আমার আপন আঁধার: গণধোলাই খাওয়ার অভিজ্ঞতাগুলো
(প্রথমেই বলে নিচ্ছি, লেখায় বর্ণিত প্রতিটি ঘটনা সত্য। আমাকে যারা ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, তাদের জন্য হয়তো ঘটনাগুলো বিশ্বাস করা কষ্টকর হবে না, কিন্তু যারা ব্যাক্তিগতভাবে চেনেন না, তাদের খানিকটা সমস্যা হতে পারে। তাই প্রথমেই পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা আভাস দেয়ার চেষ্টা করলাম। হ্যাপি রিডিং!)
ছোটবেলা থেকে আমি ভীতু প্রকৃতির। সেইসঙ্গে নিচু-আত্মবিশ্বাস আমাকে সবসময় গুটিয়ে রাখতো নিজের ভেতর। যখন ছোট ছিলাম তখন অনেকেই আমাকে 'গরু' বলে ডাকতো। সেই ডাক শুনতে শুনতে আমিও প্রায় বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম, যে, আমি একটা গরু'ই। বয়ঃসন্ধির একটা পর্যায়ে সেই ভ্রান্তবিশ্বাসের সঙ্গে নিবুর্দ্ধিতা ও আত্মম্ভরিতা মিশ্রিত হয়ে আমার 'প্রাথমিক ব্যক্তিত্ব' প্রস্ফুটিত হয়। ফলে আমি যেমন একদিকে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে একটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া শিখতে ব্যর্থ হই, তেমনি নিজেকে খুব কেউকেটা কিছু একটা মনে করে এক প্রকার অদ্ভুত আর উদ্ভট কাল্পনিক সাহস নিয়ে চলা-ফেরা শুরু করি। কতোদিন যে মনে হয়েছে- আমি আসলে একজন গুপ্তচর। যার এক ফোনকলে হেলিকপ্টার ভর্তি কালো স্যুট-প্যান্ট পরা এজেন্টের দল আকাশ থেকে নেমে এসে আশপাশের সব সমস্যা উৎপাদকদের পিটিয়ে পাট-পাট করে ফেলবে! এটা ছিল আমার নিজেকে বোধ দেয়া শেখার প্রথম দিককার দিনগুলোর কথা।
এসবের কিছুই হতো না যদি ছেলেবেলায় আমাকে সংকীর্ণতাগুলোর পাশাপাশি কেউ শক্তির দিকগুলোও দেখিয়ে দিতো। একবার মেজ-মামা তার বন্ধুদের কাছে আমার প্রশংসা করে বলেছিল, "ও ম্যাকগাইভার দেখতে পছন্দ করে, দেখে দেখে নিজের সব খেলনা সে নিজেই খুলে ফেলেছে। হয়তো বড় হয়ে পাগলা 'কিছু' একটা হবে।" সত্যি বলতে কি ওইটুকু একটা ঘটনাও আমার বেড়ে ওঠায় ইতিবাচক প্রভাব রেখে গেছে। এ কারণেই সবসময় আমি শিশুদের কর্মকাণ্ডে যতোটা সম্ভব উৎসাহ দেয়া, এবং তাদের প্রশংসার পক্ষে ওকালতি করি। যাহোক, ম্যাকগাইভার ছিল একটি মার্কিন টিভি-সিরিয়াল যেটা নব্বুইয়ের দশকের শুরুর দিকে বিটিভিতে দেখানো হতো, এবং বাংলাদেশে সিরিয়ালটা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।
