বিড়ম্বনা
এখন এটা করে কিনা জানিনা কিন্তু আমাদের ছোটবেলায় হাইস্কুলের টিচাররা এস,এস,সি পরিক্ষার ফর্ম ফিল আপ করার সময় আমাদের অভিবাবকদের অনুমতি ছাড়াই আমাদের জন্ম তারিখ আসল থেকে কমি্যে দিতো, কারন হিসেবে দেখানো হত সরকারী চাকুরির ক্ষেত্রে এটা হেল্প করবে,ভাল কথা। দুঃখের বিষয় হল ওই টিচাররা সবাই এতই বেকুব আর মাথামোটা ছিল যে কোন চিন্তা ভাবনা না করেই সবার জন্মতারিখ করে দিতো জানুয়ারীর পহেলা দিন , যেমন ০১-০১-০০। এখনএ
এখন যদি একই পরিবারের দু ভাইবোন বা চাচাতো, খালাতো ভাইবোন একসাথে পরিক্ষা দেয় সেক্ষেত্রে তাদের সবার জন্মদিন একদিনে হয়ে যাচ্ছ সবার জন্মদিন যদি এক হয় তাহলে চাকুরির ক্ষেত্র ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহা ঝামেলার সৃষ্টি হয়। বিসেশ করে বিদেশে এটা অনেক অস্বস্তিকর অবস্থার ভিতর ফেলে দেয়।
আমার নিজের জীবনের একটা ঘটনার কথা বলি। আমার আসল জন্মতারিখ ৯ই অক্টোবর যেটা জেনেছি বাবা'র ডাইরি দেখে কিন্তু কাগজপত্রে আছে ১লা জানুয়ারি। আমার ছেলেরা জানে আমার জন্মদিন ৯ই অক্টোবর কারণ ওইদিনের কথা ওদের বলেছি আর ওরা ওটাই সেলিব্রেট করে। একবার ছেলের স্কুলে কোন কারণে কিছু ফিল আপ করতে গিয়ে ওরা আমার জন্ম তারিখ জিজ্ঞেস করলো আর আমি আমার কাগুজে জন্মতারিখটাই বললাম যেটা ড্রাইভিং লাইসেন্সে আছে। ছেলে তো আর বাপের ২ জন্মতারিখের কাহিনী জানেনা আর আমিও এসব বলে ওদের কনফিউজড করতে চাইনি। আমার কাগুজে জন্মতারিখটা বলাতে পাশ থেকে ছেলে জোরে বলে উঠলো
" ড্যাড, আর ইউ আওট অফ ইউর মাইন্ড, ইউ জাস্ট গেভ দেম রঙ ডেইট অফ বার্থ ? "
ছেলেকে বাংলায় বললাম চুপ করতে, পরে এক্সপ্লেন করব , কিন্তু কে শোনে কার কথা। ছেলে বুঝতেই পারে নাই আমি কি ঝামেলা'র ভিতর পড়ছি। পরে ওকে বাইরে ডেকে নিয়ে বললাম আসল ঘটনা কি, শুনে তো ছেলে হাঁ করে কিছুক্ষন আমার মুখের দিকে তাকি শুধু বলল " দ্যাটস ইন সেইন।"
আরেক বিড়মবনা হল নাম নিয়ে। আমাদের নাম গুলি অনেক লম্বা রাখা হত , যেমন আ,ক,র,ম, রুহুল কবির রিজভি। পুরাটা ভেংগে লিখলে হবে " আবুল কাশেম রথি মোহাম্মদ রুহুল কবির রিজভি ওরফে ওয়াসিম। এতবড় নাম লিখার জন্য কোন ফর্মেই যায়গা হয়না। অনেকের প্রথম নাম মোহাম্মদ, সেটাকে আবার সংক্ষেপ করে লিখে এমডি। আর নামের প্রথমে এমডি লিখার কারনে বাইরের জগতে সবাই জিজ্ঞেস করে আপনি একজন ডাক্তার কিনা, কারন বাইরে শুধু ডাক্তাররাই এমডি লিখতে পারে। এবার বোঝেন্ অবস্থা !এজন্য ছেলেদের নামের শুরুতে মোহাম্মদ থাকলে আর মেয়েদের নামের আগে মোসাম্মত থাকলে দয়া করে ওটাকে সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করে ঝামেলা তৈরী করা উচিত নয়।
উন্নত বিশ্বে এখন সব কিছুই ডিজিটাল আর ইউনিফর্ম রুলে চলে আর আমাদের যদি তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয় তাহলে মনে রাখতে হবে নাম এমন ভাবে রাখা উচিত যেটায় কোন কনফিউশন তৈরি না করে। আরো মনে রাখতে হবে নাম এক্টাই থাকা উচিত, ডাকনাম রেখে বাচ্ছাদের কনফিউজড করা উচিত না। কারন বাসায় আপনি ডাকবেন ডাক নামে, স্কুলে ডাকবে ভাল নামের প্রথম অংশ দিয়ে, তখন শিশু দিশেহারা হয়ে যায়। এসব খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরী।
নাম যত ছোট রাখা যায় ততই ভাল। নাম দিয়েতো আর বেহেস্তে যাওয়া যাবেনা।
বিদেশের মত আমাদের দেশেও শিশু'র জন্মের সাথে সাথেই হাস্পাতাল কতৃপক্ষ সিটি কর্পোরেশন কে রিপোর্ট করে বাচ্চার বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু করার ব্যবস্থা থাকাউচিত। এরজন্য আলাদা করে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত বিভাগ এবং সারাদেশে একরকম সার্টীফিকেট দেয়া উচিত, যেখানে কালির কলমে ভুল বানানে ইচ্ছামত নাম সংক্ষিপ্ত করে নয়, যথার্থভাবে অভিবাবক যেভাবে নাম চায় , যেভাবে বানান চায় ঠিক সেইভাবে নাম প্রিন্ট করা উচিত বাবা মায়ের নাম সহ, জন্ম তারিখ , মাস, সাল এইভাবে লিখা উচিত তাহলে আর কোন ঝামেলা হয়না। একটা মানুষের জীবনে তার বার্থ সার্টিফিকেট এত জরুরি যে তার সাথে আর কিছুই তুলনা করা যায়না।
একটা মানুষের জীবনে তার বার্থ সার্টিফিকেট এত জরুরি যে তার সাথে আর কিছুই তুলনা করা যায়না।
ভাইয়া, আমার নামের প্রথমে MD আছে। এ নিয়ে আমাকে একদিন প্রশ্ন করল এর মানে কি? আমি বললাম, মোহাম্মদ। সুন্নী আরবী তো মহা খেপা, তোমার এত সাহস তুমি আমাদের নবীর নাম তোমার নামের প্রথম লেখ। তুমিও কি তার সাথে তোমার তুলনা করতে চাও। আর আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়। হায়রে নামের বিরম্ভনা।
একটা মানুষের জীবনে তার বার্থ সার্টিফিকেট এত জরুরি যে তার সাথে আর কিছুই তুলনা করা যায়না।
বলেন কি!!! কতো মানুষতো এই আশায় আরবী নাম রাখতেছে, বাংলা বাদ দিয়ে
মন্তব্য করুন