৭০ এর ঢাকা ---- মধ্যবিত্তের চোখে (আপডেটেড)
আজকাল মনে হয় পুরো দস্তুর প্রবাসী হয়ে গেছি। সারাক্ষন পুরনো স্মৃতি হাতড়ে বেড়াই ঢাকা গেলে। পরিবর্তন কাঁদায়, নতুন জিনিস বিরক্ত লাগে। বাড়ি গেলে এঘর ওঘর ঘুরে ভাইজি’র স্তুপ করা খেলনার মাঝে নিজের শৈশব খুঁজে ফিরি। চিকন পাড়ের সাদা শাড়ি পরা দাদু বসে থাকতেন সারা বেলা জায়নামাজের ওপর, পাবো না জেনেও তার মমতা খুঁজি, আমার নিজের হাতে লাগানো মানিপ্ল্যান্টের চারাটাকে খুঁজে বেড়াই যেটা কখনো আমার পড়ার টেবিলের ওপর কখনোবা শুধুই জানালার ওপর ঝুলতো। কারন আমার দুমাস পর পর ঘরের আসবাবপত্র টানাটানি না করলে কেমন যেনো বন্দী বন্দী লাগতো। কখনো খুঁজে ফিরি মায়ের কাছে বাতিল হয়ে যাওয়া সেই পুরনো দিনের শোকেসটা। পুরো কাঠ আর কাঁচের সম্বনয়ে চার তাকের জিনিসটি যেটি আমার বই রাখার সম্পত্তি ছিল বহুদিন। বই কিনে আমার নাম লিখে তাতে মালিকানার ছাপ লাগিয়ে তারপর পড়ে কাঁচের মধ্যে সাজিয়ে রাখা। দস্যু বনহুর থেকে সাতকাহন, মেমসাহেব থেকে শেষের কবিতা কি না ছিলো তাতে, কতো গর্বিত ভঙ্গীতে সেদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম। কালের বিবর্তনে সেসব কালের গর্ভে।
সেই সময় অনেকক্ষন দাদুর হাত পা টিপে দিলে মাঝে মাঝে চার আনা পয়সা পাওয়া যেতো। হাত পা টিপতে টিপতে সেই পঁচিশ পয়সায় মাকে ফাঁকি দিয়ে নিষিদ্ধ দ্রব্য কি কি খাওয়া যাবে তার স্বপ্ন দেখতাম। মুদি দোকানে প্লাষ্টিকের প্যাকেটে ঝোলানো পাঁচ পয়সার হজমী, কালো রঙের এক রকমের ঝাঝালো পাউডার যেটা মুখে নিলে এক ধরনের অম্ল ঝাঝা স্বাদ পাওয়া যেতো। কাঁচের বোয়ামের মুখ শক্ত করে আটকানো টিনের ঢাকনা দিয়ে আর তাতে লাল গুড়ের সন্দেশ, আর সাদা গুড়ো দুধের কিছু একটা পাওয়া যেতো যার নামও সন্দেশ ছিল, যার ডানার যতো সম্ভব পাঁচটি বুটি দেয়া থাকতো। আরেকটি বস্তু ছিল নানা বর্ণের মানে রঙ করা, ছোট ছোট বল বল মিষ্টি খেতে যাকে বলতাম আমরা টিকটিকির ডিম।
দুপুরে মা চাচীদের ঘুমের সময় আসতো কটকটিওয়ালা। লোহার বা টিনের বাক্সে থাকতো সেই পদার্থ। খালি হরলিক্সের বোয়াম কিংবা আচারের বোয়াম দিয়ে হলুদ রঙের একটা আপাতঃ শক্ত পদার্থ পাওয়া যেতো মিষ্টি স্বাদের। গরমে ছিল লাল, কমলা কিংবা সবুজ রঙের পানি আইসক্রীম যা খেলে জীহবা, ঠোঁট সব রঙীন হয়ে যেতো। আর বাবা চাচাদের সাথে বেড়াতে গেলে দামী বেবী আইসক্রীম যা দুধ আর চিনি দিয়ে বানানো হতো। ভালো কাপড় জামা কেনার জন্য যেতাম আমরা এ্যালিফ্যান্ট রোডে। বাচ্চাদের জামা কাপড়ের জন্য ল্যাসগো, সাত রঙ কিংবা নিউমার্কেটের দাদা ষ্টাইল হাউজ, আজিজ ক্লথ ষ্টোর আর মায়েদের শাড়ির জন্য ছিল সোনারগাঁ, খান ব্রাদার্স কিংবা ফারাবী।
