ইউজার লগইন

বনস্পতির জন্য ভালোবাসা..

দিবসওয়ারী উদযাপন আমার অতটা ভালো লাগে না। অনেক আগে থেকেই আমার এই মনোভাব, তবে ইদানিং অনেক কিছুই সয়ে নিতে শিখছি। ভালো না লাগলেও আজকাল অনেক কিছু করে নিতে পারি হাসিমুখেই। মুখের উপর মুখোশখানা দিনে দিনে বেশ খাসা হয়ে উঠছে আর কি!

যাই হোক, অনেকদিন কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না লেখার মত। আর, বাবাকে নিয়ে কিছু গান নিয়ে একটা কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল তারও আগে থেকেই। আজ এই বাবা দিবসে হঠাৎ মনে হল, লিখতে বসেই দেখি কিছু হয়ে উঠে কি না!

একটা কিছু লেখার কথা চিন্তা করলে অনেক কিছুই মাথায় আসতে থাকে কিন্তু লিখতে বসলে দেখা যায় পুরাই আউলাইয়া গেছি, ভাবি এক জিনিস লেখি আরেক জিনিস! আজব ব্যাপার!

আমার আব্বু মাঝেই আফসোস করেন যে আমরা দুই ভাই-ই নাকি শুধু সারাদিন আম্মু আম্মু করি। কথাটা অবশ্য পুরোপুরি মিথ্যাও নয়। ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছি আব্বুর খালি আপিস আর আপিস, তাই খুব একটা ধারে কাছে ঘেঁষতেই পারতাম না। আর হাল্কা ঝাড়িঝুড়িও আব্বুর কাছেই খাইতাম। তাই একটু ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধার একটু দুরের আসনটা যেন আপনাতেই বরাদ্দ হয়ে গিয়েছিল আপনাতেই।

ব্যাতিক্রম হয়তো কিছু আছে তবে আমার মনে হয় এমনটাই বেশি দেখা যাবে খুজলে। কথায় আছে 'আদর করা তারই সাজে শাসন করে যে'। বাবা ও মা মিলে একটি সিঙ্গেল এনটিটি ধরে নিলেই অবশ্য কথাটা বেশ মানান্সই হয়ে যায়। একজন একটু নরম তো একজন একটু শক্ত, এমনটা হওয়াই হয়তো সবচাইতে ভালো।

আমার মতে একদম ছোটবেলায় আসলে কেবল মায়ের আদর টাই সহজে টের পাওয়া যায়। কিন্তু বাবার স্নেহ - ভালোবাসা বুঝার জন্যও বেশ খানিকটা ম্যাচিউর হতে হয়। ওই, নিজেই বুঝে নিতে হয় যে তাই।

আমাদের যখন যা কি কিছু লাগে প্রথমে আম্মুকেই বলা হয়, তারপর আব্বু মারফত প্রাপ্তি। মানে, একটু ঘুরিয়ে হলেও আমাদের সব আবদারই কিন্তু আব্বুই মিটান। এমনকি আমরা এত্ত বড় হয়ে যাবার পরও! কিন্ত, এই সহজ ব্যাপারটাই ধরতে আমার অনেক অনেক সময় লেগে গিয়েছে!

টিন এজে পা পড়ার পর থেকেই দেখা গেছে মাঝে মাঝে আম্মুর সাথে মন কষাকষি হয়ে আসছে, কয়েকদিনের হাওয়াবদল বলা চলে আর কি! তবে, বড় ধরনের হাউকাউ দেখা যায় আব্বুর সাথেই করা হয়। কি জানি, হয়তো ব্যাক্তিত্তের সঙ্ঘাত টাইপ একটা কিছু হবে! আগে এসব নিয়ে খুব মঅন খারাপ হত। এখন আর হয় না, নিজেকে দিয়ে আব্বুর চিন্তাধারাটা ভাবার চেষ্টা করে দেখতে গেলেই অবাক লাগে। অনেক কিছুই মিলে যায় বলেই হয়তো!

