ডোম(পর্ব-২ সংগৃহীত ও কাল্পনিক)
নির্ঘম রাত কাটানো ডোম বাবাজির সকাল বেলা জ্বর জ্বর লাগছিল। লাগছিল থেকে বেড়ে ভীষন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গেল। এই জ্বরের খবর বাড়ির অন্য কাউকে জানাতে না দিয়ে সেই ছেলেটিই সেবা শ্বশ্রুষা করে উনাকে সুস্থ করে তুলল। দিন তিনেক অসুস্থ থাকার পর আবার কাজে যোগ দিলেন। এবার আর একটি কাজের ডাক আসলো। এই কাজটি ছিল একটি আত্নহত্যা জনিত মৃত মেয়ের লাশের পোষ্ট মর্টেম। পড়বি তো পর মালির ঘারে। সুইসাইড করেছিল চার তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আর যে জায়গাটাতে লাফ দেয় সেখানে নীচে ছিল কিছু খাড়া খাড়া রড। মানুষ উচু থেকে নিচের পড়ার সময় যেতেতু মানুষের মাথা শরীরের তুলনায় ভারী তাই মাথাটাই আগে পড়ে। তাই রড গুলো মাথায় বিদ্ধ হয়ে এক বীভৎস রূপ ধারন করে। ডোমের কাজের অংশ হিসেবে মাথার ভিতরকার নমুনাও সংগ্রহ করতে হয়। যেহেতু মাথা ছিন্ন ভিন্ন অবস্থায় ছিল তাই তাকে মাথার নমুনা সংগ্রহে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। যাক কি আর করা, কাজ শেষে অন্যান্য ফর্মালিটিজ সমাপ্ত করে সে বাড়ির দিকে রওনা হয়। যাত্রা পথে আবার সেই শ্বশান ঘাট। রাস্তা থেকে শ্বশান ঘাট হাত বিশেক দুরে। হঠাত সে মহিষ খুব উত্তেজিত হলে যেমন শব্দ করে তেমন শব্দ শুনতে পেল। অনিচ্ছা সত্বেও তার নজর গেল চিতাশালের দিকে। দেখে একটি মহিষ ভীষণ রাগান্বিত, সিং দিয়ে মাটি খুড়ছে অর্থাৎ বারবার মাটিতে গুতা মারছে। এবার নজরটা একটু তীক্ষ্ণ করে তাকালে সে দেখতে পেল ছোট একটি কিশোর বাচ্চাকে মহিষটি আঘাত করছে। আর বাচ্চাটির শরীর আঘাতে আঘাতে ক্ষত বিক্ষত। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় বাচ্চাটি এত আঘাত সহ্য করছে কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নেই। ডোম মহাশয় ভাবছেন, উনি কি করবেন, আর এত রাতে এখানে মহিষ বা বচ্চাই বা এল কোত্থেকে। এমন সময় উনার গায়ে চামচিকা জাতীয় কিছু একটা যেন ঘষা মেরে উড়ে গেল। এবার উনি ক্ষাণিকটা ভয় পেয়ে গেলেন। আর দেরী না করে ত্রস্ত পদে সামনে এগিয়ে চললেন। না আর পিছনে তাকাবেন না। এবার পিছন থেকে ভীষণ করুন সুরে মেয়ে মানুষের কান্নার শব্দ শুনতে পেলেন। সে কান্না এমনি করুন যে পাষাণ হৃদয়ও গলে যাবে। গায়ের লোম গুলো যেন বড়ই কাটার মত খাড়া হয়ে উঠল। কিন্তু উনি দোয়া দরূদ পড়তে পড়তে এগিয়ে চললেন। হঠাত উনার কানে এল একটি শব্দ, বেঁচে গেলি। এবার উনার শরীর থরথর করে কাপতে লাগল। উনি অর্ধ দৌড়ে বাড়ি পোছলেন। কিন্তু কাউকে কিছু বললেন না।
