ইউজার লগইন

ইউনূসের ওপর সুদখোর মহাজনদের অভিশাপ (পর্ব-১)

প্রতিবেশী দেশ ভারতের অমর্ত্য সেনও নোবেল পেয়েছিলেন। কিন্তু তার নোবেল পাওয়া নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি।
কিন্তু ড. ইউনূস নোবেল পাওয়ার পর দেশে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেলেও বিভিন্ন সময়ে নানা কারনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন তিনি। ইদানিং আওয়ামী লীগ সরকারও ইউনূসের ওপর সদয় নয় ।
(আওয়ামী লীগ যে উদ্দেশ্যেই বিরোধীতা করুক না কেন সেটা আমার এ লেখার মূখ্য বিষয় নয়)।

আমাদের ফালতু রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারনে বিএনপি ইউনূসের পক্ষে অবস্থান নিলেও এ ব্যাপারে ব্যপক জনমত গড়ে উঠে নি। ইউনূসের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। কিছুদিন আগে নোরাডের তহবিল অপসারণের খবর প্রকাশের পর বিতর্কের ঝড় ওঠে। ড. ইউনূস আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে স্বীকার করেন, কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই তিনি ওই তহবিল অন্য স্থানে অপসারণ করেন। কর ফাঁকি দেওয়ার এ উদ্দেশ্যে তাঁর ধূর্ত ব্যবসায়ীক মানসিকতারই ইঙ্গিত বহন করে।

শান্তিতে নোবেল পাওয়া একজন সম্মানিত লোকের ধূর্ত ব্যবসায়ীক মানসিকতা থাকাটা বাঞ্ছনীয়ও নয় বটে। ইউনূসের সামাজিক ব্যবসার মূল কথা হলো প্রতিষ্ঠানের মালিকানা থাকবে না, কেও লভ্যাংশ নিতে পারবে না। ব্যবসা সম্প্রসারিত হবে। সেই হিসাবে বিশ্বের সব কোম্পানিই সামাজিক ব্যবসা চালাচ্ছে। কোম্পানিগুলো পুর্নবিনিয়োগ করে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেই চলছে।

গ্রামীণ ব্যাংকে দরিদ্র নারীদের যে মালিকানার কথা বলা হয়, তাও নিতান্তই লোক দেখানো কেতাবি কথা। দরিদ্র কোনো নারী কোনোদিনও লাভ তুলতে পারবেন না। তাহলে মালিকানা থেকে লাভটা কি? আসলে এই কেতাবি মালিকানা রাখা হয়েছে লোক দেখানোর জন্য।
পাশ্চাত্যের দেশগুলো আমাদের মত দরিদ্র দেশগুলোর দারিদ্র্যকে জিইয়ে রেখে দারিদ্র্য থেকে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে কাজ করে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে। এনজিওগুলো পুষ্টিহীনতা, প্রতিবন্ধীতা, মাতৃস্বাস্থ্য.....প্রভৃতি সমস্যা নিয়ে কাজ করে। যেটা খুবই হাস্যকর। মূল সমস্য হলো দারিদ্র্য। আর দারিদ্র্য থেকেই ওই সমস্যাগুলোর সৃষ্টি। এই এনজিও'র কাজগুলো অনেকটা গাছের গোড়া ঠিক না করে পাতায় পাতায় মলম দেওয়ার মতো। যে মলম আসলে কোনো কাজেই আসে না।
পাশ্চাত্যের মহাজনেরা এটাই চায়। তারা চায়, দারিদ্র্যকে জিইয়ে রেখে দারিদ্র্যসৃষ্ট সমস্যা নিয়ে কাজ করতে। যাতে বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে কোনো বিদ্রোহ তৈরি না হয়।

যাইহোক, পাতায় পাতায় মলম দেওয়ার মতো ড. ইউনুসের ক্ষুদ্র ঋণের ফর্মুলা (মৌলিক কোনো ধারণা নয়) পশ্চিমা দেশের পুঁজিবাদী ভাবাদর্শের যথার্থ তাবেদারি করতে সক্ষম বলেই তিনি নোবেল পেয়েছেন। আর মলম তত্ত্বের অনুকূলে ক্ষুদ্র ঋণ ফর্মুলা দিয়ে পাওয়া এই নোবেলে এখনও দেশের সার্টিফিকেটধারী তথাকথিত শিক্ষিত ব্যক্তিরাও আনন্দে গদগদ হয়ে আছেন। যদিও তারা প্রতিনিয়ত গুয়া মারা খাচ্ছেন গ্রামীণফোনসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দারা। ওবামা তথা পাশ্চাত্যের মহাজনেরা কইছে চুদির ভাই, আনন্দের আর সীমা নাই.....ব্রিটিশ আমলে বপন করা এই দাসবৃত্তির মানসিকতা থেকে আমরা এখনো বের হতে পারি নাই। আমাদের মূল সমস্যা এটাই।

