ইউজার লগইন

সৃষ্টিকর্তা কি ছোটোলোক? (পর্ব-১)

সব ধর্মেই বলা হয়ে থাকে সৃষ্টিকর্তা সর্ব শক্তিমান। তিনি কি কোনো জীব?

না তিনি কোনো জীব নন।

তিনি কি মানুষ?

জীবই যদি না হয়, তাহলে মানুষ তো নয়ই।

তিনি কোনো জীব নয়, মানুষ নয়। তাহলে আমরা ‘তাকে’ ‘তিনি’ বলে সম্বোধন করি কেন? আর সৃষ্টিকর্তা শব্দটাই তো ঠিক নেই। কর্তা হলো কোনো ব্যক্তি যিনি কর্তৃত্ব করেন। সৃষ্টিকর্তার মানে দাঁড়ায়, কোনো ’ব্যক্তি’ যিনি সৃষ্টির ওপর কর্তৃত্ব করেন।
সৃষ্টিকর্তার পরিবর্তে আমরা বলতে পারি সর্ব শক্তিমান কোনো ‘জিনিস’ বা ‘কিছু’।
এবং এখানেই আমাদের থেমে যেতে হবে। ওই ‘জিনিস’ সম্পর্কে আর কিছু বলা যাবে না। কারন সর্ব শক্তিমান কেনো ‘জিনিস’ বা ‘কিছু’ সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। মানুষ সর্ব শক্তিমান নয়। আর ওখানেই না থেমে যদি ওই ‌'জিনিস' সম্পর্কে আর কিছু বলা হয়, সেটা মানবিক পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়।
মজার ব্যাপার হলো প্রতিষ্ঠিত কোনো ধর্মই এখানে থেমে যায়নি। সর্ব শক্তিমান ‘জিনিস’ বা ‘কিছুকে’ প্রতিটা ধর্মই মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। জিনিসটার সব কর্মকাণ্ডই মানুষের মতো। সর্ব শক্তিমান ওই জিনিসের মানবিক অনুভূতি রয়েছে। যেমন উপাসনা করলে তিনি সন্তুষ্ট হন। সন্তুষ্ট হওয়াটা মানবিক অনুভূতি। যার অতুষ্টি আছে তাঁর মধ্যেই সন্তুষ্টি অনুভূতি রয়েছে। মানুষের অতুষ্টি রয়েছে। মানুষসহ সব জীবকেই সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়।

সর্ব শক্তিমান জিনিসের মধ্যেও কি অতুষ্টি রয়েছে? প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলো ওই সর্বশক্তিমান জিনিসটাকে পরিপূর্ণ ‌'মানুষ' বানিয়েছে। শুধু তাই নয়, মানুষটাকে বানানো হয়েছে ছোটলোক মানুষ হিসেবে।

এবার বিষয়টাকে ন্যাংটা করে বলি, সর্ব শক্তিমান ওই 'জিনিস'টাকে বলা হয় দয়ালু। দয়ালু অনুভূতি কি মানবিক গুণ নয়? ইসলামে যে ৯৯টা গুণের কথা বলা হয়েছে তাঁর প্রতিটা গুণই মানবিক গুণ। জিনিসটা সমগ্র মহাবিশ্ব পরিচালনাও করেন মানুষের মতো। প্রধানমন্ত্রীর যেমন দেশ পরিচালনার জন্য মন্ত্রী এমপি ও আমলা লাগে। তেমনি সর্বশক্তিমান ওই জিনিসেরও মহাবিশ্ব পরিচালনা করতে আমলা (ফেরেশতা, দেবদেবী) লাগে। ওই 'জিনিস'টা প্রতিটা সেক্টরে আমলা রেখে দিয়েছে। মেঘবৃষ্টির জন্য মিকাইল। পাপ পূন্য লেখার জন্য কীরামান কাতিবিন। হিন্দু ধর্মে যেমন বিদ্যার দেবী স্বরস্বতী।

