শাদ্দাদের ভূস্বর্গ এবং আরাফাত শান্তর রোদে পুড়া (পর্ব-১)
শান্ত ভাই সকালে ব্লগে ঢুকে আপনার লেখা “দেখো মা পুড়ছি আমি রোদ্দুরে” পড়ে মনটা এতই বিষন্ন হয়ে গেল যে আপনার লেখায় কোন মন্তব্য করব সেই ধৈর্য টুকুও ছিল না। কোন কারনে যদি বাবা ও পিঠাপিঠি বড় ভাইয়ের কথা মনে পড়ে তবে আমি আজও সকল শক্তি হাড়িয়ে ফেলি। বাবা ১৯৮২ সালে আর ভাইটি ২০০০ সালে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ভাইটি আমার পিঠাপঠি হওয়াতে তার সাথে আমার অসংখ্য স্মৃতি, আমার লেখাপড়া আরাম আয়েস সকল কিছুর ব্যবস্থা ও দেখাশুনা করত ও। তাই এ বয়সেও আমি যখন একা থাকি ওর জন্য কত রাত কাঁদি হিসেবে নেই। ভাইটি চলে যাবার আগে বাবার জন্য অহর্নিশি কেঁদেছি। আপনি হয়ত ভাবছেন আপনার গল্পের সাথে আমার এ স্মৃতি কাতরতার কারন কি?
আমরা তিন ভাইবোন ছোটবেলায় আব্বার গলা জড়িয়ে ঘুমাতাম আর ঘুমানোর আগে আব্বার কাছ থেকে গল্প শুনা চাই-ই-চাই। আব্বাও কত রকমের গল্প শুনাতেন। তার কয়েকটা আমি লিখছি তবে এ ব্লগে আসার আগে। তার সবগুলোর নাম লিখতে গেলেও আধা পাতা হয়ে যাবে। আর এ সব গল্পের মধ্যে একটি হল আপনার এই শাদ্দাদ কাহিনি। হয়ত বয়স হয়েছে তাই, ভাই,বাবার কথা মনে হলে বড় আব্বার (বড় চাচা/জেঠা) কথাও মনে পড়ে যায়। মাও গত বছরের ৪
অক্টোবর চলে গেলেন। তাই আগের মত মনের জোর এত নেই। বড় আব্বা আদর করার পাশাপাশি উনার কাছ থেকে সুরা রহমানের ১ থেকে ১৩ নম্বর আয়াত মুখস্ত করে ফেলেছিলাম যদিও তখনও মক্তব ও স্কুলে যাওয়া শুরু করিনি। আপনি হয়ত ভাববেন এটা আবার এমন কি? কিন্তু আমার কাছে এটা যে আজ বিশাল কিছু। বড় আব্বা প্রতিদিন সকাল সন্ধা সুর করে মাখরাত বজায় রেখে জোরে জোরে কোরআন পড়তেন। আর উনার পড়ার সমাপ্তি হত, সুরা রহমান পাঠ করার মাধ্যমে। আর পুড়া সুরাটি শেষ না করলেও ১-১৩ নম্বর আয়াত পর্যন্ত প্রতিদিন পরতেনই । ১৩ নম্বর আয়াতটি হল
ফাবি আয়্যি আলা ইরাব্বি কুমা তুকাযযিবান।
অর্থঃ অতএব তুমি তোমার রবের কোন দানকে অস্বীকার করবে?
সুরা রহমানের আয়াত সংখ্যা ৭৮টি, তার মধ্যে ৩১ বার আল্লাহ্ তায়ালা তার বান্ধাকে এ প্রশ্নটি করেছেন?
আমি কখনও মাদ্রাসায় পড়িনি, মক্তব্যে কিছুদিন পড়েছি স্কুলে পড়ার প্রবল বাসনা আমাকে সকাল বেলা মক্তব থেকে এসে স্কুলে যাওয়া থেকে কেউ ফেরাতে পারত না। তাই মক্তবে ঘটর মটর করে আমপারা ও সুরা বাকারার দুই তিন পাতা পড়া। এই হল আমার আরবি পড়ার দৌড়।
আমি যখন বাহরাইনে গেলাম আমার পাশের ফ্লাটে থাকতেন হায়দ্রাবাদের সৈয়দ নিজাম উদ্দীন আল আলী। উনি ছিলেন কোরআন হাদিস বিশারদ। আমাদের কোম্পানির ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ারিং হায়দ্রাবাদী খান সাবও ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার মানুষ। আমি যাবার এক মাস পরেই রমজান মাস এসে যায়। রোজা রাখা বাদ দেবার তো কোন সুযোগ ছিলই না, তারাবির নামাজ ও অনেকটা বাধ্যতামূলক। তারাবি পড়ার পর চলত মজার মজার খবার আর আরবি চা পান। আর চলত কোরআন হাদিস বিষয়ক আলোচনা বা বক্তৃতা। ওরা যখন কোরআন হাদিস নিয়ে কথা বলত আমার কাছে খুব খারাপ লাগত। তাই আমি আমার বাঙ্গালী ফোরম্যান ভাইদের বললাম, আমার জন্য তাফসির সহ কোরআন ও হাদিস গ্রন্থ যোগার করতে। দু,দিনের মধ্যে ওরা আমার আশার চেয়েও অনেক বেশী অর্থাৎ বাংলায় অর্থ ও তাফসির সহ কোরআন ও হাদিস গ্রন্থ আমাকে উপহার দিল। উপহার এ জন্য বলছি যে আমি যখন তার মুল্য দিতে চাইলাম তারা বলল আপনি পড়বেন এটাই তার মুল্য। পরে দেখেছি প্রতিটি মসজিদে কোরআন হাদিসসহ কত লেখকের কত ভাষায় লেখা ইসলাম ধর্মীয় বই। আর কিছু তাকে লেখা আছে বিনা মুল্যে।
আমি আরবির পাশাপাশি অর্থ ও তাফসীর পড়তে আরম্ভ করলাম। একদিন মনে হল কেন বড় আব্বা সুরা রহমান প্রতিদিন পড়তেন। তাই সুরা রহমান পড়লাম। যেতেতু ১-১৩ নম্বর আয়াত মুখস্থ ছিল। তাই সহজেই পড়ে ফেললাম। তারপর প্রথম প্রথম বা অনেকদিন পর কোরআন পড়লে যা হয়, অর্থাৎ সার্টেল ট্রেনের মত কোতায় কোতায় বা ধাক্কা মেরে মেরে ধীরে ধীরে পড়া।
আমি কি করলাম আরবি বাদ দিয়ে বাংলায় শুধু অর্থ পড়ে নিলাম। দেখি ১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তায়াল প্রথম এ প্রশ্নটি করেছেন। এরপর কখনও দুই বা এক আয়াত পরপর এ প্রশ্নটি করা হয়েছে। প্রশ্নটি করার আগে আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর প্রদত্ত নিয়ামতের বর্ননা দিয়েছেন। তাই অতি ছন্দময় এ সুরাটি আমিও প্রতিদিন পড়তে লাগলাম। পাশাপাশি এক সময় পুড়ো কোরআনের অর্থ তাফসির সহ পড়া শেষ করলাম। আর তাতেই আদ জাতির সরদার আদের দুই পুত্র শাদীদ ও শাদ্দাদের কাহিনী জানতে পারি। শাদ্দাদের ভুস্বর্গ বানানোর কাহিনি সরাসরি কোরআনে বলা না থাকলেও আদ জাতির কাহিনী কোরআনের তাফসির এবং বাইবেলের ওল্ড টেস্টম্যানে সর্বোপরি উর্দু লেখক হযরত মাওলানা আবু তাহের সুরাটী (র.) এর বাংলা অনুবাদক হযরত মাওলানা আবু নায়ীম এবং সম্পাদনায় অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মহ শামছুল হকের কাসাসুল আম্বিয়া গ্রন্থে শাদ্দাদ প্রসঙ্গে বর্ণনা পাওয়া যায়।
শাদ্দাদের কাহিনী
আদের দুই ছেলে, শাদীদ ও শাদ্দাদ। শাদীদ দীর্ঘ সাতশ বছর রাজত্ব করে মৃত্যু বরণ করে। শদীদের মৃত্যুর পর অভিশপ্ত শাদ্দাদ বাদশাহ হয়। সমকালীন সমগ্র জগত তাঁর শাসনাধীনে ছিল। তাকে হেদায়াতের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা হুদ (আঃ) কে প্রেরণ করেন। তিনি শাদ্দাদ কে বললেন হে শাদ্দাদ! আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে হাজার বছরের দীর্ঘ জীবন দান করেছেন। হাজার নগর বন্দর তুমি লাভ করেছ। হাজার সুন্দরী ললনা তুমি পেয়েছ এবং হাজার দেশ তুমি জয় করেছ। এখন আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় কর। তোমার প্রতি তাঁর কৃত দানের জন্য কৃতজ্ঞ হও। তাঁকেই এক একক অংশীবিহীন সত্তা বলে বিশ্বাস কর। আল্লাহ্ তায়ালা তোমাকে আরও অসংখ্য অগণিত নেয়ামত দেবেন এবং কেয়ামতে এসব নেয়ামতের কোন হিসেব নিবেন না। বিনা হিসেবে নির্বিগ্নে তুমি জান্নাতে চলে যাবে।
হুদ (আঃ) মুক্তি লাভের এ ধরনের ভাল ভাল কথা তাকে বলেন। কিন্তু তাঁর বধির কানে এসব ভাল কথা, উপদেশ লহরী কোন প্রভাব- প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে নাই। সে হুদ (আঃ) কে বলল- তুমি আমাকে জান্নাতের লোভ দেখাচ্ছ!আমি জান্নাতের বিশেষ বৈশিষ্ঠের কথা শুনেছি। আমিও দুনিয়াতে জান্নাত অনুরূপ এক জান্নাত বানাব এবং সেই জান্নাতে বাস করব। তোমার আল্লাহ্র জান্নাত দিয়ে আমার কোন কাজ নাই।
কাল বিলম্ভ না করে অভিশপ্ত শাদ্দাদ তাঁর শাসনাধীন এলাকাসমূহের শাসক, মন্ত্রী এবং তথাকার প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী লোকদের নিকট ফরমান পাঠাল-তোমরা এমন এক খণ্ড সমতল ভূমি ও প্রশস্ত ময়দান খুঁজে বের কর যা জান্নাত বানানোর জন্য যথাযোগ্য। কথিত আছে, হাজার রাজ্য ও হাজার হাজার শহর তাঁর শাসনাধীন ছিল। প্রতিটি রাজ্যে ও শহরে লাখ লাখ পুরুষ বর্তমান ছিল।দীর্ঘদিন পর্যন্ত কথিত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ভূমি খুজতে খুজতে অবশেষে আরবে চল্লিশ ফার্লং দৈর্ঘ- প্রস্থ বিশিষ্ট এক খণ্ড ভূমি পাওয়া যায়। উদ্দিষ্ট ভূমি পাবার পর সে তিন হাজার ওস্তাগার, এক হাজার নির্মাণ কারিগর নির্বাচন করে এবং শাসনাধীন সমগ্র এলাকার সম্পদ ভান্ডার তথায় নিয়ে একত্র করার জন্য আমীর ওমরা ও শাসকদের প্রতি ফরমান জারি করে। প্রথমে চল্লিশ গজ নীচ থেকে ভূমি খুঁড়ে মর্মর পাথর দিয়ে তাঁর কল্পিত জান্নাতের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে। স্বর্ণ- রৌপ্য দ্বারা এই কল্পিত জান্নাতের দেয়াল উঠানো হয়। ছাদ এবং খাম্বাসমূহ সবুজ রংয়ের যবরজদ ও যমররদ পাথর দিয়ে তৈরী করা হয়। আল্লাহ্ তায়ালা অভিশপ্ত শাদ্দাদের কল্পিত জান্নাতের খাম্বাস্মূহ ও অন্য অবস্থাদি সম্পর্কে কোরআনের মাধ্যমে পরবর্তী কালের লোকদের অবহিত করেছেন। আর কেউ জগতে এমন ভূস্বর্গ বানাতে সক্ষম হয় নাই।
(৬)আলাম তারা কাইফা ফাআলা রাব্বুকা বিআদিন (৭)ইরামা যা-তিল ইমাদি(৮) ল্লাতী লাম ইউখলাক মিস লুহা-ফিল বিলাদ।(৯)ওয়া ছামুদাল্লাজীনা জা-বুছ ছাখরা বিল অয়াদি।
অর্থঃ (৬) আপনি কি লক্ষ্য করেননি যে, আপনার রব আদ জাতীর সংগে কি ব্যবহার করেছেন। ইরাম জাতির সংগে, যাদের দেহাকৃতি স্তম্ভের মত শক্ত ও লম্বা ছিল। (৮) কোন দেশে তার সদৃশ্য সৃষ্টি নেই।(৯) আর ছামুদকে? যারা উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করত। (চলবে)
কি আশ্চর্য মিল! আমার ও একটা পিঠা পিঠি ছোট ভাই ছিল, য্ব শুধু আমার ভাই ছিল না, ছিল অনেক অন্তরংগ বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়ে আর ফিরে আসে নাই আমার প্রিয় ছোট ভাইটা।
অনেক মিস করি ওকে আমি (
মন খারাপ হয়ে গেলো!
পড়ছি
মন্তব্য করুন