চলো আরেকবার উড়ি
খুব একটা বৃষ্টি হলো কিছুদিন আগে। বৃষ্টি আমার বরাবরই ভীষণ প্রিয়। বৃষ্টির গন্ধ গায়ে মেখে ঘুরতে আমার খুব ভালো লাগে। আগে বৃষ্টি হলেই ভিজতাম। রিক্সা একটা নিয়ে হুড খুলে বৃষ্টিতে পুরা ক্যাম্পাস চক্কর দেয়ার মতো মজা আর কিচ্ছুতেই নাই। আরো বেশি মজা লাগতো বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে চা খাওয়া। বৃষ্টির পানি চায়ের মধ্যে টুপ করে পড়তো আর আমার মজা লাগতো। একবার বৃষ্টিতে ভেজার একটা গল্প বলি। সন্ধ্যার দিকে হঠাত করে পুরো ক্যাম্পাস কালো মেঘে ঢেকে গেলো। আমি হই চই শুরু করে দিলাম বৃষ্টিতে ভিজবো। কেউ রাজি হয়না। কিন্তু অনেক কষ্টে যন্ত্রণা করে করে সবাইকে রাজি করালাম। যন্ত্রণা করতে আমি আবার বিশেষ পারদর্শী ছিলাম। পরে ঠিক হল যখন বৃষ্টি নামবে আমরা সবাই ফুটবল খেলবো। আমি, মলয়দা, অপুদা, অতনুদা আমরা সবাই মিলে। ক্যাম্পাসে বন্ধু বলতে তখন আমার ওরাই ছিল। তো যথারীতি বৃষ্টি নামলো আর আমরা ফুটবল খেলা শুরু করলাম। হঠাত দেখি মলয়দা সেলিম চত্বরের গুএর ড্রেনে পড়ে গেসে। আইবিএর সামনের জায়গাটাকে আমাদের সময় সেলিম চত্বর বলতো। এখন সেখানে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ হয়েছে। আর সেই সেলিম চত্বরের একটা কোনায় মধুর বাথরুমের ময়লা আসতো। পড়বিতো অন্য কোথাও পড়। মলয়দা যেয়ে এক্কেবারে সেই ময়লার উপর পড়লো। আর আমাদের সে কি হাসি ! সে সবাইকে টেনে তুলতে বলছিলো কিন্তু আমরা কেউ তাকে তুলতে যাইনা। সবাই দূরে দাঁড়িয়ে হাসি। বন্ধু শব্দটার গভীরতা আমার কাছে অনেক বেশী। আর এই তকমাটা আমি খুব একটা কাউকে দেইনা। তবে যাকে দেই তার জন্য জীবনও দিয়ে দিতে পারি। বন্ধু বলতে যাদের কথা মনে পড়ে তাদের মধ্যে অন্যতম হল মলয়দা। আমি তাকে বড় ভাইয়ের মতো ভালোবাসতাম আর বড় বোনের মতো শাসন করতাম। আসলে আমি যেই মানুষগুলোকে ভালোবাসি তাদেরকে শাসন করার মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ বোধ করি। মনে হয় আমি ছাড়া আর কে আছে ওদেরকে শাসন করার। এবং ভালোবাসার মানুষগুলোর সাথেই আমি গলার রগ ফুলিয়ে ঝগড়া করি। মনে হয়, বাইরের কারো সাথে তো আর ঝগড়া করে জিততে পারবোনা। যারা আমাকে ভালোবাসেনা তাদের সাথে ঝগড়া করতে গেলেতো মার খাইতে হবে। পিটিয়ে নাক- মুখ ফাটিয়ে দিতেও কসুর করবেনা। বরং প্রিয় মানুষদের সাথে ঝগড়া করলেই ঝগড়ায় জেতার অকৃত্রিম আনন্দ উপভোগ করা যাবে। মলয়দা আমাকে অনেক আদর করতো আর তার কাছে আমার গায়ের রঙ এক শেড কালো মনে হতো। মলয়দা মারা যাবার খবরটা পেয়েছিলাম অভিনুর কাছ থেকে। মন খারাপ করে ক্যাম্পাসে এসেছিলাম কিন্তু অন্য কারো সামনে কাঁদতে পারিনি। খুব কেঁদেছিলাম সেদিন বাসায় গিয়ে।
