হালচাল ১
ঘরের মোলায়েম উষ্ণতায় মুছে যায় পোশাকের তুষারের স্মৃতি-
গতপরশু চমৎকার রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিলো, এপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে দুপুরে সিগারেট হাঁটে সুর্যের আলো মাখছিলাম গায়ে, প্রতিবেশী ফিজিয়ান যুবক- রাজ বললো ফেব্রুয়ারী মাসটাই এখানকার সবচেয়ে বাজে মাস তবে এ বছর যেহেতু ডিসেম্বরের শুরুতেই শীত চলে এসেছে সম্ভবত এবার ফেব্রুয়ারীর করাল শীত হানা দিবে না।
আমরা নিজেদের দেশ নিয়ে কথা বলছিলাম- দেশের কথা মানে আসলে নিজের দেশের অনিয়মতান্ত্রিক, উদাসীন সংস্কৃতির মুন্ডুপাত।রাজের কথা শুনে যা বুঝলাম ফিজির সংস্কৃতি অনেকটাই বাংলাদেশের মতো। সেখানে সরকারী অফিস শুরুর সময় সকাল ৮টায়, আর বিকেল ৫টায় ছুটি। সরকারী কর্মচারীরা সকাল ৮টায় বাসা থেকে বের হয় অফিসের উদ্দেশ্যে, পথে অসংখ্য মানুষের সাথে টুকরো টুকরো সৌহার্দ্য বিনিময় করে সকাল ৯টার পরে অফিসে পৌঁছায় , অবশ্য পৌঁছানোর পরই ফাইল খুলে বসে না। প্রতিবেশী টেবিলের সহকর্মীর পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া- একটু চা কফি খেয়ে ১১টার ভেতরেই কাজের প্রস্তুতি নিয়ে নেয়। তারপর বিকেল ৪টায় বাসায় যাওয়ার জন্যে ব্যাগ গুছাতে শুরু করে। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে সরকারী অফিসে কোনো কাজ হয় না।
রাজকে বললাম আমাদের দেশের পরিস্থিতিও মোটামুটি একই রকম। যেমন ধরো আমাদের ওখানে টং এর চায়ের দোকান আছে- সেখানে তুমি গিয়ে কয়েকদিন চা খাওয়ার পর দেখবে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট একদল মানুষ সেখানে থাকে, চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে তোমার ওদের সাথে ঘনিষ্ঠতা হয়ে যাবে, তারপর ধরো তুমি মাঝে কয়েকদিন গেলে না- পৌঁছানোর পর দেখবে ওরা বলছে ভাই আপনি তো আমাদের একেবারে ভুলেই গেলেন। তোমার না যাওয়া নিয়ে ওখানে অন্তত ২০টা গল্প তৈরী হয়ে যাবে যেগুলোর সবগুলোই নির্জলা মিথ্যা।
আমাদের ওখানেও একই অবস্থা- ধরো আমাদের ওখানে যদি কেউ আত্মহত্যা করে তবে আত্মহত্যার ১০টা কারণ তুমি জানবে। ঐ প্রেমে ছ্যাকা খাইলো, হয়তো বাবা ম্যা বকা দিলো, কিংবা টাকা পয়সার টানাটানি- তোমার সম্পর্কে এতো এতো মানুষের এতো এতো ধারণা জেনে তুমি নিজেই আশ্চ্ররয হয়ে যাবে।
মিশরীয় আইমানের সমাজ সংস্কৃতির সংবাদ জেনে মনে হলো ওদের সামাজিক সংস্কারগুলো আপাদমস্তক বাঙালী সংস্কার। ও কথায় কথায় বললো আমাদের ওখানে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে তাকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া একটা সামাজিক দায়িত্ব , অসুস্থ মানুষের পরিবার হাসপাতালের গেটে হাজিরা খাতা নিয়ে বসে থাকে, এই যাওয়া না যাওয়ার উপরে নির্ভর করবে তুমি ঐ বাসার পরবর্তী উৎসবে আমন্ত্রিত হওয়া না হওয়া। আর যদি কোনো কারণে তুমি যেতে ব্যর্থ হও তবে তোমাকে সারাজীবন শুনতে হবে আমার বিপদের দিনে তুমি আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে চাও না।
কেউ হাসপাতালে যাওয়া মানে আত্মীয় স্বজনদের ভেতরে এক ধরণের সামাজিকতার চাপ তৈরী হওয়া। একজন হাসপাতালে ভর্তি হলে পরিবারের সকল মানুষ বাসা ছেড়ে হাসপাতালে ঘুমাতে যায়। আমার বৌয়ের প্রথম বাচ্চা হওয়ার সময় আমাকে ১ সপ্তাহ হাসপাতালে ঘুমাতে হয়েছে অথচ আমার ওখানে কোনো কাজ নেই। আমি যদি বলি আমি থাকবো না তাহলে সারাজীবন শুনতে হবে তুমি আমাকে একদম ভালোবাসো না- এই হাঙ্গামার বদলে অযথা হাসপাতালে বসে থাকা ভালো।
ভিন দেশী মানুষের সাথে নিজ দেশের অব্যবস্থা নিয়ে কথা বলা কিংবা প্রবাসী মহৎপ্রাণ ভাইয়ের বাসায় সুস্বাদু খাওয়ার খেতে খেতে অপরাপর দেশী ভাইদের সাথে দেশের রাজনীতি আর সমাজ নিয়ে দু চার কথা বলা আর রাজনীতিবিদ এবং এয়ারপোর্টের কর্মচারীদের শাপ-শাপান্ত করা কিংবা খাঁটি দেশী ভাষায় সে দেশের মানুষ এবং সমাজ সংস্কৃতির কঠোর সমালোচনা করা-
কোনটা যে আসলে প্রবাসীর মূলানন্দ আমি এখনও জানি না।
ভালো হচ্ছে হালচাল!
মিশরের কোন কোন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমার মনে হয়েছে, আমি শুক্রাবাদ কিংবা রায়ের বাজার এর গলির মধ্যে হাঁটছি . .. মাঝে মাঝে মনে হয়েছে কাঠালবাগানের বাজারের মধ্যে দিয়ে আমার সিএনজি যাচ্ছে আর বালক ফেরিওয়ালারা গাউছিয়ার ইয়াদ দিলিয়েছে। অনলি রানতে জানে না আমাদের মত এটাই দুঃখ
ভাল্লাগতাছে সিরিজটা। চলতে থাকুক।
হা হা হা হা হা হা
নিজের অনেক কথা মনে পৈড়া গেল রাসেল ভাই।
আপনারে মিস করি ।
পেট্রলবোমা আর ছিনতাইকারীর হাত থেকে বেঁচে থাকাই প্রবাসীর মূলানন্দ...
~
মন্তব্য করুন