ভাঙাচোরা দিনকাল
১.
হঠাৎ স্মৃতির বিপন্নতায় হয়তো ডুবে যায় কিছুটা সময়। দিঘল কালো চুলের মতো মেঘের ভেতর গুটিয়ে নেই নিজেকে। স্মৃতির চিঠি পাঠ করতে করতে নিজের মধ্যে বসে নীল হই নিজে। ভুলে যাই জীবনের মানে, হারিয়ে ফেলি স্বপ্নের সাকিন। দিকভ্রষ্ট হতে হতে সন্ধ্যা নেমে আসে বুক বরাবর, বিষাদ অন্ধকার শেষে আবারও কারো চোখের কোণে সূর্য ওঠে। চায়ের কাপে কালো পিঁপড়েটাকে ভেবে নেই লাল, তাতে যদি সুখ পাই। তাতে যদি সকালটা শুভ হয়।
ভাঙাচোরা এই দিনকালে, ‘ভাব লাগে না মনে’ ও কিছু কিছু সকাল ভালোবাসাবাসির রং ভিড় করে। ভুলে যাওয়া মুখ, হারিয়ে যাওয়া মুখ, হঠাৎ টুইটার বা স্কাইপে পেয়ে ভাবি, যে দিন যায়, তারে আমি পারি না ধরে রাখতে ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠায়। শুধু মনের ভেতর যে ডায়েরি আছে সেখানে লেখা থাকে, সমস্ত ভুল অথবা ভুল অক্ষরে লেখা নাম বা আমার ডাকনাম।
কিছু কিছু মানুষ আমার এখনও আছে। কয়েকটা দুর্দান্ত বন্ধু আছে আমার, কয়েকটা বন্ধু হারিয়েছে, হারিয়ে যেতে হয় বলে, দুপুর রোদে তাদের সাথে দেখা হয়। তারা গলে যায় অভিমানের ঘামে, আমি তবু তাদের বুকে টেনে নিয়ে বলি, চল্ আরো একবার নিজেদের মতো করে বাঁচি। না! হয় না, নিজেদের মতো করে বাঁচা আর হয়ে ওঠে না। জীবন আমাদের একা আর থাকতে দেয় না। জীবন আমাদের পিছু ছাড়ে না। অথচ এই জীবনটাই একদিন আমাদের একা রেখে কোথায় যেনো চলে যায়। তাই না মানুষ, না জীবন, মৃত্যু ছাড়া আর কাউকেই বিশ্বাস করি না
২.
জীবন থেকে অতীত হয়ে গেছি সেই কবে। পাখির শিসে ধর্ষিত নিঃশ্বাসের বাতাস। কেবল মেঘের জলে ভাসতে দেখেছি একটি পরিচিত যন্ত্রণা। আমি তাকে কখনও বোন বলি; বলি শোনে যাও দিদি আমার, তুমি কী দেখেছো কোথাও সেইসব রঙিন প্রজাপতিদের? যাদের ভীড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলবো ভেবেছি অনেক সময়? কিংবা উড়ে যাবো তাদের সম্প্রদায়ে? দেখেছো কী তুমি? কোনো উত্তর না দিয়ে তুমিও চলে যাও, কোথাও কি কেউ রেখে গেলো কোনো আয়না- সেই খোঁজে!
মানুষ বড় হলে দুঃখ বড় হয়ে যায়! মানুষ মারা গেলে কী দুঃখ মরে যায়? এমন কিছু তোমা হতে জানবো বলে সই, আমি কি জেগে থাকি নি কীর্তন রাতে? রাতের মিহি হাওয়া আর জোনাকির আলোয় ভেসে যায় নি কী আমার স্বপ্নের ঘ্রাণ? তুমি চিনতে পারোনি, পেরেছো কি জানি নি কোনোদিন; যেমন জানা হয়নি ইছামতির জলে না ধলেশ্বরীর জলে ভাসিয়েছ তোমার হাতের মেহেদীর রঙ।
আমি জানি না। জানি না আমি অনেক কিছুই। শুধু বলি, বলে যাই- তুমি আমার সেই গুহাচিত্র, যাকে আমি অনেক আগেই চিনি...
৩.