লেখার বিষয়বস্তুতে ফিরে আসি। গণধোলাই খাওয়ার অভিজ্ঞতা আমাকে দুইবার পেতে হয়েছে জীবনে। একবার পল্টন মোড়ে, আর একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অনুষদে। এছাড়া একবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিনতাইকারীদের হাতে ধোলাই খেয়েছিলাম। ছিনতাইকারীদের হাতে হলেও সেখানে আমি একজন দেহব্যবসায়ীর সাথে মধ্যরাতের খোলা আকাশের নিচে 'মেক-আউট'-এর চেষ্টা করছিলাম। আমাকে নাজুক অবস্থায় পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র শুধু ছিনতাই করেই ক্ষান্ত হয় নি, সঙ্গে কিছু ফ্রি উত্তম-মাধ্যমও দিয়ে গিয়েছিল। সেটাকে সরাসরি গণধোলাইয়ের কাতারে ফেলা যায় না, কিন্তু অন্য দুইটি খাঁটি গণধোলাই, যেগুলোর বর্ণনা এই লেখায় রয়েছে।
কিছুদিন আগেই একটা লেখায় 'হাঁটুরে কিল' কথাটি উল্লেখ করেছিলাম। গণধোলাইয়ের প্রতিশব্দ হিসেবে 'হাঁটুরে কিল' শব্দযুগলকে ব্যবহার করতে দেখেছি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে, একটা কিশোর উপন্যাসে। সেখানে লেখক বলেছেন হাঁটুরে কিল খেলে নাকি শরীর শক্ত হয়। আমার শরীর যদিও হাঁটুরে কিল খেয়ে শক্ত হয় নি। যতটুকু হয়েছে, শরীরের যত্ন নেয়ার মাধ্যমে হয়েছে। তবে প্রতিটি গণধোলাই থেকে পাওয়া শিক্ষা আমাকে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। অবশ্য এতটুকুও যদি আদায় করতে না পারতাম, তাহলে সেটা বেশ ন্যাক্কারজনকই হতো বলে আমার ধারণা।
পল্টন মোড়ের ঘটনাটি আসলে আমার তৎকালীন চেনাজানা প্রায় সকলেই জানেন। আমি এবং সাবেক স্ত্রী (আমার বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়েছে প্রায় পাঁচ বছর আগে) একসাথে রিকশায় করে শহীদবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলাম। রিকশায় ওঠার পর থেকেই আমরা দু'জন একটা বিষয়ে তুমুল ঝগড়া করছিলাম। রিকশা যখন প্রেসক্লাবের সামনে যানজটে আটকে নিশ্চল হয়ে আছে, চারিদিকে আরও শত শত অচল বাহন এবং ক্ষুব্ধ জনতা; ঠিক সে সময়টিতে আমি ঝগড়ার কারণে মূলত নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। মেজাজ হারানোর কিছুক্ষণ আগে থেকেই রিকশাওয়ালাকে রিকশা ঘুরিয়ে নিতে বলছিলাম, কিন্তু যখন সুযোগ ছিল তখন রিকশাওয়ালা সেটা করেন নি। একসময় আমাদের পেছনে প্রচুর রিকশা আর অন্যান্য বাহন এসে যুক্ত হওয়ায়, সেটা আর সম্ভবও ছিল না। সেই সময় গিয়ে রিকশাওয়ালা আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, কিভাবে রিকশা ঘুরাবো? পেছনে কি অবস্থা দেখেন না?
