সেই চেনা মুখ কতদিন দেখিনি….
গতকাল একটা গান শুনতে শুনতে অফিসে যাচ্ছিলাম, “সে হারালো কোথায় কোন দূর অজানায়………সেই চেনা মুখ কতদিন দেখিনি……………”। এর পর থেকেই গানটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বসের সাথে ব্যস্ত মিটিং করার সময় দেখলাম গুনগুন করছি, সে হারালো কোথায় কোন দূর অজানায়………। কি অদ্ভুত!
আমার এক কলিগ কালকে তার ভাইয়ের গল্প করতে গিয়ে খুব মন খারাপ করলো। তার ভাইয়ের ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল। পরে তারা যখন পড়ালেখা শেষ করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কলিগ এবং তার পরিবার মেয়েটাকে মেনে নেয় না এবং ভাইকে বলে মেয়েটার থেকে সরে আসতে। তার ভাই নাকি কোন ধরনের বিরোধিতা ছাড়াই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসে এবং কারো সাথে এ বিষয়ে কোন কথাও বলেনা। কিন্তু কিছুদিন পর থেকে দেখা যায়, ভাইটা নেশায় আসক্ত হয়ে গেছে। কোন কাজ করেনা, কোথাও যায় না। সারাক্ষন শুধু নেশায় বুঁদ থাকে। কিছু বলতে গেলেই বলে, “তোমরাতো আমাকে ভাল দেখতে চাওনাই। দেখ, আমি কত খারাপ থাকতে পারি”। আমার কলিগ পরে উপায়ান্তর না দেখে সেই মেয়েকেই বিয়ে করতে বলেছিল। কিন্তু তার ভাই অটল। সে এখন আর বিয়ে করবেনা তার প্রেমিকাকে। সে বলে, “তোমরা ওকে দেখে এসে রিজেক্ট করেছ, ওকে অপমান করেছো। আমি ওকে আর অপমানিত করবোনা। তোমরা চাওনি আমি ওকে বিয়ে করি, করলামনা। অন্য কাউকে ভালবাসা বা বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমাকে আমার মত থাকতে দাও”। সেই ছেলে এখন ঘর থেকে কোথাও বের হয়না। কোথাও বের হলেই নাকি তার সেই মেয়ের কথা মনে পড়ে। কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যায়না। ঘর বন্দী থাকে। আমার কলিগের ধারনা তার ভাই ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। সে বলছে, “ভাই যে এভাবে প্রতিশোধ নিবে ঘুণাক্ষরেও যদি টের পেতাম তাহলে কোনদিনও মেয়েটাকে বিয়ে করতে নিষেধ করতাম না”। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল ঘটনা শুনে। মানুষ কত ইমোশনাল থাকে!
তবে আজ আমার মন ভাল। আজকে অনেক দিন পর আমার দিনটা শুরু হয়েছে দুইটা মানুষের ফোন পেয়ে। প্রথম ফোনটা ছিল আমার বন্ধু মাসুদের। সে কোন এককালে আমার ভাল বন্ধু ছিল। তারপর অনেক দিন কোন খোঁজ খবর নাই। আজকে হঠাত ফোনে জানালো যে, সে মিলিকে বিয়ে করছে। মিলিকে সে পছন্দ করত ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় থেকেই। কিন্তু মিলি বিয়ে করে ফেলেছিল মাস্টার্সে পড়ার সময়ই। সেই মিলির সম্প্রতি ডিভোর্স হয়েছে এবং তার কারনে মাসুদ যার পর নাই খুশী। সে এখন মিলিকে বিয়ে করবে। আমাকে বলছে, “দেখলি দোস্ত সত্যিকারের ভালবাসা থাকলে সব কিছুই সম্ভব। আমার মিলি আবার আমার কাছেই ফিরে এসেছে। আমি আর কোনদিন ওকে হারাতে দিবনা”। কথাটা শুনে আজ অনেকদিন পর আমার এত আনন্দ হল যে বলার মত না। আমি শুধু ওকে বললাম, একদম ঠিক, কখনো হারাতে দিবি না। তারপর সে আবদার করলো যে সে একটা নতুন বাসা ভাড়া নিয়েছে তাদের দুজনের জন্য, সেই বাসা আমাকে সাজিয়ে দিতে হবে। ফার্নিচার কিনে, বাসা সাজিয়ে একদম রেডিমেড বাসায় এনে সে মিলিকে চমকে দিবে। আর এই কাজটার জন্য ওর সবার প্রথমে নাকি আমার কথাই মনে হয়েছে। আমি বললাম, “ভেরি গুড! একদম সিনেমার মত আইডিয়া। আমার খুব শখ ছিল নিজের বাসা মনের মত করে সাজানোর। সেই শখ কোনদিন পুর্ণ হয় নাই।আমি তোর বাসা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিব। যেখানে তোরা টোনাটুনির মত আনন্দে সংসার করবি”।
