আমার উঠোনে তোমার এক টুকরো রোদ
আজ অনেক দিন পর ক্যাম্পাস গেলাম। আশে পাশে যেখানে তাকাই সব জুনিয়র। নাই কোন পরিচিত মুখ। নিজেকে বুড়ো ভাম বলে মনে হচ্ছিলো। ছোট থেকে একদম হঠাত করে বুড়ো হয়ে গেলাম। মাঝে আর কিছুইতো নাই দেখা যায়। স্ট্রাগল!! কবে শেষ হবে আমার!!
মন- মেজাজ ভালো থাকেনা। এটা আর নতুন করে বলার কিছু নাই। আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির ছেলে দুইটাকে শেষ পর্যন্ত আর পাওয়াই গেলনা। ছোট বোনটার মন খারাপ দেখতে আর ভালো লাগেনা। আমার এই বোনটার সাথে আমি সবচেয়ে বেশী ঝগড়া করতাম। অথচ বড় হওয়ার পর দেখা গেল আমরা দুইজন বেস্টফ্রেন্ড হয়ে গেছি। সে তার সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করে আর আমার মতো ইমোশনাল ফুলকে সারাক্ষন ঝাড়ির উপর রাখে। ওর বয়সী পোলাপানগুলারে দেখি খুব ন্যাকামী করে কিন্তু ও সবসময় খুব ম্যাচিওরড আচরণ করে। আর এই জিনিসটাই আমার ভাল লাগে। আরেকটা পাগলা আছে আমার ফ্যামিলিতে। আমার ছোট খালাতো ভাই। টিনএজ বয়স পার করতেসে আর সারাক্ষন ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ে এত অস্থির থাকে যে দেখলে হাসি পায়। সারাদিন তিন থেকে চারবার আমাকে ফোন করবে এবং ছোট খাটো বিষয় এমন ভাবে শেয়ার করবে যে এটা খুব বড় ঘটনা, তাই আমার কাছে সমাধান চায়। আমার সাজেশান নাকি তার খুব কাজে দেয়। ওদের কাছে আমি খুব নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। ও প্রতিবার আমার সাথে বিভিন্ন ব্যাপারে কথা বলবে, আমি কোন একটা বুদ্ধি বাতলে দিব, শেষে বলবে- “তুমি না থাকলে কি হতো আমার”? আমি জানি, আমি না থাকলে ওদের কারো কিছু হবেনা। আমি থাকলে মনে হবে আমি ছাড়া চলবেনা, আবার না থাকলে কিন্তু ঠিকই চলে যাবে। পৃথিবীতে কারো জন্য কিছু থেমে থাকেনা।
সাব্বিরের বানানো গার্লফ্রেন্ডকে ডেডিকেট করা ভিডিওটা দেখলে হাত- পা ঠান্ডা হয়ে আসে। সবচেয়ে বেশী খারাপ লাগে শেষে লেখা কথা তিনটা পড়ে। ভিডিওটা দেখে প্রথমেই যেটা মনে হয়েছে, ভাগ্যিস, কেউ এরকমভাবে আমাকে ভালবাসেনা। এত ভালবেসে কেউ যদি এভাবে চলে যায় সেই মানুষকে হারানোর কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু অনেক শ্রেয়। আল্লাহ, মেয়েটার উপর রহম করুন। আরেকটা জিনিস মনে হল, কখনো কি এমন কিছু করেছি যার কারনে মৃত্যুর পর আমার জন্য চেনা অচেনা সবাই কাঁদবে। বেশী কিছুর দরকার নাই। ভাল একটা মানুষ হিসেবেও যদি নিজেকে প্রমান করতে পারি সেটাই বা কম কী। আমি খুব সচেতনভাবেই সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। এমন কিছু বলিনা যেটা আমি কারো সামনে স্বীকার করতে পারবোনা বা এমন কিছু করিনা যার উত্তর আমি দিতে পারবোনা। মানুষ কি শুধু তার বয়স বা সম্পর্কের কারনে সম্মান পায়? মানুষ সম্মান পায় তার কথায়, কাজে, আচরণে। আমি বিশ্বাস করি, এমন কোন কাজ বা কথা কখনোই করা বা বলা উচিত না যা অস্বীকার করার জন্য পরে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। তাহলে অন্তত নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকা যায়।
আমার খুব পরিচিত একজনের কিছুদিন আগে ডিভোর্স হল। ডিভোর্সের দিন মেয়েটার বোন আর এক বান্ধবী মিলে তার শ্বশুর বাড়িতে গেলো তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র আনতে। শ্বশুর বাড়িতে বোন আর বান্ধবী যাওয়া মাত্রই মেয়ের শাশুড়ী তাদেরকে বলে, আমার ছেলের সোনার আংটি আর চেইন আছে তোমার বোনের কাছে। আগে সেগুলো দাও পরে জিনিস নাও। কথাটা শুনে বোন খুব লজ্জা পেয়ে দ্রুত আংটি আর চেইন দিয়ে দিল। ওরা ওই দুটো জিনিস নিয়েই গেছিল ফেরত দেবার জন্য। চেইনটা নাকি বিয়েতে মেয়েটার নানু তার নাতজামাইকে দিয়েছিল। কিন্তু যাওয়ামাত্রই জিনিস দুটোর জন্য এভাবে চাওয়ার কারনে মেয়েটার বোন বান্ধবীর সামনে অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। পরে বাসায় এসে ছোট বোনটা এই ঘটনার কারনে কেঁদেছিল আর মেয়েটার বান্ধবীও এই ইস্যুটা নিয়ে মেয়েটাকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি। বলে, ছেলের ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে সেটা নিয়ে কোন চিন্তা নেই উনার চিন্তা ছেলের আংটি আর চেইন ঠিকমতো তুই পাঠিয়েছিস কিনা সেটা নিয়ে। মেয়েটা সব ঘটনা শুনে বান্ধবীটার কাছে খুব লজ্জা পেল। মানুষের মনের এতসব সংকীর্ণতা কবে দূর হবে কে জানে!