আমিও পাল্টা জবাব দিই, আমি যখন থেকে আপনাকে বলছি, তখন তো সুযোগ ছিল ঠিকই। এরকম দুই-একটা কথা চলাচালির মধ্যেই এক পর্যায়ে রাগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে রিকশাওয়ালার নাকে আমি একটি মুষ্টিবদ্ধ হাত চালিয়ে দিই। আজ যতোবার ঘটনাটা নিয়ে ভাবছি, ততোবার আমার শুধু রিকশাওয়ালার জন্যই কষ্ট হচ্ছে; কিন্তু সেদিন কাজটা করার সময় আমার বোধশক্তির উচ্চতা আজকের পর্যায়ে ছিল না।
সেই মুহূর্তে রক্তমাখা নাক আর মুখ চেপে ধরে রিকশাওয়ালা রাস্তায় শুয়ে ভীষণ যন্ত্রণায় চিৎকার শুরু করে দিয়েছিলেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমি দেখতে পাই আশপাশ থেকে প্রচুর সংখ্যক মানুষ আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। বুঝতে পারছিলাম, এখনই একটা ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে। প্রথম যে কাজটা করেছিলাম সেটা ছিল, রিকশার হুড ফেলে সঙ্গিনীকে বলা- তুমি রিকশা থেকে নেমে দৌড়ে রাস্তার ওই পারে চলে যাও, এক্ষুনি।
সে মুহূর্তের মধ্যেই রিকশা থেকে নেমে রাস্তার অন্যপারে চলে গিয়েছিল।
যাহোক ওটাই ছিল সেদিনের একমাত্র সুখকর স্মৃতি যে, গণধোলাইয়ের আগে আগে সে নিরাপদে রাস্তার অন্যপারে সরে যেতে পেরেছিল। আমাদের দেশে একটা মেয়ের মধ্য রাস্তায় গণধোলাইয়ের মধ্যে পড়ে যাওয়া যে কতোটা বেদনাদায়ক, সেটা অনুমান করা কঠিন না। যদি সেটা আমার উপস্থিতিতে কখনও আমার কোনো পরিচিত নারীর সাথে ঘটতো, এবং আমারই কারণে- তাহলে হয়তো 'ট্রমা' কখনো আমি কাটিয়ে উঠতে পারতাম না। লোকজন আমাকে মারতে মারতে প্রথমে পল্টনের একটা ওষুধের দোকান পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে এক পুলিশ সার্জেন্ট আমাকে বেশ কিছু চড় চাপড় মেরে লোকজনদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছিলেন। মামলা দেয়ার কথা বলে শাহবাগ থানায় নিয়ে এসেছিলেন।
তারপর আমার সহকর্মী ও সহপাঠীরা খবর পেয়ে শাহবাগ থানায় এসে উক্ত সার্জেন্টের নামে প্রচুর অভিযোগ ঠুকে আমাকে থানা থেকে বের করে নিয়ে এসেছিল। এ ঘটনার জের ধরে নাকি পরে সেই সার্জেন্টকে 'ক্লোজ'-ও করা হয়েছিল। হয়তো দরকার ছিল না। কারণ তিনি যে ক'টি বাড়তি চড় চাপড় আমায় মেরেছিলেন, সেগুলো হয়তো আমাকে সম্মিলিত জনতার অনেকগুলো চড়ের আঘাত থেকে রক্ষাই করেছিল। তবে সেদিন আমার সহপাঠী ও সহকর্মীদের কাজে মতামত দেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তারা যখন পুলিশ সার্জেন্টের ওপর সব দোষ চাপিয়ে আমাকে নির্দোষ প্রমাণে ব্যস্ত ছিল, তখন আমি জীবনের প্রথম গণধোলাই খাওয়ার ঠিক পরের ঘন্টার অবসাদটুকুতে আক্রান্ত হয়ে থানার একটা চেয়ারে বসে ছিলাম। লজ্জা আর অপমান ঢাকতে