ঘুরে এলাম বগালেক-কেওকাড়াডং-তাজিংডং-নাফাকুম
গত এক বছর ধরে নানাবিধ আলোচনার মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকার বন্ধুরা বান্দরবানের গহীনে যাওয়ার মহাপরিকল্পনা করে। যাওয়ার আগে হিমালয় বিজয়ী মুসা ইব্রাহীমের যোগ্য শিষ্য মেহেদী হাসান তালাতের নেতৃত্বে ট্র্র্যাকিং এর বিশেষ প্রস্তূতি হিসাবে সবাই তিন মাস ধূপখোলার মাঠে ব্যায়াম করে এবং তারই নেতৃত্বে গত ২৪ শে জানুয়ারী রাতে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে সবাই যাত্রা করে। প্রকৃতির পাহাড়-ঝরনা-ছড়া-মেঘ-কুয়াশা-নদী-ক্ষূদ্র নৃগোষ্ঠী আর রহস্যময় পাহাড় ঘেরা দীঘির অপার সৌন্দর্য হল বান্দরবান। গহীন পাহাড় ঘেরা অরণ্যের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য নানা উপকরণ নিয়ে পাঁচ সদস্যের টিম, ২৫ তারিখ সকালে বন্ধু হোসেন এর বাসায় প্রাতঃক্রিয়া শেষ করে হাফেজ ঘোনায় রোমা বাস স্ট্যান্ডে চলে আসে। তারপর লোকার গাড়িতে চড়ে রোমা বাজারের পথে নতুন ব্রীজের কাছে ব্রীকফিল্টে নেমে চান্দের গাড়ীতে চড়ে ধূলো-বালি মেখে মুরংগো বাজার হয়ে মুরং, খুরমী উপজাতিদের বসতি আর দু’পাশে পাহাড় আর গিরিখাদ দেখতে দেখতে আঁকা-বাঁকা-উঁচু-নিচু পিচ ঢালা ১০-১২ ফুটের প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে মাঝে-মধ্যে গাড়ি কাত হয়ে পড়ি পড়ি অবস্থায় আজরাইলের সাথে যুদ্ধ করে ১১টায় রোমা বাজারে এসে সবাই নামলাম। গত বছর কেওকাড়াডং বিজয়ে কৈক্ষংছড়ি নেমে সাঙ্গু নদী দিয়ে রোমা বাজারে এসেছিলাম এবং সেটাই ভালো ছিল। তবে এবার সাঙ্গু নদীতে পানি খুবই কম। যাই হোক, বরাবরের মত এখানে আসার পরই মনে হয়, এটা আমার দেশ নয়। কারণ দুপুরের খাবার পরই বিজিবি’র কাছে অনুমতির যেতে হয়। আনুসাঙ্গিক নিয়ম মেনে হোসেনের ঠিক করা গাইডকে নিয়ে বগালেক এর পথে যাত্রা শুরু করলাম। বগালেকের পাহাড়ের ২৭০০ ফুট উপরে উঠে দীঘিতে গোসল সেরে বিকাল-গোধূলী-সন্ধ্যা-পূর্ণিমার রাত এ পাহাড় ঘেরা লেকের রূপ উপভোগ করে সিয়াম দিদির বিখ্যাত হোটেলে খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। ২৬ তারিখ সকালে কেওকারাডং এর পথে ঝিরি পথ দিয়ে শুরু হল পদ যাত্রা। চিংড়ি ঝরণা থেকে পানি নিয়ে চলতে চলতে দার্জিলিং পাড়ার মাইদুং দিদির দোকানে চা পান করে দুপুর দেড়টায় কেওকারাডং এ পোঁছলাম। এই পাহাড়ের মালিক লালা মামার নতুন করে গড়া ঘরের দোতলার বারান্দায় গত বছরের টাঙ্গিয়ে রাখা ‘কেওকাড়াডং-এ আমরা সুহৃদ'-ব্যানার দেখে আমরা বিস্মিত!