আব্বু গতবছর রিটায়ার্ড করলেন চাকুরি থেকে, তারপর থেকে দিনের বড় একটা অংশে আব্বুকে দেখতে পাওয়াটাই বেশ অবাক করত এত বছরের অনভ্যস্ততায়! এতদিন সারাদিন কেবল আম্মুকেই জ্বালাতাম, এখন মাঝেমাঝে আব্বুকেও জ্বালাই। ভালোই লাগে! আব্বু মাঝে মাঝেই বলে বুড়া নাকি হইয়া যাইতাছে, আমরা হাসাহাসি করি! আমাদের বাসায় মাশাআল্লাহ আব্বুই এখনও মনে হয় সবচাইতে ফিট আছেন!

পিতা ও মাতা, এই দুইটা পোস্টই মনে হয় এই দুনিয়ার দপ্তরে সবচাইতে কম মুল্যায়িত পোস্ট! আমরা তো জন্মের পর থেকেই শুরু করে দিছি ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান, সাথে আরও কত কত মানুষের কত্ত সমালোচনা। এর মাঝে নিজেদের লাইফ সামলে আবার আমাদের মানুষ বানানোর চেষ্টা! অথচ এই আমরাই আজকাল আবার আধুনিকতার ছোঁয়ায় একটু বড় হয়ে নিজের পায়ে দাড়াতেই তাদের নিয়ে ফেলে আসি বৃদ্ধাশ্রম! কি ভয়ংকর একটা ব্যাপার! আত্মকেন্দ্রিক ক্যারিয়ার নির্ভর স্বার্থপর এই জীবনধারা নিয়ে ভাবলে সত্যিই খুব ঘেন্না লাগে এইভাবে ভালো থাকার উপর।

আরেকটু সময় নিয়ে ভাবলে দেখি মা যতটাই কম মুল্যায়ন করা হোক না কেন, সাধারনত সময় থাকতে বাবাকে এতটা মুল্যায়নও করা হয় না। মা কে নিয়ে কম হলেও খুব কম গান, বই কিংবা মুভি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু, বাবাকে নিয়ে? সত্যিই হাতেগোনা কয়েকটা কেবল। খুব খারাপ লাগে এভাবে ভাবতে।

বাবারাই সাধারণত আমাদের জীবনের প্রথম হিরো কিংবা রোল মডেল হয়ে থাকেন। মেয়েরা তা বেশ ভাল বোঝাতে পারলেও আমরা ছেলে হয়েও বাবাকে টা এতটা টেরই পাইতে দিতে জানি না! কি আজব একটা সমস্যা। আর, সবগুলা বাবা মেয়েগুলারে এত্ত কেন ভালো পায়?! পিচ্চি মেয়েগুলা সব রাজকন্যা আর আমরা ছেলেগুলা সব সাধারনত বান্দর প্রকৃতির হয়ে থাকি বলেও অবশ্য এমনটা হইতে পারে! নিওয়ে, ব্যালেন্সিং এর জন্য ছেলেদের জন্য তো মা থাকেই। হিঃ হিঃ

বাবাকে নিয়ে গাওয়া গান খুব বেশি শোনা হয় নি কখনো, তাও এদের মাঝে আমার প্রিয় গানগুলি শেয়ার করতে ইচ্ছে করতেছে এখন।সবগুলা গান অবশ্য কেবল বাবা কে নিয়ে না, মায়ের সাথেও রিলেট করা যায়।

বাবাকে নিয়ে গান ভাবলে প্রথমেই যেটা মাথায় আসে,
তা হল হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আর শ্রাবন্তি মজুমদারের গাওয়া 'আয় খুকু আয়'।

গানটার চমৎকার কথাগুলো এরকম -

কাটে না সময় যখন আর কিছুতে
বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না
জানলার গ্রিলটাতে ঠেকাই মাথা
মনে হয় বাবার মত কেউ বলে না
আয় খুকু আয়
আয় খুকু আয়

আয়রে আমার সাথে গান গেয়ে যা
নতুন নতুন সুর নে শিখে নে
কিছুই যখন ভালো লাগবে না তোর
পিয়ানোয় বসে তুই বাজাবি রে
আয় খুকু আয়
আয় খুকু আয়

