ইউজার লগইন

সেনাবাহিনী কি কোন রাজনৈতিক দলের অংগ-সংগঠন?

গত কয়েকদিন ধরে আমাদের স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে ‘আমার সেনাবাহিনী আমার গর্ব’ নামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। গতকাল দেখলাম, অনুষ্ঠানটি চ্যানেল আই’তে প্রচার করা হল। এতে সেনাসদস্যদের প্রাত্যহিক জীবনের কঠোর প্রশিক্ষণ, পেশাগত কর্তব্য পালন ও সেনাবাহিনীর ইতিহাসসহ অন্যান্য বিষয়াদি তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, মহান স্বাধীনতার মাস ও স্বাধীনতা দিবসের চল্লিশতম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হচ্ছে।

কিন্তু অনুষ্ঠানটি দেখে যে কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ও সেনাবাহিনীর অগ্রগতি সম্পর্কে একটি একপেশে, খণ্ডিত ধারণা পাবে। রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা ও অতি-তোষণের কারণে একটি সুন্দর অনুষ্ঠান কীভাবে দৃষ্টিকটু, শ্রুতিকটু ও বিব্রতকর হতে পারে–এটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। রক্ত দিয়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা ও তিলে তিলে গড়ে ওঠা আমাদের সেনাবাহিনী কোন একক ব্যক্তিত্বের অবদান নয়। কিন্তু উক্ত অনুষ্ঠান দেখে উল্টোটাই মনে হতে বাধ্য। একজনকে বড় করে দেখাতে গিয়ে পরোক্ষভাবে অন্যদেরকে খাটো করার যে নেতিবাচক রাজনৈতিক প্রবণতা বর্তমানে চলমান–সেনাবাহিনীর এই অনুষ্ঠানটি তার ব্যতিক্রম নয়। বরং এহেন অতি-প্রশংসা ও অতি-ভক্তি নিতান্তই সন্দেহজনক।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ‘রাজনীতি-নিরপেক্ষ’ সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানে কেন এরকম সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ প্রতিফলিত হচ্ছে? বর্তমানে অন্য কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে তাদের এই অনুষ্ঠানটির বিষয়বস্তু ও বক্তব্য কি একই রকম হত? নিকট অতীতের অন্যান্য সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড বরং তার উল্টোটাই সাক্ষ্য দেয়। তার মানে হচ্ছে, সরকারের পালাবদলের সাথে সাথে অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন, বিশেষ করে, কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ কিংবা শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের মত আজকাল ‘অরাজনৈতিক’ সেনাবাহিনীর ‘রাজনৈতিক’ চরিত্রও পালটে যাচ্ছে! জাতির আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল এবং দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সংহতির প্রতীক এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানটির জন্য এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে?

এর জন্য দায়ী কারা? দায়ী হচ্ছে একদিকে, সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে সরকারের ‘রাজনৈতিক’ হস্তক্ষেপ এবং অন্যদিকে, রাজনৈতিক সরকারের কাছে অন্যায্য সুবিধাপ্রত্যাশী কতিপয় অতি-উচ্চাভিলাষী উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তার পদ, ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধার লোভ। বাহিনীর টপ-ব্রাসদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে গৃহিত কিছু কিছু রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট, অবিবেচনাপ্রসূত ও অপরিণামদর্শী নীতি ও কর্মকাণ্ডের কারণে বিতর্কিত হয় গোটা সেনাবাহিনী। তাদের হঠকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ-বিরুদ্ধ কর্মপন্থার জন্য খেসারত দিতে হয় সকল সেনাসদস্যকে।

অতীতেও আমরা দেখেছি, অযোগ্য, অতি-উচ্চাভিলাষী কিংবা রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়া জেনারেল ও তাদের গুটিকতক সহকারীর অবৈধ ক্ষমতার মোহ ও সম্পদ-লিপ্সার মাশুল দিয়েছে সাধারণ সেনা অফিসার ও জওয়ানরা। তাদের জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্যই সেনাবাহিনীর মত একটি গৌরবময় জাতীয় প্রতিষ্ঠান আজ ‘ইতিহাসের খলনায়ক’। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তাই ‘যত দোষ, সেনা ঘোষ’, কিংবা সেনাবাহিনীই সেই ‘কেষ্টব্যাটা’! দেশপ্রেমিক ও দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ সাধারণ, দলীয় রাজনীতি-নিরপেক্ষ সেনাসদস্যদের জন্য এর মনোকষ্টের আর কী হতে পারে?