ভট ভট শব্দের একটি খেলনা বাজিয়ে আসতো খেলনাওয়ালা। তার কাঁধে বাঁশের মাচার মতো কিছুতে খেলনাগুলো ঢুকিয়ে নিয়ে। সিলভারের হাড়ি পাতিলের সেট, প্লাষ্টিকের পুতুল মেয়েদের জন্যে। ছেলেদের জন্যে প্লাষ্টিকের পিস্তল, নানারকমের মুখোশ, আর থাকতো প্লাষ্টিকের এক ধরনের ফুল যা হাতে নিয়ে দৌড় দিলে বনবন ঘুরতো। সেই ছিলো মধ্যবিত্ত বাচ্চাদের খেলার জিনিস। এছাড়া কিছু খেলাধূলা ছিলো যেগুলো খেলতে সেই অর্থে কোন উপকরনের দরকার হতো না। খোলা একটা উঠোন হলেই হয়ে যেতো। ছোয়াঁছুয়ি, বরফপানি, সাতচারা, বউচি, গোল্লাছুট, কানামাছি, রুমালচোর, টিলু এক্সপ্রেস, বিউকুইক প্রভৃতি।
বাংলা সিনেমায় তখন যতোসম্ভব বিউটি কুইন শাবানা, ববিতা, কবরীর দাপট যাচ্ছিল সাথে নায়ক রাজ রাজ্জাক কিংবা এ্যাংগরী ইয়াংম্যান ফারুক, উজ্জল ছিলেন। সাদাকালো সিনেমার যুগ তখন। নয়নমনি, অবুঝমন, রংবাজ এর মতো সিনেমার যুগ তখন। বিটিভিতে তখন মাসে একটা বাংলা সিনেমা দেখানো হতো, সেদিন পাড়া জুড়ে সাজ সাজ রব থাকতো। যাদের বাড়িতে টিভি আছে তাদের বাড়ি সেদিন আলাদা ঝাড়পোচ করা হতো রাতের শো’র জন্য।বাচ্চারা দিনে ঘুমিয়ে নিতো যাতে রাত জেগে সিনেমা দেখতে পারে। কিন্তু টিভি কতৃপক্ষ বেশি রাতে সিনেমা শুরু করে, মাঝে খবর আর বিজ্ঞাপন দিয়ে সিনেমা এতো দেরীতে শেষ করতো যে বাচ্চাদের পক্ষে সিনেমা শেষ করা সম্ভব হতো না কখনোই। তবে সন্ধ্যে বেলায় তখন বাচ্চাদের জন্য “সেজান”, “কুমকুম” টাইপ কার্টুন সিনেমা ছিলো।
তখন টিভি চলতো বিকেল পাঁচটা থেকে রাত বারোটা অব্ধি। বিটিভিতে সপ্তাহে একটি নাটক প্রচার হতো আর হতো মাসে একটি বিশেষ নাটক, যেটিকে বলা হতো এ মাসের নাটক। সুর্বনা – আফজাল, মিতা – আল মনসুর, ফেরদৌসী মজুমদার – আবদুল্লাহ আল মামুন এরা ছিলেন সে সময়ের হার্টথ্রব। তবে সুর্বনা আফজালের চেয়ে জনপ্রিয় কোন জুটি সেসময় ছিল না। কালো স্যুটকেস, রক্তের আঙ্গুরলতা, রক্ত করবী নাটকগুলো সে সময় প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। ইংরেজী সিরিয়ালও ছিল তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান, বায়োনিক উম্যান, হাওয়াই ফাইভও দেখার জন্য সবাই সোমবার, মংগলবার গুনে গুনে অপেক্ষা করতেন। জনপ্রিয় ইংরেজি গানের অনুষ্ঠান সলিড গোল্ড কে না দেখেছে। এ্যাবা , বনিএমের গান ব্যাপক হিট করে তখন।
