সি রামচন্দ্র, রান্নার গ্যাস কিংবা চলমান ডিপ্রেশন!
আজ একটা ব্লগ লেখতে ইচ্ছে করছে খুব। কিছু লেখা আছে ফেসবুকে লিখতে ইচ্ছে করে না, কোনো নিউজ এজেন্সির জন্য তুলে রাখা হয় না, কারো সাথে বলাও হয় না, তা খালি ব্লগেই লিখতে ইচ্ছে করে। ব্লগার ছাড়া আমাদের আর বলার মতো পরিচয় কি? আমার বন্ধু বান্ধব তো সব ব্লগ সূত্রেই। এর বাইরে ছিল যারা তারা কেউ আছে কেউ বা গেছে। আজ সকালে আমার ঘুম ভেঙ্গেছে আজানেরও আগে। ঘুমিয়েছি মাত্র তিন ঘন্টা। উঠেই মনে পড়লো রাসেল ভাইয়ের কথা। লোকটা আর নেই, চাইলেও আর পাওয়া যাবে না। আমরাবন্ধুর কিছু পোষ্ট ছাড়া রাসেল ভাই বিলীন হয়ে গেলেন এই ব্যস্ত শহর থেকে। মন খারাপ নিয়ে রাসেল ভাইয়ের কিছু পোষ্ট পড়লাম। আকাশ ফর্সা হতে হতেই একটা অন্য চিন্তায় চলে গেলাম। এমন যদি হতো আমরা মৃত্যুর পরেও খালি ব্লগ লিখতে পারবো কেমন হতো। বেঁচে থাকতে কত কথা বলা হয় না। ইগো, রাগ, ঘৃণা কিংবা ভুল ধারনায় কত কিছু নিয়ে আমাদের অব্যক্ত থেকে যায় সেই কথা গুলো শোনা যেত।
অনুরাগ বসুর 'লুডু' সিনেমার পর থেকে কাভি গরম কাভি নরম গানটা খুব ভাইরাল। সবাই ভীষণ খুশি এই গান শুনে। লোকজনকে বোঝানো যায় না এইসব গান সিনেমা আমার অনেক আগেই দেখা বা শোনা। ভাইরাল হবার পরে এদের মনে পড়ে, আহা কি ভালো গান। সেদিন আমার এক পুরাতন বন্ধু জানতে চাইলো, মীনা কুমারী নিয়ে আমার লেখা পড়েছিল, লেখাটা কই? অনেক ব্রেইন স্ট্রমিং করে খুঁজে পাওয়া গেল, লিখেছিলাম মীনা কুমারীর পাকিজা ছবি করার গল্প। তখন মনে হলো অনেক লেখাই বৃথা যায় না। সেই ছবির সূত্র ধরেই বলি, সেই গানের মিউজিক ডিরেক্টর কালজয়ী সি রামচন্দ্রর গল্প। অসাধারণ এক মিউজিক ডিরেক্টর। সবাই আর ডি বর্মণ কিংবা ও পি নাইয়ারের ভূমিকা ভারতের সিনেমার গানে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে। কিন্তু আরও কত ভালো ডিরেক্টর ছিল তাদের কথা মনেই রাখা হয় না। যেমন ধরেন নওশাদ কিংবা এই সি রামচন্দ্র। সি রামচন্দ্রের কথাই ধরি। মহারাষ্ট্রের এই যুবক সিনেমা লাইনে এসেছিলেন অভিনয় করবেন বলে। করেছিলেনও, অভিনয়ে সফল হননি। গান শিখতেন ওস্তাদের কাছে, সেটাই কাজে লেগে যায়। এই যে বলিউডের গানের ওয়েস্টার্ন প্রভাব, ব্যাঞ্জো, সেক্সোফোন, গিটার, ডাবল বেইজ এসবে প্রথম দিকে এনেই সফল হয়েছিলেন উনি। তখন তো এসব বাজানোর লোক পাওয়া যেত না। গোয়ানিজ কিছু লোক ছিল যারা হোটেলে বাজাতো, তারাই ভরসা। ধরেন 'সেহনাই' ছবির গান আনা মেরি জান সানডে কি সানডে। এই গানটা সে আমলে এত জনপ্রিয় হয়েছিল, তখন ৪৭ সালে ভারতের জাতীয় সংগীত কি হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছিলো। এক পত্রিকা মজা করে লিখেছিল, সবচাইতে এখন জনপ্রিয় গানতো আনা মেরি জান সানডে কি সানডে, তাকেই জাতীয় সংগীত করা হোক। অসাধারণ সব গান তার সুর করা, শোলা যো বাড়কে, গোরে গোরে ও বাগি ছোড়ে, আপলাম চাপলাম, মেরে পিয়া গায়ে রেঙ্গুন, কিতনা হাসিন হ্যায় মাসুম, আশা, কত গান উনার করা। লতা মুঙ্গেশকার তখন তরুণী, বিবাহিত