ইউজার লগইন

আমার আকাশ দেখা(দ্বিতীয় পর্ব)

গতকাল আমার আর আকাশ দেখা হল না। ঢাকা শহরে ইচ্ছা করলেই আকাশ দেখা যায় না। আকাশ দেখতে হলে রীতিমত প্লান প্রগ্রাম ও প্রস্তুতি নিয়ে আকাশ দেখতে হয়। সাধারণত কেউ আকাশের দিকে তাকায় না। ২৪ ঘণ্টায় দিন, ৭ দিনে সপ্তাহ, ৩০/৩১ দিনে মাস ৩৬৫ দিনে বছর। এত সময়ের মধ্যেও ঢাকা শহরের বিশ্বের দ্রুতগামী যুদ্ধ বিমানের চাইতেও দ্রুত গতিতে চলা, এবং ইউনিভার্সাল টেস্টিং মেশিনে রড টেস্ট করার ইলাস্টিসিটির শেষ বিন্দু ইল্ডিং পয়েন্ট সমান দুঃশ্চিন্তা নিয়ে চলা মানুষগুলোর একটু ফুসরত মেলে না আকাশের দিকে তাকানোর। আমার লেখাটা পোস্ট করার সাথে সাথে জানি অনেক প্রতিবাদ আসবে, উজবুকের মত আপনার মনে যা আসছে তাই লিখে যাচ্ছেন। হবে হয়তবা, কিন্তু আমার দেখা খুব কাছ থেকে দেখা যত বেশী অর্থ নৈতিক সমৃদ্ধশালী যাদেরকে আমরা খুব সুখী লোক হিসেবে কাছ বা দূর থেকে দেখি তাদেরকেই আমার বেশি সময়ের কাঙ্গাল বা অসুখী মানুষ মনে হয়।
আজ থেকে ২৯ বছর আগে আমি প্রথম ঢাকা শহরে আসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে। আমি আমার বাপের বয়সী এক ভাতিজার বাসায় উঠি, ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে। ভাতিজা তখন টি,এন,টিতে চাকড়ি করেন। সে সময়ে টি এন টিতে চাকড়ি করনে ওয়ালাদের কি ডাঁট ফাট ছিল যাদের বাসায় তখন টেলিফোন ছিল তাদের অবশ্যই জানা আছে, আর আমার আব্বাজানও খুব ডাট ফাটেই থাকতেন। আপনারা অবশ্যই জানেন আজকের ঢাকা আর তখনকার ঢাকার পার্থক্যটা। তখন এত সুউচ্চ ইমারত ঢাকা শহরে কটা ছিল। যাক একদিন ভাতিজার আমার দ্বিতীয় শিফটে রাত আটটা পর্যন্ত ডিউটি ছিল। আমি কাজ কাম নাই তাই সন্ধে সময় প্রায়ই উনার অফিসে চলে যেতাম। বাসার কাছেই অফিস। যখন চাও যাও, যখন চাও আস কোন সমস্যা নাই। বাবার বয়সী ভাতিজা তাই উনাকে আমি আব্বাজান বলে ডাকতাম। আর উনি আমাকে বাপ ঢাকতেন। একদিন অফিস শেষ করে উনি বললেন চল বাপ একটু ফার্ম গেট থেকে ঘুরে আসি, অবশ্য কি জানি একটা কেনার জন্য। কথা বলতে বলতে যাচ্ছি, হঠাত আমার মনে হল আজ চাঁদের কতদিন? আব্বাজানকে জিজ্ঞেস করলাম, আব্বাজান আমার অনেকক্ষণ পর জবাব দিলেন, বাপরে চাঁদের আজ কতদিন বলা তো দুরের কথা কতদিন আকাশের দিকে তাকাই না তাই তো মনে করতে পারছি না। এটা আজ থেকে ২৯ বছর আগের কথা। আর আজ, আজ কি আমরা তার থেকে বেরিয়ে আস্তে পেরাছি নাকি আকাশ দেখা থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছি। আমার মনে হয় দ্বিতীয়টাই বেশি, তাই আজ আমি আকাশ দেখব।
