দিনলিপিতে দু'হাজার বাইশ - ৬
সুযোগ থাকলে প্রতিদিন একবার করে লিখতে বসতে সমস্যা কি? সপ্তাহে দুইদিন এবার সুযোগ পাইলাম। এমন সপ্তাহান্ত বারে বারে আসুক।
পুরোনো দিনের বাংলাদেশি একটা ভাল ল্যাপটপ চালাই বিছানায় শুয়ে শুয়ে। বিছানাটা যে ঘরে, জাজিমটা তার অন্য ঘরে। সেটার ওপর শুয়ে শুয়েই এইসব ছাইপাশ লেখা। সেই কবে থেকে লিখছি! ১২ বছর চার সপ্তাহ। অবশ্য পুরোটা সময় আজকের মতো ছিল না। ব্লগ লিখতে শুরু করার আগে আমার আরও একটি লেখার অভ্যাস ছিল। সেটা হচ্ছে চিঠি লিখা। এবং যথারীতি তারও আগে ডায়েরি লিখা। ডায়েরি গোপন রাখাটা একটা সমস্যাই ছিল আজকের এই প্রাইভেসি কনসেন্টের যুগের আগে। সে কারণে ডায়রিভিত্তিক তেমন উল্লেখযোগ্য কোন স্মৃতি মনে না থাকলেও, চিঠির কথা মনে আছে। চিঠি লিখেছিলাম অনেক আমি আমার প্রথম ভাললাগার মানুষকে। এক বছরের সিনিয়র ছিলেন। আমাদের ভেতর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি। কারণ উনার সঙ্গে পরিচয়ের দুই-তিন বছরের মাথায়ই আমরা পুরো পরিবার দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গে হিজরত করি। তখন আমি পড়ছিলাম ক্লাস এইটে।
সেসব চিঠিতে থাকতো দৈনন্দিন জীবনের খবর, নতুন নতুন উপলব্ধি আর অনুভূতির বর্ণনা এবং আরও অনেক কিছু। চিঠিগুলো সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে জীবন থেকে। তবে স্মৃতিটুকু রয়ে গেছে অমলিন হয়ে। একবার চিঠির অপেক্ষা এত অসহনীয় হয়ে উঠেছিল যে এক রাতের ভেতর উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম বন্ধু-বান্ধবসমেত। সেই বয়সে অমন বন্ধু বোধহয় আমাদের সবারই জীবনে খুঁজলে পাওয়া সম্ভব। যারা বন্ধুদের সব অসম্ভবকে সত্য করার পেছনে শুধুই কারিগর হিসেবে থেকে যায় আজীবন।
সেই সকালে দেখা হয়েছিল আমাদের অদ্ভুত এক আনন্দকে সঙ্গী করে। সাজানো ছিমছাম শহরটায় রয়েছে শান্ত নিরিবিলি একটা গীর্জা। আর সঙ্গে লাগোয়া পাহাড়। আমরা সারাটা দিন রিকশা আর সিএনজিতে ঘুরে, ফাস্ট ফুডের দোকানে বার্গার খেয়ে, পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের জীবনের অনেক কথাই ভাগাভাগি করে নিয়েছিলাম একে অপরের সঙ্গে সেদিন। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে মহাজগতের নিয়ম মেনেই আমরা সরে গিয়েছিলাম একে অপরের কাছ থেকে। দৈনন্দিন জীবন তার ওপর পরিয়ে দিয়েছিল স্বাভাবিকতার পরত। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল একটা স্মৃতির গোলক। চলে গেল মস্তিষ্কের গোপন কোন প্রকোষ্ঠে। সেখানটা ভরা আরও একই রকম অন্যান্য স্মৃতির গোলকে।
২০২২ সালে এসে মনে হয় স্মৃতির গোলকগুলো ঠিক কোথায় কত দূরে হারিয়ে গেছে আসলে? কোন জিনিসটায় আমার মনোযোগ রয়েছে? কোনকিছুতে কি আদৌ আছে? এমন দারুণ সময়গুলোতে অন্তত নুসরাত ফতেহ আলী খান ছিলেন বলে খানিকটা বাঁচোয়া। শুয়ে শুয়ে লিখতে লিখতে ব্যাকগ্রাউন্ডে উনার কাওয়ালি! আহা আর কি চাই! চাইতে পারি তো কতকিছুই। তাও আসলে কিছুই চাই না সামান্য শান্তি ছাড়া। সেটা দিয়ে সামনের ধাপটা শুধু পার হতে চাই।
বাংলাদেশি কই মাছ দেখতে পেয়ে অনেক দিন ধরেই লোভে সকসক করছিল নোলাখানি। ভাল খানাপিনার সত্যিকার কদর আসলে আমি শুধু দেশের শেষ দিকের চার বা পাঁচ বছরই করেছি, তার আগে করতাম না তেমন একটা। আমার পেটুক হয়ে ওঠার বয়স খুব বেশি না।
কই মাছটা যথাযথ প্রক্রিয়ায় রান্না হয়ে যাওয়ায়, বহুদিন পর স্বাভাবিক দেশি স্বাদের কই মাছ খাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কই মাছরা খুব সুস্বাদু। আরেকটু কম সুস্বাদু হলে হয়তো তাদের জন্য অপেক্ষাকৃত ভাল হতো। এভাবে ঝাকে ঝাকে মানুষ তাদের স্বাদের প্রেমে পড়তো না।
অবশ্য শুধু কই মাছ কেন, আর সব মাছও তো অদ্ভুত! ইলিশ পাওয়া যায় তিন হাজার টাকা কেজি দরে। তবে আকারভেদে ভিন্ন দামও আছে। মাছগুলো বরফে শক্ত করে প্যাকেট করা থাকে। দোকানের মেশিন দিয়ে কেটে বাসায় এনে শুধু আঁশ ছড়ানো। তাহলেই ওরা প্রস্তুত। নিজের শরীরে আচ্ছামতো গুড়া হলুদ, মরিচ আর লবণ মাখিয়ে তেলে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। মাছরা কি ভীষণ বোকা! কুকুর, বেড়ালদেরও একই অবস্থা। বোকার হদ্দ একেকটা। সহজ সরল জীবন। তেমন কমপ্লেক্স কোনকিছু বোঝেই না।
আমরা মানুষরা কি? সবকিছু বুঝে শুনে আমাদের এমন অবস্থা যে এখন আর বোঝার কোনকিছু বাকি নেই আমাদের। জীবনের সহজ সরল পথটাই হারিয়ে ফেলেছি আমরা। এবং সবকিছু শুধুই সহজ পথে পাওয়ার চিন্তায় লিপ্ত রয়েছি। এ যেন কাজে যোগ দিয়েই মাইনের আবদার। আগে তো কাজ করতে হবে একমাস।
শীত এগিয়ে আসছে। লম্বা অন্ধকার শীত। তার আগমনী বার্তা টের পাওয়া যায় এখনই। হিমশীতল ঠান্ডা বাতাস হু হু করে বইছে সারাদিন। দূরের পাহাড়ের চূড়ায় বরফ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পূর্বদিকের পাহাড়ে বরফ দেখে বলা যায় সামনে কটা দিন কেমন কাটবে। সেসব দিকে এবার জাঁকিয়ে শীত নেমেছে। প্রতিদিন তুষারপাতের খবর আসছে সেখান থেকে।
আমার দরকার প্রচুর জ্বালানি কাঠ। এককালে আইবিএ গ্যারেজের ভেতর আগুনে দেয়ার জন্য গাছের শুকনা ডাল খুঁজতে খুঁজতে মধুর কেন্টিনের পেছন দিকে পর্যন্ত চলে যেতাম। নিজের বাড়িই মনে হতো সবকিছুকে। সেরকম আত্মার টান আজকাল প্রায় কোনকিছুর সঙ্গেই টের পাই না। কেমন অদ্ভুত লাগে এই জীবনটা।
---
গ্রোয়িং ওল্ডের সাথে সাথে লাগোয়া গ্রোয়িং এপার্ট ব্যাপারটা খেত্রবিশেষে খুবই হতাশাজনক, এটার কারনে নিজের উপরও ভরসা কমে যায় বলে আমার মনে হয়।
ল্যাপটপ কি দোয়েল নাকি?
একটু আগে ডিইউ'র দিকে গেছিলাম, দশটায় সারা দুনিয়া অন্ধকার কিন্তু মানুষজন দেখলাম ভালোই। আজব লাগতেছিল পুরা এরিয়া।
মন্তব্য করুন