সিনেমা যখন চোখে জ্বালা ধরায়
গরম কফির মজা জুড়িয়ে যায়
কবিতার বইগুলো ছুড়ে ফেলি
মনে হয় বাবা যদি বলতো আমায়
আয় খুকু আয়
আয় খুকু আয়

আয়রে আমার সাথে আয় এখনি
কোথাও ঘুরে আসি শহর ছেড়ে
ছেলেবেলার মত বায়না করে
কাজ থেকে নে না তুই আমায় কেড়ে
আয় খুকু আয়
আয় খুকু আয়

দোকানে যখন আসি সাজবো বলে
খোপাটা বেঁধে নেই ঠান্ডা হাওয়ায়
আরশিতে যখন এই চোখ পরে যায়
মনে হয় বাবা যেন বলছে আমায়
আয় খুকু আয়
আয় খুকু আয়

আয়রে আমার কাছে আয় মামনি
সবার আগে আমি দেখি তোকে
দেখি কেমন খোপা বেঁধেছিস তুই
কেমন কাজল দিলি কালো চোখে
আয় খুকু আয়
আয় খুকু আয়

ছেলে বেলার দিন ফেলে এসে
সবাই আমার মত বড় হয়ে যায়
জানি না ক'জনে আমার মতন
মিষ্টি সে পিছু ডাক শুনতে যে পায়
আয় খুকু আয়
আয় খুকু আয়

আয়রে আমার পাশে আয় মামনি
এ হাত টা ভালো করে ধর এখনি
হারানো সেদিনে চল চলে যাই
ছোট্ট বেলা তোর ফিরিয়ে আনি
আয় খুকু আয়
আয় খুকু আয়

তারপরেই মনে আসতেছে আমাদের রকস্টার জেমস এর অসাধারন গান 'বাবা'

কথাগুলো এরকম -

ছেলে আমার বড় হবে,
মাকে বলত সে কথা
হবে মানুষের মত মানুষ এক লেখা ইতিহাসের পাতায়
নিজ হাতে খেতে পারতাম না,
বাবা বলত ও খোকা যখন আমি থাকবনা,
কি করবি রে বোকা…
এতো রক্তের সাখে রক্তের টান স্বার্থের অনেক উর্ধ্বে হঠাৎ
অজানা ঝড়ে তোমায় হারালাম
মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল
বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায়,
কেউ বলেনা তোমার মত কোথায় খোকা ওরে বুকে আয়
বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায়,
কেউ বলেনা মানিক কোথায় আমার ওরে বুকে আয়॥
চশমাটা তেমনি আছে, আছে লাঠি ও পাঞ্জাবী তোমার
ইজিচেয়ারটাও আছে, নেই সেখানে অলস দেহ শুধু তোমার
আযানের ধ্বনি আজো শুনি, ভোরে ভাঙ্গাবেনা ঘুম তুমি জানি
শুধু শুনিনা তোমার সেই দরাজ কন্ঠে পড়া পবিত্র কোরআনের বানী…
বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায়,
কেউ বলেনা তোমার মত কোথায় খোকা ওরে বুকে আয়
বাবা কতরাত কতরাত দেখিনা তোমায়,
কেউ বলেনা মানিক কোথায় আমার ওরে বুকে আয়॥

তারপর, ভয়ংকর কষ্টের একটা গান -
নচিকেতার 'বৃদ্ধাশ্রম'

খুব খুব মর্মস্পর্শী কথাগুলো এরকম -

ছেলে আমার মস্ত মানুষ,মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার।
নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামী দামী
সবচেয়ে কম দামী ছিলাম একমাত্র আমি।
ছেলের আমার আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম !

আমার ব্যবহারের সেই আলমারি আর আয়না
ওসব নাকি বেশ পুরনো,ফ্ল্যাটে রাখা যায় না।
ওর বাবার ছবি,ঘড়ি-ছড়ি,বিদেয় হলো তাড়াতাড়ি
ছেড়ে দিলো, কাকে খেলো, পোষা বুড়ো ময়না।
স্বামী-স্ত্রী আর আ্যালসেশিয়ান-জায়গা বড়ই কম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম!