সর্ব শক্তিমান জিনিসের আবার আমলা লাগবে কেন বাপু? সর্ব শক্তিমান কোনো জিনিসের তো এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আমলা লাগার কথা নয়। আর আমলা যদি লাগেই তাহলে জিনিসটা সর্ব শক্তিমান হয় কিভাবে? সব প্রতিষ্ঠিত ধর্মের ভাষ্য অনুযায়ী, সর্বশক্তিমান 'জিনিস'টা চলে আমলাতান্ত্রিক সিস্টেমে। এভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে সবগুলো প্রতিষ্ঠিত ধর্মই ‌'জিনিস'টাকে পরিপূর্ণ মানুষ বানিয়েছে। এবং মানুষটা ছোটোলোক।

ছোটলোক কেন?
একটা গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। গল্পটা আমি একজনের কাছ থেকে শুনেছি। সত্যতা কতটুকু জানি না। গল্পটা হলো, আহমদ শরীফ একবার তাঁর এক পরিচিত আস্তিক বন্ধুর সঙ্গে গল্প করছিলেন। হঠাৎ এক প্রসঙ্গে আহমদ শরীফ তাঁর ওই বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আচ্ছা, বিভিন্ন সময়ে তোমরা যে এতো ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ উচ্চারণ করো, মানে যিকর করো, এতে কি আল্লার রাগ হয় না? বন্ধুটি তখন প্রশ্ন করলো, কেন? আল্লাহর রাগ হবে কেন? তখন আহমদ শরীফ বললেন, ‘আমার সামনে কেউ যদি ১০ বার ‘আহমদ শরীফ’ ‘আহমদ শরীফ’ বলতে থাকে, আমি তাকে থাপ্পড় দিয়ে ফেলে দিতাম। এতোবার ডাকাডাকির কি আছে?

আশা করি গল্পটার মধ্য বিষয়টা বেশ খানিকটা ন্যাংটা হয়েছে। তথাপি বিষয়টাকে আমি আর্ও একটু ন্যাংটা করতে চাই। ধরা যাক, কোনো অপরিচিত ব্যক্তি আমার কাছে কিছুই চায় নি। তবু আমি তাকে মজার কোনো জিনিস দিলাম। এবং আমি মনে মনে চাইলাম ওই ব্যক্তি সারা জীবন আমার নাম নিক এবং আমার স্তুতি করে যাক। আমি কি তাহলে ছোটলোক মানসিকতার লোক নই? যে মানুষটাকে আমি জিনিসটা দিয়েছিলাম সে যদি জানতে পারে আমার মানসিকতা এ ধরনের। তাহলে ওই মানুষটার ন্যূনতম ব্যক্তিত্ব থাকলে বলবে, তোর এই জিনিস কি আমি চেয়েছিলাম? নে ধর, ফিরিয়ে দিলাম।

আমরা কি সর্ব শক্তিমান ওই জিনিসের কাছে বলেছি বা চেয়েছি আমাকে জীবন দিয়ে দুনিয়াতে পাঠাতে? অনেক ধর্ম বলতে পারে যে, হ্যা আমরা চেয়েছি, তাই পঠিয়েছে। সেক্ষেত্রে আমার বক্তব্য চাইলেও তো আমাদের মনে নেই। কারোরই যদি মনেই না থাকে তাহলে ওই চাওয়ার কি কোনো দাম আছে? মানলাম এমন কিছু আছে যা আমাদের সৃষ্টি করেছে। তো কি হয়েছে? তার এতো পূজা অর্চনা বা উপাসনা পাওয়ার এতো খায়েশ তো ছোটলোক মানসিকতারই ইঙ্গিত বহন করে। আমরাও সর্ব শক্তিমান জিনিসটাকে বলতে পারি, তোর এই জীবন কি আমরা চেয়েছি? তুই যদি দিয়েই থাকিস তো ভালো মনে দে। এতো পূজা অর্চনা পাওয়ার খায়েশ তোর কেন?

আবার সৃষ্টিকারী ওই জিনিসের সঙ্গে মানুষের সব সম্পর্কই চাওয়াপাওয়া আর ভয়-ভীতির সম্পর্ক। আমার এই পোস্টটি যারা পাঠ করছেন তাদের অনেকেই ভয়ে কয়েক বার নাউজুবিল্লাহ পাঠ করেছেন আমি নিশ্চিত। ধর্মে বলা হয়, একবার অমুক দোয়া পাঠ করলে বা অমুক কাজ করলে এতগুণ সওয়াব। বা অমুক কাজ করলে এতো হাজার বছর নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। এসব কি কথা গো বাপু?