লালা মামার এখানে খেয়ে দায়িত্বশীল গাইড নুরুল ইসলাম এর সাথে আমাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দূর্গম তাজিংডং এর পথ পাড়ি দিতে গিয়ে বারবার পরিবারের কথা মনে হয়েছে। সবাই বিধাতাকে স্মরণ করে গাইড নুরু ভাইয়ের পিছে পিছে ছয় থেকে দশ কেজির ব্যাগ পিঠে নিয়ে পাহাড়ের গা ঘেঁষে এক থেকে দেড় হাত ঝরা পাতা বিছানো পথে, কখনো বিস্ময়কর গিড়িখাদ, কখনো উঁচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে কোন মতে প্রাণটাকে হাতে নিয়ে পাঁচটা তিরিশে বম উপজাতি পাড়া, বাকত্লাই এসে দেখি, সবাই সন্ধ্যা বেলা রাতের খাবার খাচ্ছে। নুরু ভাই মুন লাল বম এর বাসায় আমাদের রাতে থাকার ব্যবস্থা করলেন এবং ওদের ঘরের ভিতরে রাখা চুলায় রান্না শুরু করে দিলেন। পাড়া থেকে খানিকটা দূরের এক ছড়ায় হাত মুখ ধূতে গিয়ে পিছলা পথে মেহেদী পড়ে গিয়ে বাম হাতের কব্জিতে বেশ আঘাত পেল। বম পাড়ার সবাই ব্যাপ্টিস্ট খ্রীস্টান মতবালম্বী। গীর্জায় গিয়ে মেহেদী আর আমি তাদের ফাদারের কথা শুনছি। কিন্তু ওদের কথা আর ইংরেজী অক্ষরে লেখা ওদের ভাষার বই দেখে কিছুই বুঝলাম না। চলে এলাম ঘরে। আট ঘন্টা হাঁটার ক্লান্তি শেষে গভীর ঘুম। তারপর সকালের অভিজ্ঞতা-যা জীবনে কোনদিন ভুলব না। শুরুতে আমিই টয়লেটে গেলাম। গৃহপালিত শূকর আর মোরগ-মুরগী-ছানারা আমার সাথে হাঁটা শুরু করল। উপজাতিদের বাথরুমের সামনে কোন পর্দা থাকে না। এর চেয়ে আমাদের গ্রামের খাল পাড়ও ভাল। শুকরদের যন্ত্রণায় একবার বাথরুমে যাই, আরেকবার নামি। শেষ পর্যন্ত বাথরুমে ইয়ে শুরু করতেই শুকররা চেটেপুটে সব খেয়ে ফেলল। প্রকৃতির এই বাথরুমে এখানে এটাই স্বাভাবিক।
যাই হোক, ২৭ তারিখে শুরু হল ২য় দিনের পদ যাত্রা। আবার সেই ভয়ঙ্কর পথ চলা। দুই পাশের পাহাড়ি ঘাসের ঢেউ খেলানো সরু পথে শুধুই নামছি। শেষ আর হতে চায় না। হঠাৎ কোনো লোকালয় দেখতে পেলে ক্লান্তি কমে আসে। নিজেদের কাছে বাঁশের লাঠি থাকা সত্বেও বাঁশ, দড়ি, পাহাড়ি লতা, গাছের শিকড়--যা পেয়েছি তাই ধরে নানা চড়াই-উৎরাই পার হযেছি। শওকত আর জাহাঙ্গিরের জন্য বারবার থামতে হয়েছে। বাকত্লাই পাড়া থেকেই জাহাঙ্গিরের জ্বর, সেই জ্বর নিয়ে মনের জোরে প্রকৃতির টানে অতি কষ্টে শওকতের সঙ্গী হয়েই তাকে পেছনে থাকতে হয়েছে। পুলিশ সার্জেন্ট জামান এ গ্রেডের সার্ভিস দিয়ে মেহেদীর সাথে সবার আগে আগে চলেছে । আর আমি মাঝে এতিমের মত শূন্য পাহাড়ী পথে একাকী চলেছি। গাইড প্রায় সব সময় দুর্বলের সঙ্গী হয়েই পিছনে থেকেছে।
হুররে! তাজিংডং পাহাড়ে চলে এসেছি। কিন্তু ্উপরে উঠব কিভাবে? এখানে কেওকাড়াডং এর মত সিঁড়ি নেই। আমিই শুরুতে উঠতে শুরু করলাম। অতি কষ্টে সবাই উঠে চিৎকার শুরু করলাম। এখানে সামান্য কিছু জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে। চারদিকে গভীর জঙ্গল। কেওকাড়াডং পাহাড়ের এর মত এখানে কোন নেম প্লেট নেই। এখান থেকে শাখা হাফং পাহাড়, দূরের উপজাতি গ্রাম দেখা যায়। বর্ষায় এলে মেঘ ছোঁয়া যেত। ব্যানার নিয়ে ছবি তুলে নামতে গিয়ে কেউ এগোচ্ছে না। অগত্যা মেহেদীর কাছে রাখা দড়ি বেয়ে নামলাম। আবার শেরখর পাড়া অভিমুখে যাত্রা। এ পথ আগের পথের চেয়ে আরো খারাপ। মাঝে মাঝে ছড়া পেলে হাত মুখ ধুই, বোতলে পানি ভরি। মাঝে মাঝে গরু,গয়াল, শুকরের চিহৃ দেখা যায়। ভাবি, কিভাবে এই সব চতুষ্পদ প্রাণিগুলো এ খাড়াই-উৎরাই পথ পাড়ি দেয়? সন্ধ্যা বেলা শেরখর পাড়া এসে পৌঁছলাম। এটাও বম পাড়া। এ পাড়ার এক দাদুর বাসায় রাত যাপন করে পরদিন ২৮ তারিখ থানচির উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলাম। মুরংদের নোংরা বডিং বা রইসপাড়া পার হয়ে কাচ ুবাদামের বাগান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা ঝিরি পথ পেলাম। যেখানে বসতি তার আশেপাশে পানির ব্যবস্থা থাকবেই। কুলিরা এই গিড়িখাত পেরিয়ে কতটা রিক্স নিয়ে, কিভাবে গাছের গুড়ি কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যায়, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। নেতার নির্দেশ ছিল যে, পলিথিন জাতীয় জিনিস ডাস্টবিন ছাড়া কোথাও ফেলা যাবে না। একটা তিরিশে থানছি পৌঁছে ডাস্টবিনে ময়লা ফেললাম। শওকত, জাহাঙ্গীর আর আমার খুব খারাপ লাগছে। ছয় দিনের ট্র্যাকিং এর এখানেই সমাপ্তি টানতে চাইলাম। নেতা মেহেদী আর জামানের কারণে ইতি টানা গেল না। নতুন গাইড নিয়ে থানচি থেকে রেমাক্রি বাজার হয়ে নাফাকুম দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হল। শওকত স্বার্থপরের মত অনেকটা পালিয়ে বান্দরবান চলে গেল।
