- তারা পারিবারিক কারণে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন না কি নিজেরাই একেবারে ছোটো থেকে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন আমার জানা নেই-
পুরুষেরা আমদানী-রপ্তানীর ব্যবসা করছে- সফটওয়্যার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান খুলছে, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান খুলছে- সেলাই ম্যাশিনে ফুল তোলা বাদ দিলে বাংলাদেশে শুধুমাত্র এনজিও ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তার অংশগ্রহন বেশী,। দুঃখ-দুর্দশার কল্পকথা ফেঁদে বিদেশী টাকা নিয়ে দেশের দুঃখ দুর্দশা হ্রাসের মহাপরিকল্পনা , দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানের সংগ্রামের ভেতরে নির্মম ছলচাতুরি আছে। আমি চাই মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ঢাকায় একবার সারা দেশের নারী সফট ওয়্যার নির্মাতাদের সম্মেলন হোক। কয়েক হাজার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের ভেতরে ২০০০ নারী শিক্ষার্থী অবশ্যই পাওয়া যাবে, তারা নিজেরা কেনো একটা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারছে না, কি কি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কারন এই ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহনকে সীমিত করছে সেসবও অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।

রাতে এক বন্ধুর বাসার কিছু দূরে দেখলাম যাকাত প্রদানের মচ্ছব চলছে। কেউ একজন যাকাত দিচ্ছে। যাকাতপ্রার্থীদের লম্বা লাইন, একটা ব্যাগে একটা লুঙ্গী, একটা পাঞ্জাবী আর একটু টুপি দেওয়া হয়েছে, ঈদ আনন্দ সবার সাথে ভাগ-বাটোয়ারার মহত্তর উদ্যোগ। যেই প্যাকেটে যাকাত বিনিময় হচ্ছে সেখানে যাকাতদাতার নাম লেখা, এক পাশে বাংলায় অন্য পাশে ইংরেজীতে, বলা যায় না যেভাবে সুচকের পর সূচক ডিঙিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অচিরেই ইউরোপ আমেরিকা থেকে দরিদ্র মানুষেরা বাংলাদেশের যাকাতের লাইনে দাঁড়াবে, তাদের জন্যে ইংরেজীর পাশাপাশি- স্প্যানিশ- গ্রীক আর ফ্রেঞ্চ ভাষায় নিজের নাম ঠিকানা লেখা ব্যগ তৈরী করতে হবে। কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করতে দেশওয়ারী বুথ খুলতে হবে।

মানুষ নিজের প্রদর্শনী করে, হুমায়ুন আহমেদ আর হুমায়ুন রশীদের ভেতরে এখানে তেমন পার্থক্য নেই। একটা সময়ে মানুষ নিজের বিত্ত বৈভবের প্রদর্শনী করতে বাসার সামনে লাখের বাত্তি জ্বালাতো, একটা সময়ে নিজের নামের পদবী বদলাতো- এখন হাইওয়েতে হাজার হাজার টিউব লাইট জ্বলছে, এখনতো লাখের বাতির নামে বাসার সামনে বাঁশের ডগায় হ্যারিকেন ঝুলালে নিজের সম্পদের প্রদর্শনীটা হাস্যকর হয়ে যায় , সময় বদলেছে, এখন উচ্চাভিলাষবিহীন মানুষেরা বিজ্ঞাপন দিয়ে যাকাত দেয়, যে বাসার সামনে যত লম্বা যাকাতের লাইন সে তত বেশী অভিযাত। বিত্তবৈভব প্রদর্শণের সবচেয়ে কুৎসিত ভঙ্গি সম্ভবত এটাই।যাদের বাসার সামনে যাকাতের লাইন দাঁড়ায় না, এইসব অভাগারা মা বাবার নামে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে কিংবা নিজের জমির একটা অংশ মসজিদের জন্যে দান করে দেয়।
যাদের কিঞ্চিৎ উচ্চাভিলাষ আছে, তারা প্রথমে একটা সংবাদপত্রের সার্কুলেশন নেয় আর বর্তমানের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সাংসদের সাথে শেয়ারে টেলিভিশন চ্যানেলের দেনদরবার করে- এরচেয়ে বেশী টাকা হলে ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডে স্থান পেতে চায়, তারচেয়ে বেশী টাকা হলে মন্ত্রী মিনিস্টারের সাথে পার্টনারশীপে ব্যাংক ব্যবসায় নেমে যায়।

