এবং আমরা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি
অকুপাই ওয়ালস্ট্রীট আন্দোলনটা খুব দ্রুতই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেলো, পূঁজিবাদী ব্যবস্থার আভ্যন্তরীণ দুর্বলতায় ভোক্তা-ব্যবসায়ী-রাষ্ট্র- আইন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মাণ অক্ষুন্ন রাখার ন্যুনতম নিশ্চয়তা নেই, অর্থের পরিমাপে মানুষের মূল্য নির্ধারিত হলে, প্রয়োজনীয় সেবাগুলোর প্রাপ্যতা এবং মাণ অর্থে নির্ধারিত হলে শুধুমাত্র গুটিকয়েক মানুষ সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা কিনে ফেলতে পারে এবং গণমাধ্যম অশ্লীল ভাবে সেগুলোকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করে সবার ভেতরে তেমন জীবনযাপনের স্বপ্ন তৈরি করতে পারলেও সে পথে সবার সহজ গতায়ত নেই। অর্থনীতি এবং প্রোডাক্টিভিটির ইঁদুর দৌড়ে শুধুমাত্র কয়েকজন সফল হবে, বাকীরা সেই সাফল্যের আশায় পূঁজিবাদী অর্থনীতের যাতাকলে পিষ্ট হবে। তবে অকুপাই ওয়ালস্ট্রীট আন্দোলনটা এই সহজ প্রতিযোগিতামূলক বাস্তবতার বিরুদ্ধে ছিলো না বরং বিদ্যমান ব্যবস্থায় ন্যায্যতার অভাবে আন্দোলনটা শুরু হয়েছিলো।
অর্থনৈতিক মন্দায় যখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাটাই চলছে, যখন নতুন পাশ করা গ্রাজুয়েটের ভবিষ্যত চাকুরির কোন নিশ্চয়তা নেই এবং যখন তেমন কোনো আশার আলো নজরে আসছে না ঠিক সে সময়েই এই অর্থনৈতিক মন্দার জন্যে দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারী ভর্তুকী পাচ্ছে, সেখানকার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা- কর্মচারীরা মোটা অংকের বেতন পাচ্ছেন, সাধারণ মানুষের বেতন কমছে আর অন্য দিকে ওয়াল স্ট্রীটের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বোনাসের টাকা বাড়ছে, এই বিদ্যমান বৈষম্য চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান হলেও আসলে পূঁজিবাদী ব্যবস্থায় এমন ন্যায্যতার ধারণা অনুপস্থিত।
পশ্চিমা বিশ্বে ব্যবসায়ীদের কর্পোরেটতন্ত্রের হাতে বন্দী প্রায় সকল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানই, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনে, দুর্নীতি দমন কিংবা প্রশাসনে গতিশীলতা আনতে এসব প্রতিষ্ঠান বেসরকারী মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে, রাষ্ট্রের দাবী এমন ব্যবস্থপনা পরিবর্তনে সেবার মাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এমন কি সেবাউদ্ভাবনের প্রতিযোগিতা বেড়েছে, উদ্ভাবনের জন্য সেবার মূল্য এবং অন্য অনেক ধরণের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি সূচকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু একই সাথে ভোক্তার পকেটের মাপে সেবা কাটছাঁট হচ্ছে সেসব রাষ্ট্রে। ভোক্তার পকেট শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের যে ক্ষোভ সে ক্ষোভ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের উপরে পরেছে। সুতরাং বিভিন্ন শহরের ব্যবসায়িক কেন্দ্রগুলোতে তরুণের জড়ো হয়ে অহিংস ন্যায্যতার দাবি উত্থাপন করে দীর্ঘমেয়াদী অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে।
