পূবাকাশে সামান্য রক্তিম রেখা ফুটে উঠেছে। সূর্যটা উঠি উঠি করছে। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে অসংখ্য কাক কা কা করেই চলেছে। বারান্দায় রাখা খাঁচার ভিতরে বন্দী টিয়া পাখিটা আড়মোড়া ভেঙ্গে নিল। তার সঙ্গীর ঘুম এখনো ভাঙ্গেনি।

“আরে ওঠো ওঠো। ভোর যে হয়ে এল।”

“তোমার আমার কি এমন কাজ আছে যে আমরা সকাল সকাল না উঠলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে?”

“তবুও কেমন জানি অপরাধ বোধ হয়।”

“যাদের অপরাধ বোধ হওয়া দরকার তাদের তো হয়না। তোমার হয়ে লাভটা কি?”

“দেশের যা অবস্থা তাতে কি আর শান্তিতে বসে থাকা যায়?”

“যারা দেশের স্টিয়ারিং হুইল ধরে আছে তারা তো দিব্যি নরম গদির বিছানায় লেপ গায়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। তোমার কেন দেশ নিয়ে এতো মাথা ব্যথা বুঝিনা বাপু।”

“আহা দেশের প্রতি একটা দায়িত্ব আছে তো। এই মাটিতে আমাদের জন্ম, তার ঋণ কি মরেও শোধ করা যাবে!”

“তা ঋণ শোধ করবে কি করে শুনি? আমাদের হাত পা তো বাঁধা। আমরা খাঁচায় বন্দী দুটি প্রাণী। সারাদিনে তিন বেলা খাওয়া আর পানি দিয়ে যায় আমাদের। তাতে পেটের চাহিদা মেটে, মনের তৃষ্ণা কি ফুরায়? কতবার ইচ্ছে করে এই শিকল ভেঙ্গে দেই, প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেই, খোলা আকাশে পাখা মেলে মেঘের ডানায় ভাসি। খুব ইচ্ছে করে জানো, খুব ইচ্ছে করে।”

“ইচ্ছে তো আমারও করে স্বাধীন জীবন ফিরে পেতে। ছোট্ট এ খাঁচার জীবন কার ভাল লাগে। এই কাকগুলোকেই দেখো, নিজের ইচ্ছায় ঘুরে বেড়াতে পারে। কেউ ওদের খাঁচায় আটকে রাখেনা। নীল ওই আকাশটা বারেবারে হাতছানি দেয়। সকাল থেকে রাত হয় আবার একটা নতুন দিনের শুরু। তবু আকাশ পাল্টায় না আর পাল্টায় না আমাদের ভাগ্য।”

“আমরা এতটাই অসহায় যে নিজেদের মুক্ত করবার ক্ষমতাও আমাদের নেই।”

“যাদের সে ক্ষমতা আছে তারা বোঝে না, তারাও যে আমাদের মতই বন্দী। হরতাল, অবরোধ আর রাজনীতির নোংরা স্বীকার। তারা কেউ পথে বের হতে পারেনা, অফিস আদালত, স্কুল কলেজ, দোকানপাট-প্রাণের ভয়ে সবই বন্ধ করে রেখেছে। হায়রে অসহায় মানুষ!”

“আচ্ছা এই দেশের ষোল কোটি মানুষগুলোর কি আমাদের মত উড়তে ইচ্ছে করে? নিরাপদ আশ্রয়ে কি তাদেরও বাঁচতে ইচ্ছা করে? সকল বাঁধন ভেঙ্গে দিতে ইচ্ছে করে? হরতাল আর অবরোধের দেয়াল পেড়িয়ে স্বাভাবিক একটা জীবন ফিরে পেতে ইচ্ছে করে? বড় জানতে ইচ্ছে করে।”

শেয়ার করুনঃ

 |   |   |