কাছের মানুষ দূরের মানুষ
দিনকে দিন যেনো সময় কমে আসছে। কথাটা কি ঠিক? না ঠিক নয়। সময় প্রত্যেকের জন্য সমান চব্বিশ ঘন্টা। আমরা আমাদের পছন্দের কাজ করতে করতে গুরূত্বপূর্ন জিনিসের জন্য সময় বের করতে পারি না। কিন্তু দোষ দেই সময় ব্যাটার ঘাড়ে। বই পড়া একসময় নেশার মতো ছিল। অফিসেও বকা খেয়েছি বই পড়ার জন্য। বাংলা বই পড়তেই বেশি ভালো লাগে। খুব ভালো বিখ্যাত কিংবা আলোচনাকারী বই না হলে ইংরেজী কিংবা ডাচ বই পড়ি না। মাতৃভাষাটাই কাছের মনে হয়।
আজকাল বইয়ের পাহাড় জমে যাচ্ছে বাসায়। পড়া হচ্ছে না কিন্তু কিনে স্তুপ করে ফেলছি একদিন সময় হবে, তখন পড়া হবে সে আশায়। এখন মনে হচ্ছে আসলেই কি একদিন পড়া হবে? সে একদিনটা কবে আসবে, কোনদিন? নিজের জন্য মূলত সময় পাই রাত নয়টার পরে, মেয়েকে শুইয়ে দিয়ে। আগে সে সময়টায় বই নিয়ে সোফায় কাত হতাম, কিংবা সিনেমা দেখতাম অথবা কাউকে ফোন দিতাম। আজকাল এর কিছুই করা হয় না। অন্তর্জাল জীবনকে ঝালা ঝালা করে ফেলছে। সিনেমা দেখি না ধরতে গেলে বহুদিন। পারতে কাউকে ফোন দিই না, মনমতো কেউ না হলে অন্যের ফোনেও চরম বিরক্ত হই। এ সময়টা আমার একান্ত নিজস্ব। কারো প্রবেশ নিষেধ এই দু - তিন ঘন্টা। সারাদিন অনেক কম্প্রোমাইজ দেই, তাই একান্ত সময়ে আর কোন সমঝোতা নয়।
ব্লগ নিয়ে পরে থাকি। ব্লগ পড়তে খুব ভালো লাগে। ব্লগ পড়া, ফাকে ফাকে জিটক কিংবা ফেসবুক। এইকরে সাড়ে এগারো বারোটা তারপর আবার হাই তুলতে তুলতে বিছানায় যাওয়া। তাহলে বই পড়বো কখন? বইগুলো মুখ কালো করে অভিমানের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে টেবলের ওপর দিনের পর দিন পরে থাকে আধ পড়া। কখনো অন্যজন ড্রাইভ করলে লং ড্রাইভে বই পড়ি আজকাল। জিপিএস এর কল্যানে আজকাল আর ম্যাপ রীডআউট করতে হয় না, তাই সুযোগ। আগে ভালো সিডি জমিয়ে রাখতাম, লং ড্রাইভে শুনবো বলে এখন আমার বইও সে অবস্থায় চলে গেছে। অনেক সময় বেশ কয়েক সপ্তাহ কোথাও বের না হওয়া হলে বইয়ের কতোটুকু কোথায় কি পড়েছিলাম সেটাও ভুলে যাই। আবার আগের থেকে শুরু করি। সোজা বাংলায় বৃত্তের মধ্যে পরিক্রমা করি।
কিন্তু বই দেখলে ঠিক থাকতে পারি না। দেশ থেকে আসার সময় শুধু এই বই জিনিসটা স্যুটকেসকে ওভারওয়েট করিয়ে দেয়। বইয়ের প্রচ্ছদ, গন্ধ সবই মনকে মাতাল করে। তাহলে কি বইয়ের লেখকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন বলে আর ব্লগ লেখকরা কাছের লোক বলে ব্লগটাই বইকে ছাঁপিয়ে উঠছে আজকাল আমার কাছে? এক সময় মঞ্চ নাটক করতাম বেশ। জনগনের সরাসরি প্রতিক্রিয়া পাবার একটা নেশাও আছে। সরাসরি লেখকের কাছে থাকতে পারি বলেই কি ব্লগ আকর্ষনীয়? নাকি অনেক অনেক ব্লগ লেখকের লেখার মধ্যে নিজেকে ঘুরে ফিরে দেখতে পাই বলে এটা হচ্ছে? কাছের মানুষ আর দূরের মানুষের খেলার মধ্যে আছি কি?