ফেসবুক এখন আমাদের এইসব প্রদর্শনীর কাজটা সহজ করে দিয়েছে, আত্মতৃপ্তির জন্যে অনেক ধরণের স্ট্যাটাসবাজী করছে মানুষ। বন্ধু তালিকা আর ফলোয়ারের সংখ্যা নিয়ে যে ধরণের টানাটানি- লাইক গুনে অর্গাজমের তৃপ্তি পাওয়া বাঙালীর রাগমোচনের ধরণ-ধারণ দেখে অনেক ধরণের অশ্লীল উপমা মাথায় আসে। যাদের বন্ধু তালিকা ৫ হাজারের ঘর ডিঙিয়েছে তারা একই নামে নতুন একটা ফেসবুক আইডির শাখা অফিস খুলে সেখানে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধু তালিকা লম্বা করে। ফেসবুকের ফলোয়ার এবং বন্ধু তালিকার বন্ধু সংখ্যা সম্ভবত এক ধরণের অলীক ক্ষমতার স্বাদ দেয় এদের। আমি মাঝেমাঝে চিন্তা করি এই ধরণের আত্মপ্রদর্শনীর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত মানুষগুলো যখন সত্যি সত্যিই ক্ষমতাবান হয়ে উঠবে, যখন তাদের বিজ্ঞাপন দিয়ে যাকাত দেওয়ার ক্ষমতা হবে তখন তারা কি ধরণের আত্মপ্রদর্শনীতে লিপ্ত হবে? তারা কি টেলিভিশনে নিজের বৌয়ের সংগীত সন্ধ্যা আয়োজন করবে না কি নিজের যাকাতের ফিরিস্তি দিতে ৩০ মিনিট টেলিভিশন চাঙ্ক কিনবে ? কিংবা এমন কিছু করবে যা আমি আমার দুরতম কল্পনায়ও অনুমাণ করতে ব্যর্থ-

পোস্টটি ২০ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

আরাফাত শান্ত's picture


ফেসবুক এখন আমাদের এইসব প্রদর্শনীর কাজটা সহজ করে দিয়েছে, আত্মতৃপ্তির জন্যে অনেক ধরণের স্ট্যাটাসবাজী করছে মানুষ। বন্ধু তালিকা আর ফলোয়ারের সংখ্যা নিয়ে যে ধরণের টানাটানি- লাইক গুনে অর্গাজমের তৃপ্তি পাওয়া বাঙালীর রাগমোচনের ধরণ-ধারণ দেখে অনেক ধরণের অশ্লীল উপমা মাথায় আসে। যাদের বন্ধু তালিকা ৫ হাজারের ঘর ডিঙিয়েছে তারা একই নামে নতুন একটা ফেসবুক আইডির শাখা অফিস খুলে সেখানে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধু তালিকা লম্বা করে। ফেসবুকের ফলোয়ার এবং বন্ধু তালিকার বন্ধু সংখ্যা সম্ভবত এক ধরণের অলীক ক্ষমতার স্বাদ দেয় এদের। আমি মাঝেমাঝে চিন্তা করি এই ধরণের আত্মপ্রদর্শনীর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত মানুষগুলো যখন সত্যি সত্যিই ক্ষমতাবান হয়ে উঠবে, যখন তাদের বিজ্ঞাপন দিয়ে যাকাত দেওয়ার ক্ষমতা হবে তখন তারা কি ধরণের আত্মপ্রদর্শনীতে লিপ্ত হবে? তারা কি টেলিভিশনে নিজের বৌয়ের সংগীত সন্ধ্যা আয়োজন করবে না কি নিজের যাকাতের ফিরিস্তি দিতে ৩০ মিনিট টেলিভিশন চাঙ্ক কিনবে ? কিংবা এমন কিছু করবে যা আমি আমার দুরতম কল্পনায়ও অনুমাণ করতে ব্যর্থ

আমার কথা গুলো আপনি কত সুন্দর ভাবে লিখে দিলেন!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.