কালচার কথা
লিওপোল্ড’এর লালচে আলো মাখা সন্ধ্যের আঁচ, আধ ঘন্টার মধ্যে যেকোনো মগজে ঝিম নামিয়ে দিতে পারে, মাতাল সহকর্মীগুলোর সঙ্গে মুম্বাই’এর এই পান-তীর্থে এসে বুঝলাম যে কলকাতার দিবাকর সান্যালের জাজমেন্টটা নেহাত ফালতু নয়। টেবিলে সহকর্মীদের এক ঘেয়ে এলকহোলিক আড্ডাবাজি থেকে উঠে এসে, বার ঘেঁষে একটা আরাম-টুলে বসলুম। গেলাসে মন দেব, এমন সময় কাটোয়া লোকাল ছাপ চাহিদা ভেসে এলো; “দাদা দেশলাই আছে?”।
পকেট থেকে দেশলাই বের করে দিতে গিয়ে দেখলাম রঙ চঙে বুশ শার্ট পর এক মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোক।
-“বুঝলেন কি করে যে আমি বাঙালি?”, জানতে চাইলাম।
-“জনি ওয়াকারে যে ভাবে হাড়-হাভাতের মত চুমুক লাগলেন তাতেই সন্দেহ হয়েছিল, আর এই মাত্র যে রজনীকান্ত গুনগুণ করছিলেন সেটা ট্র্যাক করে ফেলেছি”, ভদ্রলোক দেশলাই ফেরত দিতে গিয়ে জানালেন, “কানটা আমার বেশ শার্প বুঝলেন”।
-“শার্প শুধু না, সুপার শার্প”
-“তবে এই যে আপনার গুনগুণ টা শুনতে পেলাম সেটা কিন্তু শুধু কান’এর জন্যে নয়, শুনতে পাওয়ার মূল কারণটা হলো আমাদের ইটারনাল সেন্স অফ দাদাগিরি”
-“দাদাগিরি? এক্সকিউজ মি?”
-“ বুঝলেন না তো! লেট মি এক্সপ্লেইন। এই ধরুন বন্ধু-বন্ধবের সঙ্গে আপনি বারে এসেছেন বিলিতি মাল খেতে, ফুর্তি করতে! বেশ করছিলেন সেই সব। অথচ একটু আগে দেখলাম আপনি ওখান থেকে উঠে এসে এই বার’এর পাশে এসে একা বসে গুণগুণ করছেন ‘তুমি নির্মল কর, মঙ্গল কর’। হোয়াই? মাল খান, ফুর্তি করুন,কিন্তু লিওপোল্ডে রজনীকান্ত গুণগুণাবার কি হয়েছে? আপনি গুণগুণ করে উঠেছেন কারণ তখন আপনার মধ্যে বাঙালির ইণ্টেলেকচুয়াল দাদাগিরি চুইয়ে বেরোতে শুরু করেছে। ছোট-বাথরুম বড়-বাথরুমের মত এটাও বাঙালির একটা প্রাকৃতিক আর্জ, বুঝলেন। যেকোনো জাগায় নিজের কালচার পুশ করা। এটা একটা খতরনাক সেন্স অফ দাদাগিরি, দি গ্রেট বাঙালি কালচারাল দাদাগিরি। আর এই যে আমি, এত ভিড়, হই-চই ফিল্টার আউট করে আপনার গুণ গুণ করা বাংলা গান ট্রেস করে ফেললাম, এটাও সেই আঁতেল দাদাগিরি’র রেজাল্ট। বাঙালি নর্থ পোলে গেলেও ক্যালেন্ডার দেখে বসন্ত উত্সব করবে মশাই। আরে, সৌরভের সেঞ্চুরির থেকেও ঢাক বাজাতে পারা আমাদের কাছে বেশি স্পেশাল, বুদ্ধর নন্দন ভিজিট আর মমতার হিজিবিজি স্কেচ আমাদের কাছে বেশি মাইন্ড স্পেস পায়, ওদের পলিসি-টলিসি নিয়ে আমাদের কোনও মাথা ব্যথা নেই। সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের এত মাতব্বরি, যে এই করে করেই জাতিটা বখে গেল। রবীন্দ্রনাথ আর সত্যজিতের লিমিটেশন আর বাঙালি জন্মে ওভারকাম করতে পারবে না। শুধু এই কালচারাল দাদাগিরি ফলিয়ে বাঙালি খতম হয়ে গেল”।
হাঁ করে গিলে গেলাম ভদ্রলোকের কথা গুলো। হুইস্কির জন্যে নাকি ভদ্রলোকের লেকচারের জন্যে জানি না, মাথাটা বেশ ঝিম ঝিম করতে শুরু করেছিল। এমন সময় আমার সহকর্মীনী অনিতা আমায় ডাকতে এলো। বাঙালি ভদ্রলোকের থেকে বিদায় নিয়ে নিজের টেবিলে এসে বসলাম। আর ঘন্টা খানেক গল্প আড্ডার পর আমরা টেবিল ছেড়ে উঠলাম। বেরোতে যাব এমন সময় দেখলাম যে সেই বাঙালি ভদ্রলোক তখনও বসে আছেন। ওনার দিকে হেঁটে গেলাম। পাশে দাঁড়িয়ে গুড নাইট বলে হাত বাড়িয়ে দিলাম। হ্যান্ড শেক করে ভদ্রলোক বললেন, “টেক কেয়ার”।
উত্তরে বললাম “আপনি তাইলে বাঙাল?”