চার জনের টিম, ট্রলার নিয়ে স্রোতের বিপরীতে তিন্দু বাজার, রাজার পাথর হয়ে চার ঘন্টায় রেমাক্রি বাজারে এলাম। গেস্ট হাউজে রাত কাটিয়ে ২৯ তারিখে সকালে নাফাকুম যাত্রা। এ এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। স্থানীয় মারমা উপজাতির অংশু গাইডের সাথে স্রোতের মধ্য দিয়ে পাথর বিছানো পথে সাঙ্গু নদীর বাঁক কয়েক বার পাড় হয়ে প্রায় তিন ঘন্টায় নাফাকুম-এ এলাম। নাফাকুম ফলস্ দেখে গত পাঁচ দিনের ক্লান্তি যেন, শেষ হয়ে গেল। সাঙ্গু নদীর বুকে এত সুন্দর ঝরণা! ছবি তুলতে তুলতে সবাই ক্লান্ত হয়ে গেলাম। গেস্ট হাউজে ফিরে ফ্রেশ হয়ে মারমা উপজাতির হোটেলে খেয়ে থানচির পথে স্রোতের অনুকুলে তিন ঘন্টায় ফিরে এলাম। ৩০ তারিখ রাতে রেস্ট হাউজে একরাত কাটিয়ে থানচির গাইড মামুন তথা থানচির টুরিস্ট ব্যবসার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে পরদিন ৩১ তারিখে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে লম্বা ট্র্যাকিং এর সমাপ্তি টানলাম।
হয়তো বলবেন, সময়ের লাশ শেষ না হতেই আরেকটা..। কিন্তু এটা যে বাসী হয়ে যাচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার সমকাল সুহৃদ সমাবেশের পাতায় ছোট করে এই লেখাটা প্রকাশিত হবে।
http://www.samakal.com.bd/details.php?news=32&action=main&menu_type=crorpathro&option=single&news_id=325786&pub_no=1309&type=
তাজিংডংয়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে
শাশ্বত স্বপন
বান্দরবানের গহিনে যাওয়ার পরিকল্পনা আমাদের প্রায় এক বছরের। যাওয়ার আগে সুহৃদ মেহেদী হাসান তালাতের নেতৃত্বে ট্র্র্যাকিংয়ের বিশেষ প্রস্তুতি হিসেবে তিন মাস ধূপখোলার মাঠে ব্যায়াম করি। অবশেষে ২৪ জানুয়ারি রাতে রওনা দিই আমরা। প্রকৃতির পাহাড়-ঝরনা-ছড়া-মেঘ-কুয়াশা-নদী-ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আর রহস্যময় পাহাড় ঘেরা দীঘির অপার সৌন্দর্য হলো বান্দরবান। ২৫ জানুয়ারি সকালে বন্ধু হোসেনের বাসায় ঢুঁ দিয়েই লোকাল গাড়িতে চড়ে বসি। রোমা বাজারের পথে নতুন ব্রিজের কাছে ব্রিকফিল্ডে নেমে চান্দের গাড়িতে শুরু হয় যাত্রা। মুরংগো বাজার হয়ে মুরং, খুরমি উপজাতিদের বসতি আর দু'পাশে পাহাড় আর গিরিখাদ দেখতে দেখতে অঁাঁকাবঁঁঁঁঁঁঁাঁকা, উঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁচু-নিচু পিচঢালা পথ পাড়ি দিয়ে ১১টায় রোমা বাজারে এসে সবাই নামলাম। গত বছর কেওক্রাডং বিজয়ে কৈক্ষংছড়ি নেমে সাঙ্গু নদী দিয়ে রোমা বাজারে এসেছিলাম। এবার সাঙ্গু নদীতে পানি খুব কম। দুপুরের খাবার পর বিজিবির অনুমতির জন্য যেতে হয়। আনুষাঙ্গিক নিয়ম সেরে হোসেনের ঠিক করা গাইডকে নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয় বগালেকের পথে। বগালেকের পাহাড়ের ২৭০০ ফুট ওপরে উঠে দীঘিতে গোসল সেরে বিকেল-গোধূলি-সন্ধ্যা-পূর্ণিমার রাত এ পাহাড় ঘেরা লেকের রূপ উপভোগ করে সিয়াম দিদির বিখ্যাত হোটেলে খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। ২৬ জানুয়ারি সকালে ঝিরিপথ দিয়ে আগাতে থাকলাম কেওক্রাডংয়ের দিকে। চিংড়ি ঝরনা থেকে পানি নিয়ে চলতে চলতে দার্জিলিং পাড়ার মাইদুং দিদির দোকানে চা পান করে দুপুর দেড়টায় কেওক্রাডংয়ে পেঁৗছলাম। লালা মামার নতুন করে গড়া ঘরের দোতলার বারান্দায় গত বছরে টানিয়ে রাখা 'কেওক্রাডংয়ে আমরা সুহৃদ'_ ব্যানার দেখে আমরা বিস্মিত!
