কিস্তিমাতের ককটেল কিস্তি কিংবা হুবহু কপি ব্যাং ব্যাং!
আজ সারাদিন বসে বসে বই পড়ছিলাম। বই তেমন কিছু না বদরুদ্দীন ওমরের প্রবন্ধ সংকলন আর একটা ইংরেজি ম্যাগাজিন, যেখানে ইন্ডিয়ান অচেনা সব গল্পকারদের ইংরেজি ভাষায় লিখিত গল্প। কাভার নাই। তাই নাম জানি না। সম্ভবত নীলক্ষেতের কোনো পুরানো ম্যাগাজিনের দোকান থেকে কিনেছিলাম। আমার ইংরেজী সাহিত্য পড়তে মোটেও ভালো লাগে না। ভালো লাগে শুধু এই উপমহাদেশের কারো ইংরেজীতে লেখা ভালো উপন্যাস পড়তে। ইংরেজী বই পড়লেই মনে হয় টেক্সট বুক পড়ছি । অচেনা শব্দ পেন্সিল দিয়ে দাগাচ্ছি, তারপর কম্পিঊটারে বসে তা নিয়ে সার্চ দিচ্ছি। এমবিএ এডমিশন টেষ্টের সময় অনেক নতুন শব্দ শিখেছিলাম, তাই ভরসা। নয়তো টিভিতে সিরিয়ালে সব জায়গাতেই সহজ ইংরেজী, যখনই বই পড়তে যাই তখনই দেখি মাথা ব্যাথা করা সব শব্দ আর আজব সেন্টেন্স প্যাটার্ন। এত কষ্ট করে বই পড়াও খুব কষ্টের। দিগন্ত দুটো ইবুক দিয়েছিল, লিওনার্ড কোহেনের আত্মজীবিনী মুলক। তাঁর গান কিংবা তাঁর জীবন নিয়ে। তা শেষ করতে আমার দেড় মাস লাগলো। আমিও তাই টেনিদার মতোই ভাব নিতে নিতে বলি, 'জানা সত্তেও মাতৃভাষা ছাড়া তোদের মত আমার আর কোনো ভাষা মুখে রোচে না রে প্যালা'।
এসব কেন লিখছি? শিরোনাম দিয়েছি অন্য। যাই হোক মেইন পয়েন্টে আসি। পয়েন্ট হলো, 'কিস্তিমাত' সিনেমা। মাস খানেক আগে ঝকঝকে ট্রেইলার দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম রাষ্ট্রীয় বা দেশীয় সিনেমার স্পন্সর করার জন্য সিনেমাটা দেখবো। জামালপুরে আসে নাই সিনেমা। জামালপুরে চলে শুধু শাকিব খান। 'সেরা নায়ক' কিংবা 'হিটম্যান'। এই বছর বিশেক আগে জামালপুরের বেশির ভাগ মানুষ কিছু হলেই সিনেমা দেখতে যেত তাও আবার ফ্যামিলি নিয়ে। এখন শুধুমাত্র সিনেমা দেখার যাদের সুতীব্র নেশা তারাই যায়। আর টিকে আছে শুধু শহরের হল গুলোই। তবে জামালপুরে নাটক আর যাত্রার খুব প্রসার। বিশেষ করে নানু বাড়ীর অঞ্চলে একেবারে তৃনমূল থেকেই এই জিনিসে চর্চা হয়। নিজেদের অভিনয় মোবাইলে রেকর্ড করে রাখে। নিজেরাই দেখে মন ভালো রাখে। সে রাখুক, কিস্তিমাতের বাজেট উইকিপিডিয়ায় লেখা ২ কোটি। ইউটিউবে ভিডিও দেখলাম, বলাকাতে ব্যাপক মানুষ সিনেমাটা দেখছে। আরেফীন শুভ আগামী দিনের কিং হবে তা নিয়ে অনেকে আশাবাদী। আমি আর পুলক সন্ধ্যা বেলার আড্ডা মাটি করে চলে গেলাম শ্যামলী সিনেপ্লেক্সে। সাথে শান্ত ভাই আসছে অফিস থেকে। গিয়ে দেখি শো শুরু হতে আরো মেলা সময় বাকী। বের হয়ে মুড়ি খেলাম বানানো, দেখি ব্যাপক ভীড়। কেন? কারন গ্লাভস পড়ে মুড়ি বানায়, এই ব্রান্ডিংয়ে মানুষ খুব খুশি। আমরা আর কি, পুলকের মুখে শ্যামলী আগে কেমন ছিল তাঁর শৈশবে কৈশোরে তাঁর গল্প জুড়ে দিল। মানুষ নিজের বাল্যজীবনের বালখিল্য গল্প করতে খুব মজা পায়। আমি ওতো মজা পাই না, যা পাই তা নিজের গল্প এই ব্লগে লিখতেই। যা হোক ঢূকলাম হলে। দেড়শো টাকার টিকেটেই কাটা। কারন আড়াইশো দিয়ে কেটে জলিলকে হজম করে আমাদের ভালো শিক্ষা হইছে। শ্যামলীর তাপানুকুল যন্ত্র খুব ভালো কাজ করে। আপনাকে শীত লাগিয়ে দিতে বাধ্য। তবে সাউন্ড কানে লাগে খুব। এইটা ওদের সমস্যা নাকি আমার সমস্যা জানা নাই!