সর্ব শক্তিমান জিনিসকে ছোটলোক মানুষ বানিয়েছে মূলত আস্তিকেরা। জিনিসটাকে ছোট করে দেখেছে আস্তিকেরা। যুগ যুগ ধরে বহু অশান্তি, বহু যুদ্ধের মূলে রয়েছে ধর্ম। সেটা ইতিহাস বলে। নাস্তিকেরা আর যাই হোক সর্ব শক্তিমান জিনিসটাকে অন্তত ছোটোলোক মানুষ বানায়নি।
‘মা’ উপন্যাসে ম্যক্সিম গোর্কি একটা কথা লিখেছিলেন, সৃষ্টিকর্তাকে নতুন করে সৃষ্টি করতে হবে যে সৃষ্টিকর্তা হবে মানুষের বন্ধু।
আমার মামার এক নাস্তিক বন্ধু ছিলেন, নাম তাঁর সেলিম। একদিন মামার বাড়িতে খেতে বসেছি, এমন সময় তিনি হাজির হলেন। তিনিও খেতে বসে গেলেন। যথারীতি ধর্ম প্রসঙ্গ আসলো। তিনি ধর্ম সম্পর্কে কিছু কটু বাক্য বর্ষণ করলেন। এমন সময় আমার ধামিক মামী হায় হায় করা শুরু করলেন। মামির নাম আসমানী।
এক পর্যায়ে সেলিম মামা বললেন, শোন আসমানী বেগম যদি বেহেশতো-দোযথ থেকেই থাকে, তাহলে বলতো তুই আগে বেহেশতে যাবি নাকি আমি যাব? মামি চুপ।

সেলিম মামা বললেন, হাশরের ময়দানে আল্লাহ তোকে বলবে, আসমানী বেগম.., জন্মের পর থেকে তোর পরিবার-সমাজ বলেছে, ‘আমি আছি। আমি দয়ালু। তাই তুই আমাকে সেভাবেই মেনেছিস, আমাকে ভালো ভেবেছিস।’ কিন্তু তোর পরিবার এবং সমাজ যদি বলতো আমি শয়তান। তাহলে তুই তো আমাকে শয়তানই ভাবতিস। তোর তো নিজের কোনো আক্কেলবুদ্ধিই হয়নি। আমি সমগ্র মানবজাতিকে প্রথমে পড়াশোনা করতে বলেছি। জ্ঞানার্জনের কথা বলেছি। তুই তো আমার প্রথম নির্দেশই পালন করিস নাই। তুই তো আমাকে বিচার করার ক্ষমতাই অর্জন করিস নাই ।

কিন্তু এই সেলিম ছেলেটি পড়াশোনা করেছে। জ্ঞানার্জন করেছে। নিজের বিবেককে জাগ্রত করার চেষ্টা করেছে। পরে, ওর মনে হয়েছে, আমি নেই। তাতে কি হইছে? এতে তো আর মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়নি। সেলিম ছেলেটি আর যাইহোক কারও ক্ষতিতো করে নাই। আর গাধা আস্তিকের চেয়ে বিবেকবান নাস্তিক আমার কাছে শ্রেষ্ঠ। কাজ্যেই সেলিম তুমি যাও, তুমি বেহেশতে গিয়ে ফূর্তিফার্তা শুরু করো। এদিকে দেখি, আসমানীর মতো মাদি ছাগলদের কি ব্যবস্থা করা যায়!!