নিজের হাতে ভাত খেতে পারতো নাকো খোকা
বলতাম আমি না থাকলে কি করবি রে বোকা?
ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতো খোকা আমার কথা শুনে-
খোকা বোধ হয় আর কাঁদে না,নেই বুঝি আর মনে।
ছোট্টবেলায় স্বপ্ন দেখে উঠতো খোকা কেঁদে
দু’হাত দিয়ে বুকের কাছে রেখে দিতাম বেঁধে
দু’হাত আজো খুঁজে,ভুলে যায় যে একদম-
আমার ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম!

খোকারও হয়েছে ছেলে,দু’বছর হলো
তার তো মাত্র বয়স পঁচিশ,ঠাকুর মুখ তোলো।
একশো বছর বাঁচতে চাই এখন আমার সাধ
পঁচিশ বছর পরে খোকার হবে ঊনষাট।
আশ্রমের এই ঘরটা ছোট,জায়গা অনেক বেশি-
খোকা-আমি,দু’জনেতে থাকবো পাশাপাশি।
সেই দিনটার স্বপ্ন দেখি ভীষণ রকম
মুখোমুখি আমি,খোকা আর বৃদ্ধাশ্রম!
মুখোমুখি আমি,খোকা আর বৃদ্ধাশ্রম!
মুখোমুখি আমি,খোকা আর বৃদ্ধাশ্রম!

তারপরেই,
আমার খুব প্রিয় একটা গান -
সুমনের অসাধারন গলায় 'বয়স আমার মুখের রেখায়' ।

চমৎকার ছন্দতালের গানটার কথাগুলি এমন -

বয়স আমার মুখের রেখায় শেখায় আজও ত্রিকোণমিতি,
কমতে থাকা চুলের ফাকে মাঝবয়সের সংস্কৃতি
হাটুতে আজ টান লেগেছে, টান লেগেছে গাটে গাটে
মধ্যবিত্ত শরীরে আজ, সময় শুধু ফন্দি আটে;

খালি চোখে পড়তে গিয়ে হোচট খেয়ে চশমা নেয়া
বয়স হওয়ার মানেই বোধহয় স্বচ্ছতাকে বিদায় দেওয়া;

বিদায় নিল অনেক কিছু, কোনটা পরে কোনটা আগে
বয়স হচ্ছে বলেই বোধহয় মাঝে মাঝে একলা লাগে,
একলা লাগার সময় মানে নিজের সঙ্গে কথা বলা
তারই ফাকে কোথায় যেন ”অখিল বন্ধু ঘোষ” এর গলা ।

গলার কাছে পাল তুলেছে, আজগুবি এক স্মৃতির খেয়া
বয়স হওয়া মানেই বোধহয় স্মৃতির সঙ্গে আড্ডা দেওয়া,
কে বলে হে আড্ডা নাকি কম বয়সের কথকথা
বয়স হলেই বরং জমে আড্ডা এবং নিরবতা!

নিরবতার অপর পারে সন্ধে নামার একটু আগে
বয়স হচ্ছে বলেই বোধহয় হাটতে হাটতে একলা লাগে;
সন্ধে নামার সময় হলে, পশ্চিমে নয়, পূবের দিকে,
মুখ ফিরিয়ে ভাবব আমি কোন দেশে রাত হচ্ছে ফিকে।।

আর সব্বার শেষে বাবাকে নিয়ে আমার সবচাইতে প্রিয় গান।
আবারও সুমনের অসাধারন গায়কীতে 'তিনি বৃদ্ধ হলেন' ।

বাবা চরিত্রের অসাধারন চিত্রায়ন করা কথাগুলো এরকম -

তিনি বৃদ্ধ হলেন
বনষ্পতির ছায়া দিলেন সারাজীবন।
এই বুড়ো গাছের পাতায় পাতায়
সবুজ কিন্তু আজো মাতায়
সুঠাম ডালে।
ডালই বলো ভাতই বলো
গান বাজে তার গৃহস্থালীর তালে তালে।
ওহে ও গৃহস্থ ভীষন ব্যাস্ত
একটু ভালো চা পাওয়া যায়
কোন দোকানে,
ওহে সবজীওয়ালা বন্ধু তোমার
সবুজ বেচা মানুষ আসে তোমার টানে।
ওহে প্রতিদিনের বাজার যাওয়া
থলি হাতে কেটে গেল সারাজীবন।