বাংলা গানের মেইন স্ট্রিমের দখলে ছিলেন তখন সৈয়দ আব্দুল হাদী, খুরশীদ আলম, আব্দুল জব্বার, বশির আহমেদ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ছিল বিধায় তখন দেশাত্ববোধক গান খুবই জনপ্রিয় ছিল। ফ্যাশন কুইন রুনা লায়লা গাইতেন নদীর মাঝি বলে এসো নবীন কিংবা লক্ষ প্রানের বিনিময়ে এনেছি সোনার বাংলাদেশ। সাবিনা ইয়াসমিন আসতেন ও আমার সাত কোটি ফুল দেখোগো মালি কিংবা মাঝি নাও ছাইরা দেরে মাঝি পাল উড়াইয়া দে নিয়ে। তবে রুনা লায়লার গাওয়া চটুল গান “বাড়ির মানুষ কয় আমায় তাবিজ করেছে” ও প্রচন্ড জনপ্রিয়তা পেয়েছিল সে সময়। পপ গানে ছিলেন ফেরদৌস ওয়াহিদ, নাজমা জামান প্রমুখ। সে সময়ের কিছু জনপ্রিয় গান, এমন একটা মা দেনা, মামনিয়া মামনিয়া, চুমকী চলেছে একা পথে, হৈ হৈ রঙীলা রঙীলা রে, অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায় প্রভৃতি।
আরো ছিলেন গাটরী কাঁধে লেইসফিতা, কাঁচের বাক্স কোমড়ে কাঁচের চুড়িওয়ালী আর ঝাঁপি হাতের বেদেনী। যাদের কখনো বাড়িতে ডাকা নিষেধ ছিল। ওরা যাদু মন্ত্র করে বাড়ি থেকে সব নিয়ে যায়। বেদেনীরা শিঙ্গা লাগাতো, কাজটা কি আমি জানি না কিন্তু এই বলেই শব্দ করে ডাকতো। মা – চাচীরা ঘুমিয়ে গেলে দুপুরে গেটের বাইরে গৃহকর্মীরা চুড়িওয়ালী থামাতেন, বাছাবাছি করতেন, সেই চুড়ির ঝুড়ির দিকে কতো দিন তৃষিত নয়নে তাকিয়ে থেকেছি।
সারা ঢাকা জুড়ে মধ্যবিত্ত এলাকায় টিনশেড একতলা বাড়ির ছড়াছড়ি ছিল। আর বাড়ি ভর্তি ফুল আর ফলের গাছ। প্রতিটি বাড়ির আশে পাশে চড়ে বেড়াচ্ছে হাঁস – মুরগী। বাড়ির সামনের দিকে টিনের চালে বোগেনভিলিয়া আর পেছন দিকে পুঁই – লাউ লতিয়ে থাকতো। অনেক বসার ঘরে একটি সাদা কালো টিভি, কারো কারো বাড়িতে ল্যান্ড লাইনের ফোন যার নাম ছিল তখন টিন্ডটি আর কারো কারো ডাইনীং এ ছিল একটি মাঝারী সাইজের ফ্রীজ যার ওপরটা ডীপ আর নীচের অংশ টুকু নরম্যাল। স্বচ্ছল মধ্যবিত্তের প্রতিচ্ছবি।
তানবীরা
০৫.১০.০১০
আপডেট
০৬.১০.১০
কৃতজ্ঞতাঃ টুটুল ভাই
আহ , পুরান কথা মনে করায়া দিলেন
সব গল্প হয়ে যাচ্ছে
কঠিন একটা লেখা দিয়েছেন আপু। পড়তে পড়তে একদম শৈশবের কোন এক দুপুরবেলা থেকে ঘুরে আসলাম।
ছিলো, আগে সত্যি এমন দিন ছিলো।
থ্যাংক্স।
মীর কি সত্তরের দশকে জন্মাইছে না কি!