আর দ্বিতীয় ফোনটা পেয়েছি আমার কলকাতায় থাকা দাদা- বৌদির কাছ থেকে। চাকরিসূত্রে এই দুজনের সাথে আমার পরিচয়। কিন্তু তারা আমাকে এতোটাই ভালবাসেন যে আমাকে তাদের মেয়ে বানিয়ে ফেলেছেন। আমি নাকি তাদের বাংলাদেশী মেয়ে। তাদের আমার বয়সী একটা ছেলে আছে, সম্পর্কে আমার ভাই। সেই ছেলের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে। বৌদি মেয়ে খোঁজে আর বলে, "তোর মত মেয়ে খুঁজে পাচ্ছিনা প্রিয়"। আমি হাসি আর বলি, “আমার মত মেয়ে লাগবেনা। তাহলে সংসার করতে পারবেনা। তুমি অন্য রকম মেয়ে দেখ”। বৌদি বলে, “আমি অতো কিছু বুঝিনা। আমার তোর মত মেয়েই লাগবে”। আম্মু সারাক্ষণ খালি মন খারাপ করে আর চিন্তা করে। আজকে বৌদি আম্মুকে বলেছে, “আমি আরেকবার বাংলাদেশে আসতে চাই শুধু আপনাকে দেখার জন্য। যে মানুষ প্রিয়কে পেটে ধরেছে আমার একবার তাকে দেখার খুব ইচ্ছে। আপনি কখনোই মন খারাপ করবেন না। এই জন্মে আপনি প্রিয়’র মা হয়েছেন কিন্তু পরজন্মে আমি ওর মা হবো”। কথাটা শুনে আমার আম্মু খুব কাঁদলো। আমিতো আর ফোনের কথা শুনতে পাচ্ছিলামনা, শুধু দেখছিলাম আম্মু কাঁদছে। কেন কাঁদছো জিজ্ঞেস করায় যখন কথাগুলো বললো তখন মনে হল, এর চেয়ে বেশী আর কি দরকার! বৌদির এ কথাগুলো আমার জীবনের সেরা কম্পলিমেন্ট হয়ে রইবে।
এ কারনে খুশীতে আজকে এই লেখাটা লিখে ফেললাম। আজকালতো কেউ আর ব্লগ লিখেনা বা পড়েওনা। আমি যখন এই ব্লগটাতে নাম লেখাই তখন একজন আমাকে বলেছিল, “তুই ব্লগের মেম্বার হইছিস! তোর কোন যোগ্যতা আছে ব্লগে লেখার? পারবিতো একটা লাইন ঠিকঠাক মতোন লিখতে?” এখন যদি কেউ লেখা পড়ে “ভাল লেগেছে” বলে মন্তব্য করে সাথে সাথে আমার ওই কথাটা মনে পড়ে যায়, “পারবিতো একটা লাইন ঠিকঠাক মতোন লিখতে?”
এবারের বিশ্বকাপের থিম গানটা খুব বাজে লাগলো। জেনিফার লোপেজকে কোনদিনও ভাল লাগেনা। গতবারের বিশ্বকাপে যেখানে শাকিরা একাই মাতিয়ে ফেলেছিল এবারে তিনজন মিলে তার ধারের কাছে যেতে পারেনাই। আমার আব্বু, যে কিনা গানের ব্যাপারে কিছুই বোঝেনা, তিনি পর্যন্ত বলতেন “ওয়াকা ওয়াকা” গানটা দাওতো। তখন তাকে এই গান বাজিয়ে শুনাতে হতো। তবে শাকিরাকে আমার বরাবরই ভাল লাগে। ও যখন “হোয়েন এভার হোয়্যার এভার” গানটার সাথে কোমর দুলিয়ে নাচতো তখন থেকেই সে আমার প্রিয়। আর এই বারের গানটা হইসে একটা ফাকুন্দা টাইপের গান। দেখলেই রাগ লাগে।
কালকে বছরের প্রথম পাকা আম খেলাম। পুরাই ফর্মালিন। উপরে খুব সুন্দর হলুদ রঙ কিন্তু ভিতরে দলকচড়া। খাওয়া যায়না। এগুলা খেয়ে আমরা কিভাবে বেঁচে আছি কে জানে?
ছোট্ট একটা গল্প বলে আজকের লেখাটা শেষ করি।
স্ত্রী :- হ্যালো!
স্বামী :- হ্যালো!
স্ত্রী :- অফিস ছুটি হইসে না? এত দেরি কেন? তুমি কই?
স্বামী :-তোমার কি মনে আছে গত ঈদে তুমি একটা নেকলেস পছন্দ করেছিলে।
স্ত্রী :- (খুশি হয়ে) হ্যাঁ মনে আছে। কেন জানু?
