ইউজার লগইন

মাইনষের সাথে কথাবার্তা - ১

লাইব্রেরি থেইকা বাইর হইলাম। আগস্টের শেষ..তাই না গরম না ঠান্ডা, বেশ একটা আরামের ব্যাপার। পা চালাইলাম বাসার দিকে, খিদা লাগছে, গিয়া কিছু একটা যোগারযন্ত্র করতে হবে। হঠাত পাশ থেইকা শুনি 'তুমি কি ব্যথা পাইছো?', ফিরা তাকাইলাম, একটা লোক, ইরাকি ইরাকি চেহারা...এই একটা ঝামেলা, ক্লাসে একটা ইরাকি পোলা আছে, তাই ওর সাথে চেহারায় মিল থাকলেই আমার মনে হয় এই ব্যাটা নির্ঘাত ইরাকি! যাই হোক, আমি আমার মস্তিস্ক হাতরানোতে ব্যস্ত, কোন্ কোন্ কারণে একটা অচেনা ইরাকি ব্যাটা আমারে ব্যথা পাওয়ার কথা জিগ্গেস করতে পারে? এর সাথে কি ধাক্কা খাইছিলাম লাইব্রেরিতে? নাকি উস্ঠা খাইছি এর সামনে? আমি হাটার সময় জগতসংসার নিয়া গুরুগম্ভীর ভাবনা ভাবতে ভাবতে হাটি, তাই উস্ঠা খাওয়া, ধাক্কা খাওয়া এইগুলা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার আমার জন্য। আমার অন্যমনস্ক চেহারা দেইখাই মনে হয় ছেলেটা আবার বলল,

'তুমি কি পায়ে ব্যথা পাইছো?'
এইবার বুঝলাম...চোখেমুখে উদাস ভাব নিয়া বললাম 'নাহ.'
সে আমার উদাস ভাবে খুব একটা দমল না, 'তাইলে এইভাবে হাটতেছ যে?'
আমি: ছোটবেলা পোলিও হইছিল, এইকারণে এক পায়ে ঝামেলা হইছে।'
সে: (গলায় যথাসম্ভব দুঃখ ঢাইলা) দুঃখিত!
আমি: তোমার দুঃখিত হবার কি আছে, আমার বাপমা দুঃখিত হইতে পারে বড়জোর।
সে: না, বাবামার উপরে রাগ করা ঠিকনা, তারা হচ্ছে আল্লাহ-র পরেই সবথেকে সম্মানিত। তারা তো সবসময় আমাদের ভালই চায়।
আমি: তো তুমি বলতে চাইতেছ তারা টিকা দেয়নাই এইটা ঠিকই করছে?