-“বরিশাল”, ভদ্রলোক অবাক হয়ে বললেন।
-“যশোর হিয়ার”, আমি জনালুম।
-“আপনি বুঝলেন কি করে যে আমি বাঙাল?” ভদ্রলোক এবার একটু ভেবড়ে গেছেন।
_ “ওই যে কালচারাল দাদাগিরি, ওই দাদাগিরি বেস করেই বুঝেছি”, হেসে বললাম।
-“মানে?” ভদ্রলোক উত্সুক এবার।
- “মানে ওই যে আমার সহকর্মীনী তখন আমাকে ডাকতে এসেছিলেন, তাকে দেখে যে আপনি অস্ফুটে বলে উঠলেন ‘হালা, মাগী খান কি ডবকা’, সেটা আমি পাঁচ ফুট দূর থেকেও, এত হইচই, লাউড মিউজিক সত্ত্বেও ট্রেস করে ফেলেছি, এই হলো গিয়ে বাঙালদের প্রবলেম বুঝলেন, কালচারাল দাদাগিরি; বম্বে কি লণ্ডন, বাঙাল শুনলে বা ইলিশ শুঁকলে, সব ছেড়ে ছুড়ে ট্রেস করে নেবে। গুড নাইট, টেক কেয়ার”!
স্বাগতম এবিতে
জোস হইছে লেখাটা।
@ টুটুল: ধন্যবাদ!
স্বাগতম এবিতে
এ বি তে স্বাগতম।
গল্পটা ভালো লাগল,
তবে বলার ভ্ঙ্গীটায় খটকা লাগল, শুরুতে 'বসলুম' এর মতোন কলকাতা টোনে লিখলেন কিন্তু পরে আবার 'খেলাম, বসলাম' এ চলে এলেন। যেকোন এক ধাচেঁ থাকলেই পড়তে ভালো লাগতো।
ঈভ টিজিং
এবিতে স্বাগতম
বংপেন!!
স্বাগতম এখানে..মেঘদি
স্বাগতম।
ভালো লেগেছে লেখাটা। কালচার হলো খাসিয়ত যেটা লুকানো যায় না
সক্কলকে ধন্যবাদ এরকম একটা সুপার ওয়ার্ম ওয়েলকাম'এর জনন্যে।
@ জেবীন: আপনার মতামত একদম যুক্তিযুক্ত, এরপর থেকে শুধরে নেওয়ার চেষ্টায় থাকবো।
@মেঘদিদি: ইস্পেশ্যাল থ্যাঙ্কস! যশোর আসুম পরের মে মাসে!
বাঙালি নর্থ পোলে গেলেও ক্যালেন্ডার দেখে বসন্ত উত্সব করবে মশাই.,..। এজন্যেই বোধহয় বলা হয়, 'ঢেকি স্বর্গে গেলেও....'। স্বাগতম, আপনার কী বোর্ডের ক্লীকবাজীতে এবি আরও মুখর হয়ে উঠুক।
মন্তব্য করুন