কেওক্রাডাংয়ে দুপুরটা কাটিয়ে রোমঞ্চকর তাজিংডংয়ের পথ পথে পা বড়ালাম আমরা। কখনও গিরিখাদ, কখনও উঁঁচু-ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে পাঁচটা তিরিশে বম পাড়া বাকতলাই এসে দেখি, সন্ধ্যাতেই সবাই রাতের খাবার খাচ্ছে। নুরু ভাই মুন লাল বমের বাসায় আমাদের রাতে থাকার ব্যবস্থা করলেন। ঘরের ভেতরে রাখা চুলায় শুরু হল রান্না।
বম পাড়ার সবাই ব্যাপ্টিস্ট খ্রিস্টান মতাবলম্বী। গির্জায় গিয়ে মেহেদী আর আমি তাদের ফাদারের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে এলাম ঘরে। আট ঘণ্টা হাঁটার ক্লান্তি শেষে গভীর ঘুম। ২৭ জানুয়ারি শুরু হলো দ্বিতীয় দিনের পদযাত্রা। আবার সেই ভয়ঙ্কর পথচলা। দুই পাশের পাহাড়ি ঘাসের ঢেউ খেলানো সরু পথে শুধুই নামছি। শেষ আর হতে চায় না। হঠাৎ কোনো লোকালয় দেখতে পেলে ক্লান্তি কমে আসে। নিজেদের কাছে বাঁশের লাঠি থাকা সত্ত্বেও বাঁশ, দড়ি, পাহাড়ি লতা, গাছের শিকড়_ যা পেয়েছি তাই ধরে নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়েছি। শওকত আর জাহাঙ্গীরের জন্য বারবার থামতে হয়েছে। বাকতলাই পাড়া থেকেই জাহাঙ্গীরের জ্বর, সেই জ্বর নিয়ে মনের জোরে প্রকৃতির টানে অতি কষ্টে শওকতের সঙ্গী হয়েই তাকে পেছনে থাকতে হয়েছে। জামান আর মেহেদীর সবার আগে আগে চলেছে। আর আমি মাঝে এতিমের মতো শূন্য পাহাড়ি পথে একাকী চলেছি। গাইড প্রায় সব সময় দুর্বলের সঙ্গী হয়েই পেছনে থেকেছে।
হুররে! তাজিংডং পাহাড়ে চলে এসেছি। কিন্তু ওপরে উঠব কীভাবে? এখানে কেওক্রাডংয়ের মতো সিঁড়ি নেই। আমিই শুরুতে উঠতে শুরু করলাম। অতি কষ্টে সবাই উঠে চিৎকার শুরু করলাম। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিখরে আমরা। এখানে সামান্য কিছু জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে। চারদিকে গভীর জঙ্গল। কেওক্রাডং পাহাড়ের এর মতো এখানে কোনো নেমপ্লেট নেই। এখান থেকে শাখা হাফং পাহাড়, দূরের উপজাতি গ্রাম দেখা যায়। বর্ষায় এলে মেঘ ছোঁয়া যেত। ব্যানার নিয়ে ছবি তুলে নামতে গিয়ে কেউ এগোচ্ছে না। অগত্যা মেহেদীর কাছে রাখা দড়ি বেয়ে নামলাম। আবার শেরখরপাড়া অভিমুখে যাত্রা। এ পথ আগের পথের চেয়ে আরও খারাপ। মাঝেমধ্যে ছড়া পেলে হাত মুখ ধুই, বোতলে পানি ভরি। সন্ধ্যাবেলা শেরখরপাড়া এসে পেঁৗছলাম। এটাও বম পাড়া। এখানেই রাত যাপন করে পরদিন থানচির উদ্দেশে হাঁটতে লাগলাম। একটা তিরিশে থানছি পেঁৗছলাম ক্লান্ত দেহে। শওকত, জাহাঙ্গীর আর আমার খুব খারাপ অবস্থা। ছয় দিনের ট্র্যাকিংয়ের এখানেই সমাপ্তি টানতে চাইলাম। নেতা মেহেদী আর জামানের কারণে ইতি টানা গেল না। নতুন গাইড নিয়ে থানচি থেকে রেমাক্রি বাজার হয়ে নাফাকুম দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। শওকত অনেকটা পালিয়ে বান্দরবান চলে গেল। চারজনের টিম, ট্রলার নিয়ে স্রোতের বিপরীতে তিন্দু বাজার, রাজার পাথর হয়ে চার ঘণ্টায় রেমাক্রি বাজারে এলাম। গেস্ট হাউসে রাত কাটিয়ে ২৯ জানুয়ারি সকালে নাফাকুম যাত্রা। মারমা গাইড অংশুর সঙ্গে খরস্রোতা সাঙ্গু পার হয়ে প্রায় তিন ঘণ্টায় নাফাকুমে এলাম। নাফাকুম ফলস দেখে গত পাঁচ দিনের ক্লান্তি যেন শেষ হয়ে গেল। সাঙ্গু নদীর বুকে এত সুন্দর ঝরনা! গেস্ট হাউসে ফিরে ফ্রেশ হয়ে মারমাদের হোটেলে খেয়ে থানচির পথে স্রোতের অনুকূলে তিন ঘণ্টায় ফিরে এলাম। ৩০ তারিখ রাতে রেস্ট হাউসে একরাত কাটিয়ে পরদিন বান্দরবানের উদ্দেশে।
মরার আগে যাবোই যাবো একদিন...
বেশী বয়সে না যাওয়াই ভাল। তবে ব্যায়াম ছাড়া আমার সাথে বর্ষাকালে বগালেক পর্যন্ত যেতে পারেন।
http://www.samakal.com.bd/details.php?news=32&action=main&menu_type=crorpathro&option=single&news_id=325786&pub_no=1309&type=
তাজিংডংয়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে
শাশ্বত স্বপন
বান্দরবানের গহিনে যাওয়ার পরিকল্পনা আমাদের প্রায় এক বছরের। যাওয়ার আগে সুহৃদ মেহেদী হাসান তালাতের নেতৃত্বে ট্র্র্যাকিংয়ের বিশেষ প্রস্তুতি হিসেবে তিন মাস ধূপখোলার মাঠে ব্যায়াম করি। অবশেষে ২৪ জানুয়ারি রাতে রওনা দিই আমরা। প্রকৃতির পাহাড়-ঝরনা-ছড়া-মেঘ-কুয়াশা-নদী-ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আর রহস্যময় পাহাড় ঘেরা দীঘির অপার সৌন্দর্য হলো বান্দরবান। ২৫ জানুয়ারি সকালে বন্ধু হোসেনের বাসায় ঢুঁ দিয়েই লোকাল গাড়িতে চড়ে বসি। রোমা বাজারের পথে নতুন ব্রিজের কাছে ব্রিকফিল্ডে নেমে চান্দের গাড়িতে শুরু হয় যাত্রা। মুরংগো বাজার হয়ে মুরং, খুরমি উপজাতিদের বসতি আর দু'পাশে পাহাড় আর গিরিখাদ দেখতে দেখতে অঁাঁকাবঁঁঁঁঁঁঁাঁকা, উঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁচু-নিচু পিচঢালা পথ পাড়ি দিয়ে ১১টায় রোমা বাজারে এসে সবাই নামলাম। গত বছর কেওক্রাডং বিজয়ে কৈক্ষংছড়ি নেমে সাঙ্গু নদী দিয়ে রোমা বাজারে এসেছিলাম। এবার সাঙ্গু নদীতে পানি খুব কম। দুপুরের খাবার পর বিজিবির অনুমতির জন্য যেতে হয়। আনুষাঙ্গিক নিয়ম সেরে হোসেনের ঠিক করা গাইডকে নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয় বগালেকের পথে। বগালেকের পাহাড়ের ২৭০০ ফুট ওপরে উঠে দীঘিতে গোসল সেরে বিকেল-গোধূলি-সন্ধ্যা-পূর্ণিমার রাত এ পাহাড় ঘেরা লেকের রূপ উপভোগ করে সিয়াম দিদির বিখ্যাত হোটেলে খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। ২৬ জানুয়ারি সকালে ঝিরিপথ দিয়ে আগাতে থাকলাম কেওক্রাডংয়ের দিকে। চিংড়ি ঝরনা থেকে পানি নিয়ে চলতে চলতে দার্জিলিং পাড়ার মাইদুং দিদির দোকানে চা পান করে দুপুর দেড়টায় কেওক্রাডংয়ে পেঁৗছলাম। লালা মামার নতুন করে গড়া ঘরের দোতলার বারান্দায় গত বছরে টানিয়ে রাখা 'কেওক্রাডংয়ে আমরা সুহৃদ'_ ব্যানার দেখে আমরা বিস্মিত!