তিনি বৃদ্ধ হলেন
বৃদ্ধ হলেন
বনষ্পতির ছায়া দিলেন সারাজীবন।

ছিল ছেলেবেলা রামঠ্যাঙ্গানির ,
কথায় কথায় চোখরাঙ্গানি নানা কারন।
ছিল ইংরেজি বই পড়তে বসা,
দুপর বেলা অঙ্ক কষা খেলা বারণ।

ছিল রেয়াজ বিনে রামবকুনি,
তানপুরার ওঁই ধুকপুকুনি চারটি তারে।
সেই বকুনিটাও গানের জন্য ,
সনাৎ খানের মতই বন্য বারে বারে।

দম ঘোরানো কলের গানে ,
ছেলেবেলার আকাশপানে বড়ে গোলাম।
আক্তারি বাঈ তারই পাশে,
গানকে যারা ভালবাসে তাদের সেলাম।

ছিল দিলিপ কুমার রায়ের কণ্ঠ
সমস্ত সুর হন্তদন্ত হারমোনিয়াম ,
মেনুহীনের বেহালা আর
আমির খানের কণ্ঠ অপার তোমায় সেলাম।

ছিল কলম্বিয়ার বাঘের ছাপ্পা
কুকুর শোনে বাংলা টাপ্পা চোঙ্গামুখে,
ছিল পঙ্কজ মল্লিকের গলা
অন্ধকারে একলা চলা মনের সুখে ।

ছিল রোবসন আর ভোলগা নদী,
গুন টেনে যায় নিরবধি রস্কি মাঝি।
ছিল বেটোফেনেও সোনাটা আর,
সালাম নাজাকাতের কণ্ঠে আতশবাজি।

ছিল নির্মলেন্দু চৌধুরী তার
গলার আওয়াজ মুক্তো দেদার নদীর মত,
ছিল পান্নালালের শান্ত মিঠে গলায়
বুকের বাস্তুভিটে শান্তি পেত।

এই বনস্পতির ছায়ায় বসে
শুনেছি গান দেরে কষে পরম পাওয়ায়,
এই বনস্পতি গান শেখালো
তরঙ্গতে এলোমেলো নৌকো বাউয়া ।

দেখো বইছে এখন বয়েসকালের
পাতায় পাতায় এবং ডালের
কালের ওজন ,

তিনি বৃদ্ধ হলেন
বৃদ্ধ হলেন
আমায় ছেড়ে বুড়ো হলেন আমার সুজন ।।

হাবিজাবি অনেক হোল, গানও শোনা হোল বেশ। এফবিতে আমার অত্যন্ত প্রিয় সুলেখক ছোটভাই কাম ফ্রেন্ড জারিফ এর কিছু কথা দিয়েই শেষ করছি আজ।

আসুন আমরা একজন বাবার সাপ্তাহিক
ছুটির দিনটিকে কাছ থেকে দেখি ...

ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠেই জলিলের
মাংসের দোকান থেকে পাঁচ
কেজি সিনা এবং পুটের মাংস কেনার
কথা থাকে, দাঁত ব্রাশ করার পর
বাবা ধীরচিত্তে মাংস কিনতে যান।

কিন্তু বাস্তবে বাবারা সুপারম্যান নয়,
পছন্দসই মাংস পাওয়া যায়
না বলে তিনি হয়ত
মুরগী কিনতে পা বাড়ান। এরপর এক পাল
রঙ্গিন
দেশী মুরগী কিনে হাসিমুখে বাড়ি ফেরা
হয় ।

যেহেতু লিফট নেই এবং সেই
সাথে বাবারা কেউ স্পাইডারম্যান নয়
সেহেতু বাড়ি ফেরার
পথে তিনি ছয়তলা উঠতে সিড়ি ব্যবহার
করেন।
বাবার শরীরে ভোরবেলার রৌদ্রের
আশীর্বাদে ঘামের বিন্দু খেলা করে, দু
একটা চামড়ার ভাঁজ
সঙ্গোপনে উঁকি দিয়ে বাড়িয়ে দেয় বয়স।