ধন্যবাদ মীরকে।
কিন্তু মেঘের প্রশ্নটা আমারো।
আমাদের আমলে জন্মতারিখ হিসাব করা হতো না। মা'য়ে বলতো সেইবার যখন বানের পানি বাড়ির উঠানে উঠে আসছিলো সেই সনে আমার জন্ম।

কোন সনে জানি বানের পানি উঠানে আসছিল

সেই পুরোনো দিনে নিয়ে গেলেন আপু।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
আপনাকেও ধন্যবাদ অরিত্র।
এইসব পুরোনো দিনে নিয়ে যাবার জন্য তানবীরাকে ধন্যবাদ। আমারও অনেক কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে।
আমিতো ভেবেছিলাম আমি একাই পুরনোদিনের, এখন দেখি আরো অনেকেই আছে
আহারে... পুরাই স্মৃতী তুমি হ্যান্ড শাওয়ার ...
হজমীর কথা মনে করাইলেন
... হজমী খাইয়াও কিন্তু জিহ্বা কালো হইতো
... এখন আর এই হজমী নাই... এখন আমরা খাই হজমলা... ডিব্বায় ভরা থাকে... ট্যাবলেট ..
সন্দেশ ছাড়াও আরো ছিলো টিকটিকির ডিম
.. ১ পয়সা করে
... আইসক্রিম ছিল প্রিয় জিনিষ... কুলফি কি ভাগে পাইছিলেন? বড় একটা মাটির পাত্রের ভেতর বরফ দিয়ে তার মধ্যে রাখা হতো।
ওই টাইমে আম্রা বার্গার-পিজার নাম ও শুনি নাই... টিফিনে খাইতাম ক্রিম রোল আর বাটার বন। এরো অনেক পরে কোক খাওয়াটা খুব ভাবের ছিল
... খুব ভাব মাইরা খাইতাম 
অন্য খেলাধুলার মধ্যেও বিশেষ কিছু খেলা ছিল যা এখন আর নেই... বরফ-পানি, ছোয়াছুয়ি, সাত চারা...
আর বিটিভি... সে তো এক বিরাট ইতিহাস...
টুটুল ভাই, একটানে লিখেছিতো চিন্তাভাবনা ছাড়া তাই অনেক কিছু বাদ পড়েছে। টিকটিকির ডিম ক্যামনে ভুললাম? লাল - নীল সেই মিষ্টি বল গুলো?
আপনি অনুমতি দিলে আপনার কমেন্টের কিছু অংশ পোষ্টে যোগ করে দেই, আপনার নাম সহ?
ভেবেছি ৭০ - ২০১০ পর্যন্ত লিখবো
আরে ধুর .. আবার অনুমতি লাগে নাকি? আম্রা আম্রা না?
আপনে বরং এই পোস্টকে পর্ব হিসেবে লেখেন

১. সিনেমা নিয়ে
২. গান নিয়ে
৩. নাটক নিয়ে
৪. বিটিভি
৫. খেলাধুলা
হুমম বাড়ি যেয়ে বসবো এটা নিয়ে আবার। খুবই ভালো সাজেশন, শুধু স্মৃতি তুমি প্রতারনা হয়ে কতোটুকু কি মনে পড়বে কে জানে।
ধন্যবাদ টুটুল ভাই
এইগুলা কি মনে করাইলেন টুটুল ভাই, আহারে হজমীদানা...হজম করে..। মফস্বলে আরও ছিলো কাঁচঢাকা টিনের বাক্সে হাওয়াই মিঠাই। ক্রিম রোল আর বাটার বন- আহা কতদিন খাইনাই।
এই হজমী নিয়ে তখন চালু জোকস ছিল ...
এক ছেলে তার এক বন্ধুর সাথে কথা বলতেছিল..
ছেলে : জানিস আমার দাদু এমন হজমী বানাতো যে গলা পর্যন্ত ভরে খাওয়ার পর একটু হজমী খেলে সাথে সাথেই ক্ষুধা লেগে যেত।
ছেলের বন্ধু: হুহ!!! এ আর এমন কি? আমার দাদু কেমন হজমী বানিয়েছিল জানিষ?
ছেলে: নাতো? ক্যামন হজমী বানিয়েছিল?