সর্ব শক্তিমানের ক্ষেত্রে ‘জিনিস’ বা ‘কিছু’ শব্দটাও আসলে প্রযোজ্য নয়। কারন ‘জিনিস বা ‘কিছু’ বললে তাঁর আকার-আকৃতি বোঝায়। কিন্তু সৃষ্টিকারী ওই জিনিসের তো আকার-আকৃতি নেই। তাহলে কি বলা যায়? স্রষ্টা? না স্রষ্টা বললেও সক্রিয় কোনো কিছুর অস্তিত্ব বোঝা যায়। তাহলে? সর্বশক্তিমান থেকে আমরা ওই জিনিসটাকে শুধু ‘শক্তি’ বলতে পারি। শক্তির কোনো আকার-আকৃতি নেই। এবং শক্তির নিত্যতা বিধি অনুযায়ীও শক্তি সর্ব শক্তিমান। যার কোনো ধ্বংস নেই। যার কোনো স্রষ্টা নেই। এবং আমার এখনকার ধারণা অনুযায়ী জগতে সর্ব শক্তিমান ওই জিনিসটা হলো শক্তি। যা সব পদার্থের মধ্যে বিদ্যমান। সব কিছুর মধ্যেই শক্তি বিরাজমান। শক্তিকে পূজা করার কিছু নেই।

অবশ্য মানুষই যেহেতু সৃষ্টিকর্তার স্রষ্টা কাজেই মানুষ তাকে মানবিকভাবে সৃষ্টি করবে সেটা অবশ্য স্বাভাবিক।

ধর্ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার মানবিক অনুভূতি ও সত্ত্বা রয়েছে, কিন্তু দুনিয়ার কোনো অমানবিক পরিস্থিতিতে তার কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। অনেক শিশু পাপ করার আগে দুনিয়াতেই জন্মে খোঁড়া, অন্ধ ও বিকলাঙ্গ হয়ে। ধর্মের নামে সংঘর্ষে বিপুল মানুষ নিহত হয়। কোথায় থাকে তখন ঈশ্বরের মানবিক অনুভূতি ?
চলবে.....।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : পোস্টটিতে সুনির্দিষ্ট কোনো ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। আলোচনা করা হয়েছে সৃষ্টিকর্তার মানসিক সত্ত্বা নিয়ে। কাজেই যেচে এসে ব্যক্তিগত আক্রমণ কাম্য নয়। আর লেখাটায় কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

পোস্টটি ৩ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মডারেটর's picture


গ. "আমরা বন্ধু" তে শুধু নতুন লেখাই প্রকাশিত হবে। পুরনো লেখা রিপোস্ট করা যাবে না। অন্য কোনো কম্যুনিটি ব্লগে প্রকাশিত লেখা এবিতে প্রকাশ নিষিদ্ধ। এবিতে প্রকাশিত কোন লেখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্য কোনো কমিউনিটি ব্লগে প্রকাশ করা যাবে না। ব্যক্তিগত ব্লগ এবং পত্রিকা এই নিয়মের আওতার বাইরে।

নীতিমালা ভঙ্গের কারনে আপনার এই লেখাটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে নেয়া হইলো! নীতিমালা মেনে ব্লগে লেখালেখি করার বিনীত অনুরোধ রইলো!

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture


সমস্যাটা কি ঠিক বুঝলাম না। অন্যের লেখা তো আর নয়। আমার আগের পোস্ট দুটিও অন্য ব্লগে লিখেছিলাম। সেটিতো প্রথম পেজ থেকে সরানো হয় নি।নীতিমালা পাল্টান। দ্বৈত নীতি পরিহার করুন। ধন্যবাদ।

তানবীরা's picture


আলোচনা ভাল লেগেছে

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture


ধন্যবাদ

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture

নিজের সম্পর্কে

মধ্যবিত্তের তথাকথিত ভদ্দরনোকি আমার মধ্যে নাই। আমি কটূবাক্য বর্ষণ করতে পছন্দ করি। আমার কোনো পোস্টে মন্তব্য দেওয়ার সময় দ্বিতীয়বার চিন্তা করার আহবান জানাই। অবান্তর মন্তব্য করে আমাকে কটূশব্দ ও বাক্য টাইপ করতে বাধ্য করবেন না। আমার কাছে ভদ্দরনোক শব্দের অর্থ হলো আপোষকামী। মধ্যবিত্ত শ্রেনীটিকে আপোষ করে চলতে গিয়ে ভদ্দরনোক হতে হয়। এই শ্রেণীর অংশ হিসেবে বাধ্য হয়ে সমাজে আমাকেও আপোষ করে চলতে হয়। তাই আমি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্য পরাজিতদের মধ্যে একজন, যারা আপোষকামী নয়, কিন্তু বাধ্য হয়ে যাদেরকে আপোষ করে চলতে হয়।