কিস্তিমাত সিনেমাটা হলো নানান ট্রাডিশনাল বাংলা হিন্দি সিনেমার একটা ককটেইল। সেই পুরানো চর্বিত চর্বণ গল্প। বাপের খুনী মিশা, আরেফীন শুভ পুলিশ, প্রতিশোধ, ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাই বোন, আই ক্যান্ডি নায়িকা, নায়িকার ভুড়ি দেখানো শাড়ী, হিন্দি শব্দ সুরে আইটেম গান। সেই একই জিনিস বারবার ফিরিয়ে আনা। পরিচালক টিভিতে বললো একদম নতুন গল্প, নতুন ভাবে আনা। এইসব শব্দ বাদ দিয়ে পরিচালকদের বলা উচিত অন্যকিছু। ফাইটিং বেশি ভালো করতে গিয়ে স্লো মোশন ইফেক্টেই বেশি জোর দেয়া হলো। সব মিলিয়ে সিনেমাটাকে ভালো বলা যাবে না, আবার খারাপও বলা যাবে না। সানি দেওলের সিনেমা দেখে আপনি যেমন বোধ করেন সেরকমই কিছু একটা। আরেফীন শুভ আর মিশা সওদাগর বাদে কারো অভিনয়ই যুইসই না, এমনকি এফডিসি মানেরও না। যাই হোক তাও সিনেমাটা ভালো গ্রাফিক্স ও ঝকঝকে ছবির জন্যই হয়তো সবার প্রশংসা পাবে। তবে আমার দুঃখ লাগে ১৬ কোটি মানুষের দেশে সামান্য এন্টারটেইনমেন্ট মুভি বানাতে পারে না কেউ । তাই আমি বলি এইসব মাদ্রাজ মুম্বাই থেকে না মেরে ডাইরেক্ট হলিউড থেকেই মারাই ভালো।
প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি রুপি আয় করা ঋত্বিক ও ক্যাটরিনার 'ব্যাং ব্যাং' এর কথাই ধরেন। ফক্স স্টারের ফ্রাঞ্চাইজ মুভি। ডায়লগ থেকে শুরু করে কাহিনী সব ডে এন্ড নাইটের হুবহু কপি। তাও সিনেমা লোকজন দেখছে সমানে। জামালপুরে এফিসিয়েন্ট ক্যাবল ব্যাবসায়ীদের জন্য আমি ভিডিও চ্যানেলেই এই ছবি দুবার দেখছি। ব্যাপক একশন,ধমাকাধার নাচ গানের সিনেমা। যদিও টমক্রুজ অনেক বড় স্টার, কিন্তু সে ঋত্বিকের মতো নাচতে পারবে না এম ন ঢ্যাং ঢ্যাং করে। বাজেট ডে এন্ড নাইটের দশ ভাগের এক ভাগ। তাও দেখে মনে হবে না খামতি আছে কোনো। একদম খাসা পাবলিক এন্টারটেইনমেন্ট মুভি। লোকজন দেখছেও সমানে। আমার কথা হলো এখানেই, মাসালা মুভি বানাতে নকল করবো একদম আসলটার মতই বা তার কাছাকাছি যতটুকু সাধ্যি। খামাখা ককটেল বানাবো কেন? অবশ্য ঠিকই আছে কাশেম আলী হাওলাদারদের মতো লোকেরা আর কত ভালো গল্প বানাবে। এদের মাথার ভেতরেই তো সেই এক ফর্মেট। সুখের সংসার- গ্যাংস্টারের আগমন- সেই ভিলেনকে ধরিয়ে দিতে বাপের অহেতুক কোরবানী- ভাই বোন আলাদা হওয়া- লাস্যময়ী নায়িকার সাথে নাচ গান- ভাইবোন ফ্যামিলী রিইউনিয়ন- ভিলেনের আবার ক্ষতি- চ্রম প্রতিশোধ। এর বাইরে আমরা সিনেমা দেখতে চাই, শুধু ঝকঝকে ট্রেইলার আর থাই-মালয়তে শুটিং মানেই সিনেমার উন্নতি না!
অনেকদিন পর তোমার লেখা পড়লাম।
ধন্যবাদ ভাই।
এই দুঃখ আমারো। এই দুঃখে সিনেমা দেখার আগ্রহই হয় না
তোমার ধৈর্য্য আছে।
অল্প অল্প প্রেমের গল্প দেখছ?
না আপু দেখাই হলো না, শ্যামলীতে যেদিন গেলাম তাঁর আগের দিনই এই সিনেমা নামিয়ে ফেলছে আর যমুনা ব্লকব্লাষ্টার কিংবা স্টারে গিয়ে আমার সিনেমা দেখা হয় না!
কেন যেন বাংলা সিনেমাতে রুচি দেখানোর মত অভিরুচি এখনো হল না
কি আর করা যাবে বলেন~!
আমার মাথায় সিনেমার কত কাহিনী ঘুরেে! মানুষ খালি পাত্তা দিল না!
চিন্তা করো না, আমি সিনেমা বানাবো যখন তোমার গল্প নিয়েই সেকেন্ড সিনেমা হবে! প্রথমটা এখনো ঠিক করি নাই!
মন্দ লাগার চাইতে ভালো লাগা নিয়ে লেখা
লেখা বেশি ভালো লাগে।
এই কথাটা ভালো বলছো!
ব্যাং ব্যাং আমার খারাপ লাগে নাই। থিয়েটারে গিয়ে দেখলাম। মারামারির জন্যে ষোল দিয়ে রাখাতে মেয়েকে নিতে পারলাম না যদিও মে্যেকে বাসা্য আমি মাঝে মাঝে এর থেকে বেশি মারি। হায়দার না এনে আনলো ব্যাং ব্যাং ..... আসল চীজ ছাড়িয়া সবাই নকল টানে
ব্যাং ব্যাং
মন্তব্য করুন