ছেলের বন্ধু: আমার দাদু হজমী তৈরীর পর টেস্ট করার জন্য যেই না মুখে দিয়েছে সাথে সাথে কি হয়েছে জানিস?
ছেলে: না বললে জানব কি ভাবে যে কি হয়েছে?
ছেলের বন্ধু: আরে আমার দাদু নিজেই হজম হয়ে গেছে। শুধু দাদুর নখ, চুল আর দাড়ি পাওয়া গেছে।
হা হা প গে .........
এইটা ভানুর না। ঐ যে বউরে বলছিল, আমি বেশি বললে তুমি কাশি দিও ঐ সিরিজের না ?
আপনার পোস্ট পড়ে ছোটোবেলার ক্রাশ গার্ল ফ্রম টুমরোর এলানা'র কথা মনে পইরা গেলো...
ধন্যবাদ আপনাকে পাশে থাকার জন্য
আহা.....বেবি আইসক্রিমের কথা কতদিন পর শুনলাম। পয়শা বেশি থাকলে বেবি আইসক্রিম আর না হয় ১০ পয়সা দামের আইসক্রমি, যেটারে এখন ললিজ বলে।
ছোটবেলায় এসব কত খাইছি। আর এখন যদিও সেসব পাওয়া যায় না, কিন্তু আমার ছেলে মেয়েদের খেতে দেখলে নির্ঘাৎ হার্টএটাক হয়ে যাইতো।
সময় কত কিছু বদলায়।
আমিও খাই আমার মেয়েকেও খাওয়াই। রাস্তার ধারের চালতার আঁচার থেকে শুরু করে ঝালমুড়ি ফুচকা সব
দারূণ একটা পোষ্ট দিলেন তাতাপু। টুটুলের সাথে একমত। পর্ব লিখেন।
তাতাপু, আপনি আবার জয়ি'বু পাইলেন কই?
আমার ছোটবেলায় কাঠের বাক্সতে করে আইসক্রিম নিয়ে আসতো আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে আইসক্রিমওয়ালা কাঠের বাক্সের ঢাকনায় জোরে বাড়ি দিতো। আর দৌড়ে যেতাম আইসক্রিম খেতে যদিও আম্মার কড়া নিষেধ ছিলো এসব খাওয়া।আমরা ১ টাকা দিয়ে সাদা রঙের আইসকিম খেতাম যর নীচে একটু জায়গায় নারিকেল দেয়া থাকতো।
১ টাকা করে একটা আচার পাওয়া যেতো, সুযোগ পেলেই খেতাম। আহ্ কি মজা!
ওটা আইসক্রিম ছিলো না।ওর নাম ছিলো বরফ।যেগুলোতে নারকেল দেয়া থাকতো সেটার নাম ছিলো নারকেলি বরফ আর কতগুলো তে পাউরুটি দেয়া থাকতো তার নাম ছিলো মালাই বরফ।
একবার গ্রামে নানার বাড়িতে আমার এক মামাতো বন ওর মধ্যে কেঁচো পাইছিলো।
তাতে কি পরেরদিন আবার কিনে খাওয়া শুরু হয়ছিলো।
আরে ওটা আইসক্রিম ছিলো। পুরাটাতে নারিকেল দেয়া থাকতো না তো। আর আপনেরে সকালবেলায এসব কুকথা কইতে কে বলছে?

কি জানি???আপনারা রাজধানীর আশেপাশের মানুষ আপনার মনেহয় আইসক্রিম কইতেন।কিন্তু আমরা ঐটারে বরফ কইতাম।নারকেল দেয়া থাকতো মাথার কাছে।
আ কুকথা র কি আছে।আমি পাইলে ঐ কেঁচোটুকু ফেলায় দিয়ে খাইতাম।২৫ পয়সা দামের বরফ দুইহাতে দুইটা নিয়ে খাইতে খাইতে কত স্কুলে গেছি।
আজব তো রাগেন ক্যান???????আর হাতুড়ী দিয়ে পিটাপিটি করলে তো দাঁত পড়ে যাবে।

আপনের দাঁত পড়াই দরকার।
হাতুড়ি দিয়া আপনের মাথায় বাড়ি দেই।
>) >) >)

একটু ভালোবেসে জয়িতাকে জয়িবু বল্লাম
, ভালোবাসার দেখি জমানাই আর নাই
(
সেই ছোটবেলার দিনগুলো মনে পড়ে গেল।
কেনো? আমার আর তোমার ছোটবেলা কি এক রকম নাকি?