আমাদের সেনাসদস্যরা জাতীয় দুর্যোগের সময় দেশের মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়; চব্বিশ ঘন্টার চাকুরিতে পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দূর-দূরান্তে গিয়ে তাদের কর্তব্য পালন করে; উদয়াস্ত খাটুনি দিয়ে ত্রাণসামগ্রী, ঔষধপত্র বিতরণ করে কিংবা আশ্রয়স্থল নির্মাণ করে; বেতনভূক ট্রাফিক পুলিশ থাকতেও রাস্তায় যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের কাজ করে; সিটি কর্পোরেশনের বেতনভূক সুইপার থাকা সত্ত্বেও নির্দ্বিধায় ঢাকার নর্দমা পরিষ্কারে নামে; জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসদমন ও অবৈধ অস্ত্র-উদ্ধার অভিযান চালায়; মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার-ইন্সার্জেন্সি অপারেশনে নিয়োজিত থাকে; বেসরকারী কোম্পানীর দেওয়া দরের এক-তৃতীয়াংশ বাজেট দিয়ে জাতির জন্য ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করে দেয়; জাতীয় নির্বাচনে আইন-শৃংখলা নিশ্চিত করে গণতন্ত্রের পথ সুগম করে; এবং যে কোন জাতীয় দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হলে সে দায়িত্বও সুচারুভাবে পালন করে।

কিন্তু কেন কতিপয় পদ, ক্ষমতা ও সম্পদলোভী, অতি-উচ্চাভিলাষী টপ-ব্রাসের অনৈতিক, উদ্দেশ্য-প্রণোদিত ও স্বীয় স্বার্থসিদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য দেশ-অন্তঃপ্রাণ, কর্তব্যপরায়ণ ও কঠোর পরিশ্রমী এইসব সাধারণ সেনাসদস্যকে জাতির কাছে, সমাজের কাছে এবং এমনকি নিজের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের কাছে বারবার হেয় হতে হচ্ছে? কেন দেশের বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে গণ-মাধ্যম পর্যন্ত প্রায় সবখানে অহরহ সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য বা সমালোচনা তাদের শুনতে হচ্ছে? অথচ এসব কর্মকাণ্ড এড়িয়ে যাওয়ার কিংবা বিরোধিতা করার কোন সুযোগ তাদের নেই–যেহেতু সেনাবাহিনীতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সকল আদেশ সর্বদাই শিরোধার্য এবং অমান্য করা কঠিন দণ্ডণীয় অপরাধ।

সেনাবাহিনীর কার্যক্রমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নতুন নয়। বরং অতীতের প্রতিটি সরকারই এই বাহিনীকে ব্যবহার করেছে নিজেদের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। আর দিন দিন এর মাত্রা বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, সেনাবাহিনীর আভ্যন্তরীণ বিষয়াদি যেমন, পদোন্নতি, পদচ্যুতি, বদলি কিংবা বিশেষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক সরকারের সক্রিয় ইচ্ছা-অনিচ্ছার ক্রমবর্ধমান প্রতিফলন। এটি যে মিথ্যে নয়, তার প্রমাণ হল–যখনই সরকার পরিবর্তন হয়, তখনই বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তা পদোন্নতি পান, গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পান কিংবা চাকুরি হারান। তাছাড়া ‘রাজনৈতিক কারণে’ চাকুরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তাদের বিরোধী রাজনৈতিক দলে যোগদানের বিষয়টি সেনাবাহিনীর নিজস্ব কর্মকাণ্ডে সরকারের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং এসব সেনা কর্মকর্তার অতি-উচ্চাভিলাষের প্রচলিত ধারণাকেই আরও পোক্ত করে। সাম্প্রতিককালে দশ-ট্রাক অস্ত্র মামলায় কয়েকজন সেনাকর্মকর্তার পুলিশি ও আইনী হেনস্তা সেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কে জানে, ‘আমার সেনাবাহিনী আমার গর্ব’ অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত সেনাকর্মকর্তাগণকেও সরকারের পালাবদলে বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে না?

