আবোল তাবোল- ৬
# # # # #
অনেক দিন পর, খুব মন ভাল একটা দিন গেল আজ। গতকাল এক্সাম শেষ হয়ে গেছে। এটা একটা বড় কারণ। আজ থেকে আবারও ছুটি, বছরখানেকের জন্য স্বস্তি। কোথাও ঘুরে আসতে পারলে ভাল ছিল, আপাতত সময় সুযোগ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
কোনো কিছু পাওয়ার আগে পর্যন্তই বেশি থাকে তার আবেদন ,আর পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় আর সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে তা হারিয়ে ফেলার শঙ্কা। কি বিচিত্র এই মানব মন!
কাল সারারাত জেগে থাকায় আজ ফজরের নামায জামাতেই পড়তে পারছি। তার তার ধারাবাহিকতায়ই হয়তো দিনের বাকি চার ওয়াক্তও কিভাবে কিভাবে জানি জামাতের সাথে পড়া হয়ে গেছে। বেশ অনেক দিন পর, এইক্ষেত্রেও। এটাও একটা কারণ বটে।
তবে সবচেয়ে বড় কারণ..আজ অনেক দিনের পর রাতের শেষে ভোর হতে দেখলাম। হালকা ঠান্ডা মিষ্টি হাওয়া। রাতের আকাশের কোনায় কোনায় প্রথমে আবছা আলো। গাছে গাছে পাখিদের ডাকাডাকি। ইট কাঠের খাচায় বন্দি জীবনের চিরচেনা গণ্ডির বাইরের এক অলস সৌন্দর্য। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই লাল বলের মত সূর্যটা টুপ করে আকাশে উঠে পড়ে, অম্নি হয়ে যায় ভোর! ভোর হতে দেখলেই কেন জানি বুকটা একদম হালকা হয়ে যায়। ওই একটা গান আছেনা? 'তুমি নির্মল কর... ' ,ওরকম মনে হয়! ভোরের বিশুদ্ধ বাতাসটা যেন মনের ভেতর ছোট্ট এক টুকরো আকাশ হয়ে ঢুকে পড়ে!অদ্ভুত একটা ভালোলাগা আবেশ জড়িয়ে পড়ে সারাদিনের জন্য হৃদয় জুড়ে। মনে হয়, কি আশ্চর্য সুন্দর এই বেঁচে থাকা!
# # # # #
ইদানিং হিন্দি মুভি দেখাই হয়না খুব একটা, হিন্দি গান শোনার হারও কমে গেছে অনেকখানি। ইচ্ছাকৃত নয় যদিও; ধারনা করি বলিউডের গুন মানের ক্রমহ্রাসমান অবস্থাই এর জন্যে দায়ী! যাই হোক, ভাল মুভি'র এই আকালের দিনে কাল রাতে দেখা হল 'রকস্টার',গত মাস ছয়েকের মাঝে ট্রেইলার মারফত আগ্রহ জাগানিয়া একমাত্র হিন্দি মুভি।
সবচেয়ে জঘন্য হয়েছে নবাগত নায়িকাটির অভিনয়, আর একটু হলেই খুন করে ফেলত মুভিটাকে!
বাকি টুকটাক কিছু টিপিকাল হিন্দি মুভি টাচের ব্যাপ্রারটা বাদ দিলে বলা যায়, মুভিটা দেখার মতন একটা মুভি।
নিঃসন্দেহে মুভিটার সবচাইতে সেরা বিষয় হ্ল রনবীর কাপুরের অভিনয়। চরিত্রের ভেতর এভাবে ঢুকে যাওয়া অসাধারণ অভিনয় খুব বেশি দেখি নি আগে। ও দেখিয়ে দিয়েছে, রকস্টার কেমন হতে হয় আর অভিনয় কাকে বলে! ছেলেটা অনেকদিন টিকবে। এই মুভির জন্য ও যদি ভারতের জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার না পায়, তাহলে আসলেই খুব অবাক লাগবে।
রনবীরের পর-ই আসবে মোহিত চৌহান। সিল্করুট ব্যান্ডের সাবেক এই ভোকাল বেশ কদিন হ্ল বলিউড মাতাচ্ছে। এই মুভিতে রনবীরের রকস্টার হয়ে উঠার একেকটা গান ও যা গাইছে, একটাও ফেলার মত না।
আর এ আর রাহমান কে নিয়ে কি বলব! মুভির থিম স্কোরের পাশাপাশি দারুণ দুইটা ইন্সট্রুমেন্টাল। এদের মাঝে 'the dichotomy om fame' তে সানাই আর গিটারের যুগলবন্দী টা মাস্টারপিস।
এটা শুনে কেন জানি মনে পড়ে গেল আমার আরেকটা খুব প্রিয় মুভি 'august rush' এর দুইটা অসাধারণ পিস অফ ওয়ার্ক, 'bari improv' আর 'duelling guiters' ।
রকস্টার নিয়ে আরও জানতে দেখুন এখানে আর রকস্টারের গানগুলোর জন্য দেখুন এখানে । রক অন!!