৯৯% এর অধিকার বুঝে নেওয়ার আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশেও এমন একটা এক দিনের সহমর্মিতা আন্দোলন হয়েছিলো। বিশ্বের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়া এই আন্দোলনের ভেতরেও স্থানীয় মানুষের রাজনৈতিক সংস্কৃতির স্পষ্ট ছাপ ছিলো। বৈশ্বিকব্যপ্তিতে ছড়িয়ে পড়লেও প্রতিটি আন্দোলনের স্থানীয় চরিত্রের মেজাজ এবং অংশগ্রহনকারীদের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন ছিলো। সেন্ট্রাল পার্কে সে সময়ে একটি সাধারণ লাইব্রেরী তৈরি হয় যেখানে বইয়ের তালিকা ছিলো, যে কেউ সেই লাইব্রেরী থেকে বই নিতে পারতো এবং কি কি বই আছে এবং কোন বইটি কে তুলে নিয়েছে সেটার তালিকাও সেখানে অন লাইন ডাটাবেজে ছিলো।
সেটুকু দেখে আমার মনে হলো বিদ্যমান প্রশাসনিক শৃঙ্খলার ভেতরে এক ধরণের সৈন্দর্য্য আছে, সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এ ধরণের নিয়মতান্ত্রিক স্বচ্ছতা অনেক ধরণের অহেতুক জটিলতা কমিয়ে আনতে পারে, অকুপাই ওয়ালস্ট্রীটের আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী ছাত্রেরা এ ধরণের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত, তারা নিজেদের সংস্কৃতি অনুযায়ীই আচরণ করেছে। যখন তারা বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থার উপরে আস্থা হারিয়েছে তখন তারা যে বিকল্প প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করেছে সেখানেও অতীতের ছায়া আছে। একেবারে আনকোরা কিছু তারা অন্তর্ভুক্ত করে নি কাঠামোতে, তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার সংশোধন চেয়েছে।
আমরাও ন্যায্যতাবোধ থেকে শাহবাগে দীর্ঘমেয়াদী অবস্থান কর্মসুচি গ্রহন করেছিলাম কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবিতে। আমাদের আন্দোলনের ভেতরে এমন কোনো সুসামঞ্জস্যতা ছিলো না, স্পষ্টতা-স্বচ্ছতা ছিলো না, এমন কি তথ্যপ্রাপ্তি এবং তথ্য সরবরাহের কোনো নিয়মতান্ত্রিক পন্থা আমরা উদ্ভাবন করতে পারি নি।
আমাদের অগোছালো প্রশাসনিক কাঠামোতে আমাদের মানসিকতায় যে ধরণের অস্পষ্টতা আছে, আমাদের আন্দোলনেও সেটাই স্পষ্ট হয়েছে। আন্দোলনের ১ সপ্তাহ পরে মিডিয়া সেল নামের একটা রসিকতা আমরা উপহার পেয়েছিলাম, সেখানেও যে তথ্যপ্রাপ্তিতে খুব বেশী সুবিধা হয়েছিলো এমনও না, বিভিন্ন ধরণের উপঢৌকন এসেছে, ব্যক্তিপর্যায়ে পানি, চানাচুর, চিপসের প্যাকেট এসেছে, কেউ কেউ নিজের সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে আন্দোলনকারীদের আপ্যায়ন করতে চেয়েছেন, বড় বড় কুতুবেরাও টাকা পয়সা দিতে চেয়েছেন, কিন্তু তথ্যের অস্পষ্টতা কিংবা অদক্ষতায় সেসবের তালিকা করার মানুষের অভাব ছিলো। সুতরাং বাজারে অনেক ধরণের রটনা তৈরি হয়েছে, টাকার অংক, টাকার ভাগাভাগি বিষয়ে বিভিন্ন কানকথা প্রচলিত হয়েছে এবং এটার প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণের মুখপত্ররা যে খুব স্বচ্ছতার সাথে সব কিছু সামাল দিতে পেরেছেন এমনটাও বলা যাবে না। সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনায় এক ধরণের অগোছালো অস্পষ্টতা ছিলো। এটা ব্যক্তির দুর্নীতির প্রয়োজনে হয়েছে এ উপসংহারে পৌঁছানো যাবে না বরং আমাদের প্রশাসন পরিচালনায়অস্পষ্টতা-অসচ্ছতা এক ধরণের দুর্নীতিপ্রবনতার জন্ম দেয়। গণজাগরণের মুখপত্ররা এমন সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠায় তাদের ব্যবস্থাপনার ভেতরেও একই ধরণের অস্পষ্টতা ছিলো। সেটা দুর্নীতির গুজবকে উস্কে দিয়েছে এবং তাদের অদক্ষতায় এই দুর্নীতিগ্রস্ততার বিপক্ষে যেহেতু কোনো রকম স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয় নি, সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেছে এই আন্দোলন আওয়ামী লীগের কাছে বিক্রী হয়েছে এবং মুখপত্ররা সবাই বিভিন্ন অংকের টাকা উৎকোচ নিয়েছেন, গুজবের হিসাব লক্ষ থেকে কোটির ঘরে ঘুরছে।