শান্তি ও সাহিত্যে নোবেল দীর্ঘদিন থেকেই বিতর্কিত। অর্থনীতিতে নোবেল দেওয়া হয় এমন কোনো তত্ত্বের প্রবক্তাকে যা সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী অর্থনীতির পাহাড়া দিতে সক্ষম। পদার্থ রসায়নের মতো অন্যান্য বিষয়গুলোতে সুনির্দিষ্ট গবেষণা থাকে, খুব একটা বিতর্কের অবকাশ থাকে না। উন্নয়নশীল দেশের এমন কোনো ব্যক্তিকে কি আজ পর্যন্ত শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়েছে যে, ওই ব্যক্তির তত্ত্ব বা কর্মকাণ্ড তাঁর দেশের জন্য উপকারী কিন্তু পাশ্চাত্যের স্বার্থের পরিপন্থী?

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামার’ মত উপন্যাসকে কোনদিনই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে না। এইজন্য আমাদের দেশের ডিগ্রিধারী মূর্খদের কাছে খোয়াবনামার কোন মুল্য নেই। তারা চেনে ‘ব্রিক লেন’ (না পড়েই)। ২০১০ সালে লিউ জিয়াবাও শান্তিতে নোবেল পাওয়ার পর চীন নোবেল কমিটিকে ধুয়ে মুছে দেয়। নোবেল কমিটির লোকজনকে ‘ভাঁড়’ হিসেবে উল্লেখ করে। চীন এই মেরুদণ্ড তৈরি করতে পেরেছে বলেই আজ দেশটির অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল। আর আমরা এখনো নোবেল ধুয়ে পানি খাই। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অনেক শিক্ষককে দেখেছি, তারা তাদের ঘরের পাশের দরিদ্র কোনো ব্যক্তির অবস্থা নির্ণয় করেন পাশ্চাত্যের করা কোনো গবেষণা থেকে। মূলত এইসব শিক্ষকেরা মেরুদণ্ডহীন জাতি তৈরি করছেন।

যে কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক নীতি ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের মানসিকতাকেই তুলে ধরে। গ্রামীণ ফোনের অতি মুনাফা লোভী ফালতু ব্যবসায়িক নীতি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। আর দেশে এর একমাত্র অংশীদার ড. ইউনুস। আবার পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে প্রচার চালানো হচ্ছে ড. ইউনূসের পুষ্টি বিস্কুট আর শক্তি দই খেয়ে নাকি দরিদ্রদের পুষ্টি সমস্যা দূর হচ্ছে। তা ওই জিনিসগুলো কি বিনিমাগনায় দরিদ্রদের মাঝে বিলি করা হয়? না টাকা দিয়ে কিনতে হয়। মিনা বাজারের মত আধুনিক বিপনি বিতানগুলোতে পাওয়া যায়। যেখানে দরিদ্ররা প্রবেশই করেন না। যে দাম তাতে মধ্যবিত্তরাই খেয়ে পুষ্টি আধিক্যে ভুগছে! পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে আরও প্রচার করা হচ্ছে, গ্রামীণ শক্তির সোলার সিস্টেম নাকি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের বিদ্যুতের সমস্যা দূর করছে। ওই সোলার সিস্টেমের দাম ৫০ হাজার টাকার ওপরে । নূন আনতে পান্তা ফুরানো দরিদ্ররা আসলে ওটা চোখেও দেখেন না। ওই সোলার সিস্টেম কিনছে আসলে গ্রামের পয়সাওয়ালা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। যদিও পাশ্চাত্যের নেতারা সবই জানেন, আসলে কি ঘটছে। কিন্তু সেদেশের সাধারন মানুষের কাছে বোঝানো প্রয়োজন, নোবেলটাও জায়েজ করা প্রয়োজন। কিছু গণ্ডমূর্খ বাদে আমাদের দেশের সাধারন মানুষেরা ঠিক দৃঢ়ভাবে ইউনূসের পক্ষে অবস্থান নিতে পারছে না। আওয়ামী লীগকে বিরোধীতা করার জন্য বিএনপির লোকজন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ড. ইউনূসকে শহিদ জিয়ার সৈনিক বানিয়ে ফেলেছেন।
‘গু’ জিনিসটা সব সময়ই খারাপ। ধরা যাক, আওয়ামী লীগ কোনো উদ্দেশ্য নিয়েই হয়তো ‘গু’কে বার বার খারাপ বলতে লাগলো। তখন বিএনপি বলা শুরু করলো, ‘গু’ ভালো। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উন্মত্ত এই ‘গু’ খাওয়া দলগুলোর কারনেই দেশ বার বার পিছিয়ে পড়ছে। ইউনূসও ‘গু’য়ের মতো। আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্য নিয়েই হয়তো গু’কে খারাপ বলছে। তখন বিএনপি বলা শুরু করলো, না গু’ই ভালো। জামায়াতের সমর্থকদের কাছেও গু’ই ভালো।
অনেক মূর্খের কাছে নোবেল জিনিসটা আসমানী কেতাবের মতোই সম্মানিত। এসব কারনে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। তারপরও ড. ইউনূস ঠিক সম্মানিত জায়গায় পৌঁছাতে পারছেন না। এতে করে আমার মনের মধ্যে একটা প্রশ্নের উদয় হয়েছে।