বাংলাদেশের বাবা মায়েরা মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের বেশী আদর করেন পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারনে। কিন্তু আমার মনে হয় উলটো হওয়া উচিত। মেয়েগুলাকে বেশী আদর করা উচিত কারন কেউতো জানেনা এই মেয়েটা বিয়ের পর তার স্বামীর ভালবাসা পাবে কিনা। এমনও তো হতে পারে যে মেয়েটা খুশী হয়ে স্বামীর বাড়িতে গেল আর স্বামী তাকে কথায় কথায় ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইলো। সেই অবস্থায় কোথায় যেয়ে দাঁড়াবে এই মেয়েটা। আমাদের দেশে এখনো স্ত্রীর গায়ে হাত তোলাটা কোন বিষয়ের মধ্যেই পড়েনা। সো কলড শিক্ষিত সভ্য মানুষদের কাছেও এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যপার। স্ত্রীকে পিটানো ঠিক যতটা স্বাভাবিক, স্ত্রীর পরিবার যদি সেটার প্রতিবাদ করে তবে সেটাকে ঠিক ততোটা অস্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। আমরা মনে করি, অন্যায় করেছে বলেই তো আমি আমার স্ত্রীকে পিটিয়েছি কিন্তু তার পরিবারের কিভাবে সাহস হয় সেটা নিয়ে আমাকে বা আমার পরিবারকে কথা শোনানোর! আমরা স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের কষ্ট, ক্ষোভ, খারাপ লাগাটাকে তাদের ঔদ্ধত আচরণ বলে মনে করি। আমাদের মন সেটা মেনে নিতে প্রস্তুত থাকেনা। নিজেরা যত বড় অন্যায়ই করিনা কেন। আমরা তখন ভুলে যাই যে, আমার পরিবারের মেয়েটারও তো একদিন এমন কিছু ঘটতে পারে।
আমি একটা বাড়ি বানাবো। যেখানে আমি আর আমার ছোট্ট বিড়াল উচ্ছাস থাকবো। গাছে ঘেরা থাকবে আমার সেই বাড়িটা। গাছের আড়ালে আমাকে আর উচ্ছাসকে খুঁজে পেতে কষ্ট হবে। উচ্ছাসকে বিয়ে দিয়ে আরেকটা সুন্দর মেয়ে বিড়াল আনবো। ওরা সুখে সংসার করবে আর আমি ওদের সাথে সময় কাটাবো। আমার সেই বাড়িটা সবার জন্য খোলা থাকবে। কাউকে আমরা আমাদের সেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলবোনা। সবাই যে যার নিজের মত করে থাকবে। সেই বাড়িটাতে থাকবে শুধু শান্তি আর শান্তি!
একই ধরনের চিন্তা যাদের মাথায় ঘুরে সেই সমমনা মানুষদের লেখা পড়তে খুব ভালো লাগে। এই লেখাটারে খুব ভালো পাইলাম, উচ্ছাস কে নিয়ে থাকার ও ঘরের প্ল্যান বাদে সব চিন্তাই কিভাবে জানি মিলে গেল!
সেম হিয়ার!
উচ্ছাসের গল্প করবো একদিন।
আমি একদমই লিখতে পারিনা। আমার লেখা নিজের কাছেই বস্তাপচা মনে হয়।
সাড়া পৃথিবীটাই এমন হলে কেমন হতো!!!
খুব ভালো হতো ভাইয়া
মন খারাপ নিয়েই হয়ত জীবন। কি আর করা! তবু আশাগুলা পূরণ হোক।
আপনিও ভালো থাইকেন আপু।
শেষ প্যারাটা খুব ভাল লাগলো। তোমার ঐ বাড়িতে আমি বেড়াতে আসবো। তুমি "লাইফ ইন আ মেটরো" মুভিটা দেখবে। জীবন মানেই যুদধ। হাল ছেড়ে দেয়ার কিছু নেই। যুদধ করে টিকে থাকা হলো কথা। পেইন খাবে আর পেইন দিবে
"মেট্রো" দেখেছি আপু।
এত সব চিন্তা ভাবনা নিয়ে বেঁচে থাকাটা সত্যিই কঠিন । তবু ত বেঁচে থাকতে হয় !
হুম সেটাই।
মন্তব্য করুন