রীতিমত গোসল করে এসে খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে পড়েন। কিন্তু মাথায় ঘটে যাওয়া ঘটনা উকি ঝুকি মেরে খেলা করছিল। এমন সময় দেখে তার রুমমেট ঘরের বাইরে যাচ্ছে। তো উনি এটাকে স্বাভাবিক মনে করে শুয়ে থাকে। কিন্তু সময় চলে যায় ছেলেটি আসে না। এবার তার চিন্তা হতে লাগল এতক্ষন বাইরে কি করে। উথবে কি উঠবে না, বাইরে যাবে কি যাবে না এমনি ভাবনা চিন্তার মাঝে আবার সেই বিকট শব্দ। হড়মড়িয়ে উঠে কোন দিকে না তাকিয়ে একেবারে পকুর ঘাঠে,কারন এর আগের ঘটনাটা তার মনে ছিল। দেখে ছেলেটি আগের মতই অজ্ঞান হয়ে আধা পুকুর আধা মাটিতে পড়ে আছে। যথারিতি পাজা কোলে করে ঘরে নিয়ে এসে সেবা শ্বশ্রুষা করতে লাগল। বাড়ির কাউকে এত রাতে ডাকবে, না দরকার নাই। শুধু শুধু মানুষকে হয়রানি করে কি লাভ। ছেলেটি স্বাভাবিক হতে প্রায় ফজরের সময় হয়ে এল। এবার ডোম মহাশয় তাকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে। বলে না বলে না, কিন্তু ডোমের চাপাচাপিতে সে বলতে বাধ্য হল।
ভাই আমি যখন অজু করার জন্য পুকুরের পানিতে হাত রাখলাম, পিছনে মেয়ে মানুষের কান্নার শব্দের মত একটা শব্দ শুনতে পাই। পিছন ফিরে আমি যা দেখি তা দেখার জন্য আমি কেন কোন মানুষই কখন প্রস্তুত থাকে না। আমি দেখলাম একটা মেয়ে যার পুড়া শরীরটাই থেতলানো। মাথার মগজ কানের পাশ দিয়ে বেয়ে পড়ছে। মাথায় কয়েকটা রড এমন ভাবে ঢুকে গেছে যে একটি রড গলা ও আর একটি রড ঘাড়ের পাশ দিয়ে বেড় হয়ে আছে। থেতলানো শরীরের হাত দুটো বাঁকা হয়ে আকাশের দিকে কি যেন ইশারা করছে। আর কি যে বীভৎস লাগছিল, ওহ্ ভাবতে গেলেই......, দেখি মেয়েটি আমার দিকে কান্না করতে করতে এগিয়ে আসছে। আর বলছে আমার মাথার রড দুটি আগে খুল। উল্টা হাত দিয়ে আমাকে ধরতে যাবে আমি পালাতে চেয়েও পারলাম না। পুকুর ঘাটে পিছলে পড়ে গেলাম। তারপর আর কিছু মনে করতে পারছি না।
ডোম বাবাজি এতক্ষন শুনলেন বটে কিন্তু প্রথমে কিছক্ষন উনার চাপকল টিপকল বা ঝরনা যাই বলেন তা বইতে থাকলেও পড়ে সেমাই পায়েস যাই বলেন তাতে পড়নের লুংগি খানা বদল করার আবশ্যক এবং অতি আবশ্যক হয়েছিল। মেয়েটির পোষ্ট মর্টেম করলাম আমি, কোথায় তার শরীর, কোথায় তার কলিজা, কোথায় কি? আর সেই মেয়েটিই কিনা একটা দুরন্ত যৌবন ছেলেকে আক্রমণ করছে। মানলাম মেয়েটি নয় ছেলেটি বানিয়ে বলছে। কিন্তু ও কি করে জানবে আমি আজ একই কাজ করেছি। ভাবতে ভাবতে ঘুম তো দুরের কথা ডোম বাবাজির কাপড় আরও বার কয়েক বদল করতে হল। সকালে জ্বর বলে সেই জ্বর। সোজা হুজুরের বাড়ি। হুজুর আবার জ্বিন ভুত নিয়ে কি না কি কারবার করেন।( চলবে)
জুলাই২২,২০১৩ খ্রীঃ
উত্তরা, ঢাকা
পতাকা কেন?
আমি এখন থেকে প্রতিটা লেখায় দেশের প্রতি শ্রদ্ধা বা ভালবাসা যাই বলেন সেই আবেগ থেকেই, অন্য কিছু না।
ভালো
ধন্যবাদ ভাইয়া।
য়ু আর
ব্রাদার।
মন্তব্য করুন