ঠাকুরগাও এ ৩৬ ঘণ্টা (প্রথম পর্ব)
ঠাকুরগাও এ ৩৬ ঘণ্টা (প্রথম পর্ব)
চোখের সামনে নতুন মটর সাইকেলটা দেখে মধ্য বয়সে যেন শরীরে যৌবন
জোয়ারের ছলছল গতীটা বিদ্যুৎ গতিতে রূপান্তরিত হল। ছোট ভাইকে বললাম দে তো চাবিটা। আমি যে সকল মটর সাইকেলটা চালাতাম তার মধ্যে ইয়ামাহা ১০০, ছিডি-৮০ হোণ্ডা-১১০, এই ব্র্যান্ডগুলো আজ আর মার্কেটে পাওয়া যায় না। তবে এই ব্রান্ডের মটর সাইকেল গুলোর মধ্যে আমার প্রিয় ছিল, সি ডি-৮০, যার তেল খরচ ছিল খুবই কম, আর আমার শরীরের সাথে মানান সই, সর্বোপরি আমার মতে সৌখিন একটি বাহন।
ছোট ভাই বলল পারবেন তো চালাতে, না পারার কিছু আছে কি? না অনেক দিন চালান নি তো? আমি গেয়ার গুলো সব সামনে কি না জিজ্ঞেস করলাম। কারন ইদানিং কিছু মটর সাইকেলের গেয়ার প্রথমটা সামনে তো দ্বিতীয়টা পিছনে। ও বলল সব গেয়ার সামনে।
আমি প্রথম যে দিন মটর সাইকেল নিয়ে ঠাকুর গাও এ গ্রামের বাড়ী গেলাম।দিনের বেলায় মটর সাইকেলের শব্দ পেয়ে আশ পাশের বাচ্চারা সবছুটে এল দেখার জন্য। কেউ কেউ সাইলেন্সারের কাছে বসে পুড়া তেলের গন্ধ আস্বাদন করছিল। ব্রেক কষলে পিছনে জ্বলা লাইট দেখে সমস্বরে চিৎকার, দেখ দেখ পিছে বাত্তি জ্বলে।আমার যতদুর মনে পড়ে মামাতো ভাই নুরুল হুদা, শামছুল হুদা এই দু ভাইয়ের একটি মটর সাইকেল ছিল, আর কারো ছিল বলে মনে করতে পারি না। আজ ঘরে ঘরে মটর সাইকেল। কেউ হয়ত প্রয়োজনে কেউ সন্মান রক্ষার্তেও একখানা মটর সাইকেল কিনেছেন। যেমন আমার এক ভাতিজা সেনাবাহিনীর চাকরি করেন। সে একখান মটর সাইকেল কিনেছেন, শুধু ছুটিতে এলে যেন কারও কাছে মটর সাইকেল ধার না চাইতে হয়। অবশ্য তার অন্য দু ভাইয়ের দুটি মটর সাইকেল আছে। আমি শুনে হাসলামও না কাদলাম ও না। তবে চালালাম।
লুংগি পরা অবস্থাতেই স্টার্ট করে চালাতে লাগলাম, নাতি নাতনী সবাই হাত তালি দিতে লাগল। আমি উৎসাহ পেয়ে দুতিন বাড়ি ঘুড়ে এলাম। এবার নাতি-নাতনী রা (সংখ্যায় অনেক) বায়না ধরল, আমাকে চড়াও, আমাকে চড়াও।দুজন দুজন করে প্রায় সবাইকে চড়ালাম।
নাতিরা যে কত আদরের হয় তা কি ভাষায় প্রকাশ করা যায়। আমার বড় মেয়ে এখনও ছাত্রী। নাতি বলতে ভাতিজা, ভাতিজি, ভাগনা, ভাগ্নির ছেলে মেয়ে। তাও যে কি মজা ও মায়া। আমার মনে হয় এটা মানুষের জীবনের মায়ার বন্ধনের তৃতীয় ধাম। তাই মানুষ একটার পর একটা মায়ার বাধন ছেড়ে মায়ায় ভরা এই সুন্দর পৃথিবী নামক বাগানটা ছেড়ে যেতে চায় না।
এই মায়ার টানেই গিন্নিকে মাঝে মাঝে বলি,চল, মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেই, নাতি নাতনি যাই হউক, আমরা দেখব, ওরা পড়াশুনা করবে। গিনি আমার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে, আমার মন্দ লাগে না। আমিও জানি আমার আবদার যুক্তি সংগত নয় শুধুই আবেগ তাড়িত। তাই খুব একটা আগে বাড়ি না।
আগের দিন ছোট চাচার ছোট ছেলে, অর্থাৎ চাচাত ভাইকে কোন এক বিষয়ে অনেক বকাবকি করেছি, এও বলেছি এখন বড় হয়ে গেছিস মারতে তো আর পারব না, তবে ভবিষ্যতে যেন এমনটির পুনরাভিত্তি না হয় বলে অনেক শাসালাম। অনেক আত্বীয় স্বজনের সাথে সাক্ষাৎ হেতু মধ্য রাতে শুতে যাবার সময় ভাইটির কথা মনে পড়ল। কেমন জানি কলিজার ভিতর একটা মোচর দিয়ে উঠল। ভাবলাম ডাকি, কিন্তু এত রাতে ডাকলাম না। সকাল সকাল উঠেই গেলাম, চাচি বলল, উঠে নি, ঘুমাচ্ছে। আমি আর ডাকলাম না।
গেলাম মেঝো ভাইয়ের বাড়িতে। ভাতিজা তাজুল কমার্শিয়াল ও আধুনিক পদ্ধতিতে কাকরুল, জিংগা, কুমড়া ও অন্যান্য সবজি আবাদ করা বাগান থেকে কাকরুল জিংগা উঠাচ্ছে। সপ্তাহে দুদিন উঠায়। তিন থেকে সাড়ে তিন মন করে কাকরুল উঠে। দামও মন্দ না, ত্রিশ টাকা কেজি, কখনও নিজে সাইকেলে করে নিয়ে যায় কখনও ভেন গাড়ীতে নিয়ে যায়। দেখলাম ভাতিজা বউ লাইলী বস্তায় ভরছে। ঈদের কদিন বাজার দোকান পাঁট বন্ধ থাকায় কাকরুল উঠান হয় নি। তাই কিছু কাকরুল পেকে গেছে।তাও পাইকার কিনে নিবে, তবে একটু দাম কম।
আমার এই ভাতিজাটা তেমন লেখাপড়া করেনি, কিন্তু আমাদের যে ডাঙ্গা(উচু) জমিগুলো বিনা আবাদে ফেলে রাখা হত তাতে ব্যতিক্রম ধর্মী কৃষি আবাদ করে নিজেকে যেমন উন্নত করেছে তেমনি পতিত জমিগুলোকে নতুন করে যেন জীবন দান করেছে। তার দেখাদেখি অনেকেই এক রকম আবাদ করে নিরব কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছে কি না আপনারাই বলুন।আর এক ভাতিজা, একটার পর একটা কাঠাল নামাচ্ছে গাছ থেকে। আমাকে কাঠাল খেতে বললে, আমি ওদের কাজ সেরে নেবার কথা বলে, আমি নেমে পড়লাম আমার কাছে দুর্লভ দৃশ্যগুলো সেল ফোনে বন্ধী করার জন্য।
(চলবে) আগষ্ট,০১
দিনাজপুর, হিলি
কেমন আছেন আপনি?
আমি ভাল আছি, আপনি কেমন আছেন?
মন্তব্য করুন