# # # # #
আজ দুপুর থেকে আবার আমায় পেয়ে বসেছে আরো দুটি গান।
প্রথমটি কোলকাতার ব্যান্ড দোহারের কন্ঠে লোকগীতি,
'শুনেছি রূপসাগরে মনের মানুষ..'
আর এর পরেরটি হল,
এই লোকগীতিতে প্রভাবিত রবিঠাকুরের ভাঙ্গা গান-
শ্রীকান্তের কণ্ঠে একটি অসাধারণ রবীন্দ্রসঙ্গীত,
'ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে, ও বন্ধু আমার.."
না শুনে থাকলে একবার চেষ্টা করে দেখে নিতে পারেন, ঠকবেন না..!
# # # # #
খুব বেশি বিজি না থাকলে, আমার একেকটা বিকেল কাটে ৭ তালা ফ্ল্যাটবিল্ডিং এর ছাঁদে।
হাটি, গান শুনি,আকাশ দেখি। সূর্যাস্তের হাতছানি। আরও একটা দিনের চলে যাওয়া।
আর যা-ই শুনি না শুনি, একটা গান রোজ রোজ শোনা হয়।
আমার সুপ্রিয় শিল্পী মৌসুমি ভৌমিকের গলায় 'যখনি একটু ছুটি পাই..'
যখনি একটু ছুটি পাই,
আমি ছুটে যাই। ছাঁদে,সন্ধ্যের মুখে।
যখনি একটু ছুটি পাই,
আমি ছুটে যাই। ছাঁদে,আকাশ দেখতে।
ছাঁদের মাথায় আকাশ দাড়িয়ে,
আকাশের গায়ে কত কত রঙ-
রঙ বদলায় রঙ বদলায়,
মেঘ পাখি সব-ই বদলিয়ে যায়।
দাড়িয়ে দাড়িয়ে এইসব দেখি,
ঝিলিক দিয়েছে বিদ্যুৎ রেখা।
হঠাৎ কখন তারা দেখা যায়,
অমনি আকাশ রঙ বদলায়।
হায়; শহুরে আকাশও এত খেলা জানে,
তাই তো আকাশ অদ্ভুত টানে।
এখনও আকাশ এত খেলা জানে,
তাই তো আকাশ অদ্ভুত টানে।
যখনি একটু ছুটি পাই,
আমি ছুটে যাই। ছাঁদে,সন্ধ্যের মুখে।
যখনি একটু ছুটি পাই।।
মস্ত আকাশ মস্ত সাগর,
দিনে দিনে কত রঙ বদলায়।
দিন রাত চলে আপন নিয়মে,
আমারও সময় বয়ে চলে যায়।
একদিন আমি সূর্যগ্রহণ দেখেছি,
হয়তো প্লাবনও দেখব।
একদিন আমি পূর্ণগ্রহন দেখেছি,
হয়ত প্লাবনও দেখব।
এত বড় ঢেউ- এত ছোট আমি,
সময়ের তোড়ে ভেসে চলে যাই।
এত বড় ঢেউ- এত ছোট আমি,
সময়ের তোড়ে ভেসে চলে যাই।
এত বড় ঢেউ- এত ছোট আমি,
সময়ের তোড়ে ভেসে চলে যাই।।
মনের আকাশ জুড়ে, আরও কিছু বিষাদ মাখি।
তবু-ও জানিনা কেন, অবাক কোন ভালোলাগায়..
মন ভাল হয়ে যায়..ভাল-ই লাগে..!
# # # # #
অনেক হলো আবোল তাবোল বক বকানি,
রাত ফুরিয়ে ভোর হয়ে আসছে- আজ এবার থামি।
ভাল থাকুন, সবাই। অনেক ভাল, সব সময়। প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ।।
লেখা ভাল লাগল।
রাত জাগা হল আরেকবার, তবে আপাতত ভোরের না, একটু ঘুমের অপেক্ষা। অবশ্য ঘুম হবে বলে মনে হচ্ছে না, কয়েকজন মিলে রাত জাগছি, সবাই শুয়ে বসে খিক খিক করে যাচ্ছে!
রাত জাগার মজাই আলাদা!
হিন্দী সিনেমা না দেখলেও বন্ধু বান্ধব ডিসের কল্যানে খোজ রাখি।রকস্টার দেখি নাই কিন্তু আশা ছিলো সিনেমাটা অনেক ভালো হবে।কিন্তু লোকজন খালি কয় অতো ভালো না লম্বা সময় ধরে সিনেমাটা টেনে রাখতে পারে নাই।কেমন জানি বোরিং।তবে সবাই রনবীর,রেহমান সাব,ইমতিয়াজ আলীর প্রশংসা করে।আমি তখন বলি হিন্দী সিনেমা তো এমনি তার ভিতরেও যে প্রশংসা করার এত কিছু পাইছস শুকরিয়া জানা!
আপনার ছুটি আনন্দ ময় হোক শুভকামনা!
ধন্যবাদ।
রকস্টার মুভিটা দেখতে মন চাইতেছে...