কেওক্রাডাংয়ে দুপুরটা কাটিয়ে রোমঞ্চকর তাজিংডংয়ের পথ পথে পা বড়ালাম আমরা। কখনও গিরিখাদ, কখনও উঁঁচু-ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে পাঁচটা তিরিশে বম পাড়া বাকতলাই এসে দেখি, সন্ধ্যাতেই সবাই রাতের খাবার খাচ্ছে। নুরু ভাই মুন লাল বমের বাসায় আমাদের রাতে থাকার ব্যবস্থা করলেন। ঘরের ভেতরে রাখা চুলায় শুরু হল রান্না।
বম পাড়ার সবাই ব্যাপ্টিস্ট খ্রিস্টান মতাবলম্বী। গির্জায় গিয়ে মেহেদী আর আমি তাদের ফাদারের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে এলাম ঘরে। আট ঘণ্টা হাঁটার ক্লান্তি শেষে গভীর ঘুম। ২৭ জানুয়ারি শুরু হলো দ্বিতীয় দিনের পদযাত্রা। আবার সেই ভয়ঙ্কর পথচলা। দুই পাশের পাহাড়ি ঘাসের ঢেউ খেলানো সরু পথে শুধুই নামছি। শেষ আর হতে চায় না। হঠাৎ কোনো লোকালয় দেখতে পেলে ক্লান্তি কমে আসে। নিজেদের কাছে বাঁশের লাঠি থাকা সত্ত্বেও বাঁশ, দড়ি, পাহাড়ি লতা, গাছের শিকড়_ যা পেয়েছি তাই ধরে নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়েছি। শওকত আর জাহাঙ্গীরের জন্য বারবার থামতে হয়েছে। বাকতলাই পাড়া থেকেই জাহাঙ্গীরের জ্বর, সেই জ্বর নিয়ে মনের জোরে প্রকৃতির টানে অতি কষ্টে শওকতের সঙ্গী হয়েই তাকে পেছনে থাকতে হয়েছে। জামান আর মেহেদীর সবার আগে আগে চলেছে। আর আমি মাঝে এতিমের মতো শূন্য পাহাড়ি পথে একাকী চলেছি। গাইড প্রায় সব সময় দুর্বলের সঙ্গী হয়েই পেছনে থেকেছে।
হুররে! তাজিংডং পাহাড়ে চলে এসেছি। কিন্তু ওপরে উঠব কীভাবে? এখানে কেওক্রাডংয়ের মতো সিঁড়ি নেই। আমিই শুরুতে উঠতে শুরু করলাম। অতি কষ্টে সবাই উঠে চিৎকার শুরু করলাম। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিখরে আমরা। এখানে সামান্য কিছু জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে। চারদিকে গভীর জঙ্গল। কেওক্রাডং পাহাড়ের এর মতো এখানে কোনো নেমপ্লেট নেই। এখান থেকে শাখা হাফং পাহাড়, দূরের উপজাতি গ্রাম দেখা যায়। বর্ষায় এলে মেঘ ছোঁয়া যেত। ব্যানার নিয়ে ছবি তুলে নামতে গিয়ে কেউ এগোচ্ছে না। অগত্যা মেহেদীর কাছে রাখা দড়ি বেয়ে নামলাম। আবার শেরখরপাড়া অভিমুখে যাত্রা। এ পথ আগের পথের চেয়ে আরও খারাপ। মাঝেমধ্যে ছড়া পেলে হাত মুখ ধুই, বোতলে পানি ভরি। সন্ধ্যাবেলা শেরখরপাড়া এসে পেঁৗছলাম। এটাও বম পাড়া। এখানেই রাত যাপন করে পরদিন থানচির উদ্দেশে হাঁটতে লাগলাম। একটা তিরিশে থানছি পেঁৗছলাম ক্লান্ত দেহে। শওকত, জাহাঙ্গীর আর আমার খুব খারাপ অবস্থা। ছয় দিনের ট্র্যাকিংয়ের এখানেই সমাপ্তি টানতে চাইলাম। নেতা মেহেদী আর জামানের কারণে ইতি টানা গেল না। নতুন গাইড নিয়ে থানচি থেকে রেমাক্রি বাজার হয়ে নাফাকুম দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। শওকত অনেকটা পালিয়ে বান্দরবান চলে গেল। চারজনের টিম, ট্রলার নিয়ে স্রোতের বিপরীতে তিন্দু বাজার, রাজার পাথর হয়ে চার ঘণ্টায় রেমাক্রি বাজারে এলাম। গেস্ট হাউসে রাত কাটিয়ে ২৯ জানুয়ারি সকালে নাফাকুম যাত্রা। মারমা গাইড অংশুর সঙ্গে খরস্রোতা সাঙ্গু পার হয়ে প্রায় তিন ঘণ্টায় নাফাকুমে এলাম। নাফাকুম ফলস দেখে গত পাঁচ দিনের ক্লান্তি যেন শেষ হয়ে গেল। সাঙ্গু নদীর বুকে এত সুন্দর ঝরনা! গেস্ট হাউসে ফিরে ফ্রেশ হয়ে মারমাদের হোটেলে খেয়ে থানচির পথে স্রোতের অনুকূলে তিন ঘণ্টায় ফিরে এলাম। ৩০ তারিখ রাতে রেস্ট হাউসে একরাত কাটিয়ে পরদিন বান্দরবানের উদ্দেশে।
ইশ, কত্ত জায়গা বাকি যাওয়ার..
কিছুই দেখা হইল না!
এ ভ্রমনের পুরো বিবরণ আগামী মাসে প্রায় ৫০০০ হাজার শব্দে পাবেন। পড়ার পরে ভালভাবে চিন্তা করতে পারবেন। কিভাবে, কোন ঋতুতে কি কি সাথে নিয়ে যাবেন।
ছবি কই?
ছবি কিভাবে দিতে হয়, নিয়মটা একটু লিখে দেন না।
কঠিন অবস্থা!
ছবি কোথায়?
ছবি কিভাবে দিতে হয়, নিয়মটা একটু লিখে দেন না। নইলে ইমেইল নং দেন ছবি পাঠাই
গুড জব!
একবার আমার লগে যাইয়েন, জব কারে কয় বুঝবেন।
কি ঘুরান্তি দিলেন!
বডি ফিটনেথ ঠিক থাকলে জামাইকে নিয়ে চলেন আমাদের সাথে বর্ষাকালে (জোঁক আছে কিন্তু!!!!!!)