ফিরে যাই গল্পে, মা দুর্লভ
নির্লিপ্ততায় জানিয়ে দেন ফ্রিজে মাছ
নেই, সামনে সপ্তাহে মেহমান আসবে।
আমি বাবার জায়গায় হলে বলতাম
নদীতেও মাছ নাই । বাধ্য ছেলের মত
বাবা পুনরায় মাছ কিনে আনেন ; রুই আর
কই ।

দুপুর কাটে ফ্যানের পাখা মুছে,
জানালার গ্রিল আর টয়লেটের সুইচ
মোছার মত জরুরী কাজে নাক ডুবিয়ে।
সন্ধায়, পূর্ণিমা সন্ধ্যায় একমাত্র
ছেলেটিকে মানুষ হবার মৌলিক উদ্দেশ্য
বর্ণণা করতে করতে রিক্সায়
করে চলে যান নিউমার্কেটে ।

লক্ষ্য করুন, বাবারা কিন্তু ব্যাটম্যানও
নয়,
রিক্সাই তাই একমাত্র ভরসা। ছেলের
জুতা, কেডস কেনা হয়, নিজের জন্যেও
একজোড়া স্যান্ডেল দেখেন,
ঘুরে ফিরে দেখেন ।
বাবার সমগ্র অস্তিত্বে জলপদ্ম
হয়ে থাকা কন্যাটির জন্যে কোন
ফাঁকে চকলেট আনা হয়, তা কেউ
জানে না ।

বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় হোটেল
থেকে ছুটির দিন উপলক্ষে কাবাব আর
নান কেনা হয় । ছেলের হাতে কাবাব
নানের দায়িত্ব
বুঝিয়ে দিয়ে তিনি ফিরে যান নিজের
জন্যে দুটো চিতই পিঠা কিনতে। একডজন
কলা, চিতই পিঠা এবং ইঁদুর
শায়েস্তা করার
টেস্টি বিরানী হাতে নিয়ে বাড়ি ফেরা
লোকটার পরনে সেই সকাল বেলার শার্ট,
সাদাকালো চুল, বিরক্তিকর
সারল্যে ঢেকে যাওয়া একটা আকাশ
মাথার উপরে ভাসতে দেখি।

সত্যি বলতে কী...
দিনশেষে পৃথিবীতে যখন এমন অন্তত
একজন বাবাও জীবিত থাকবেন তখন আর
কোন সুপাহিরোর প্রয়োজন নেই ।

প্রতিটা ছুটির দিন আমি কাছ
থেকে তোমাকে দেখি, তাই
প্রতিটা ছুটির দিনই আমার
বাবা দিবস।"

পৃথিবীর বুকে বনস্পতির মত ছায়া দিয়ে যাওয়া সকল আনসাং হিরোদের জন্য অসংখ্য শুভকামনা। ভালো থাকুক সকল বাবা, অফুরান ভালোবাসায়।।

পোস্টটি ১৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

শওকত মাসুম's picture


অসাধারণ, আজকের দিনের সেরা লেখা

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


আপনার এতটা ভালো লেগেছে জেনে খুব খুব ভালো লাগলো। Angel

মর্ম's picture


কিছু লেখা নিয়ে বলার থাকে না কিছু, কিন্তু কিছু না বলে গেলে দূরে থাকা হয় বলে যা নয় তা করে ফাঁকা শব্দে এমন কিছু একটা লিখে যেতে হয়, নয়ত পরে কী করা হয় নি কী করা হয়নি'র যন্ত্রনায় পড়তে হয়!

এটা সেরকম একটা লেখা।

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


:')

ধইন্যা পাতা

আহসান হাবীব's picture


আগামী কাল আরাম করে আবার পড়ব। যেটুকু পড়েছি, তাতেই অনেকগুলো লাইক দিলাম।

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


অনেক অনেক ধন্যবাদ। জেনে, ভালো লাগলো খুব।

শাশ্বত স্বপন's picture


চমৎকার সংগ্রহ!!!!!!!!

