আজিরা দিনপঞ্জী... ২০
জ্বরের ঘোরে কেমন যেন অনেকদিনের পুরনো একটা স্যাঁতস্যাঁতে মনখারাপ মনখারাপ ভাব টের পাচ্ছি। বাসায় কি কি যেন নিয়ে হাল্লা-গুল্লা হচ্ছে, আমি ঠিকই ডিসকানেক্টেড। কিছু বলতে বা করতে ইচ্ছাও করছে না। মাঝেমাঝে চিঠি লিখতে ইচ্ছা করে খুব, কিন্তু কেন ইচ্ছে করে সেইটাই মনে করতে পারিনা। অনেকদিনের সিগারেটখোর কেউ সিগারেট ছেড়ে দেবার পরেও যেমন হঠাৎ করে খামোকাই নেশার চাপে পড়ে যায় সেইরকমের কিছু হয়তো। কিংবা হয়তো অন্য কিছু চাইছি, নিজেও জানিনা কোনটা বা কি। পরশু বিকেলে জ্বরটা জেঁকে বসার পরে ইচ্ছে করছিলো হঠাৎ নেমে আসা বৃষ্টিতে রিকশায় চেপে একটাকা দামের প্লাস্টিকে মোড়ানো লাঠি আইসক্রিম কিনে ইস্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে। রোববারের হরতালের খবরটা পাওয়ার পরে ভাবসিলাম আমার উইকএন্ড হোমে গিয়ে উঠবো, কিন্তু হারামজাদা জ্বরটা সব গুবলেট করে দিলো। আর আরামসে বসে বসে মুভি দেখার বদলে আমি দুইটারাত গোঙাতে গোঙাতে পার করলাম। জ্বরটা একটু কমার পরে এখন শুরু হইসে কাশি। কাশতে কাশতে নিজেরে অশীতিপর বৃদ্ধা মনে হইতেসে। আর জ্বর হইলে আমার মাথায় বিভিন্ন হাবিজাবি ঘুরঘুর করতে থাকে। গত দুদিনের হাবিজাবি পার হয়ে আজকে মাথায় ঢুকসে, ''ঘ্যাঙর, ঘ্যাঙর, ঘ্যাঙ... কাঁদছে কেন ব্যাং? কাঁকড়া নাকি ব্যাঙের পায়ে মেরেছে এক ল্যাং।''
কয়েকদিন আগে কুন্ডেরা পড়ে মাথার নাটবল্টু যেই কয়টা ঠিকঠাক ছিলো সেইগুলাও চিরতরে হারাইয়া গেসে। আমি যেরকম মানুষ তাতে করে ভাবলেশহীন চোখে দুনিয়া দেখে তাকে নিয়ে স্যাটায়ার করা সম্ভব হবার কথা না। কিন্তু আমি কেমন জানি পাল্টাই গেসি। অনেক বেশি যে পাল্টাইসি, সেইটা হঠাৎ হঠাৎ টের পাই, আর টের পাইয়া ভিরমি খাই। তারপরে মনে হয় ধ্যাত্তেরি নিজেরেই আর পছন্দ হইতেসে না। কিংবা কে জানে একমাত্র নিজেরেই মনে হয় পছন্দ করি। আর আশেপাশের সবকিছুকে অনেক দূরের কিছু মনে হয়। আজকে একজনের অনুবাদ পড়লাম, মুরাকামির তুষারমানব। ওইখানকার বর্ণনা পড়ার পরে মনে হইতেসিলো আমি এক হিমবাহের চূড়ার আটকাইয়া আছি, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ঠেলার মাঝের সবকিছু গলে গলে যাইতেসে, আর আশেপাশের সবকিছু সেই স্রোতে ভাসতে ভাসতে কতো দূরে চলে যাইতেসে। হা হা হা! কল্পনাও কতো ভাবময়। কেন জানি অনেকদিন কোন গান শুনি নাই। সবার শেষ মন দিয়া শুনসিলাম এড্ডি'র 'ইন টু দ্য ওয়াইল্ড' এর সাউন্ডট্র্যাক। এরপরে আর কেন যে শুনি নাই জানিনা। আজকাল আমার বেশ বেহুদাই মনে হয় মানুষজন মনে হয় আমারে বেশি দেখতারেনা। মানে পছন্দ করেনা। এইরম ইমো মার্কা চিন্তা মাথায় কেন আসছে জানিনা, মনে হয় নিজেরেই নিজে দেখতে পারতাসিনা বইলা। ভাংগা রেকর্ডের মতো এইটাতে কেন আটকাইয়া যাইতেসি কে জানে? মাঝে মাঝে বুঝিনা এই দলাপাকানো মানুষটা কি আমি?
এই মেয়েটার এত মন খারাপ থাকে!
মন টা ভালো করেন দেখি এত কিছু ভাবেন ক্যান? হুম????
আসলে মন খারাপ না হলে আমি কিছু লিখতে পারিনা। এইজন্যেই অনেকদিন পর পর মন খারাপের কথা নিয়া আসি। আমার ব্লগ পড়লে মনে হইতারে এই দুনিয়াতে আমার চেয়ে বিষন্ন কেউ নাই। আমি একটু চুপচাপ, বেকুব আর ভ্যাবলা কিসিমের ঠিকই... কিন্তু বেশিক্ষণ বিষন্ন থাকা আমারে দিয়া পোষায় না।
মজা পেলাম।
একটা আনন্দের ব্লগ লেখেন, দেখি আপনি বিষণ্নতা প্রকাশে যেমন দক্ষ আনন্দ প্রকাশে তেমন কি না।
হি হি! আনন্দের কথা লিখবো ভাইবা লেখাটা কঠিন। আর আমি মনে হয় অনেক সাকসেস বা গোল ওরিয়েন্টেড মানুষ, তাই আনন্দের কথা লিখতে গেলে শোনাবে নিজের গর্বে আমার পা মাটিতে পড়েনা... তাই মনে হয় আনন্দের বেশিরভাগ কথা আমি আমার খুব কাছের কিছু মানুষজনের কাছেই আটকে রাখি...
আমিও এই রকম একটা কিছু সন্দেহ করসিলাম।
আমারো তাই মনে হইসিলো...
Apnar Blog ti amar kache darun legeche.
হি হি! নিদারুণ যে লাগে নাই, সেই ঢের...
আমি পরিস্কার জানি যে আমারে কেউ দেখতে পারে না
আমি এটাতে অভ্যস্ত। কোন কষ্টও নেই
মন্তব্য করুন