সেনাবাহিনীতে অবশ্যই অনেক মেধাবী, বিদ্বান, সুবিবেচনাবোধসম্পন্ন ও সচেতন মানুষ আছেন। তাছাড়া আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। তাদের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সেনা-নেতৃত্বে থাকা কতিপয় হাঁটুবুদ্ধির মানুষ যদি মনে করে দেশের সবার বুদ্ধিবৃত্তিক মান তাদের মতই, তবে সেটি হবে চরম নির্বুদ্ধিতা। সুযোগ-সন্ধানী, স্বার্থান্বেষী এই সেনাপতিদের এহেন কর্মকাণ্ডের আসল উদ্দেশ্য বোঝার জন্য আইনস্টাইন হওয়া লাগে না।

একটি প্রবাদ-বাক্য বলে শেষ করব: ‘অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ’!

গত কয়েকদিন ধরে আমাদের স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে ‘আমার সেনাবাহিনী আমার গর্ব’ নামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। গতকাল দেখলাম, অনুষ্ঠানটি চ্যানেল আই’তে প্রচার করা হল। এতে সেনাসদস্যদের প্রাত্যহিক জীবনের কঠোর প্রশিক্ষণ, পেশাগত কর্তব্য পালন ও সেনাবাহিনীর ইতিহাসসহ অন্যান্য বিষয়াদি তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, মহান স্বাধীনতার মাস ও স্বাধীনতা দিবসের চল্লিশতম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হচ্ছে।

কিন্তু অনুষ্ঠানটি দেখে যে কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ও সেনাবাহিনীর অগ্রগতি সম্পর্কে একটি একপেশে, খণ্ডিত ধারণা পাবে। রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা ও অতি-তোষণের কারণে একটি সুন্দর অনুষ্ঠান কীভাবে দৃষ্টিকটু, শ্রুতিকটু ও বিব্রতকর হতে পারে–এটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। রক্ত দিয়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা ও তিলে তিলে গড়ে ওঠা আমাদের সেনাবাহিনী কোন একক ব্যক্তিত্বের অবদান নয়। কিন্তু উক্ত অনুষ্ঠান দেখে উল্টোটাই মনে হতে বাধ্য। একজনকে বড় করে দেখাতে গিয়ে পরোক্ষভাবে অন্যদেরকে খাটো করার যে নেতিবাচক রাজনৈতিক প্রবণতা বর্তমানে চলমান–সেনাবাহিনীর এই অনুষ্ঠানটি তার ব্যতিক্রম নয়। বরং এহেন অতি-প্রশংসা ও অতি-ভক্তি নিতান্তই সন্দেহজনক।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ‘রাজনীতি-নিরপেক্ষ’ সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানে কেন এরকম সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ প্রতিফলিত হচ্ছে? বর্তমানে অন্য কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে তাদের এই অনুষ্ঠানটির বিষয়বস্তু ও বক্তব্য কি একই রকম হত? নিকট অতীতের অন্যান্য সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড বরং তার উল্টোটাই সাক্ষ্য দেয়। তার মানে হচ্ছে, সরকারের পালাবদলের সাথে সাথে অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন, বিশেষ করে, কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ কিংবা শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের মত আজকাল ‘অরাজনৈতিক’ সেনাবাহিনীর ‘রাজনৈতিক’ চরিত্রও পালটে যাচ্ছে! জাতির আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল এবং দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সংহতির প্রতীক এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানটির জন্য এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে?

