ইউজার লগইন

মান সম্পন্ন শিক্ষা- ৩

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরীর সুবাদে গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এর মানের দিক দিয়ে এই সকল বিশ্ববিদ্যালয় কে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ই ধরা হয় না। এর বেশ কিছু কারন আছে।যেমন – ১। প্রতিষ্ঠানের স্থাপন (দেখার মতো কোন স্থাপনা নেই), ২। শিক্ষার মান, ৩। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (টাকা দিয়ে সনদ বেচা হয়), ৪। ল্যব নেই, ক্লাশ রুম নেই, মাঠ নেই।

এর অনেক কিছু ই সত্য আবার অনেক কিছু নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। প্রথমে ই জানা দরকার, কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর বিশাল বিশাল দালান আর অনেক খোলা মাঠ মান সম্পন্ন শিক্ষার মূল শর্ত নয়। এটা ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবার জন্য ও খুব দরকারি কিছু না। বোস্টন বা ম্যচাচুটেস এর দিকে তাকালে কেউ এই কথা বলতে পারবে না। ছোট একটা শহরে কত গুলো সনাম ধন্য বিশ্ববিদ্যালয় আছে তা গুনলে কেউ ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মেন কথা মুখে আনবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি হলে ই খারাপ হয় না। এবার আসি শিক্ষকবিষয়ে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ান তার অধিকাংশ ই আমাদের দেশের বড় বড় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাশ করে বাইরে থেকে ডিগ্রি নিয়ে আসা শিক্ষক। শিক্ষকএর মান খারাপ তাও বলা যাবে না। তবু আমাদের শিক্ষার মান খারাপ বলা হয় কেন?

কিছু প্রতিষ্ঠান শুধু ই ব্যবসা করে বা ব্যবসা ই মূল উদ্দ্যেশ্য তা সত্য, তাই বলে সব প্রতিষ্ঠানে এক ই তকমা লাগানো যায় না। ভাল সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই ল্যাব আছে, যদিও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব এর মতো এত ইকুপমেন্ট নাই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকার থেকে যে প্রিমান অনুদান পায়, তা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পায় না। প্রতিষ্ঠানের লাভের টাকায় ই সব করতে হয়। আমার প্রতিষ্ঠানে অনেক ভাল ল্যাব ফ্যাসিলিটিস না থাকলে ও প্রয়োজনীয় ল্যাব আছে। ফুল্টাইম শিক্ষক আছেন, শিক্ষক এভালুয়েশন হয় প্রতি সেমেস্টার এ। শিক্ষকরা সবাই ছাত্রদের সাহায্য করার জন্য বসে ই থাকেন। তাও আমাদের অধিকাংশ ছাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। কেন? কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান অনেকটাই নির্ভর করে ঐ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র রা ভবিস্যতে (পাশ করার পর) কি করছে। সেই দিক থেকে ও আমার পিছিয়ে। এই পিছিয়ে থাকা কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, ভাল বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে আমরা যাদের চিনি তারা আমাদের দেশের “TOP 3%” ছাত্রদের ই তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেন। তাদের ছেলে মেয়েদের ভাল করার পিছনে যতটা না শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান, তার চেয়ে বেশি তার প্রাথমিক শিক্ষা (স্কুল, কলেজ) র অবদান। তারা এমনিতেই ভাল করবে। তারা স্বাভাবিক পড়াশুনা করলে ই ভাল করবে। তারা দেশের সেরা ছাত্র। তারা আমাদের দেশের স্কুল, কলেজের শিক্ষার মান এর প্রতিফলন না। আমাদের দেশের স্কুল কলেজের শিক্ষার মানের প্রতিফলন হল সেই সব ছাত্র রা, যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ভাল ছাত্র পাই, তারা কোন সমস্যায় ভাল/সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেনি, অথবা তারা নিজেদের পছন্দ মাফিক কোন বিষয় পায়নি। তাদের প্রাথমিক শিক্ষার মান ভাল কিন্তু তারা মান সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়ছে না। তাদের কে পেয়ে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। তাদেরকে পড়ানোর মজা ই আলাদা। কিন্তু আমরা যাদের পড়াই (অধিকাংশ) তারা হচ্ছে আমাদের দেশের প্রকৃত শিক্ষার প্রতিফলন।

এই প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিতদের পিছনের সনদ অধিকাংশ সময় ই (SSC HSC) “A”, “A+”. সর্বনিন্ম “B+”. ওদের কে পড়াতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মাথার চুল ছিড়তে মন চায়। উচ্চতর বর্ষের কথা না বলে প্রথম বর্ষের কথা যদি বলি, তা হল বলতে হয়, প্রথম বর্ষে তারা ইন্টারমিডিয়েট লেভেল এর টপিক ই পড়ে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি, তাই আমরা এই বিষয় গুলোর বিভিন্ন দিক আরেকটু গভীরে গিয়ে পড়াতে চাই। আর এই পড়াতে গিয়ে ই যত সমস্যার সৃষ্টি। প্রাথমিক সমস্যা গুলোর মধ্যে আছে-
১। তারা পড়তে ই জানে না- কিভাবে বই পড়তে হয় তা তারা জানে না। তারা জানে না, পড়া মানে গড় গড় করে পড়ে যাওয়া না। পড়ার সাথে সাথে যে চিন্তা করতে হয়, কি বলেছে এই কালো অক্ষর গুলো তা তারা জানে না। শুধু জানে না না, জানার তাদের আগ্রহ ও নাই।
২। তারা প্রশ্ন করতে জানে না- যেহেতু তারা পড়তে ই জানে না, বুঝে পড়া কি জিনিস জানে না, তাই তারা কোন বিষয় না বুঝলে ও তারা কোন প্রশ্ন করতে পারে না। তারা যে বুঝে না তাও তারা বুঝে না।
৩। তারা লিখতে জানে না- বাংলা বা ইংরেজিতে নিজস্ব শব্দ ব্যবহার করে সঠিক দুই লাইন বাক্য লিখতে পারে না।
৪। একটা বিষয়ের সাথে আরেক বিষয়ের সংযোগ করতে পারে না- একই বিষয় যা সে আগে পড়ে আসছে, সেই বিষয়টা এখন কোথাও ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়।
৬। মানসিক ভাবে দুর্বল- নিজের চিন্তার প্রকাশে ব্যর্থ, নিজের জানার উপর ভরসা করতে পারে না। হুবুহু লিখতে না পারলে নিজে চিন্তা করে কিছু একটা বের করল, কিন্তু তারা সর্বদা ভয়ে থাকে যে এটা সঠিক না।
৭। গণিত মনস্ক না- এমন কি বিজ্ঞান এর ছাত্র ও গণিত মনস্ক না। কোন যইক্তিক চিন্তা ভাবনা নাই। এটা করতে ও ভয় পায়।
৮। নতুন মানে ই ভয়
৯। পরিশ্রমি নয়

পোস্টটি ১৫ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

আরাফাত শান্ত's picture


আমিও প্রাইভেট থেকে পড়া, মিলে গেছে:)

প্রভাষক's picture


মূলত: মানসিকতাতেই এরা পিছিয়ে থাকে...

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.