দ্যাখি পরবাসী মেঘ ভাসছে আকাশে, আমার হারিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো এই মেঘের মধ্যে তবু দ্যাখো আমি হারাইনি, হারিয়ে যাওয়াটাকে জরুরি করে নেইনি, ঠিক তেমনি জীবনটাকেও আমি নাগরিক নিয়মে বাধি নি! ছন্নছাড়া, এলোমেলো ভাবেই জীবন তরী ভাসিয়ে চলছি আর এভাবেই চলছে। আমি সব সময়ই এক রকম, আজো এই পড়ন্ত বেলা আগের মতোই আছি, ভাবছি আগের মতোই, আছি আমি রোদের হয়ে, থাকি আমি বৃষ্টি দিনেও! একলা বিকেল এসে দাঁড়ালে আমার এখনও গলা ছেড়ে গাইতে ইচ্ছে করে ‘তুমি কি এখনও একা বিকেলে আনমনে আমাকে ভাবো? দূরে বহুদূর চলে যে এসেছি, কখনও কি তোমাকে পাবো?” গাওয়ার জন্যেই গাওয়া। পাওয়ার জন্যে চাওয়া নয়। সত্যি! আমি তো এমনই, আগেও বলেছি, বারবার বলে যাবো। আমাকে আমার মতো করে ভাবতে গেলে তোমার রুটিন করা জীবন-যাবন এলোমেলো হয়ে যাবে! তারচে' এই ভালো, দ্যাখো, দেখে দেখে চলে যাও, ছুঁতে এসো না। আমি তো হাওয়ার মিঠাই! মর্ম ছুঁয়ে আছো, এই কি বেশি নয়?
৪.
কি করে যেনো লিখতে হয়। শুরু করতে হয় ঠিক কোথা থেকে। হয়নি শেখা।
কতো কিছু লিখে যেতে চেয়েছি, লিখতে চেয়েছি কতোবার। হয়ে ওঠেনি একবারও।
আর তখনই মনে হয় নিজেকে যে আমি কীভাবে হত্যা করি প্রতিদিন, নষ্ট করি রোজ রাতে,
সেইসব কথাগুলো কেবল জমেই গেলো। লেখা হলো না, হবে না। মুহূর্ত আমার হাত ফসকে বের হয়ে যায় বারবার। এইসকল, এই ব্যর্থতা কাউকে বলাও হলো না। কি করে লিখতে হয়, আমি শিখতে পারি নি, কোন মুখে বলতে হয় সেটাও জানি না। আমি শুধু জানি কোন কারণ ছিলো না, অকারণেই আমি ভাসছি আজ খরস্রোতে, হাঁটছি ধূলোমাখা বিপরীত পথে।
৫.
আমি আর সে মিলে হয়েছি আমরা, গল্পটি পুরাতন।
বর্তমান, ক’দিন হলো আমরা এখন আলাদা থাকি
আগামীতে একসাথে থাকবো বলে! তবে,
আগামীকে কিন্তু আমরা চোখে দেখিনা,
আগামীকে নিয়ে আমরা ক্যাবল স্বপ্ন দেখতে জানি!
সকল স্বপ্ন সত্যি হয়না তাই ঘুমের বড়ি খেয়ে রাত পার করি
কারণ দিন কেটে যায় এমনি তেমনি করে রাতে ভীষণ একলা লাগে!
আহা,
আবারও সেই বিষাদমাখা কথকতা..
বিষাদ জীবনের মানুষ আর কি লিখতে পারে বলেন?
এমন দিন আমার ও যায় । ভাল লিখেছেন ।
অদ্ভুত মন খারাপ করা ভাল লাগা
সুন্দর বলেছেন
কতদিন পর এত সুন্দর লেখা পড়লাম, জানিনা। তুমি বিনে পয়সায় আমাকে তোমার লেখার দাস বানিয়ে ফেললে বন্ধু। তুমি লেখ অনেক অনেক লেখ। তোমার লেখা পড়ে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। আমি কি লিখি। আমার লেখা লেখাই হয় না। ভাল থেকো। ঈদ মোবারক।
'দাস' ? এইটা কি কইলেন। পড়েছেন , মন্তব্য করেছেন, এইটা কি কম রে ভাই।
তুমি অনেক বেশি খারাপ। এত প্রতিভা নিয়ে এত কম কেন লেখ? তাই তোমার সাথে আড়ি।
লজ্জা দিলেন ভাই। আমার লেখা পড়ে আমারই লজ্জা লাগে। আর সময় দেয় না জীবন। কিছু লেখার মতো মানসিক অবস্থাও নাই। তবু যা ছাইপাশ পারি, লিখি।
পাচ নম্বরটা বেশি ভাল
মন্তব্য করুন