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


Big smile

পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ভালো থাকুন।

টোকাই's picture


অনেক কাজ আর মাথাব্যথার ভিতর এত সুন্দর একটা লেখা পড়ে বাবা দিবসে মনটা অনেক ভাল হয়ে গেলো।
মা হারিয়েছি সাত বছর বয়সে, জানিনা নিজের মাএর আদর কেমন হয়, যত টুকুই আদর ভালবাসা পেয়েছি , সেটা বাবার কাছ থেকেই। আজ উনিও নাই।
একদম একা। সত্যিকারের টোকাই আমি। Sad

১০

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


কিছু বলার নাই ভাই..

কিন্তু নিজে এভাবে কষ্টে থাকলে উনারাও কিন্তু উপরে খুব সুখে থাকেন না..

১১

উচ্ছল's picture


মুখের উপর মুখোশখানা দিনে দিনে বেশ খাসা হয়ে উঠছে আর কি!

আহা দারুন বলছেন! কত সহজ সত্য।।

পৃথিবীর বুকে বনস্পতির মত ছায়া দিয়ে যাওয়া সকল আনসাং হিরোদের জন্য অসংখ্য শুভকামনা। ভালো থাকুক সকল বাবা, অফুরান ভালোবাসায়।।

বাবা যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।

১২

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


Smile

১৩

আরাফাত শান্ত's picture


সব গানই তো বহুবার শুনা তবে কিছুদিন তিনি বৃদ্ধ হলেন গানটা অনেক শুনছি। অঞ্জনদত্ত এক ইন্টারভিউতে বলছিলেন রাতে এখনো যখন ঘুম আসে না তখন এই গানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ গান আর এক্টাও হয় না!

১৪

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


Smile

১৫

নিভৃত স্বপ্নচারী's picture


চমৎকার লেখা। গানগুলোও অনেক পছন্দের।
সব বাবারা ভাল থাকুক।

১৬

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ভালো থাকুন।

১৭

মুক্ত বয়ান's picture


চমৎকার অনেকগুলা গান আবার একসঙ্গে মনে পরে গেল। আর ফাঁকতালে সুমনের তিনি বৃদ্ধ হলেন গানটা প্রথম শুনলাম।
বাবাকে নিয়ে কিছু হলেই আমার প্রথমেই মনে পরে "লাইফ ইজ বিউটিফুল" সিনেমার বাবার কথা। আর, অতি সম্প্রতি রবির করা বাবাদের নিয়ে বিজ্ঞাপনের কথা।
অনেক ধন্যবাদ চমৎকার পোস্টের জন্যে। Smile

১৮

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


মুভির কথা বললে
লাইফ ইজ বিউটিফুল
আসতোই আসতো।

পড়া ও চমত্‍কার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

১৯

লীনা দিলরুবা's picture


গানে-গল্পে দারুণ পোস্ট। আরো চাই এমন।

২০

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


Smile

ধন্যবাদ, লীনাপা।

আবারও মাথায় কিছু এলে নিশ্চয়ই তা এখানেই পাবেন। ভালো থাকুন।

২১

অচেনা  আমি's picture


Smile ভালো লেগেছে

২২

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


ধইন্যা পাতা

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture

নিজের সম্পর্কে

i love being my bro's bro..!

কী আর বলব..?

বলতে গেলে লাইফের তিন ভাগের এক ভাগ শেষ অথচ এখনো নিজের কাছেই নিজেকে অচেনা লাগে..!!

মাঝে মাঝে নিজেকে দুঃখবিলাসী মনে হয় আবার অকারন স্বপ্ন দেখতে-ও ভুল হয়না..নিজে হাসিখুশি থেকে অন্যদের হাসিখুশি রাখতে পছন্দ করি..ভাবি বড় হয়ে গেছি আবার কাজে কর্মে ছোট ছোট ভাব টা এখনো ঝেড়ে ফেলতে পারিনা..বেশ অভিমানী আর জিদ্দি but i love havin fun in anythin..লাইফে এক্সামগুলোর দরকার টা কী ভেবে পাইনা..ভালোবাসি গল্পের বই পড়তে,গান শুনে সময় কাটাতে আর কিছু কিছু সময় নিজের মত থাকতে..

আর কি বলব..?!

...here i am!!