সে চুপ কইরা গেল। আমিও পা চালাইলাম, খিদায় জীবন যাইতেছে এখন এইসব ভাবের আলাপে আনন্দ নাই। কিন্তু সেই ব্যাটার মনে হয় পেট ভরা, সেও আমার সাথে সাথে হাটা ধরল।
'তোমার বাসা কি এইদিকেই?'
আমি: হুমম।
সে: এইখানেই পড়?
আমি: হুমম।
সে: ফার্স্ট ইয়ার?
আমি: না মাস্টার্স।
সে: কবে আসছো?
আমি: গত সেপ্টেম্বর।
সে: কি বল! আমিও তো মাস্টার্স স্টুডেন্ট! তোমারে তো আমি কোনদিন দেখিনাই!
আমি: কোথায় দেখবা?
সে: লাইব্রেরিতে।
আমি: আমি পড়ালেখা করিনা, সারাদিন বাসায় বইসা থাকি, এই কারণে।
সে: তো তোমার কোর্স শেষ?
আমি: হুমম।
সে: ইস, তোমার সাথে আগে পরিচয় হইলে কত ভালো হইত।
আমি: তাই?
সে: হ্যা, আমরা ভালো বন্ধু হইতে পারতাম।
আমি: তাই নাকি!
সে: আমার নাম রাহিম।
আমি: আচ্ছা।
সে: তোমার নাম কি?
আমি: মৌসুম।
সে (কতক্ষণ নামটারে নিয়া কুলকুচি কইরা) : আমি ইরাকের লোক, তুমি কি ইন্ডিয়ান?
আমি (মেজাজ খারাপ): নাহ, বাংলাদেশের।
সে: ওহ, বাংলাদেশ না মুসলিম দেশ?
আমি: হুমম, তো?
সে: তুমি কি মুসলিম?
আমি: হুমম।
সে: তোমারে দেখতে তো ইন্ডিয়ানদের মতন লাগে।
আমি বিরক্ত, তাই চুপ।
আবার একটু পর: তুমি কি চাকরি খুজতেছ?
আমি: নাহ।
সে: কোর্স যে শেষ, কি করবা?
আমি: দেশে ফিরব।
সে: আয়হায় ক্যানো!
আমি: কারণ এইখানে কাজ শেষ।
সে: তোমার ভিসা আছে?
আমি: হুমম।
সে: তুমি ক্যানো ফিরে যাবা, থেকে যাও, আমি তোমারে চাকরি ম্যানেজ করে দিতে পারব।
আমি: টিকেট কাইটা ফেলছি, পরশু ফ্লাইট।
সে: কি বল! দেখছ, আমার সাথে তোমার পরিচয় থাকলে তোমাকে এখন আর ফিরে যাইতে হইতনা..
আমি: ও।
সে: তুমি আমার বাসাতেই থাকতে পারতা..
আমি: ও।
সে: তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?
আমি: না।
সে: তাইলে তো আমরা বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড-ও হইতে পারতাম।
আমি: কিহ্?
সে: ক্যানো তোমার কি মনে হয়না আমরা বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড হইতে পারতাম?
আমি তার দিকে কিছুক্ষণ চাইয়া থাকলাম, তারপর ঠাঠা কইরা হাইসা দিলাম. বেশিক্ষণ চাইয়া থাকা যায়নাই...হাটতেছিলাম.
সে: না, তুমি আমাকে খারাপ ভাইবনা...আমরা বিয়া করতাম, তুমি আমার সাথে ইরাক যাইতে পারতা, সেইখানে আমার বিশাল বাড়ি আছে..
আমি এইবার ঠিক বুঝলাম না হাসুম না কান্দুম...আবার আমারে দেখলে কি বিয়া করার জন্য মুখাইয়া আছি এইরকমটা মনে হয় কিনা এই সংশয়েও পরলাম একটু..
সে (চোখেমুখে সিরিয়াস): তোমার কি মনে হয়?
আমি আবার খেক খেক কইরা হাইসা দিলাম।
সে (একটু অফেন্ডেড এইবার): এক বছর ধৈরা চেনাজানা থাকলে হইতেই পারত তাইনা?
আমি (উদাস মুখে): কি জানি!
সে: তোমার ফোন নাম্বারটা দিবা?
আমি: ক্যান? তুমি কি দুইদিনে আমারে বিবাহে রাজি করানোর মিশন নিয়া নামতে চাও?
সে: দুইদিন মানে?
আমি: আমি পরশু দেশে যাইতেছিগা।
সে: ওহ, ইস, তাইলে তোমার ইমেইল 'নাম্বার' আছে?
আমি: হুমম আছে।
সে: তোমার ইমেইল 'নাম্বার' দাও, আমি তোমারে ইমেইল করব..
আমি: এক কাজ কর, তোমার ইমেইল আইডি দাও আমারে, আমি তোমারে মেইল করি, তুমি রিপ্লাই দিলেই আমি পাইয়া যাব তোমারটা।
সে (কাগজে লেইখা দিয়া): আচ্ছা, প্লিজ মেইল কইরো ঠিকাছে? আর যেকোনো প্রবলেমে পড়লে আমারে মেইল কইরা দিও।
আমি: কি করবা তুমি?
সে: আমি হেল্প করব, ধরো তুমি আবার আসতে চাও বেড়াইতে, তখন তুমি আমার বাসায় থাকতে পারবা।
আমি: বেড়াইতে আসলে এই মরার জায়গায় তো আসবনা, সুন্দর কোনো জায়গায় যাব।
সে: আমি তোমাকে নিয়া যাব..
আমি (পুরা বোরড এখন): আচ্ছা, আমি এখন টার্ন নিব এইদিকে..বাই বাই।
সে: তুমি কিন্তু গিয়াই আমাকে মেইল কইরো, আমি আজকে রাতে হয়ত চেক করতে পারবনা, কালকে চেক করব, তখন রিপ্লাই দিব।
আমি: অবশ্যই, অবশ্যই..
তারপর টার্ন নিলাম, বাসায় পৌছাইলাম, কাগজটা বিনে চালান করলাম, রানতে বৈলাম।