তাহলে কি ড. ইউনূসের ওপর গ্রামাঞ্চলের সুদখোর মহাজনদের অভিশাপ রয়েছে? যারা লেখাটি পড়েছেন তারা আমাকে প্রশ্ন করুন, কেন?

পোস্টটি ৫ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

টোকাই's picture


আপনার কথাগুলি খুব সত্যি. আমরা আসলেই অনেক বোকা. অনেক কিছুই বুঝিনা . আর তাইত দাবার গুটির মত শুধু ব্যবহার হয়ে যাই বার বার.

মডারেটর's picture


গ. "আমরা বন্ধু" তে শুধু নতুন লেখাই প্রকাশিত হবে। পুরনো লেখা রিপোস্ট করা যাবে না। অন্য কোনো কম্যুনিটি ব্লগে প্রকাশিত লেখা এবিতে প্রকাশ নিষিদ্ধ। এবিতে প্রকাশিত কোন লেখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্য কোনো কমিউনিটি ব্লগে প্রকাশ করা যাবে না। ব্যক্তিগত ব্লগ এবং পত্রিকা এই নিয়মের আওতার বাইরে।

লেখাটি ব্লগ নীতিমালা অনুযায়ী হয়নি বিধায়, এটি ব্লগের প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে নেয়া হইলো!

এ টি এম কাদের's picture


প্রিয় মডারেটর,

অদ্ভু্ৎ সমস্যায় পড়লাম । ৭ তরিখের পর যতবারই এ বি খুলি শুধু সেদিনের পাতাটিই আসে । সে দিন একটা লেখা দিয়েছিলাম যা আজো ১ম পাতার ১মেই আছে । এ ক'দিন আর কেউ লেখা দেয়নি, এমনটাতো হতে পারেনা । দয়া করে একটু দেখবেন ! বিশেষ করে অনুরোধ করছি ।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture

নিজের সম্পর্কে

মধ্যবিত্তের তথাকথিত ভদ্দরনোকি আমার মধ্যে নাই। আমি কটূবাক্য বর্ষণ করতে পছন্দ করি। আমার কোনো পোস্টে মন্তব্য দেওয়ার সময় দ্বিতীয়বার চিন্তা করার আহবান জানাই। অবান্তর মন্তব্য করে আমাকে কটূশব্দ ও বাক্য টাইপ করতে বাধ্য করবেন না। আমার কাছে ভদ্দরনোক শব্দের অর্থ হলো আপোষকামী। মধ্যবিত্ত শ্রেনীটিকে আপোষ করে চলতে গিয়ে ভদ্দরনোক হতে হয়। এই শ্রেণীর অংশ হিসেবে বাধ্য হয়ে সমাজে আমাকেও আপোষ করে চলতে হয়। তাই আমি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্য পরাজিতদের মধ্যে একজন, যারা আপোষকামী নয়, কিন্তু বাধ্য হয়ে যাদেরকে আপোষ করে চলতে হয়।