আমি কি এই যুগের ব্রয়লার মুরগী নাকি?????????

আসলে ব্লগ ভর্তি এতো "ছুইটকা", শিশুকে কুমিল্লায় "ছুইটকা" বলে যে সবাইর কাছে নিজেকে মুরুব্বী লাগে। তোমার ফেসবুক পরীক্ষা করে আসলাম যেয়ে
ভাল মীর যদি সেই সত্তর দশকে জন্মিয়ে বাচ্চু হয় তাইলে আমার ছুইটকা হতে সমস্যা নাই।তয় পাবনার ভাষায় গ্যাদা কন নাই তাতে খুশি।
আমাদের ছোটবেলায়ও কিন্তু এগুলো ছিল। হজমি-রংচঙ্গা আইসক্রিম-প্লাস্টিকের পিস্তল-মুখোশ-কটকটি-লেইসফিতা... এইসব ছিল...
আহা সেই হলুদ রঙ্গা কটকটি! কি দিয়ে বানাইত কে জানে, খাইতে সেইরকম মজা ছিল। টিনের চ্যাপ্টা কৌটায় থাকত। আর রাস্তার ধারের আমসত্ত্বের কথা বাদ পড়ছে ...
অনেক কথা মনে করায় দিলেন। ঝিম ধরা নিশ্চল দুপুরগুলাই বেশি মিস করি ইদানিং। ঢাকার একটা অন্যরকম পরিবেশ ছিল, এখন আর নাই সেইরকম।
দারুণ পোস্ট!
আমারো তাই নড়বড়ে। সেই শান্ত ঝিম ধরা দুপুরের ঢাকা খুব মিস করি। আজকাল ঢাকা এতো ব্যস্ত যে ঝিম ধরার অবকাশ আর নেই যেনো
তাতাপু, বড় লালো লাগলো। শনপাপড়ির কথা মনে পড়ছে...ফেরিওয়ালা সুর করে বলতেন, শনপাপড়ি মজার খানা, চলে গেলে আর পাবেনা...
হুমম, তাইতো।
তিলের খাঁজা কি আজকাল আর পাওয়া যায় ঢাকাতে?
তিলের খাজা মাঝে মাঝে সিগনালে/জ্যামে বিক্রি করে দেখছি, এখন শুধু দেখা যায় পপকর্ণ। আরও মনে পড়ল, আমাদের সময় পর্যন্তও কিন্তু বিকাল হলেই পাড়ায় পাড়ায় বাদামওয়ালা/ঝালমুড়িওয়ালারা ঘুরত। ওরাও হারিয়ে গেছে বছর দশ-পনেরো হয়। অবশ্য পোলাপানেরও আর সময় কই? স্কুল, নাচ, গান, ছবি আঁকা, সাঁতার, প্রাইভেট ... ঘুমানোর সময় পায় এইটাই তো বেশি।
আহ্ ছোটবেলা .... সব কিছুর সাধ আবার নতুন করে পেলাম মনে হচ্ছে ... ধন্যবাদ
নাহীদ, তোমার লেখা দেখি না যে অনেকদিন?
স্মৃতিকাতরতায় বাকরুদ্ধ
শুধু বলি প্রিয় পোস্টে গেলো
লজ্জা পেলাম সই
তানবীরা আপার সেরা লেখাটা পড়ে স্মৃতিকাতরতায় বিবশ হলাম। প্রতিটা লাইনের সাথে মিলে যায় আমার শৈশব। শৈশবের লাশ কাঁধে নিয়ে বয়ে বেড়ানো মানুষ আমিও যে।
যাক মামুন ভাইয়ের কথায় নিশ্চিন্ত হলাম। সেরা লেখা যখন লিখেই ফেলেছি আর কষ্ট না করলেও চলবে
আপনার শৈশব স্মৃতির সাথে আমার আম্মুর শৈশব স্মৃতি মিলে যায় একদম হুবহু..... লেখাটা আম্মুকে পড়তে দিচ্ছি...