মার্চের অসহযোগ আন্দোলন অকুপাই ওয়ালস্ট্রীটের চেয়ে বড় মাত্রার আন্দোলন ছিলো, আওয়ামী লীগ সেটার নেতৃত্ব দিয়েছিলো, আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবকের দল, সাধারণ মানুষের পরিবর্তনের আকাঙ্খা এবং সমতা ও ন্যায্যতার দাবীতে তাদের ঐক্যবদ্ধতা মার্চের অসহযোগকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সবচেয়ে অহিংস ( অংশগ্রহনকারীদের পরিমাণ বিবেচনা করলে সামগ্রিক সহিংসতা ও অস্থিরতার পরিমাণ একেবারেই ন্যুনতম) আন্দোলনে পরিণত করেছে। দেশের ৭ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগের আহ্বানে, আওয়ামী লীগের ঘোষণায় নিজেদের আচরণ নিয়ন্ত্রন করেছে, একই সাথে বাংলাদেশের প্রশাসনের অকুণ্ঠ আনুগত্য প্রশাসনিক কাঠামো না বদলেই প্রশাসনিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে, সেসবের সম্মিলিত ফলাফল মার্চের অসহযোগ আন্দোলন। সে সময়ে সাধারণ মানুষের ভেতরের নিয়মতান্ত্রিকতাবোধ কি অন্য কোনো সমাজ ব্যবস্থা থেকে তৈরি হয়েছিলো? বিশাল লক্ষ্যের সামনে নিজের ক্ষুদ্রতা অনুভব করে কি অংশগ্রহনকারীরা অসংযত আচরণ করা থেকে বিরত ছিলো? না কি আমাদের আধাগ্রাম্য শহুরে কাঠামোর ভেতরে , আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ্যদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং আমাদের সামগ্রীক মুল্যবোধের ভেতরে এই অহিংসা প্রোথিত ছিলো? আমার ধারণা আমাদের গ্রামীন সমাজ কাঠামোর ভেতরে এক ধরণের অহিংস শৃঙ্খলাপরায়নতা ছিলো, আমাদের পরবর্তী ভ্রান্ত কাঠামো এই শৃঙ্খলা পরায়নতাকে রক্ষা করতে পারে নি, শাসক দলের ক্ষমতার লোভ উচ্ছৃঙ্খলতাকে প্রশ্রয় দিয়েছে, এসব মূল্যবোধ অচল হয়ে যাওয়া, এক ধরণের গঞ্জের ফাটকা সংস্কৃতি ও দুর্নীতি খুব দ্রুত অর্থবিত্ত অর্জনের পথ হয়ে দাঁড়ানোয় আমরা অতীতের মুল্যবোধগুলোকে খুব সহজেই প্রয়োজনীয়তার বিধিতে প্রতিস্থাপন করেছি। এই ধারাবাহিক অধ:পতনের এক প্রান্তে আমাদের শাহবাগের গণজাগরণকে স্থাপন করতে হবে।
আমাদের রাজনৈতিক পথপরিক্রমার ইতিহাসও এখানে গুরুত্বপূর্ণ, আমরা কি কি ভাবে নিজের ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়ে দুর্নীতি করেছি সে খতিয়ানও আমাদের তুলে ধরতে হবে। সমাজতন্ত্র এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের ভেতরের সংঘাতে শেখ মুজিবুর রহমান একটি অংশকে প্রধান্য দেওয়ায় অন্য অংশটি জাসদ নামে ভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠন করে। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসে অতিষ্ট মানুষেরা খুব দ্রুতই জাসদের ভক্ত হয়ে উঠে, চোরাচালানি, খাদ্যের অপ্রতুলতা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অপরাপর সেবার অপ্রতুলতায় সাধারণ মানুষের ভেতরে একধরণের ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিলো, সেটা খুব দ্রুতই সাম্প্রদায়িক ভারতবিরোধী পরিচয় পায়। একই সাথে আওয়ামী লীগের অনুগত ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাদের ভেতরেও ক্ষমতার পরিমাণ নিয়ে বিভিন্ন ধরণের সংঘাত ছিলো। শফিউল আলম প্রধান সে সময়ে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে ৭ খুনের মামলা ঘটানোর অভিযোগ আছে। তবে আব্দুল হক তার চার দশকের রাজনীতি পরিক্রমায় লিখেছেন শফিউল আলম প্রধানের আসলে ৭ খুনের মামলার সাথে সংশ্রব ছিলো না, বরং তোফায়েল আহমেদের সাথে শেখ মনির ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ খুনের ঘটনা ঘটে।
ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতা আব্দুল আউয়াল পরিত্যাক্ত আদমজী মিলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়, একটা সময়ে তাকে দুর্নীতির অভিযোগে অপসারণ করা হয়, তিনি জাসদের নেতা হিসেবে জেল থেকে বের হয়ে আসেন। জাসদ এভাবে আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ এবং আওয়ামীলীগের দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের অভয়াশ্রম হয়ে উঠলো। অন্য দিকে বয়স্ক ভাসানীর ক্ষমতার লোভ এবং গুরুত্ব পাওয়ার শিশুতোষ খেয়াল তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং সততাকে ধ্বংস করেছে, অপরাপর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা কেউই সেভাবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিহত করতে পারে নি।
দুর্নীতি, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতার অভিযোগে ৪০ জনকে বহিস্কার করেছিলো আওয়ামীলীগ। তবে কতজনকে দুর্নীতির অভিযোগে এবং কতজনকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার অভিযোগে বরখাস্ত করা হয় তা আমার কাছে স্পষ্ট না। তখন প্রাদেশিক পরিষদের প্রায় ৩০০ জন এবং জাতীয় পরিষদের ১৬৭ জন আওয়ামী লীগের নেতা ছিলো এবং এরা সবাই ১৯৭২ এর সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ভাবে যুক্ত ছিলেন। যারা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন তারা বাদ দিলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিডের সংখ্যার কমতি ছিলো না এমন কি প্রাদেশিক এবং জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত নেতাদের ভেতরেও মর্যাদাবোধ নিয়ে মতভিন্নতা ছিলো।
মুজিবের ভগ্নিপতি এবং তার অনুগত চামচাদের ব্যক্তিগত অভিলাষে প্রশাসনের রদবদল হচ্ছে, শেখ মুজিবুর রহমানও প্রশাসনের এই অদ্ভুত আচরণ নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ( কাজী ফজলুর রহমানের ডায়েরী আশা ও ভগ্নআশার দিনগুলি দিনলিপি ১৯৭২-৭৫) শেখ মুজিবের ভগ্নিপতি শেখ মুজিবের আত্মীয় হিসেবে সংস্থাপন মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা হাতে পান যদিও স্বাধীনতাপূর্ববর্তী সময়ে পদমর্যাদায় তিনি তৃতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা ছিলেন ।
দুর্নীতি ও বৈদেশিক অনুদান লুটপাট করে, রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠন করে ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধির সংস্কৃতি মুজিব পরবর্তী সময়েও অব্যহত থাকে এবং এক ধরণের আইনী ও সামাজিক বৈধ্যতা পেয়ে যায়। মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ৬৯ এর ঘুষ ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন, মদ ও নেশাদ্রব্য বিরোধী আন্দোলনের উচ্ছাস স্বাধীন দেশে ফিকে হয়ে গিয়েছিলো সম্ভবত। আমরা নিয়মতান্ত্রিকতা- আইনমান্যতা এবং অসহিংসতার যে উদাহরণ তৈরি করেছিলাম ৭১ এর মার্চে, ৭২ এর মার্চে আমরা তার ভিন্ন একটি পরিচয় দেখলাম, খুলনায় শেখ মুজিবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল এবং শ্লোগান দিলো জনতা। যারা এক বছর আগে শেখ মুজিবুরের নামে জয়ধ্বনি দিয়েছে তারাই দুয়োধ্বনি দিয়ে বরণ করলো শেখ মুজিবুর রহমানকে। এই অদ্ভুত বৈপিরিত্য আমাদের ভেতরে হয়তো সব সময়ই ছিলো।