দেইখা ফেলান।
গতকাল রাতে মিতালি মুখার্জির একটা গানকে নির্যাতিত হতে দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেছিল । নতুন শিল্পীরা পুরনো গান গুলার বারোটা বাজায় ক্যান বুঝিনা
টিভিতে রকস্টার দেখানোর জন্য অপেক্ষায় আছি ।
কোন গান? লিঙ্ক দেন।
টিভিতে আসতে তো অনেক দেরি!
"হারানো দিনের মত হারিয়ে গেছো তুমি" এই গানটা ।
মন ছুঁয়ে যাওয়ার মত একটা গান, শুনলেই কখনো না পাওয়া হারিয়ে ফেলা কোন একজনের জন্যে মন কেমন কেমন করে উঠে!
আজকাল একেকজন শিল্পী কয়েকটা গান গেয়ে ফেললেই নিজেকে কি যে মনে করে বসে আল্লাহ মালুম! ১/২ টা এ্যালবাম বের হলেই হ্ল, শুরু করে দেয় পুরানো দিনের আসাধারন সব গানের রিমেক নামক শ্রাদ্ধ!
আর সবচেয়ে বেশি মেজাজ খারাপ হয় যখন দেখি 'গলায় কিছুই নাই' একেকজন রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে কারিকুরি করতে লেগে যায়।
শ্রীকান্ত আর শ্রেয়া ছাড়া আর কারো গলায় হারানো দিনের গান শোনা হয় না আজকাল।।
ভোর হতে দেখলেই কেন জানি বুকটা একদম হালকা হয়ে যায়। ওই একটা গান আছেনা? 'তুমি নির্মল কর... ' ,ওরকম মনে হয়! ...
মনটা আদ্র, আপনি আরো আদ্র করেন দিলেন।
মন খারাপ কেন, আপু?
ভাল আছেন তো?
একটি সড়ক ধরে বহুদিন একা হেঁটে গেছি
আজো আমি একা যাই একজন সাথীতো দেখি না
ভালোবাসা যার নাম সেইপথ মনুষ্যবিহীন
মানুষ কখন ছিল? মৃত্তিকায়- ধান দূর্বাঘাসে?
চরের মাটির ভাগ একটুও তোমাকে দেব না
আমার ঘামের মূল্যে এইখানে শ্রমশক্তি প্রয়োজনহীন
দু'হাতে পাহাড় কেটে প্রাথমিক দৃষ্টান্ত দেখাব।
তোমাকে বলেছি আমি অলংকার ভালোবাসা নয়
ঘামের সুবাসে দ্যাখো আরো বেশি মৃগনাভি ঘ্রাণ
তাহলে প্রলেপ কেন? ঝেলে ফ্যালো সব প্রসাধন
ঘামের গন্ধকে বলো নিখিলের হরিৎ প্রণয়।
তীব্র সাইরেন শুনে আজো আমি একা জেগে উঠি
আগামীর স্বপ্ন চোখে সারিবদ্ধ শ্রমিকেরা যায়
তাঁতের শব্দের কাছে আমাদের ভালোবাসা আছে
একবার শব্দ শোনো, শব্দ নয়, আসল প্রণয়।
শহীদ মিনারগুলো দ্যাখো আজ বিষণ্ন মলিন
কালো কালো কাক এসে বসে থাকে স্মৃতির সভায়
একটি ধবল পাখি বিশোত্তর জীবনে দেখি নি
পাখি নেই জনপদে, তারা চায় সবুজ আশ্রয়
বনের আড়ালে গেলে নির্জনতা খুঁজে নেয়া যাবে
সব পাখি উড়ে গেছে, সব প্রেম সন্ত্রস্থ হরিণী
ব্যাঘ্র লালসার কাছে প্রতিদিন খুন হয়ে যায়
প্রতিদিন ভালোবাসা একা একা শুধুই পালায়।
-কামাল চৌধুরী।
অন্যরকম..
যাক শেষ তবে আপনার পরীক্ষা। রোজ আবোল তাবোল বকবেন।
আজ অনেকদিন পর আমি সকাল দেখেছি। দেখে টেখে এসেই আপনার এই লেখাটা পড়লাম। আর ভাবলাম, মানুষগুলো সব আলাদা হলেও সবাই কোথায় যেন একই সুতায় গাঁথা !
সব সময় সবার পক্ষে সব কথা বলা হয়ে উঠে না, সব অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা হয়ে উঠে না। আর নয়তো, হয়তো দেখা যেত- আমাদের সবার অন্তরের অন্তঃস্থলে সুখ-দুঃখ ভালো লাগা খারাপ লাগার যত অনুভূতি; সব একই রঙে আঁকা ছবি, একই সুরে গাওয়া গান।।

চমৎকার লিখেছেন বিষণ্ণ ভাই!

গানগুলো নিয়ে গেলাম!
অনেকদিন শুধু হিন্দি মুভি না, কোনো মুভিই দেখা হয় না!
রকস্টার দেখতে হবে মনে হচ্ছে!
ভাল থাকুন, আপু।
আচ্ছা, লাবনী মানে কি?
এটা কি 'লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ' থেকে এসেছে?
আবোল তাবোল বেশ মজাদার। সাথে আছি
অনেক অনেক ধন্যবাদ, আপু..
মন্তব্য করুন