নিজেকে নিরপরাধ, রিকশাওয়ালাকে অভিনয়শিল্পী, আর পুলিশ সার্জেন্টকে সবকিছুর জন্য দোষী হিসেবে দাঁড় করিয়ে নিজের ভেতর একটা গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলাম। চেষ্টাটা কাজ করছিল না খুব একটা। সেই রাতে বাড়ি ফিরে পরিবারের সদস্যদেরকে ওরকম কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টাও করেছিলাম। সম্ভবত আমার 'অপদস্থ' হওয়া পরিস্থিতির কথা ভেবেই পরিবারের সদস্যরা আমার দেয়া ব্যাখ্যা মেনে নিয়েছিলেন, কিংবা আমাকে অন্তত অন্য কিছু ভাবতে দেন নি। দিনশেষে ওইটুকুকেই প্রাপ্তি হিসেবে ধরে নিয়ে সেই রাতে আমি ঘুমুতে গিয়েছিলাম।
দ্বিতীয় ঘটনার সাথে জড়িত আমার এক সময়ের অন্যতম প্রিয় একজন বন্ধু। ২১ বছর বয়সের মতো একটা দূর্দান্ত বছর কাটানোর অভিজ্ঞতা আমার আছে ছেলেটার সাথে। আরও অনেকদিনই ছিল আমাদের বন্ধুত্ব। আমার দিক থেকে বন্ধুত্বটা ছিল ভীষণ 'ডেডিকেটেড'। সেই ছেলেটার সাথে পরিচয়ের সময় বিশেষ কিছু মনে হয় নি, কিন্তু পরিচয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই জানতে পেরেছিলাম ছেলেটার 'মা' নেই। এই একটা কারণেই আমার মনে ছেলেটার জন্য একটা বিশেষ জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
তখন আমার সাবেক প্রেমিকা হচ্ছে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, আর বন্ধুটি হচ্ছে দ্বিতীয় প্রিয়তম মানুষ। দিন আর রাত কাটে মোটামুটি এদেরকে নিয়েই, এবং এদের বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে। তবে আমার বাঁধনহারা জীবনাচরণে বন্ধুটি খানিকটা বিরক্ত ছিল। যেটা আমি বুঝতামও কিন্তু পাত্তা দিতাম না। আমি ভাবতাম, ও আমার বেস্ট-ফ্রেন্ড, সুতরাং ওর সাথে অনেক কিছু করারই অধিকার আমার আছে। যদিও সে আমাকে বেস্ট-ফ্রেন্ড হিসেবে কখনো ভাবে নি, এবং সেটা স্পষ্টই ছিল কিন্তু সেসব কোনকিছুই আমাকে কথায় ও কাজে তাকে বেস্ট-ফ্রেন্ড হিসেবে দাবি করা থেকে বিরত রাখতে পারে নি।
এবারের ধোলাইটা হয়েছিল রাতের অন্ধকারে। সেদিন সন্ধ্যা থেকে ওই বন্ধু এবং তারই আরেক বন্ধু, আর আমি- তিনজনে কেরু কোম্পানির ভদকা আর মাংসের চাট সহযোগে মগবাজারের পিয়াসী 'বার এন্ড রেস্টুরেন্টে' বসে ফূর্তি উপভোগ করছিলাম। আমার বন্ধু চাইছিল তার সেই বন্ধুকে আইবিএ অনুষদের গ্যারেজ এবং সেখানে আমাদের উভয়ের অবাধ চলাচলের জাঁক দেখাতে। সেই উদ্দেশ্যে পিয়াসী থেকে বের হয়ে রাত প্রায় দশটার দিকে আমরা তিনজনে গিয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অনুষদের গ্যারেজে। সেখানে পৌঁছে আমরা দেখতে পেলাম আইবিএ অনুষদের লনে একটি গাড়ি পার্ক করা আছে। দেখামাত্র আমাদের মনে হয়েছিল- গাড়িটির ছাদে বসে বেসুরো গলায় গান ধরলে কেমন হয়?