মলয়দার পরে আরেকজনের কথা মনে হয় সেটা হচ্ছে অপুদা। মলয়দা অপুদারই বন্ধু ছিল এবং আমার আরেক বড় ভাই। ডানপিটে স্বভাবের কারনে আশেপাশের মানুষের ধারণা আমার মধ্যে মেয়েসুলভ আচরণ কম এবং ছেলেসুলভ আচরণ প্রবল। অপুদার ভালো নাম হচ্ছে আবু তোয়াব। আমি তাকে কখোনই অপুদা বলে ডাকতাম না। তাকে দেখলেই আমি তার অন্যান্য সব বন্ধু বান্ধবের সামনে চিৎকার দিতাম "আ- বু- তো- য়া-ব"। আর সে খালি আমাকে মাইর দেয়ার জন্য ঘুরতো। আরেকজন হচ্ছে অতনুদা। তার একটা গার্লফ্রেন্ড ছিলো। রেশমা না রেশমী কি যেন নাম। ওকে আমরা ডাকতাম কুচো মুরগী বলে। মেয়েটাকে কেন সবাই কুচো ডাকতো সেটা আমি জানিনা। কিন্তু সবাই ডাকতো বলে আমিও ডাকতাম। অতনুদা নিজেও তার বান্ধবীকে আড়ালে এই নামে ডাকতো। একবার শুধু মলয়দা এবং অপুদার কথা রাখতে গিয়েই আমি অনেক বড় একটা বিপদে প্রায় পড়ে যাচ্ছিলাম। বিপদে পড়ার আগে আমি কিছু চিন্তাও করিনাই। ঐযে বললাম না, বন্ধুরা বলসে আর আমি ঝাঁপ দিলাম। আমি একবার একজনের জন্য অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলাম। তাকে ভালোবাসি এটা বোঝানোর জন্য। অত্যন্ত হাস্যকর বিষয় হলো যার জন্য এই কাজটা করেছিলাম সে আমাকে কোনদিন ভালোইবাসেনি। এখন মনে হলে হাসি পায়, কি বোকাটাই না ছিলাম!
বন্ধুদের সাথে সবসময় আমি মজা করতে পছন্দ করতাম। নিজেকে একটা আনন্দযন্ত্রে রুপান্তরিত করতে চেয়েছিলাম। আমার সাথে থাকলে যেন ওদের প্রতিটা মুহুর্ত অনেক আনন্দে কাটে সেই চেষ্টাতে অস্থির থাকতাম। কিন্তু ইউনিভার্সিটি লাইফে ক্লাসের কারো সাথে আমার কোন বন্ধুত্ব ছিলোনা। একটা ঘটনার কারনে ওরা আমাকে কেউ সহ্য করতে পারতোনা। ক্লাসের সবাই মিলে আমাকে সারাক্ষন খুব খোঁচাতো আর আমি খুব অসহায় বোধ করতাম। অথচ যে কারনে ওরা আমার সাথে এমন করতো সত্যি বলছি তাতে আমার কোন হাত ছিলোনা। এরকম আরেকটা কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম আমি আরো একবার। ইউনিভার্সিটি লাইফ শেষ হওয়ার অনেকদিন পর। দুই- তিনজন মানুষ সারাক্ষন আমাকে অপদস্থ করতো। তাদের একমাত্র টার্গেট ছিলো আমার দোষ খুঁজে বের করা এবং সারাক্ষন সেটা নিয়ে সমালোচনা করা। প্রথমে দুইজন মিলে করলেও পরে তাদের সাথে যোগ হয় তাদের একজন বান্ধবী এবং তার স্বামী। বয়ষ্ক তিন- চারজন মানুষ মিলে সবসময় আমাকে খোঁচাতো আর আমি খুব অসহায় বোধ করতাম। আমার একটা বিড়াল আছে। ও সারাক্ষন আমার কাছে কাছে থাকে। একবার সেই বান্ধবীর পানি পিপাসা লাগে আর আমি দৌড়ে গিয়ে পানি এনে দিলে সে আমাকে বলে, "তুমি যে নোংরা। তোমার সাথে সবসময় একটা বিড়াল থাকে। তোমার হাতের পানি খাওয়া যাবেনা। খেলে আমার অসুখ করবে।" বলে সে পানিটা ফেলে দিয়ে আরেকজনকে বললো পানি এনে দেয়ার জন্য। আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেবার এই ঘটনাটাতে। এরকম আরো বহু ঘটনা আছে সেই কয়েকটা দিনের এই মানুষগুলোর সাথে আমার। সেই যুদ্ধে আমি একাই ছিলাম আমাকে সঙ্গ দেবার মতোন কেউই ছিলোনা সাথে।