জেনেও প্রেমে পড়েছিলেন উনার। পরে অবশ্য শোনা যায় প্রতিশোধও নিয়েছিলেন। সি রামচন্দ্রের সুর করা গান কিংবা ডুয়েটে সাথে গাইতেন না। সি রামচন্দ্রেরও ক্যারিয়ার বেশি বড় হয় নি। এত সফলতার পরেও তিনি কাজ পেতেন না। সম্ভবত ১৯৭১ সালের পরে আর সিনেমার গানে কাজ করেন নি। মজা করে বলেছেন, এখনকার সিনেমার লোকদের সাথে আমার আলাপ জমে না। যেখানে আলাপ জমে না সেখানে আর কাজ হয় না। তো সি রামচন্দ্রের বিবিসিতে ভালো একটা ইন্টারভিউ আছে। যে বিবিসির সাংবাদিক প্রশ্ন করেছেন কি দারুণ উপস্থাপনা। এরকম অকপট খুব কম লোকই আছে। তিনি হাসতে হাসতে বলছেন, অনুপ্রেরণা কেন শুধু নারীরাই দিবে, কোনো বাচ্চার মিস্টি মুখ দেখলেও আমার মাথায় গানের সুর আসে। সি রামচন্দ্রের প্রিয় রাগ ভাগেশ্বরী। তার প্রচুর গান দেখবেন এই রাগ। আমি সি রামচন্দ্র নিয়ে এত কিছু জেনেছি অনেকদিন আগেই স্রেফ রামচন্দ্র নামটার জন্য। তারপরে গানে গানে ভালোবাসা। আমি যেখানে থাকি তার আদি নাম ছিল রামচন্দ্রপুর মৌজা। দেশভাগের পর বিহার থেকে আসা মুহাজিরদের থাকতে গিয়ে নাম হয়, মোহাম্মদপুর। রামচন্দ্রপুর খালের পাশে বসে যখন সি রামচন্দ্রের সুর করা ইতালিয়ান একটা গান থেকে অনুপ্রাণিত আজা রে শুনি, সুচিত্রা সেনের মুখটা যখন দেখি তখন মনে হয় এসবের জন্যই বেঁচে থাকা।
আমিনবাজারের এক লাইনের লিকেজে রাজধানীর কিছু অংশে গ্যাসের সংকট। এই উসিলায় মধ্যবিত্তের হাইপার এক্টিভিটি দেখে অবাক হলাম। আমি নাস্তা সকালে বাইরে করি। দেখি হোটেল ব্যাপক ভীড়। খালি পার্সেল আর পার্সেল। খেলামই না। আমি কত বেলা না খেয়ে থাকি। আর লোকজন এক বেলা না খেয়ে থাকলেই হাইপার হয়ে যায়। খবর পেলাম জেনেভা ক্যাম্পের বিরিয়ানী দোকান গুলোতে মারামারি হইছে, খাবারের দাম বেড়ে গেছে, চায়ের দোকানেরও রুটি কলা নাকি সব শেষ। যেন জীবনে আর গ্যাস আসবে না, চুলা জ্বলবে না। যখন যেটা কম, আমরা সেটা পেতেই মরিয়া। কেন ফার্মের মুরগী খেতে হবে, যখন মুরগীর দাম স্মরণকালে সবচাইতে বেশি। কিন্তু মুরগি গিলতে হবে। এই শহরে এমন একটা নরক, যেখানে ওভারপ্রাইসড রেস্টুরেন্টে পয়সা খরচ করে আমরা ভান করি চিল করতেছি খুব। বাসায় দুই তিন পদের তরকারী আর ডালে আমাদের পোষায় না, এক রাক্ষুসে খিদে সবার।
বইমেলায় তেমন যাইনি। একদিন গিয়েছিলাম। এই ব্লগে বইমেলা নিয়ে আমার কত লেখা, কত স্মৃতি। মেলা থাকলে আর মেলায় গেলে লিখতে পারি, লেখাই তো হয় না। আর সারা বছর ব্যাপী চলে আমার ডিপ্রেশনের মেলা। মন ভালোই থাকে না। কবে যে মন ভালো হবে। কিছুই ভালো লাগে না। বারেক বন্ধ দু মাস ধরে এটা একটা কারন। সবাই বলে এই কারনেই আমার মেজাজ খারাপ। কিন্তু এটা সামান্য কারন। বের হওয়া যাচ্ছে না এই লুপ থেকে। লকডাউনে যখন বাড়ীতে ছিলাম তখন আরো বেশি হতাশায় ছিলাম। ভালো মন্দ খাওন, বাবা মায়ের অপথ্য স্নেহ কিছুই মন ভালো করতে পারে না। আমার এক বন্ধু বলে, জন্ম থেকেই শান্ত ভাইয়ের মন খারাপ। এখন আমার সেটাই মনে হয়। যাবজ্জীবন এটাই বহন করে যেতে হবে!
মন্তব্য করুন