মুক্তি চাই, মুক্তি
শত কষ্ট বুকে নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকে,বেঁচে থাকতে হয়। জ্ঞান হবার পর থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অসীম শ্রম দিয়ে নিজেকে তৈরী করে প্রকৃতি সমাজ, সংসারের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য। এটা মানুষ প্রথমিক অবস্থায় নিজের জন্যই করে। একসময় নিজের সংসার ছেলেমেয়ের জন্য করে। কারো কারো হয়ত সামর্থের সীমা এখানেই থেমে যায়। কেউ আবার একধাপ উপরে অর্থাৎ মানুষের সেবা করার জন্য আপনা প্রয়োজন শেষে নিজের সামর্থ মত করে থাকে। কেউ আবার নিজের জীবনটা পুরোপুরি মানুষের জন্যই বিলিয়ে দেয়। আমি এমন নিঃস্বার্থ মানুষ কত খুজেছি, আজও খুজছি। কিন্তু পেয়েছি কি?
আমি ফুল হয়ে মানুষের ভিতরের ফুলের সুবাস নেবার চেষ্টা করেছি। ফুলকে দূর থেকে দেখলে তার রূপ ও গন্ধে সকলেই মুগ্ধ ও বিমোহিত হয়, কিন্তু একটি ফূল বৃন্তচ্যুত হলে ক্ষনিক সময়ের ব্যবধানে সৌন্দর্য হারায়। আমি মানুষের কাছ থেকে আরও যত কাছে গিয়েছি ততই তাকে বৃন্তচ্যুত ফুলের মত শ্রীহীন হতে দেখেছি।
বাতাস হয়ে মানুষের চারদিক এমনকি ভিতরের বাতাসটুকুর গন্ধ নিতে চেয়েছি, বার বার আমি হতাস হয়েছি। নির্মল বাতাসের পরিবর্তে কেমন জানি হাজারও উটকো গন্ধময় বাতাস আমার স্বাভাবিক নিঃশ্বাস প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি করে আমাকে কষ্ট দিয়েছে, কখনও বা প্রভাবিত করেছে।
আমি কুকুর বা বিড়ালের মত মানুষের দ্বারে দ্বারে এমনকি পায়ের কাছে বসে থেকেছি, তার ভিতরের অবয়বটা দেখব বলে। কিন্তু একি কুকুর বা বেড়াল কোথা- হায়েনাকে হার মানানো কি সব ভয়ংকর দৃশ্য। আমি ত্রস্ত পদে, উর্ধস্বাসে পালাতে চেয়েছি,মানুষ নামক সৃষ্টির সেরা জীব থেকে।
জ্ঞান হবার পর থেকে যখন যাকে ভাল লেগেছে, বা কাউকে আমার আদর্শ জ্ঞান করেছি, তার কাছে ছুটে গিয়েছি, তার কাছ থেকে আদর্শের পঙক্তি মালা গুলো আমার গলায় ধারন করব বলে এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে আদর্শের বেদীতে স্থান দিয়েছি। সময়ের ব্যবধানে কিছু আগে বা পড়ে হতাশ হয়ে রিক্ত হৃদয় বা শুন্য হাতে ফিরে এসেছি।
আমার যখন অর্থ নেই তখন ধানের নাড়া থেকে ছড়িয়ে নেয়া মুল্যহীন ধানের খড়ের মত অথবা কলা খেয়ে ছুড়ে ফেলা বাকলে পরিনত হয়েছি বা তেমন আচরন পেয়েছি। আবার যখন আমি বিত্তশালী হয়েছি তখন আবার কত জনের কত রকম নিশানায় পরিনত হয়েছি। আর কত শত কণ্টকাঘাত সহ্য করেছি।
আমি মানুষ, আমি এক সময় বন্য হিংস্র প্রাণীকে আমার প্রাণ হরণ কারি শত্রু গণ্য করেছি। আজ কোন বন্য প্রাণী আমার প্রাণ হরণকারী তা ভাবি না। আজ আমার প্রান হরণ কারি হিসেবে আমি আমার স্বজাতিকেই বেশী বিপদ সংকুল মনে করছি। এই ক্ষণে মানব জাতির প্রথম পুরুষ হযরত আদম (আঃ) পৃথিবীতে প্রথম আগমনের দিনটি মনে পড়ে গেল। এটি বহু বছর আগে কোন একটি বই এ পড়েছিলাম আজ তা আমার সংগ্রহে নেই তাই কেউ প্রমান চাইলে দিতে পারব না। ঘটনাটি এমন,হযরত আদম (আঃ) ও মা হাওয়াকে যখন আল্লাহ্র নির্দেশে পৃথিবীতে ছুড়ে ফেলা হয় তখন আদম (আঃ) শ্রীলংকার জাভা দ্বীপে এবং মা হাওয়া মক্কা শরীফে পড়েন।
হয়রত আদম(আঃ) জাভা দ্বীপে পড়ার সাথে সাথে হাজারো ভয়ংকর স্বরীসৃপ ব্যগ্র, সিংহ ও অন্যান্য প্রাণী উনার প্রতি ধেয়ে আসেন। উনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আল্লাহ্র দরবারে সেজদায় লুটিয়ে পড়েন ও জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফেরার পর দেখতে পান ভয়ংকর সব প্রাণীরা উনার কোন ক্ষতি না করেই ফিরে গেছে। এর শুকড়িয়া স্বরূপ উনি আরও এক রাকাত নামাজ পড়েন। আর এ সময়টা ছিল ফজর নামাজের সময়। আমরা মানুষ জাতি আদম (আঃ) এর বংশধর এবং তাই ফজরের দুই রাকাত নামাজ আমাদের জন্য ফরজ করা হয়েছে।
কিন্তু আজ আমি কোন বিপদে পড়ে নামাজে দাঁড়ালে বন্য প্রাণী তো দুরের কথা, মানুষের কাছ থেকেও রেহাই পাব সে আশা করতে পারি কি?
আমার জাগতিক চক্ষুদ্বয়ে যা দেখার তা তো আমি দেখছি তাতেই আমার নিজেকে আমি নিজে চিনতে পারি না। আমার মাঝে এত কলুষতা। জ্ঞান হবার পর থেকে যতদুর মনে করতে পারি তার দিকে অন্তর দৃষ্টিতে নিজেকে দেখার মানষে তাকালাম। এ যে আরও ভয়ংকর আরও কুৎসিত। নিষ্কলুষতার লেশ মাত্র নেই। প্রকৃতি বল, সৃষ্টিকর্তা বল কারও কাছেই আমি কখনো কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিনি। তার কোন হুকুম কখনো পালন করিনি। আমি নিজেও আমার স্বজাতির প্রতি াআমার উপর অর্পিত দায়ীত্ব পালন করিনি। এ সকল অপারগতা আমার নিজেকে নিজের অন্তরকে কলুষতার অন্ধকারে ডূবিয়ে ফেলেছে। আহ্ কি ভয়ংকর সে অন্ধকার। এ অন্ধকার থেকে কি সে মুক্তি, কিসে মুক্তি!! মুক্তি চাই, মুক্তি।
যতদিন দেহে আছে প্রাণ কোন মুক্তি নাই।
একমত। তবু যদি মুক্তি মেলে।
তবুও এই মানুষকেই ভালবাসতে হবে, মানুষের মাঝেই মুক্তি।
ভাল লাগলো আমলনামার কথামালা।
ঠিক বন্ধু, আমার নিজের মাঝেও তো কত অন্ধকার। তাও তো নিজক্বে ঘৃনা করতে পারি না।
গলপের মধ্যে টুইষট আছে
মন্তব্য করুন