স্বামী :- তুমি বলেছিলে ওটা কেনার জন্য তোমার অনেক শখ।
স্ত্রী :- হুম ! তোমার মনে আছে তাহলে।
স্বামী :-মনে আছে দোকানদার অনেক দাম চেয়েছিল?
স্ত্রী :- হুম !
স্বামী :- এত টাকা আমার কাছে ছিল না।
স্ত্রী :- হুম।
স্বামী :-বলেছিলাম পরে কিনে দিবো।
স্ত্রী :-হ্যাঁ।
স্বামী :- আরে ঐ যে নিচতলার বড় দোকানটা।
স্ত্রী :-আরে বাবা মনে আছে তো।
স্বামী :- আমি ওই দোকানের পাশের ছোট চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি.....
(জোক্সটা সংগৃহীত)
(লেখাটা ব্লগার বন্ধু আরাফাত শান্তকে উৎসর্গ করা হল। যে কিনা সবসময় তাগাদা দেয় কিছু লেখার জন্য। আমি ওকে অনেক অনেক দোয়া করি। ও একদিন অনেক বড় হবে এবং একজন ভাল মানুষ হবে।)
আপনার কলিগের ভাইয়ের জন্য খুব খারাপ লাগছে ! খুব ফিল করছি ! কিছুতেই কি ফেরানো যায়না ভাইটিকে ?
বরাবরের মতো লেখা ভাল হয়েছে ! ভাল থাকুন ।
মানুষ যখন ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে শেষ করে দেয়ার চেষ্টা করে তখন তাকে ফেরানো খুব কঠিন। তবুও, উনারা চেষ্টা করছেন হয়তো।
valo legeche
থ্যাঙ্ক ইউ।
দারুন লেখা। খুবই ভালো লাগলো দোস্তো। আমার নামে কেউ কিছু লিখলেই মুগ্ধ হই। আর প্রিয় বন্ধুরা লিখলে তো পুরাই সোনায় সোহাগা। থ্যাঙ্কস এ লট বন্ধু। সুখে থাকো, ভালো থাকার চেষ্টা জারি রাখো। সুদিন আসবেই তোমার! অনেক অনেক শুভকামনা!
তোমাকেও অনেক অনেক শুভকামনা।
টুকটুক গল্প বলার মতো করে দারুণ একটা লেখা। চারপাশের দারুণ সব মানুষের ভালোবাসা পেয়ে জীবন আনন্দময় হোক।

এবারের বিশ্বকাপের থিম সং শুনে, দেখে হতাশ হয়েছি
ক্যামন আছেন আপু?
আপনার কোন খোঁজ- খবর নাই কেন? 
আপনার কলিগের ভাই একটা চিজ। নিজেকে এইভাবে ধ্বংশ করাটা প্রতিশোধ হয় কেমনে আমি বুঝি না !!
লেখা ভাল হইছে। এখন ফর্মালিনযুক্ত আম খাওয়ার কপিজ্ঞতাটা লেখে ফেলেন
ফর্মালিন আমের অভিজ্ঞতা লিখবোনে।
প্রথমে মন খারাপ, তারপর ভালো লাগা আর শেষে জোক্সটা পড়ে মনের অজান্তেই হেসে ফেলা। দারুন হয়েছে।
আপনিতো এক লাইন না পুরা একটা ব্লগই সুন্দর করে লিখে ফেলেছেন
তাই নাকি?
থ্যাঙ্ক ইউ।
ক্যামন আছেন? লেখেন না ক্যান এখন?
খুব ভাল লাগা একটি। লেখা। অ-----নে----ক ভাল লাগলো।
শুভকামনা প্রিয়। এরকম লেখা আরো পড়তে চাই।

থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ আপু।
অদ্ভুত ফিউশন লেখা। এতরকম অনুভুতি এতটা গুছিয়ে লেখা অনেক কঠিন কাজ। চমত্কার।
ক্যামন আছ? লিখা কই তোমার?
জোক্সটা daun
থ্যাঙ্ক ইউ আপু।
লেখাটার মধ্যে নাগরিক সাবলীলতা বহমান।বর্ষায় যেমন তুরাগ যৌবন ফিরে পেতো আগে, লেখাটার গতিশীলতা সেই বয়ে চলাকেই মনে করিয়ে দেয়
তাই নাকি! ধন্যবাদ।
অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়লাম। ভাল লাগলো পড়ে । তবে শেষের জোকস পড়ে অনেক মজা পেলাম ।।
ধন্যবাদ।
প্রিয় আপু,
জানিনা বিশ্বাস করেন কিনা!
এই গানটা আজ আমাকে আমার পুরনো কিছু
হারিয়ে যাওয়া সৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে..
আমার খুব পছন্দের গান এটা ।
মন্তব্য করুন