তানবীরা
২৩.১২.০৯
ব্লগ এবং বই একাতারে আনা মনে হয় এক কথায় অসম্ভব। তবে এটাও ঠিক এখন বই পড়ার সময়টা বের করা অনেক টাফ, কারন অবসরটুকু ব্লগই খেয়ে ফেলে (আমার অবশ্য মুভি দেখাও আছে)।
আমার অগোছালো লেখার মধ্যে এটি আর একটি। আমি আসলে বই এর সাথে ব্লগের তুলনা করতে চাইনি, নিজের পরিবর্তনটাই অনুভব করছিলাম।
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য
মনের কথাটা কহিছেনগো ভইন।

তার উপর নিজের চারপাশের তুলে দেয়া দেয়ালটাও দিন দিন পুরোত্ব লাভ করছে।
বই পড়ার নেশাটা ব্লগ প্রতিস্থাপিত করেছে এটা একটা চরম সত্য কথা।
আসলে নিজেকে নিয়ে পড়ে থাকতে থাকতেই কোলাহল আজকাল বড্ড কানে লাগে। মনে হয় দুনিয়াটা যদি ইচ্ছে হলেই শব্দহীন করে দেয়া যেতো!
আসলে নিজেকে নিয়ে পড়ে থাকতে থাকতেই কোলাহল আজকাল বড্ড কানে লাগে। মনে হয় দুনিয়াটা যদি ইচ্ছে হলেই শব্দহীন করে দেয়া যেতো!
বড্ড স্বার্থপর আমরা আজকাল। আপনিও আমার মনের কথা কইছেন ভাইজান
"আসলে নিজেকে নিয়ে পড়ে থাকতে থাকতেই কোলাহল আজকাল বড্ড কানে লাগে। মনে হয় দুনিয়াটা যদি ইচ্ছে হলেই শব্দহীন করে দেয়া যেতো! "
এইটাই মনের কথা।
পুরা মনের কথা বলেছেন ।
সবারই দেখি মনের কথা এক
কি করবেন কন? সবাইতো মিশিন হইয়া গেছি। মিশিন সব এক জিনিস।
বইয়ের কাছে শেষ পর্যন্ত ফিরে যেতে হবেই, কবে সেটাই প্রশ্ন। ব্যাপারটি তারাতারি ঘটুক
কতোটুকুতে "শেষ" হবে দাদা কে জানে?
মনের কথা কিভাবে বললেন!অাজব!মনে মনে যা ভাবি তা কেমন করে টের পেলেন বলেন তো!
আমি যে যাদু জানি
ভালো থাকবেন জয়িতা
লুকটা পোষ্ট দিয়া কই পালাইলো
নৃত্য পাকটিশ করেন আমাদের তনুপা
তনুপা মানে?

উনিতো মুনয় তানবীরা তালুকদার।
আরেকজন আছেন তনুজা ভট্টাচার্য্য(?) পছন্দের একজন কবি।
তানবীরাফুরে তনুপা কইলে কনফুশন লাগে।
হাহাহাহা, পালাতে আর পারলাম কই, আপনার নজর থেকে। আসলে কাজীদা, ছুটির দিন গুলোতে পারিবারিক ব্যস্ততা বেশি থাকে।
আপনি ভালো ছিলেন?
ভালো লেগেছে লেখা। লেখা পড়ে মনে পড়ে গেল আমি যে কতদিন বই পড়িনা। অনেকদিন প্রিয় বন্ধুর থেকে দূরে।
তাই, বই হলো আসল বন্ধু, যাকে হাত বাড়ালেই কাছে পাওয়া যায়, সুখে ও দুঃখে। চিরদিন পাশে থাকবে।
দ্বিমত প্রকাশ করলাম
এই যে একজন তানবীরার লেখা পড়ছি ... এই যে শত শত ব্লগারদের লেখা পড়ছি ... এবং তারা লিখছেন... এরাই একসময় আপনার পাঠ সম্পন্ন করা এবং অপেক্ষারত বইগুলোর জায়গার দখল নিবে। ব্লগ লেখনীর মাধ্যমে লেখা শাণিত হবে। লেখক সত্তার পূর্ণ বিকাশ ঘটবে।
বইয়ের যখন জন্ম হয় তখন আমরা ছিলাম না ... কিন্তু বাংলা ব্লগগুলোর জন্ম চোখের সামনে। জেনারেশন জেনারেশন পর এই এখানেই উপন্যাস/গল্প/কবিতা/ভ্রমণ কাহিনী/.... .... সকল প্রকাশনার জায়গা হবে। লাস্ট কয়েকটা বইমেলায় যাওয়ার এবং দেখার সুযোগ হয়েছে। প্রকাশনায় ব্লগারদের সংখ্যা বৃদ্ধি আশা জাগানিয়া
আপনার এই কষ্ট কখনো বৃথা যাবে না
দারুন বলেছেন টুটুল ভাই, আমার যে ব্যাপারটা অনন্য লাগে ব্লগে সেটা হল ভালো খারাপ লাগলে সরাসরি বলে যেতে পারি, উড়াধুড়া লিখলে সেটাও মাটিতে পরার সুযোগ পায় না, সাথে সাথে ফিডব্যাক পাই। অতীতের লেখকেরা যা খুশি লিখে পাঠকদের উপরে চাপিয়ে দিয়ে বসে বসে মজা দেখতেন, এখানে তা সম্ভব না, আর নিজের উন্নতি সাধন এবং সংশোধনের অনেক সুযোগ মেলে এখানে। আজ হুমায়ুন আহমেদ যদি ব্লগে লেখতেন, তাহলে যা খুশি লিখে ১০ বার মুদ্রনের সুযোগ পেতেন বলে মনে হয় না, ব্লগাররা এসব ভন্ডামি করে পালিয়ে যাবার সুযোগ দিতেন না। ফলে ব্লগে ক্রমান্বয়ে নিজের উন্নতিই করে যাবেন দিন দিনে, অবনতির সুযোগ কম। যে কারনে ব্লগের নেশাটা অনেক শক্ত।
আপনার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক টুটুলদা
টুটুল ভাইয়ের সাথে একমত .... প্রকাশনায় ব্লগারদের সংখ্যা বৃদ্ধি আশা জাগানিয়া
ভালো লিখেছেন তানবীরাপু, মনের কথাগুলো যেন বললেন। আপনার লেখাও দেখি আমার মত কিছুটা মুখ থুবড়ে পড়েছে, অনেকদিন পর পর লেখা আসে, তবে আমার অবস্থা আরো খারাপ, গত ২ সপ্তাহে লেখিওনি, পড়িওনি, মন্তব্যও করিনি।
আবার কোমর বেঁধে নামতে হবে
তোমাকে কদিন অন লাইনে না দেখে, আমি কিন্তু ভেবেছি ছেলেটার হলো কি, গেলো কোথায়?
নামো কোমড় বেঁধে।
আপ্নে তো আবার আমারে পছন্দ করেন না !! যাক নানার বাড়ির এলাকার কি আর করা !!!
লেখা ভালো লাগছে । এইরাম সুন্দর লেখার আমি কইলাম পাংখা !!
খোমা কিতাবে আপ্নারে দেখলাম । চশমা দেইখা ডরাইছি !! র্যাব র্যাব লাগছিলো !! ঈমানে কইলাম !!
সেটাই নানার বাড়ির মানুষ আপনি আমার, কি আর করা।
আপনি কি আমার খোমাখাতায় আছেন নাকি? র্যাব ভাবের জন্যইতো চশমা লাগাইছি, আমিও ঈমানেই কইলাম ঃ)
বইগুলো মুখ কালো করে অভিমানের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে টেবলের ওপর দিনের পর দিন পরে থাকে আধ পড়া।
*****************************
কালকেই পড়ছিলাম লেখাটা সময়ের অভাবে কমেন্ট করা হয়নি। আপনার এই লেখাটা যেন আমার কথাগুলো লিখলো আর কি :)
ব্লগের এই জিনিসটা আমার খুব মনে টানে। অনেকের লেখা পড়লেই মনে হয়, ঘুরে ফিরে আমিই বুঝি সে। সুবর্নার স্মৃতিচারন পড়ে মনে হচ্ছিলো কোথাও আমি আছি, মলিকিউলের গানের ব্লগটি, কিংবা বরফে ঢাকা ফটো, বিজয় টাইপ না করতে জানা এরকম এ মুহূর্তে মনে না পড়া সব কিছুতেই কোথাও না কোথাও যেনো আমিও আছি।
কতদিন বই পড়ি না...।
ফেইসবুক বা চ্যাটিংয়ের নেশা নেই, অদ্ভুত বিকর্ষণ বোধ করি... বই পড়েছি সম্প্রতি অনেকগুলো, তবে বিষয়বৈচিত্র্যবিহীন, টার্গেটেড রিডিং...
সবশেষে মাহমুদুল হকের সেই কথাটিই পরম সত্য- একদিন সবকিছু গল্প হয়ে যায়!
সবশেষে মাহমুদুল হকের সেই কথাটিই পরম সত্য- একদিন সবকিছু গল্প হয়ে যায়!
চরম সত্যি
আমার নিজের মধ্যেও এরকম চিন্তা কাজ করে
ভালো থাকবেন
আপনিও ভালো থাকবেন কাঁকন
বইয়ের কতোটুকু কোথায় কি পড়েছিলাম সেটাও ভুলে যাই। আবার আগের থেকে শুরু করি।
একদম আমার কথা বললেন। গত কয়েকটা বছর ধরে আমারো একই হাল। পড়ালেখা কিংবা চাকরির ফাঁকে যে সময় পেতাম- প্রায় পুরোটাই খেয়ে নিত ইন্টারনেট। মনে আছে আগে ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে সারাবছর তাকিয়ে থাকতাম। দুই হাত ভরে বই কিনতাম কিন্তু গোগ্রাসে গিলতে গিলতে ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার আগেই দেখা যেত সব পড়া শেষ। এখনও বই ঠিকই কিনি, কিন্তু পড়ার আর সময় হয় না।
বড় হওয়াটাই আসলে খারাপ।
সময় বড় কঠিন চীজ ভায়া। এখন আমি পড়ছি বিদিশার স্বৈরচারের প্রেমপত্র ঃ)
সরাসরি লেখকের কাছে থাকতে পারি বলেই কি ব্লগ আকর্ষনীয়
লেখাটি আমার অনেক ভালো লেগেছে
পড়ার সময়ই নিজের গোপন কথাটি দেখে তব্দা খাইসি।
মন্তব্য করুন