তবে এই ঘটনাগুলোর জন্য এখন আর খারাপ লাগেনা। বরং ভালো লাগে। মনে হয়, শক্ত হবার জন্য জীবনে এই প্রত্যেকটি ঘটনার দরকার ছিলো । তা না হলে আমি কোনদিন হয়তো বুঝতেই পারতামনা যে জীবনটা কত কঠিন! আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে ছিলো, তার যখন কোন ভালো বিয়ের প্রস্তাব আসতো তখনই আর বয়ফ্রেন্ডকে চিনতোনা। কোন কারন ছাড়াই এড়িয়ে চলতো। আর বয়ফ্রেন্ডটা পেছন পেছন ঘুরে কি হয়েছে সেটা জানতে চাইতো। পরে তার বয়ফ্রেন্ড আমেরিকায় যেতে পারার কারনে সেই মেয়ে তাকে বিয়ে করে এখন সুখের সংসার করছে। মানুষ কত ক্যালকুলেটিভ হয়, তাই না! আর আমি? কার সাথে মিশবো, কাকে পছন্দ করবো এসব বিষয়ে কোনদিন আব্বু- আম্মুর কথা শুনিনাই। নিজের যখন যেটা ভালো মনে হয়েছে সেটাই করেছি।
আগে একটা অন্ধবিশ্বাস কাজ করতো যে কেউ যদি কাউকে অকারনে কষ্ট দেয় তবে সে সেই অন্যায়ের শাস্তি পাবে। কিন্তু কালক্রমে সেই ধারনাটাও ভুল প্রমানিত হয়েছে। এখন দেখি যারা অকারনে মানুষকে কষ্ট দেয় তারাই সবচেয়ে বেশী আনন্দে থাকে। তারা কখনো শাস্তি পায়না। অথচ সৃষ্টিকর্তা আমাকে ছোট ছোট বিষয়ের জন্য শাস্তি দেন। ভয়ংকর সেই শাস্তির মধ্যে কোন মায়া- মমতা কাজ করেনা। আমাকে নিয়ে যে নিষ্ঠুর খেলায় তুমি মেতেছো বিধাতা তার উত্তর একদিন তোমাকে দিতে হবে। তার উত্তর আমি একদিন চাইবো তোমার কাছে।
লেখাটা কি দিয়ে শুরু করলাম আর শেষে এসে কি দাঁড়ালো। বৃষ্টি নিয়ে একটা লেখা লিখবো ভেবে শুরু করলাম অথচ শেষ হলো নিজের ভোগান্তি বর্ণনার মধ্য দিয়ে। যাক সেসব কথা। কিছুদিন হল খুব ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটছে। এক মিনিটও ফ্রি টাইম পাইনা। তবে এর মধ্যেও একটা নতুন গানের সন্ধান পাইসি, যেটা এখন সারাক্ষনই শুনি। গানটা নতুন কি না জানিনা। তবে আমি নতুন শুনলাম। রাফার গাওয়া-----
চলো আরেকবার উড়ি
চলো আরেকবার ভাসি
চলো আরেকবার হারাই
তুমি আর আমি
লেখা ভালো হইছে সব বারের মতই!
কিন্তু উড়িবার কিংবা মরিবার কোনো খায়েশ নাই! স্থলেই থাকিতে চাই!
এতো ভাব নিয়া একটা লেখা লিখলাম। আর মানুষজন আমার সাথে সেটা নিয়ে দুষ্টামি করা শুরু করসে।
বাই দ্যা ওয়ে, মরতে কখন বললাম? খালিতো উড়তে আর ভাসতেই চাইলাম। 
আমি মাটিতেই থাকতে চাই, উড়িবার বা ভাসিবার কোনই ইচ্ছা নাই!
অস্থিরতায় ভরপুর একটা লেখা। অনেক কিছুই নিজের সাথে রিলেট করা যায় বলেই হয়তো ভালো লাগলো খুব।
কোন কোন জিনিস তোমার সাথে রিলেট করতে পারছো জানতে পারলে ভালো লাগতো
বৃষ্টি-চা-বন্ধু-জীবন-বাস্তবতা..
তুমিতো দেখি আমার জেরক্স
আমার বেলায়ও সত্যি কথাটা
আমি রাজী

কবে উড়বেন? ডেট আর টাইম ফিক্সড করেন জলদি।
হিসেব নিকেষ করে জীবন অতিক্রম করা যায় উপভোগ করা যায় না। কি দরকার এই স্বল্প সময়েরর জীবন ছকে ফেলে বিবর্ণ করার!!
এজন্যইতো আপু আমি ছকে বাঁধা জীবন কাটাতে চাইনা।
আমার যদি কিছু করতে ইচ্ছে করে তবে আমি সেটা করার যথাসম্ভব চেষ্টা করি। 
বন্ধু ছাড়া লাইফ অসম্ভব কথাটা কতখানি সত্য বা গুরত্বর্পূণ তা নিয়া র্তক করার সময় নেই তবে বিশ্বাস করি এটা অসম্ভব ই বন্ধু ছাড়া। বাই দ্যা ওয়ে, উড়ে বেশী উপরে উঠবেন না । ঐ বিমানের মত হারায়া যাবেন !
আচ্ছা ঠিক আছে।
আমার মনে থাকবে। 
আপু, পড়ে বেশ খানিক ভালো লাগলো। কিন্তু কিছু একটা বিষয় চেপে গেছেন মনে হচ্ছে। পরের লেখার অপেক্ষায় আছি।
মন্তব্য করুন