এর জন্য দায়ী কারা? দায়ী হচ্ছে একদিকে, সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে সরকারের ‘রাজনৈতিক’ হস্তক্ষেপ এবং অন্যদিকে, রাজনৈতিক সরকারের কাছে অন্যায্য সুবিধাপ্রত্যাশী কতিপয় অতি-উচ্চাভিলাষী উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তার পদ, ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধার লোভ। বাহিনীর টপ-ব্রাসদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে গৃহিত কিছু কিছু রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট, অবিবেচনাপ্রসূত ও অপরিণামদর্শী নীতি ও কর্মকাণ্ডের কারণে বিতর্কিত হয় গোটা সেনাবাহিনী। তাদের হঠকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ-বিরুদ্ধ কর্মপন্থার জন্য খেসারত দিতে হয় সকল সেনাসদস্যকে।

অতীতেও আমরা দেখেছি, অযোগ্য, অতি-উচ্চাভিলাষী কিংবা রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়া জেনারেল ও তাদের গুটিকতক সহকারীর অবৈধ ক্ষমতার মোহ ও সম্পদ-লিপ্সার মাশুল দিয়েছে সাধারণ সেনা অফিসার ও জওয়ানরা। তাদের জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্যই সেনাবাহিনীর মত একটি গৌরবময় জাতীয় প্রতিষ্ঠান আজ ‘ইতিহাসের খলনায়ক’। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তাই ‘যত দোষ, সেনা ঘোষ’, কিংবা সেনাবাহিনীই সেই ‘কেষ্টব্যাটা’! দেশপ্রেমিক ও দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ সাধারণ, দলীয় রাজনীতি-নিরপেক্ষ সেনাসদস্যদের জন্য এর মনোকষ্টের আর কী হতে পারে?

আমাদের সেনাসদস্যরা জাতীয় দুর্যোগের সময় দেশের মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়; চব্বিশ ঘন্টার চাকুরিতে পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দূর-দূরান্তে গিয়ে তাদের কর্তব্য পালন করে; উদয়াস্ত খাটুনি দিয়ে ত্রাণসামগ্রী, ঔষধপত্র বিতরণ করে কিংবা আশ্রয়স্থল নির্মাণ করে; বেতনভূক ট্রাফিক পুলিশ থাকতেও রাস্তায় যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের কাজ করে; সিটি কর্পোরেশনের বেতনভূক সুইপার থাকা সত্ত্বেও নির্দ্বিধায় ঢাকার নর্দমা পরিষ্কারে নামে; জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসদমন ও অবৈধ অস্ত্র-উদ্ধার অভিযান চালায়; মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার-ইন্সার্জেন্সি অপারেশনে নিয়োজিত থাকে; বেসরকারী কোম্পানীর দেওয়া দরের এক-তৃতীয়াংশ বাজেট দিয়ে জাতির জন্য ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করে দেয়; জাতীয় নির্বাচনে আইন-শৃংখলা নিশ্চিত করে গণতন্ত্রের পথ সুগম করে; এবং যে কোন জাতীয় দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হলে সে দায়িত্বও সুচারুভাবে পালন করে।

কিন্তু কেন কতিপয় পদ, ক্ষমতা ও সম্পদলোভী, অতি-উচ্চাভিলাষী টপ-ব্রাসের অনৈতিক, উদ্দেশ্য-প্রণোদিত ও স্বীয় স্বার্থসিদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য দেশ-অন্তঃপ্রাণ, কর্তব্যপরায়ণ ও কঠোর পরিশ্রমী এইসব সাধারণ সেনাসদস্যকে জাতির কাছে, সমাজের কাছে এবং এমনকি নিজের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের কাছে বারবার হেয় হতে হচ্ছে? কেন দেশের বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে গণ-মাধ্যম পর্যন্ত প্রায় সবখানে অহরহ সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য বা সমালোচনা তাদের শুনতে হচ্ছে? অথচ এসব কর্মকাণ্ড এড়িয়ে যাওয়ার কিংবা বিরোধিতা করার কোন সুযোগ তাদের নেই–যেহেতু সেনাবাহিনীতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সকল আদেশ সর্বদাই শিরোধার্য এবং অমান্য করা কঠিন দণ্ডণীয় অপরাধ।