কাল নিত্যকলারত যে ইমারতটির কথা বলছিলাম তার থেকে এক বা দুই ডিগ্রী উন্নতি( শিরঃকোণ) কোণে তাকাতেই একটি ভবন নজরে এল, এটা একটি বানিজ্যিক ভবন, ঈদ উপলক্ষে সাজিয়েছে চমৎকার সাজে। নিচ তলা থেকে ছাদ পর্যন্ত কৃত্রিম আলোর বর্ণিলচ্ছটায় সাজিয়েছে। পিড়িয়ডিক ও এক্রোবেটিক ওয়েতে একটার পর একটা আলোর রং পরিবর্তন হচ্ছে। অন্ধকার ভেদ করে এই বর্ণিল আলোরচ্ছটা আমার ভীষন ভাল লাগতে লাগল। মানুষের মন বা মস্তিস্ক নাকি সেকেন্ডে অসংখ্যবার তার চিন্তার রেখা পরিবর্তন করে। আমারও হল তাই, আমার আলো ঝলমলে মনটা মুহুর্তে বিষন্নতায় ভরে গেল। ফিরে গেলাম কৈশোর পেরিয়ে উঠন্ত যৌবনে।
যদিও কতদিন আগে হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখা ছেড়েছি মনে করতে পারব না, তবে তা অনেক অনেক দিন তো বটেই। অথচ এমন এক সময় ছিল একটি ছবি তিন চার বারও দেখেছি। এমনি একটি ছবি দেখেছিলাম জনাব নায়ক রাজ রাজ্জাক অভিনীত নাম মনে নেই, তবে ঘটনাটা আবছা আবছা মনে আছে। হৃদয়ে দাগ কাটা একটি ছবি। জনাব রাজ্জাক ও তার একটি ছোট বোনের সংসার। জনাব রাজ্জাকের স্বপ্ন বোনকে লেখা পড়া করিয়ে অনেক বড় করবে তারপর বোনের বিয়ে দেবে। বোনকে বড় করে বিয়ে দেবার স্বপ্নে বিভোর ভাইটি কল্পনা করে তার বোনের বিয়ের দিন আমার চোখের সামনে সাজানো আলোকোজ্জল ইমারতটির মতই আলোকসজ্জা হবে, আর ভাই টি মনের আনন্দে গেয়ে উঠবে,
ঝিল মিল ঝিল মিল ঝলবে রাত,
মেহেদী রাঙ্গা হবে হাত,
দেখবে একদিন আমার ঘরে
আসবে রে বারাত।
আসবে রে বারাত।
ভাইটির স্বপ্ন আর পূরন হয়না। ঘটনার পরিক্রমায় ভাইটি চলে যায় জেলে আর অসহায় বোনটি নিজের ইজ্জত আভ্রু বাচাতে পালিয়ে যান এলাকা ছেড়ে শহরে। সেখানেও নিজেকে সপে দিতে হয় বাইজি পাড়ায়। ভাইটি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এসে বোনটিকে পাগলের মত খুজে বেড়ায়। কিন্তু কোথায় খুজে পাবে বোনটিকে। সে যে এখন অন্ধকার জগতের বাসিন্দা। জীবনের অন্ধকার গলি ও ঘটনার পরিক্রমায় ভাইটি একদিন বাইজী পাড়ায় যায়, কিন্তু বোন ভাইকে চিনতে পারলেও ভাই বোনকে চিনতে পারে না। বোনটি লাজ লজ্জার ভয়ে ভাইকে কাছে পেয়েও নিজের পরিচয় দিতে পারে নি। কিন্তু নাচের আসরে বোনের কন্ঠে যে গানটি আমাদের উঠন্ত যৌবনের কোমল আঁখির তরল আঁখি জল ঝড়িয়ে ছিল সেটি ছিল,