ছবি বাদে লেখা মানি না মানবো না।

দেশটার কি যে অইল, খালি আন্দোলন। ইমেইল দেন ছবি দিতাছি। এখানে ছবি কিভাবে দেয় জানি না।
http://www.samakal.com.bd/details.php?news=32&action=main&menu_type=crorpathro&option=single&news_id=325786&pub_no=1309&type=
তাজিংডংয়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে
শাশ্বত স্বপন
বান্দরবানের গহিনে যাওয়ার পরিকল্পনা আমাদের প্রায় এক বছরের। যাওয়ার আগে সুহৃদ মেহেদী হাসান তালাতের নেতৃত্বে ট্র্র্যাকিংয়ের বিশেষ প্রস্তুতি হিসেবে তিন মাস ধূপখোলার মাঠে ব্যায়াম করি। অবশেষে ২৪ জানুয়ারি রাতে রওনা দিই আমরা। প্রকৃতির পাহাড়-ঝরনা-ছড়া-মেঘ-কুয়াশা-নদী-ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আর রহস্যময় পাহাড় ঘেরা দীঘির অপার সৌন্দর্য হলো বান্দরবান। ২৫ জানুয়ারি সকালে বন্ধু হোসেনের বাসায় ঢুঁ দিয়েই লোকাল গাড়িতে চড়ে বসি। রোমা বাজারের পথে নতুন ব্রিজের কাছে ব্রিকফিল্ডে নেমে চান্দের গাড়িতে শুরু হয় যাত্রা। মুরংগো বাজার হয়ে মুরং, খুরমি উপজাতিদের বসতি আর দু'পাশে পাহাড় আর গিরিখাদ দেখতে দেখতে অঁাঁকাবঁঁঁঁঁঁঁাঁকা, উঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁচু-নিচু পিচঢালা পথ পাড়ি দিয়ে ১১টায় রোমা বাজারে এসে সবাই নামলাম। গত বছর কেওক্রাডং বিজয়ে কৈক্ষংছড়ি নেমে সাঙ্গু নদী দিয়ে রোমা বাজারে এসেছিলাম। এবার সাঙ্গু নদীতে পানি খুব কম। দুপুরের খাবার পর বিজিবির অনুমতির জন্য যেতে হয়। আনুষাঙ্গিক নিয়ম সেরে হোসেনের ঠিক করা গাইডকে নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয় বগালেকের পথে। বগালেকের পাহাড়ের ২৭০০ ফুট ওপরে উঠে দীঘিতে গোসল সেরে বিকেল-গোধূলি-সন্ধ্যা-পূর্ণিমার রাত এ পাহাড় ঘেরা লেকের রূপ উপভোগ করে সিয়াম দিদির বিখ্যাত হোটেলে খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। ২৬ জানুয়ারি সকালে ঝিরিপথ দিয়ে আগাতে থাকলাম কেওক্রাডংয়ের দিকে। চিংড়ি ঝরনা থেকে পানি নিয়ে চলতে চলতে দার্জিলিং পাড়ার মাইদুং দিদির দোকানে চা পান করে দুপুর দেড়টায় কেওক্রাডংয়ে পেঁৗছলাম। লালা মামার নতুন করে গড়া ঘরের দোতলার বারান্দায় গত বছরে টানিয়ে রাখা 'কেওক্রাডংয়ে আমরা সুহৃদ'_ ব্যানার দেখে আমরা বিস্মিত!
কেওক্রাডাংয়ে দুপুরটা কাটিয়ে রোমঞ্চকর তাজিংডংয়ের পথ পথে পা বড়ালাম আমরা। কখনও গিরিখাদ, কখনও উঁঁচু-ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে পাঁচটা তিরিশে বম পাড়া বাকতলাই এসে দেখি, সন্ধ্যাতেই সবাই রাতের খাবার খাচ্ছে। নুরু ভাই মুন লাল বমের বাসায় আমাদের রাতে থাকার ব্যবস্থা করলেন। ঘরের ভেতরে রাখা চুলায় শুরু হল রান্না।
বম পাড়ার সবাই ব্যাপ্টিস্ট খ্রিস্টান মতাবলম্বী। গির্জায় গিয়ে মেহেদী আর আমি তাদের ফাদারের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে এলাম ঘরে। আট ঘণ্টা হাঁটার ক্লান্তি শেষে গভীর ঘুম। ২৭ জানুয়ারি শুরু হলো দ্বিতীয় দিনের পদযাত্রা। আবার সেই ভয়ঙ্কর পথচলা। দুই পাশের পাহাড়ি ঘাসের ঢেউ খেলানো সরু পথে শুধুই নামছি। শেষ আর হতে চায় না। হঠাৎ কোনো লোকালয় দেখতে পেলে ক্লান্তি কমে আসে। নিজেদের কাছে বাঁশের লাঠি থাকা সত্ত্বেও বাঁশ, দড়ি, পাহাড়ি লতা, গাছের শিকড়_ যা পেয়েছি তাই ধরে নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়েছি। শওকত আর জাহাঙ্গীরের জন্য বারবার থামতে হয়েছে। বাকতলাই পাড়া থেকেই জাহাঙ্গীরের জ্বর, সেই জ্বর নিয়ে মনের জোরে প্রকৃতির টানে অতি কষ্টে শওকতের সঙ্গী হয়েই তাকে পেছনে থাকতে হয়েছে। জামান আর মেহেদীর সবার আগে আগে চলেছে। আর আমি মাঝে এতিমের মতো শূন্য পাহাড়ি পথে একাকী চলেছি। গাইড প্রায় সব সময় দুর্বলের সঙ্গী হয়েই পেছনে থেকেছে।
