লীনা আপুর বার্থডেতে!
লীনা আপুকে নিয়ে লিখতে আমার সব সময় ভালো লাগে। জানি এখন তিনি এসব পড়ার মুডে নাই। তাও আমার তো লেখাই কাজ। লীনা আপুকে নিয়ে না লিখলে ১৪ ই ডিসেম্বরটা মনে হয় ব্যর্থ গেল।
আমার সাথে লীনাপুর দেখা নাই মেলাদিন। শেষ যেদিন দেখা হয়েছিল তখন তানবীরা আপু ছিল। খুবই মজার এক সন্ধ্যা কেটেছিল আমাদের। আপু আর আমি হোটেল জিন্জিরায় গিয়েছিলাম রিকশায়। আপুর বাইরের খাবারের বিষয় আসয়ই ভালো লাগে না। তবুও আমাদের পাল্লায় পড়ে খেলো। খুব আনন্দ করেছিলাম আমরা। সেদিন চারটা বইও এনেছিলাম। তাও পড়া শেষ। দেয়া হয়নি। বই গুলো এখনও টেবিলে, আবু সয়ীদ আইয়ুব, অমিয়ভূষণ মজুমদার এসব আর কি। কবে যে দেখা হবে আবার কে জানে? আবার কিছু নতুন বই আনা যাবে।
লীনা আপু এমনিতেই খুব একটা জন্মদিন পালন করেন না। এবার তো আরো নয়। গত মাসে দুলাভাইয়ের আকষ্মিক মৃত্যু আমাকে ধপ করে উপর থেকে ফেলে দেয়। আমি তখন বাসে বাসায় ফিরছি। এমন সময় জেবীন আপু জানালো নিউজটা। আমি একদমই বিশ্বাস করতে পারিনি৷ হাত কাঁপতে কাঁপতে টেক্সট করলাম শরীফ ভাইকে। কনফার্ম করলো উনি। আমার ভীড় বাসে দমবন্ধ হয়ে আসছিল। চোখ দিয়ে টপটপ করে পড়ছিল পানি। পাশে থাকা লোক জিজ্ঞেস করলো ভাই আর ইউ ওকে? তখন জানালাম একটা মৃত্যু সংবাদ পেলাম তো তাই। এরকম হয়েছিল মামার মৃত্যুর পরেও। বাসে বসে ছিলাম, খবর পেয়ে জামালপুর যাচ্ছি আর্জেন্ট। ঠিকই চলছিল সব, বাস যখন গাজীপুরে তখন কই থেকে সন্ধ্যায় হাউমাউ করে কান্না পেল। আমার পাশে এক ভদ্রলোক ছিল তিনি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। আমাকে বললেন ময়মনসিংহ নেমে যেতে তাহলে জলদি যেতে পারবো। আমি ময়মনসিং নেমে উদভ্রান্তের মত সিএনজি খুজছিলাম। সিএনজিতে আবার পাঁচজন না হলে ছাড়ে না। শেষে আরেকটা বাসে জামালপুর যাই। আমারও লীনাপুর খবরটা পেয়ে সেরকম মনে হচ্ছিলো। আমি জানাজায় যাইনি কারন কাওলার বাসা থেকে সেটা অনেক দূরে। আর জীবিত অবস্থায় দেখা হলো না এই অবেলায় গিয়ে কি করবো। একটা সপ্তাহ আমার খুবই মন খারাপ গেছে। কিছুই ভালো লাগছিল না।
লীনাপুর সাথে কথা হয় না অনেকদিন। মাঝেমধ্যে টেক্সট পাঠাই। আল্লাহ উনাকে এই বিশাল শোক কাটিয়ে উঠার তৌফিক দান করুক। আপুর কথা আমার মনে পড়েই। উৎপল কুমার বসুর গদ্য পড়ছিলাম তখন মনে পড়লো আমাকে বসু চিনিয়েছেন তিনি। আরও কত লেখককে চিনেছি তার মাধ্যমে। কমলকুমার মজুমদার থেকে হোমেন বরগোহাঞি সহ কত লেখক। কত রকমের বই যে পড়লাম আপুর থেকে। তিনি যে বই পড়ে ভালো পেয়েছেন সেটার কথাই বলেন। অযথা পাঠ করে সময় নষ্ট করার মানে পান না তিনি।
আপুকে নিয়ে আগেও অনেক পোস্ট লিখেছি। চর্বিত চর্বন হলেও বলতে চাই, আপু একজন দুর্দান্ত পাঠক। এবং খুব ভালো লিখেনও। তাও তিনি লেখার ব্যাপারে উদাসীন। পড়ার ব্যাপারে ওনার মতন সিরিয়াস কাউকে দেখিনি। এরকম ২৪ ঘন্টার পাঠক এই ভূখন্ডেই বিরল। আপুকে মিস করি। তিনি ফেসবুকে নাই অনেকদিন। ফেসবুকে থাকলে উনার নিত্য নতুন লেখায় মুগ্ধ হতাম। কি বই পড়ছেন তা নিয়ে উৎসুক হতাম। আপুর সাথে কথা হলে একটা জিনিস ফিল করবেন, আপনার অনেক কিছু পড়ার বাকি, পড়তে হবে। এখনও যে আমি বই কিনে ও নানা জায়গা থেকে সংগ্রহ করে পড়াশোনা করি এই সবে লীনাপুর একটা অবদান তো আছেই। এ ছাড়া ব্লগে ফেসবুকে শত শত লেখা ও লিখে চলা এইসব অনুপ্রেরণাও পেয়েছি ওনার থেকে। হয়তো ভালো লিখি না এটা আলাদা ব্যাপার। তবে পেশাগত শোক প্রকাশকারী হিসেবে তো আমার একটা ব্যাপার আছে।
লীনা আপুর জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা। আল্লাহ তাকে এই কঠিন সময়ে ধৈর্য্য রাখার তৌফিক দিক। এ আধার কেটে যাবে অচিরেই। দুলাভাইয়ের জন্য অন্তর থেকে দোয়া করি। আল্লাহ তাকে ভালো রাখুক ও শান্তিতে থাকুক। এত ভালো মানুষ ছিলেন নিশ্চয়ই আল্লাহ বেহেশতে রাখবেন তাকে। শ্রেয়া নামিরের জন্য স্বান্ত্বনা ও ভালোবাসা। মানসিক ভাবে দুর্দান্ত শক্ত মানুষে পরিনত হবে শ্রেয়া এ দোয়া হোক। আর নামির তো ছোট মানুষ আশাকরি সময়ের সাথে সাথে এ শোককে শক্তিতে রূপান্তর করবে। অনেক অনেক শুভকামনা আপু আপনি ও আপনার পরিবারের জন্য। মিস ইউ আপু। একদিন মিলবে অবসর, অনেক আড্ডা হবে। লাভ ইউ আপু!
মন্তব্য করুন