সেনাবাহিনীর কার্যক্রমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নতুন নয়। বরং অতীতের প্রতিটি সরকারই এই বাহিনীকে ব্যবহার করেছে নিজেদের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। আর দিন দিন এর মাত্রা বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, সেনাবাহিনীর আভ্যন্তরীণ বিষয়াদি যেমন, পদোন্নতি, পদচ্যুতি, বদলি কিংবা বিশেষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক সরকারের সক্রিয় ইচ্ছা-অনিচ্ছার ক্রমবর্ধমান প্রতিফলন। এটি যে মিথ্যে নয়, তার প্রমাণ হল–যখনই সরকার পরিবর্তন হয়, তখনই বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তা পদোন্নতি পান, গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পান কিংবা চাকুরি হারান। তাছাড়া ‘রাজনৈতিক কারণে’ চাকুরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তাদের বিরোধী রাজনৈতিক দলে যোগদানের বিষয়টি সেনাবাহিনীর নিজস্ব কর্মকাণ্ডে সরকারের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং এসব সেনা কর্মকর্তার অতি-উচ্চাভিলাষের প্রচলিত ধারণাকেই আরও পোক্ত করে। সাম্প্রতিককালে দশ-ট্রাক অস্ত্র মামলায় কয়েকজন সেনাকর্মকর্তার পুলিশি ও আইনী হেনস্তা সেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কে জানে, ‘আমার সেনাবাহিনী আমার গর্ব’ অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত সেনাকর্মকর্তাগণকেও সরকারের পালাবদলে বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে না?

সেনাবাহিনীতে অবশ্যই অনেক মেধাবী, বিদ্বান, সুবিবেচনাবোধসম্পন্ন ও সচেতন মানুষ আছেন। তাছাড়া আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। তাদের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সেনা-নেতৃত্বে থাকা কতিপয় হাঁটুবুদ্ধির মানুষ যদি মনে করে দেশের সবার বুদ্ধিবৃত্তিক মান তাদের মতই, তবে সেটি হবে চরম নির্বুদ্ধিতা। সুযোগ-সন্ধানী, স্বার্থান্বেষী এই সেনাপতিদের এহেন কর্মকাণ্ডের আসল উদ্দেশ্য বোঝার জন্য আইনস্টাইন হওয়া লাগে না।

একটি প্রবাদ-বাক্য বলে শেষ করব: ‘অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ’!

পোস্টটি ৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

ভাস্কর's picture


সেনাবাহিনী প্রধানের নিয়োগ রাজনৈতিক সরকার মারফত হয়...সুতরাং রাষ্ট্রীয় যেকোনো সংগঠনের মতোন এইখানেও তেলবাজী চলবো এইটাই স্বাভাবিক...

শেরিফ আল সায়ার's picture


একটা বিষয় আমার কাছে খুব মজা লাগে।
তা হইল, যখন রাজনৈতিক বক্তারা বক্তৃতা দেন তখন বলেন- আমাদের দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী। আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান।
কিন্তু যখন সেনা বাহিনীরা ক্ষমতা নেন। তখন হইয়া যায়- পথভ্রষ্ঠ সেনাবাহিনী।
যেন্ ক্ষমতায় গেলে সেনা বাহিনীর দেশপ্রেম থাকে না। কিন্তু রানৈতিক মানুষদের দেশ প্রেম খু---ব থাকে। Crazy

শওকত মাসুম's picture


সাকার সেই লেজ নাড়ার উক্তিটা মনে পড়লো।

তানবীরা's picture


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেনা সদস্য বিয়ে করা সবচেয়ে নিরাপদ। বান্ধবীদের দেখলে হতাশা লাগে ...............

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.