তোমার আম্মুর কমেন্টের অপেক্ষায় থাকলাম আমি
আহারে! কতকিছু মনে করায় দিলেন। মন্তব্যগুলাও সেরাম স্মৃতিজাগানিয়া।
নিজের এই লেখাটা শেয়ারের লোভ সামলাইতে পারলামনা:
http://www.somewhereinblog.net/blog/lubdhokblog/28911902
লেখাটা পড়লাম, কাজে লাগবে আশির দশক লিখতে ঃ)
রুমানা কি বয়েস কমাইলো? অনেক কমাইয়া ফেললো না কি।
আরে না, আমারই বয়স বেশি
অনেক কমাইসে বলেই তো মনে হচ্ছে।
mone hocche........birth certificate dekhano lagbo vaijan

1971 a amr amma jan er boyosh 6 bochor....82 te amma jaaner bibaho hoise....85 a ami poyda hoisi.......bakita apner bibechona
আহারে আন্টি, আমার ৮০'র দশকের মফস্বলী শৈশব মনে করাইয়া দিলেন।
আইচ্ছা আরেকটা জিনিস কি আপ্নারা খান্নাই?
অইযে একটু আঠালো টাইপের একটা মিস্টি জিনিস আছিলো। ফেরীওলায় বাঁশের আগায় আটকায়া নিয়া আসত, লালসালু দিয়া ঢাকা থাকত। বললে পরে হাতঘড়ি, চশমা, হাতপাখার মিনিয়েচার বানায়া দিতো। খাইতে খাইতে হাত-মুখ সব আঠা আঠা হইয়া যাইতো। আহারে কি মজার জিনিস আছিলো। এক্কেরে বেহেশ্তি খানা।
আচ্ছা আরেকটা খাবারের কথা মনে পইড়া গেলো। শবেবরাতের টাইমে একটা কমলা রঙের ট্রান্সপারেন্ট হালুয়া বানানি হৈতো। যদ্দুর মনে পড়ে প্রচলিত নাম আছিল মস্কিউটো হালুয়া। আমার খাইতে কুনুদিনই ভাল্লাগেনাই। শুধু কালার আর ট্রান্সপারেন্সির লাইগা দেখতে ভালুবাসতাম

না ভাইগ্না, এমন চীজতো জীবনেও খাইনি
ঠিক কইছেন রে ভাই।আমি তাতপুর এই লেখা পড়ে এটার নাম মনে করতে পারছিলাম না।এখন মনে পরছে আমাদের রাজশাহীতে এটার নাম ছিলো মতি মালা।আমাদের পাড়াতে এক বিহারী বুড়ো বিক্রি করতো।কত কি বানায় দিতো।চার আনা থেকে ২টাকা দাম ছিলো।
আসলেই সে এক বেহেশ্তী খানা ছিল।বেহেশতে গেলে হুরদের বলতে হবে মতিমালা বানায় খাওয়াও।
মতির মালা বলত চট্টগ্রামেও।
আহা, কত কিছু যে দিয়ে দিয়েছি এই মতির মালার জন্য, মনে আছে আমি একটা ছোট্ট টর্চ লাইট দিয়ে দিয়েছিলাম।
মনে হচ্ছে অনেক যুগ আগেই এসব দিন পার করেছি, কিভাবে হারায় সব এত দ্রুত ?
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সব মনে করিয়ে দেবার জন্য যান্ত্রিক জীবনের ফাঁকে।
তারার হাসিকে অনেক ধন্যবাদ আমার পোষ্ট পড়ার জন্য
বৃত্ত'র বলা জিনিষটা খাইছি!...নাম মনে আসছিলো না... তাতা'পু ঠিক প্লেস করতে পারছেন না, নইলে ঢাকার রাস্তায় ওই জিনিস ওলা অনেক দেখা যাইতো...