ঝিল মিল ঝিল মিল ঝলছে রাত,
মেহেদী রাঙ্গা হলো হাত,
নিত্যদিনই আমার ঘরে
আসছে যে বারাত।
আসছে যে বারাত।
একদিন বোনটি ভাইকে তার পরিচয় দেয় ঠিকই তবে ভাইকে্রে।বাঁচাতে প্রাণ হরণ কারী বুলেট নিজের বুকে ধারণ করে।
স্মৃতি রুমন্থনের এ পর্যায়ে আমার মনটা ভীষন্নতায় ভরে উঠার কারন হল, মিতা নুর। আমার সমবয়সী আমার প্রিয় অভিনেত্রী মিতানুরের অকাল প্রয়াণের কথা মনে হওয়াতে। সে ছবিটিতে মিতা নুর নয় অন্য কেউ অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু কেন জানি আমার মনে হচ্ছিল সে বোনটি মিতা নুর। হয়তবা তার প্রতি আমার অগাধ ভাল লাগার জন্য। অথবা চোখের নয় মনের হেলোসেনেশনের জন্য (চলবে)
০৫/০৮/২০১৩
উত্তরা ঢাকা।

পোস্টটি ৪ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

আহসান হাবীব's picture


বাংলাদেশ

টোকাই's picture


Smile

আহসান হাবীব's picture


গুল্লি

আহসান হাবীব's picture


ঈদ মোবারক শখের টোকাই হুক্কা

চিন্তক's picture


আপনার লেখা পড়লে আমার যে সমস্যাটা হয়, সেটা হল- কোন টপিকসের উপর আলোচনা হচ্ছে বুঝতে পারি না। ফ্রিকোয়েন্টলি চেঞ্জ হয় লেখার গতি।

যাই হোক, ঈদের আগাম শুভেচ্ছা রইল। Smile

আহসান হাবীব's picture


চিন্তক ভাইয়া আপনি ঠিকই ধরেছেন। প্রত্যেক লেখকই হয়ত দীর্ঘ প্লান করে তারপর লেখতে বসে।কিন্তু লিখতে বসে মনে যা আসে তাই লিখতে থাকি। হবে হয়তবা তাই ফ্রিকোয়েন্টলি লেখার গতি চেঞ্জ হয়। যা আপনাকে স মষয়ায় ফেলে। তবে লিঙ্ক রাখার চেষ্টা করি। তবে এটা আমার ভাল লাগে, এইজন্য যে একটা বি হাতে নিলাম আর দু লাইন পড়েই বুজে নিলাম বই এ কি লেখা আছে, আমি তা চাই না। তাই এটা অনেকটা ইচ্ছাকৃতও ব্লতে পারেন।
যাক আপনি আমার লেখা পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন, তাতে আমার উপকারি হবে। আগাম ঈদ মোবারক। ভাল থাকবেন। কোথায় ঈদ করছেন?

টোকাই's picture


আ হা ভাই। অগ্রিম ঈদ মোবারক আপনাকে। অনেক আনন্দে কাটুক আপনার ঈদ।

আহসান হাবীব's picture


আপনারও। মজা বাংলাদেশ

তানবীরা's picture


পড়লাম Smile

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আহসান হাবীব's picture

নিজের সম্পর্কে

তোমার সৃষ্টি তোমারে পুজিতে সেজদায় পড়িছে লুটি
রক্তের বন্যায় প্রাণ বায়ু উবে যায় দেহ হয় কুটিকুটি।।
দেহ কোথা দেহ কোথা এ যে রক্ত মাংসের পুটলি
বাঘ ভাল্লুক নয়রে হতভাগা, ভাইয়ের পাপ মেটাতে
ভাই মেরেছে ভাইকে ছড়রা গুলি।।
মানব সৃষ্টি করেছ তুমি তব ইবাদতের আশে
তব দুনিয়ায় জায়গা নাহি তার সাগরে সাগরে ভাসে।
অনিদ্রা অনাহার দিন যায় মাস যায় সাগরে চলে ফেরাফেরি
যেমন বেড়াল ঈদুর ধরিছে মারব তো জানি, খানিক খেলা করি।।
যেথায় যার জোড় বেশী সেথায় সে ধর্ম বড়
হয় মান, নয়ত দেখেছ দা ছুড়ি তলোয়ার জাহান্নামের পথ ধর।
কেউ গনিমতের মাল, কেউ রাজ্যহীনা এই কি অপরাধ
স্বামী সন্তান সমুখে ইজ্জত নেয় লুটে, লুটেরা অট্টহাসিতে উন্মাদ।
তব সৃষ্টির সেরা জীবে এই যে হানাহানি চলিবে কতকাল।
কে ধরিবে হাল হানিবে সে বান হয়ে মহাকাল।।