পোস্টটি ২০ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

নুশেরা's picture


দুনিয়াতে কতোরকম চিজ!
সবে পয়লা পর্ব আসলো। গ্যালারিতে বসলাম পপকর্ন নিয়া।

বকলম's picture


আমার ধারনা ছিল দুনিয়াতে সেন্স অব হিউমার ওলা মহিলা/মেয়ের সংখ্যা হাতে গোনা। যেমন নুশেরা আপা, কাঁকনদি, আমগো জয়িবু ... এরা। দিন দিন আমার ধারণা পাল্টাইতে শুরু করছে। কারন সংখ্যাটা বাড়তেছে। এই বার যোগ হইলো মৌসুম আফায়। Smile

লেখা বহুত উমদা হইছে। আমিও ঝালমুড়ি আর গরম চা নিয়া গ্যালারিতে বইলাম।

জ্যোতি's picture


গ্যালারিতে বসলাম।

নাজমুল হুদা's picture


গল্প জমে উঠেছে শুরুতেই । নড়েচড়ে ঠিকঠাক হয়ে বসলাম । বেশী মেওয়া ফলাবেন না ।

মাহবুব সুমন's picture


আজিব চিজ একটা !!

রাসেল আশরাফ's picture


আমার মুড়িও নাই, চানাচুরও নাই,পপকর্নও নাই।আমি কি নিয়া বসবো?? Crying Crying

তাও খালি পানি নিয়া বইলাম।

নাজ's picture


আমি: বেড়াইতে আসলে এই মরার জায়গায় তো আসবনা, সুন্দর কোনো জায়গায় যাব।
সে: আমি তোমাকে নিয়া যাব..

আহা!! কি মধুর ভালোবাসা Rolling On The Floor

মুকুল's picture


এইরাম ছ্যাঁচ্চড় পোলাও আছে পৃথিবীতে! a

তানবীরা's picture


মৌসমের লেখার স্টাইলটা কেমন যেনো পরিচিত মনে হচ্ছে।

যাউকগা লেখায় অনেক গুলো লাইক। আমি শুধু একা না আরো অনেকেই আছেন দেখি অনুভূতিটা আবার হলো Big smile

১০

ঈশান মাহমুদ's picture


পোলাটার লাইগা মায়া অইতাছে, এমন নাছোড় বান্দা প্রমিক, প্রত্যাখ্যাত হইয়া নিশ্চয়ই খুব দুস্ক পাইছে...।

১১

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


২ নং টার অপেক্ষায় থাকলাম

১২

হাসান রায়হান's picture


ইরাকি লুল। Tongue

১৩

শিবলী মেহেদী's picture


ইদানিং একটু ব্যাস্ত আছি। আড্ডায় বসতে পারলে খুব ভালো লাগতো। আইডিয়া, আমার রেকর্ডারটা রেখে দিলাম। পরে এসে শুনে নেবো On The Phone

১৪

শওকত মাসুম's picture


ধৈর্যহীন ইরাকী লুল

১৫

নীড় সন্ধানী's picture


দেরীতে পড়লাম লেখাটা! তবে এক পোষ্টেই লেখনীর ভক্ত হয়ে গেলাম। স্টাইলটা একদম জীবন্ত লাগলো।
রম্য ট্যাগ আছে কিনা খেয়াল করি নাই, তবে ঠা ঠা কইরা হাসলাম Laughing out loud Laughing out loud

১৬

শাপলা's picture


মজা লাগলো।

১৭

মুক্ত বয়ান's picture


আমার একটা সিরিজ ছিলো কথোপকথন নামে। ৩ পর্ব লেখার পরে ধৈর্য্য হারায়ে ফেলছিলাম!! আপনে চালায়ে যান। মজারু। Smile

১৮

মেঘকন্যা's picture


Big smile

১৯

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


Rolling On The Floor

২০

রশীদা আফরোজ's picture


আর কিছুক্ষণ থাকলে তো মনে হয় ভবিষ্যত বাচ্চা-কাচ্চার নাম নির্বাচনও হয়ে যেতো!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

কিছু বলার নাই's picture

নিজের সম্পর্কে

কিছু বলার নাই