হুবহু দশ পয়সার মতো দেখতে গোলাপি চকলেট ছিলো কাঠিতে আটা... দামও মনে হয় দশ পয়সা ছিলো... ওই চুষতে চুষতে স্কুল থেকে ফেরার টাইমে জিব্ববা লাল করে ফিরতাম...
পিরিওও পোষ্ট নিঃসন্দেহে!...
ঠিক মনে করতে পারছি না, বয়স হচ্ছেতো স্মৃতি এখন প্রতারনা করছে
আমি ভাবতেছি ৯০'স নিয়ে লিখুম কীনা!
হজমী আমিও কিছু খাইছিলাম। আমার বয়স ৬/৭ তখন ও টিভির আকাল ছিল আমাদের এলাকায়! অনেকে আসত ইত্যাদি টাইপ অনুষ্ঠান দেখার জন্য। (আমাদের বাসা একতলা ছিলো।)
অনেক কিছু মনে পড়ে গেল আপু। ২০ বছরের ব্যবধান! তবুও একটা প্যাটার্ন আছ। পোস্টের জন্য থ্যাঙ্কস

বাপি, লিখে ফেলো কুইক
অতিক্রান্ত ঢাকা।
ভীষন ভাল লাগ স্মৃতিচারন।
ধন্যবাদ আপনাকে
পানায় ঢেকে যাওয়া পদ্মপুকুরে ঢিল ছুঁড়লে যেমন পানা সরে গিয়ে উঁকি দেয় স্বচ্ছ পানি,
বড়ই স্মৃতিকাতর হলাম হে!
অসাধারণ লাগলো তানুবু(আপত্তি থাকলে ডাকবো না
)। এরকম পোষ্ট আরো লেখুন, বিনীত অনুরোধ থাকলো। আর একজন শিল্পীর নামটা কী দেখবেন একটু? তাঁর নাম খুব সম্ভবতঃ 'বশীর আহমেদ-হোসেন নয়' ভুলও হতে পারে। তবে এই কিছুদিন আগে এই নামের এক শিল্পীর গান দেখেছি ওঁর দুই ছেলে-মেয়েসহ। কেন জানি মনে হচ্ছে নামটা আহমেদই দেখেছি। ভুল বলে থাকলে ক্ষমা চেয়ে রাখলাম তানুবু। ভালো থাকা হোক নিরন্তর।
সেভাবে পোষ্টের ঢিলে উঁকি দিয়ে গেলো আমার শৈশব
ব্লগের সবাই দেখি কঁচিকাঁচার দল। আমিই কেবল সাতবুড়োর এক বুড়ো
আপত্তি নেই, যা ইচ্ছে ডাকেন। আর আমার ধারনা আপনিই ঠিক বলছেন, আফটার অল আপনি বাতিঘর। আমি ঠিক করে দিলাম।
আজ এ পর্যন্ত এইটাই আমার সবচে' বড় অর্জন রে তানুবু!!! কৃতজ্ঞ থাকলাম।

ভালো থাকা হোক।
কিছু লেখা পড়লে মনে হয় এই লেখাটা আমার লেখার কথা ছিল। এইটা সেরকম একটা লেখা। বরাবর নস্টালজিক করার জন্য......এক ক্ষেত ধন্যাপাতা
কতযে কটকটি কহুঁঝছি বড় হওনের পর--
অনেক পরে দোকানে একটু হাইফাই কটকটি পাওয়া যাইতো, এখনো মনে হয় পাওয়া যায় কিছু মিষ্টির দোকানে।
কিন্তু দাঁতে আঁঠা লাইগা থাকা কটকটি কি আর আছে? আফসুস
বিক্রমপুরে এবার পাপড়ি খেয়েছি কাগজে মোড়া প্যাকেটে। আসলে রাস্তার কটকটির স্বাদ এতো সফিস্টেকেটেড জিনিসে পাওয়া যায় না
আমার জন্মের আগের দশক ।
এইখানে তো দেখি সব নানা-নানী লেভেলের লুকজনে ভরা ... আমার মত কচিকাচারা তাহলে কোথায় যাবে !

নাতি আবার কোথায় যাবে, আসোগো নাতি কুলে আসো
মন্তব্য করুন