আমরা যদি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকাই, একই ধরণের অস্থিরতা খুঁজে পাবো, দীর্ঘ দিনের বঞ্চনা, রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ার সাথে সাধারণ মানুষের বিযুক্তি সময়ের সাথে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যবস্থার প্রতি এক ধরণের উদাসীনতা আমাদের ভেতরে তৈরি হয়েছে, একই সাথে অনিয়ম আমাদের জাতীয় বৈশিষ্ঠ্যে পরিণত হয়েছে। আমাদের তরুণদের আন্দোলনেও সেটার ছাপ দেখা যায়।
আমরা যদি আগামী কাল পুনরায় রাস্তায় নামি তাহলেও একই ধরণের অব্যবস্থাপনা ছাপই আমরা খুঁজে পাবো। আমাদের আন্দোলনকারী তরুণের সেন্ট্রাল পার্কের তরুণদের মতো ডাটাবেজ তৈরি করে উন্মুক্ত লাইব্রেবী বানাবে না, তারা আলাদা করে টয়লেট, খাওয়ার পানি এসব বন্দোবস্ত করতে পারবে না, তারা দিব্য অসভ্যের মতো রাস্তায় কোণায় দাঁড়িয়েই প্রস্রাব করবে এটা যে সামাজিক শিষ্ঠাচারবিরোধী আচরণ এবং নোংরামি এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র উদ্বেগ তাদের ভেতরে থাকবে না। আমাদের জাতীয় বৈশিষ্ঠ্য পুনরয়া সেখানে প্রকট হয়ে উঠবে।
আমরা প্রতি ৫বছর পর একবার ভোট দিয়ে সরকার পরিবর্তন করি, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হয় না, আমাদের লুম্পেন মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয় না, আমাদের বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসে না। শুধু মুখগুলো বদলায় ক্ষমতান্ধ চরিত্রহীনদের মানসিকতা বদলায় না। আমাদের নির্বাচন চোরের সর্দারীর পারমিট। তৃতীয় প্রজন্মে এসে লড়াইটা খোলামেলা, চোরদের সর্দারী কার হাতে যাবে সেটুকু স্পষ্ট না বলে একদল ইতর তারেক জিয়া জয়ধ্বনি করছে অন্যদল জয় ভাই জয় ভাই করে অজ্ঞান হচ্ছে। স্বার্থবাদীতায় দুই দলই একই।
আমাদের দুই সেট বক্তব্য আছে, সরকারী বক্তব্য এবং বিরোধী দলীয় বক্তব্য, সরকারী বক্তব্যে হরতাল উন্নয়ন বিরোধী, সহিংস অনাচার, সেটাকে দলীয় এবং রাষ্ট্র শক্তি ব্যবহার করে দমন করতে হবে, প্রেসনোটে হরতালের দৈনিক ক্ষতি আর সহিংসতার বয়ান দিতে হবে।
বিরোধী দল গত ২০ বছরে একই কথা বলেছে এবং সরকারী দলও গত ২০ বছরে একই প্রত্যুত্তর দিয়েছে, যদিও বক্তার চেহারা ও স্বর পরিবর্তিত হয়েছে কিন্তু শব্দগুলোতে পরিবর্তন আসে নি।
আমরা এক ধরণের পঁচা ডোবার ভেতরে দুর্ভাগ্যক্রমে আটকা পরে আছি। রাজনীতিবিদরা মুখ খুললে দুর্গন্ধে যেখানে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন।
এবং আমরা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি।
ঃনির্জলা সত্তি কথা .
সবার মনের কথা .
কিন্তু আমরা বলিনা কারণ আমরা স্বার্থপর .
অপেক্ষায় থাকতে থাকতে তো বুড়ো হয়ে গেলাম না পেলাম নিজেরা না রেখে যেতে পারছি আশার কোন বানী আমার প্রজন্মের জন্য।
যার ভিত্তি পচে গেছে, তাকে একদম উপড়ে ফেলে নতুন করে ভিত্তি না গাঁথলে তার ওপর ইমারত যতবার খাড়া করা যাবে, ততবারই তা পড়ে যাবে। -কাজী নজরুল ইসলাম
কেউ আসুন দূ্র্দান্ত প্রতাপ নিয়ে, সবকিছু তচনচ করে দিয়ে । এইসব রাজনী্তির হায়েনাদের জাহান্নামে পাঠিয়ে দিক -- তয় যদি মুক্তি মিলে ।
আমরা এক ধরণের পঁচা ডোবার ভেতরে দুর্ভাগ্যক্রমে আটকা পরে আছি। রাজনীতিবিদরা মুখ খুললে দুর্গন্ধে যেখানে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন।
এবং আমরা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি।
এবং আমরা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি।
অসংখ্য মানুষ কথাগুলো মনে প্রাণে বিশ্বাস করে .... কিন্তু তবুও আমরা পরিবর্তন আনতে পারছি না কেন!
মন্তব্য করুন