হুররে! তাজিংডং পাহাড়ে চলে এসেছি। কিন্তু ওপরে উঠব কীভাবে? এখানে কেওক্রাডংয়ের মতো সিঁড়ি নেই। আমিই শুরুতে উঠতে শুরু করলাম। অতি কষ্টে সবাই উঠে চিৎকার শুরু করলাম। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিখরে আমরা। এখানে সামান্য কিছু জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে। চারদিকে গভীর জঙ্গল। কেওক্রাডং পাহাড়ের এর মতো এখানে কোনো নেমপ্লেট নেই। এখান থেকে শাখা হাফং পাহাড়, দূরের উপজাতি গ্রাম দেখা যায়। বর্ষায় এলে মেঘ ছোঁয়া যেত। ব্যানার নিয়ে ছবি তুলে নামতে গিয়ে কেউ এগোচ্ছে না। অগত্যা মেহেদীর কাছে রাখা দড়ি বেয়ে নামলাম। আবার শেরখরপাড়া অভিমুখে যাত্রা। এ পথ আগের পথের চেয়ে আরও খারাপ। মাঝেমধ্যে ছড়া পেলে হাত মুখ ধুই, বোতলে পানি ভরি। সন্ধ্যাবেলা শেরখরপাড়া এসে পেঁৗছলাম। এটাও বম পাড়া। এখানেই রাত যাপন করে পরদিন থানচির উদ্দেশে হাঁটতে লাগলাম। একটা তিরিশে থানছি পেঁৗছলাম ক্লান্ত দেহে। শওকত, জাহাঙ্গীর আর আমার খুব খারাপ অবস্থা। ছয় দিনের ট্র্যাকিংয়ের এখানেই সমাপ্তি টানতে চাইলাম। নেতা মেহেদী আর জামানের কারণে ইতি টানা গেল না। নতুন গাইড নিয়ে থানচি থেকে রেমাক্রি বাজার হয়ে নাফাকুম দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। শওকত অনেকটা পালিয়ে বান্দরবান চলে গেল। চারজনের টিম, ট্রলার নিয়ে স্রোতের বিপরীতে তিন্দু বাজার, রাজার পাথর হয়ে চার ঘণ্টায় রেমাক্রি বাজারে এলাম। গেস্ট হাউসে রাত কাটিয়ে ২৯ জানুয়ারি সকালে নাফাকুম যাত্রা। মারমা গাইড অংশুর সঙ্গে খরস্রোতা সাঙ্গু পার হয়ে প্রায় তিন ঘণ্টায় নাফাকুমে এলাম। নাফাকুম ফলস দেখে গত পাঁচ দিনের ক্লান্তি যেন শেষ হয়ে গেল। সাঙ্গু নদীর বুকে এত সুন্দর ঝরনা! গেস্ট হাউসে ফিরে ফ্রেশ হয়ে মারমাদের হোটেলে খেয়ে থানচির পথে স্রোতের অনুকূলে তিন ঘণ্টায় ফিরে এলাম। ৩০ তারিখ রাতে রেস্ট হাউসে একরাত কাটিয়ে পরদিন বান্দরবানের উদ্দেশে।
ঘোরাঘুরির পোষ্ট মন দিয়ে পড়ি, ছবি দেখি... তারপর হিংসা হয়, মন খারাপ হয়।:(
ছবি দেয়ার জন্য আপনি যে বক্সটাতে লিখেন তার উপরে যে অনেকগুলা আইকন...সেখানে একদম বাম পাশেরটাকে কারসর রেখে দেখুন যে ইমেজ ইনসার্ট করতে বলে। সেটাতে ক্লিক করে আপনি ছবি এড করেন।।
এই পোষ্টটাই এডিট করে ছবি যোগ করে দিতে পারেন। অথবা নতুন আরেকটা পোষ্ট দিয়ে
শুনেই ভয় লাগছে থাক দরকার নাই আর ঘোরার
ধন্যবাদ, আপনার ভ্রমণ কাহিনী পড়ে ভাল্লাগ্লো
।
"৩০ তারিখ রাতে রেস্ট হাউজে একরাত কাটিয়ে থানচির গাইড মামুন তথা থানচির টুরিস্ট ব্যবসার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে........"
ভাই, এই মামুন কে তিক্ত অভিজ্ঞতা টা কি ছিল? একটু খুলে বলবেন কি?
মামুন হল চিটার ও বাটপার। ওর কোন কাজ নেই। রেমাক্রি গিয়ে আরেকটা গাইড, অংশুকে ধরিয়ে দেয়, যেটা কোন কথাই বলে না।প্রতিটি খরচে দেখবেন ওর % আছে। ট্রলার ভাড়া ৪০০০টাকা, ট্রলারের দুজন, মামুন, রেমাক্রির গাইড অংশু, মোট ৪ জনের সব খানা পিনার খরচ আমাদের। ২৪ ঘন্টা ফোনে অথবা সরাসরি মারমা উপজাতী অনেক মেয়ের সাথে প্রেমে ব্যস্ত থাকে।
দামাদামী ভাল ভাবে করবেন।
মন্তব্য করুন