আমাদের তিনজনের ভারে মুহূর্তের মধ্যেই গাড়ির ছাদে 'ডেন্ট' দেখা দেয়। তবে আমাদের সেদিকে নজর ছিল সামান্যই। নজর ছিল না এমনকি গাড়ির মালিকের হা-রে-রে-রে চিৎকারে তেড়ে আসার দিকেও। মালিক ছিল আইবিএ অনুষদেরই একজন শিক্ষক। তার সঙ্গে ছিল আরও দু'জন সহকর্মী। তাদের তেড়ে আসা দেখে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না যে, প্রকাণ্ড একটা ঝামেলা বাঁধতে যাচ্ছে অচিরেই। এরমধ্যেও আমি আমার বন্ধুকে নির্দেশ দিয়েছিলাম তার বন্ধুকে নিয়ে পালিয়ে যেতে। বলেছিলাম, আমি একদিকে গাড়ির মালিক ও তার বন্ধুদেরকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি, তুই অন্যদিক দিয়ে তোর বন্ধুকে নিয়ে পালা।
মিনিটের ভগ্নাংশে এলাকা থেকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল তারা।
সে সময় আমি ওই শিক্ষকদের সাথে বাকবিতন্ডা চালিয়ে যাচ্ছিলাম শরীরের শেষ বোধ ও শক্তিটুকু দিয়ে, যাতে তারা নির্বিঘ্নে পালাতে পারে। শিক্ষক হলেও তারা যে জীবনের কোনো এক পর্যায়ে যেকোন ছাত্রসংগঠনের লাঠিয়াল কিংবা তাদের ইয়ার-দোস্ত ছিল, সেটা তাদের ভাষার ব্যবহারে বোঝা কঠিন ছিল না। তারা দ্রুত ফোন করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের করিতকর্মা লাঠিয়ালদের ডেকে এনেছিল। যারা দলবেঁধে আমাকে মেরে আইবিএ-র লনে শুইয়ে ফেলেছিল। তারপর শাহবাগ থানার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল।
আমার পরিচিত ক্যাম্পাসের ছেলেরাও খবর পেয়ে চলে এসেছিল। তারা চেষ্টা-চরিত্র করে আমার কষ্ট যতটুকু কমানো যায়, কমিয়েছিল। তবে আমি বুঝি যে আমি নিজেই নিজের পরিস্থিতি এতোটা খারাপ করে তুলেছিলাম যে, তাদেরও বেশি কিছু করার ছিল না। এই সুযোগে পরের দিন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকাটায় আমার নামও উঠে গিয়েছিল।
আমি খুশি যে ঘটনাগুলো আমার সাথে ঘটেছিল। নাহলে ছেলেবেলায় বিগড়ে যাওয়া মাথাটাকে কখনোই সঠিক পথের দিকে ঘুরিয়ে আনা সম্ভব হতো না। জীবনের প্রতি আমি শতভাগ কৃতজ্ঞও এই কারণে।
পাশাপাশি আজ আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই, সেই প্রতিটি মানুষের কাছে যারা ব্যস্ত জীবনের পথে একটা সেকেন্ড ব্যয় করে আমার পিঠে, মাথায়, পেটে, বুকে লাথি, চড় আর কিলগুলো দিয়ে গিয়েছিল।
আমি তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ যারা কথা আর কাজের মাধ্যমে আমাকে জীবনের দুঃসহতম দিকগুলো দেখিয়েছিল চোখে আঙুল দিয়ে। আমি কৃতজ্ঞ সেই প্রতিটি মানুষের কাছে যারা তাদের জীবন থেকে আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল এককালে।
কেননা তারা সবাই মিলে যদি আমাকে অমন বিচ্ছিরি আর অপমানজনক পরিস্থিতিগুলোর ভেতর দিয়ে যেতে বাধ্য না করতো, তাহলে আজ আমি জীবনটাকে ভালবাসার কোনো শক্তিই পেতাম না, সত্যি বলছি।
একই সাথে নিজের জন্য কোনো ভাললাগাও আজ আমার ভেতর কাজ করতো না, এবং যে পরিবর্তন, সংযোজন ও বিয়োজনের স্বপ্নগুলো আমি আমার পরিবার ও সমাজের জন্য দেখি, সেগুলো দেখার কোনো সাহসও কোনখান থেকে পেতাম না।
আপনাদের সবাইকে আমি তাই সত্যিকার অর্থেই ধন্যবাদ জানাই।
---
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ছেলেবেলায় পরিচিত এক ছেলের সাইকেল চুরি করে বিক্রি করে দেয়ার কারণে একবার বগুড়ার এক ক্লিনিকে আমাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। যেখান থেকে জরিমানা দিয়ে বাবা আমাকে ছাড়িয়ে আনেন। ঘটনাটা পরিচিতদের ভেতরের ঘটনা বলে সেটিকে ঠিক গণধোলাইয়ের কাতারে ফেলে এই লেখায় সংযোজিত করা গেল না।
দুর্দান্ত লেখা ! প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন