বিপ্লবীর প্রয়াণ
'ছেড়ে দে রেশমি চুড়ি, বঙ্গ নারী' গান ছেড়ে আমরা কণ্ঠে ধরেছি 'কিনে দে রেশমি চুড়ি, নইলে যাবো বাপের বাড়ি'। 'মায়ের দেয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই, দীন দুখিনী মা যে তোদের এর বেশি আর সাধ্য নাই' ছেড়ে আমরা এখন পার্টিসং গাই- 'তোমার পাঞ্জাবিটা জোশ'
আমরা অনেক আধুনিক হয়েছি। সভ্য হয়েছি। আমাদের কোনো অপ্রাপ্তি নেই।
একসময় আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য বিপ্লবের প্রয়োজন ছিলো। বিপ্লবীরা নিজেদের আরাম আয়েশের জীবন ত্যাগ করে জীবনের আধেকটা সময় জেল খেটে পালিয়ে থেকে থেকে আমাদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করেছেন। সাম্যবাদের জন্য জীবন পণ করেছেন।
এখন আমাদের সব হয়ে গেছে। আমরা এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে পারছি, মধ্যবিত্ত জীবনও এখন অনেক পশ। গরীব গুর্বারা মাঝে মধ্যে হাঙ্গামা করে, কিন্তু বিপ্লব দীর্ঘজীবী হবে না, তা আমরা জেনে গেছি। আমরা জেনে গেছি আমরা আর কোনো লড়াইয়ে নামবো না, আমাদের হয়ে লড়াই করবেও না কেউ। আমাদের অনন্ত জীবন।
চিয়ার্স।
একে একে আমাদের সবগুলো বোকা বিপ্লবী মরে যাচ্ছেন। শেষ বুড়োবয়সেও যারা অনেক আগডুম বাগডুম কথা বলতেন। দূর্বীসহ শেষ জীবনে এসেও যারা সুবিধার লোভ ধারণ করতে পারে না, তাদের আর বেঁচে থেকে লাভ কী? বিপ্লবকে বিদায় জানানো হয়েছে অনেক আগেই, এখন বিপ্লবীগুলোকে বিদায় জানাই।
আজ গেলেন বিপ্লবী বরুণ রায়। সশ্রদ্ধ সালাম তাঁকে।
..................................................................
(বরুণ রায়)
জন্ম ১৯২২ সালের ১০ নভেম্বর, সুনামগঞ্জের বেহেলী গ্রামে, জমিদার পরিবারে। পিতা করুণা সিন্ধু রায় নিজে ছিলেন কৃষক বন্ধু। 'কৃষক বন্ধু করুণা সিন্ধু পাড় হয়ে যায় মহাসিন্ধু' এই স্লোগান শুনতে শুনতেই বড় হয়েছেন বরুণ রায়। বরুণ রায়ের পৈত্রিক নাম প্রসূণ কান্তি রায়।
বাবার প্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই বিপ্লবে জড়িয়ে যান। ১৯৪২ সালে ২০ বছর বয়সে পার্টির পুর্ণাঙ্গ সদস্য হন। সেবছর থেকেই শুরু হয় জেলজীবন। ভাষা আন্দোলনের প্রথম দিকের কর্মী। বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা করার দাবী তোলায় ১৯৪৮ সালেই গ্রেফতার হন, মুক্তি পান ৫৩ সালে। মুক্তি বলা কঠিন, অন্তরীণ ছিলেন। একটি পৃথক নির্বাচনী বিধিমালার আওতায় সুনামগনঞ্জের সাধারণ হিন্দু নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী হলেও তাকে কারাবন্দী করা হয়। জেলে থেকেই জেতেন বিপুল ভোটে। তারপর আবার ১৯৫৪ সালে। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর কারাভোগ করেন। যতটুকু জীবন জেলের বাইরে ছিলেন, তার পুরোটাই আত্মগোপনে। ১৯৬৫ সালে আয়ূব খাঁ সরকার তার উপর হুলিয়া জারী করে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আত্মগোপন থেকেই সুরঞ্জিত সেনের পক্ষে প্রচারণা চালান। ১৯৭১ সালে ভারতে চলে যান ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে কাজ করতে থাকেন সক্রিয়ভাবে। '৮৬র নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। '৮৭ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের জন্য এরশাদ আবার জেলের ভাত খাওয়ায়। জীবনের ১৪ বছর তিনি জেলেই বন্দী ছিলেন। আর বাকী সিংহভাগ সময় ছিলেন আত্মগোপনে।
১৯৭৫ সালে বরুণ রায় ময়মনসিংহ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদিকা শীলা রায়কে বিয়ে করেন। তার এক মাত্র ছেলে সাগর রায় বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী।
আজ ৮ ডিসেম্বর সকালে সুনামগঞ্জে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন।<!--Session data-->
একে একে আমাদের সবগুলো বোকা বিপ্লবী মরে যাচ্ছেন। শেষ বুড়োবয়সেও যারা অনেক আগডুম বাগডুম কথা বলতেন। দূর্বীসহ শেষ জীবনে এসেও যারা সুবিধার লোভ ধারণ করতে পারে না, তাদের আর বেঁচে থেকে লাভ কী? বিপ্লবকে বিদায় জানানো হয়েছে অনেক আগেই, এখন বিপ্লবীগুলোকে বিদায় জানাই।
সশ্রদ্ধ সালাম তাঁকে। আমাদেরতো আর কিছুই করার নেই।
শ্রদ্ধা
অাজকে সকালে পত্রিকায় দেখলাম।শ্রদ্ধা জানাই ।
আসল মানুষ গুলো সব চলে যাচ্ছো...
অনেক অনেক শ্রদ্ধা বিপ্লবী বরুণ রায়এর জন্য
আমি শ্রদ্ধা জানাতে পারছি না কারন আমার সেই যোগ্যতাও নাই।
বিপ্লব তো দূরের কথা, সামান্য ক্যাচাল শুনলেই দরজা জানালা বন্ধ করে থাকি। আর সবার মত গাড়ী বাড়ী - এইগুলা নিয়েই ব্যাস্ত। সুতরাং উনাকে শ্রদ্ধা জানালে সেই "শ্রদ্ধার" অশ্রদ্ধা হবে।
একদম একমত ভাইয়া আপনার সাথে।
শ্রদ্ধা...
বিপ্লবী বরুণ রায়'কে স্যাল্যুট
তিনি পরম শান্তি লাভ করুন।
এখন আমাদের সব হয়ে গেছে। আমরা এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে পারছি, মধ্যবিত্ত জীবনও এখন অনেক পশ। গরীব গুর্বারা মাঝে মধ্যে হাঙ্গামা করে, কিন্তু বিপ্লব দীর্ঘজীবী হবে না, তা আমরা জেনে গেছি। আমরা জেনে গেছি আমরা আর কোনো লড়াইয়ে নামবো না, আমাদের হয়ে লড়াই করবেও না কেউ। আমাদের অনন্ত জীবন।
কথা এইটাই বস
ভুল সময়ের ভুল জায়গার বিপ্লবী। সশ্রদ্ধ সালাম।
আরে আরে.. কি অদ্ভুত, শুরু করলেন কি নিয়ে, শেষ হইল কি দিয়া!!
বিপ্লবী'র সাথে পরিচয় ছিল না, পরিচয় করিয়ে দিলেন, আরেকটা ইতিহাসের সাথে পরিচয় হল।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন