“সিফফিনের যুদ্ধ ও আমিনীর হরতাল”
দুটো ঘটনাই অতীতের, একটা সুদূর অতীত আরেকটা নিকট অতীতের। গত দুই দিন ধরেই আমার মন কেবল খচ খচ করছে, তাই খচখচানি থামানোর জন্য লিখতে বসলাম।
১) সিফফিনের যুদ্ধঃ-
সময়ঃ- জুলাই মাস, ৬৫৭ খৃষ্টাব্দ।
স্থানঃ- সিফফিন, ইউফ্রেটিস নদীর তীর, ইরাক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা।
প্রথম পক্ষঃ- হজরত আলী- (ফাতিমার স্বামী ও নবীজির জামাতা, বহুল পরিচিত, তাই অধিক পরিচয়ের দরকার আছে বলে মনে করছিনা)।
দ্বিতীয় পক্ষঃ- হযরত মাবিয়া – (পিতা আবু সুফিয়ান, মাতা- হিন্দা, এই সেই হিন্দা যিনি নবিজীর চাচা আমির হামজার হৃদপিন্ড কাঁচা চিবিয়ে খেয়েছিল। আর আবু সুফিয়ান- যিনি সারা জীবন নবীজির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শেষ বয়সে প্যাদানির ডরে মুসলমান হয়ে পিঠ বাঁচানোর জন্য নিজের মেয়েকে নবীর সাথে বিয়ে দেন। মাবিয়ার আরো একটা বড় পরিচয় আছে, তিনি হলেন বহুল পরিচিত ‘ইয়াযিদ’- মানে এযিদের পিতা)।
যুদ্ধের কারণঃ- মাবিয়া- সিরিয়ার প্রাদেশিক শাসনকর্তা, সমস্ত মুসলিম জাহানের প্রধান হবার মনোকামনা থাকায় মাঝে মধ্যে খলিফা হযরত আলীর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে, এবং পরে হযরত ওসমানের হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে সিরিয়ায় বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলেন। কিন্ত হযরত আলী ওসমানের হত্যাকারীদের বিচার করতে চান নি, কারণ প্রথমতঃ তিনি মাবিয়ার মনের গোপন উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছিলেন। আর দ্বিতীয়তঃ এই বিচার করতে গেলে হজরত আলীর মসনদের অনেক রাঘব বোয়ালেরাই ফেঁসে যাবেন। তাই আলী এই বিচারে তড়িঘড়ি না করে কালবিলম্ব করে সময় কাটাতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু আন্দোলন এতোটাই বেড়ে উঠে যে হজরত আলী সৈন্য পরিচালনা করতে বাধ্য হন।
যুদ্ধঃ- হজরত আলী ৫০ হাজার সৈন্যসহ মাবিয়ার বিরুদ্ধে অগ্রসর হলেন। মাবিয়াও ৬০ হাজার সৈন্য নিয়া আলীর বিরুদ্ধে অগ্রসর হলেন এবং সিফফিন নামক স্থানে অবশেষে যুদ্ধ শুরু হল। সমস্ত দিন যুদ্ধ চলল কিন্তু ফলাফল অমীমাংসিত রয়ে গেল। পরের দিনও একইভাবে যুদ্ধ চলল; তৃতীয় দিনে মারাত্নক সন্মুখ সংঘর্ষে লিপ্ত হল। এইদিন মাবিয়া বিজয় সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়লেন এবং যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করতে উদ্যত হলেন। এমন সময় তার পরামর্শক আমর বিন আ’সের পরামর্শনুযায়ী এক নতুন কৌশল করা হল। মাবিয়া সকল সৈন্যের বর্শাগ্রে কুরান শরীফের পাতা ঝুলাইয়া বলে উঠলেন “ এখানে আল্লার কেতাব; ইহাই আমাদের বিরোধ ফয়সালা করে দিবে”। আমর বিন আ’সের এই কূটকৌশলে কাজ হল। কুরানের অমর্যাদা হবে এই ভয়ে আলীর সৈন্যরা আর যুদ্ধ করতে চাইলনা। হযরত আলী সৈন্যদের অনেক বুঝাতে চাইলেন যে “এটা মাবিয়ার কূটকৌশল, শত্রুদের রাজনৈতিক চাল, তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাও”। কিন্তু সৈন্যরা কিছুতেই আর যুদ্ধ করতে চাইলনা। ফলে মাবিয়া পরাজয়ের হাত থেকে প্রানে বেঁচে গেল এবং আল্লার কুরান মতে ফয়সালা হবে বলে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করে যুদ্ধ শেষ হল।
পাঠক, আপনাদের অনেকেরই হয়ত জানা আছে তারপর কেমন করে মাবিয়ার ‘গুটি’ চালাচালির ফলে হযরত আলীকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছিল, শুধু তাই নয় অবশেষে আলীকে প্রাণও দিতে হয়েছিল। এখানে সব বিস্তারিত লেখা সম্ভব নয় বলে আগ্রহী ভাই-বোনদের “ইসলামের ইতিহাস” থেকে জানার অনুরোধ করছি।
২) আমিনীর হরতালঃ
সময়ঃ- এপ্রিল, ২০১১ খৃষ্টাব্দ।
স্থানঃ- বাংলাদেশের রাজপথ।
প্রথম পক্ষঃ- বাংলাদেশ সরকার ও তার পুলিশ বাহিনী।
দ্বিতীয় পক্ষঃ- আমিনী ও তার জিহাদী বাহিনী ( কোমলমতি / মগজ ধোলাই মাদ্রাসার ছাত্রবৃন্দ ও বাংলাদেশের ধর্মের নামাবলি গায়ে জড়ানো বেহেস্তের অগ্রিম টিকেটপ্রাপ্ত উন্মাদবৃন্দ)।
হরতালের কারণঃ- আমিনীরা বাংলাদেশের শাসনকর্তা হবার মনোবাসনা থাকায় মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে (তবে নিজের জোরে না, “খুটির” জোরে), এবং কিছুদিন আগে “নারী অধিকার মানিনা’ বলে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা ও হরতাল আহবান করে। কিন্ত বাংলাদেশ সরকার কিছুটা হলেও নারীদের সমানাধিকার দিতে চায়, কারণ প্রথমতঃ এটা তাদের কিছুটা ইলেকশন প্রতিশ্রুতি। দ্বিতীয়তঃ এটা করতে পারলে আগামীতে ভোট পাওয়া সহজ হবে, ইত্যাদি।
হরতালঃ- বাংলাদেশ পুলিশ তাদের কামান বন্দুক নিয়া রাজপথে তৈরী। আমিনীরা তাদের বেহেস্তে যাওয়া অগ্রিম টিকেটপ্রাপ্ত লোভী-জেহাদি অনুসারি ও তাদের মগজধোলাইকৃত কোমলমতি মাদ্রাসার ছাত্রবৃন্দদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের তিন পায়া চেয়ারের ভাংগা পা আরো বেশি করে ভাংগার জন্য অগ্রসর হলেন এবং রাজপথ দখল করতে মরিয়া হলেন। এখানে বলে রাখা ভাল- এই জেহাদী দলে আমিনীদের কোন ছেলে-পুলে বা নিকটজনদের দেখা পাবেন না। কারন বেহেস্তে যাওয়ার জন্য তাদের রাজপথে আসতে হয়না। আল্লার সাথে তাদের ডাইরেক্ট কানেকশান। ঘরে বসেই তারা বেহেস্তের টিকেটটিই শুধু যে পায় তা না, সাথে “খুটি” থেকে “কোটি” টাকাও পায় (আল্লাহ পরম করুণাময় ও দয়াবান...)।
সিফফিনের যুদ্ধের সেই “আমর বিন আ’সের” পরামর্শানুযায়ী তারাও পিঠের চামড়া অক্ষত রাখার জন্য হাতে কুরান শরীফ ও গায়ে কাফনের কাপড় পড়েছিল। কি সুন্দর মিল, ধর্মের নামে রাজনৈতিক ফায়দা হাছিল করার এই কলাকৌশল!!! আর আমরা বাংলা দেশের জনগন এই কৌশল হরহামেশাই দেখে আসছি। যে দেশে পান থেকে চুন খসলেই ধর্মের অবমাননা, নবীর অবমাননা বলে জেহাদী মোমিনেরা বাইতুল মোকাররম মসজিদসহ দেশের সব মসজিদ মাদ্রাসা থেকে জঙ্গী মিছিল বের করে একাকার করে দেয়। একটা কার্টুনের জন্য মাসের পর মাস জেল খাটতে হয়, সেই দেশে আগ থেকে ঘোষনা দিয়ে পবিত্র কুরানকে রাজপথে মারদাঙ্গায় জড়িয়ে ধূলায় মিশিয়ে দিল অথচ কুরানের অবমাননা হলো বলে মোমিনদের মনেই হল না। সাবাস মোমিন মোসলেম ভাইয়েরা !! আল্লাহ আপনাদের বেহেস্ত নসীব করুন (আল্লাহ পরম করুণাময় ও দয়াবান...)।
পাঠকবৃন্দ, আমি আর আপনাদের জানা-শুনা কথা বলে বিরক্ত করতে চাইনা। আমি শুধু দেড় হাজার বছরের পুরানো ধান্দাবাজওলাদের সাথে নতুন ধান্দাবাজদের মিলটুকু তুলে ধরলাম। আপনাদের কারো যদি ইচ্ছা হয় তবে তাদের মিল-অমিল গুলি আরো বেশি করে তুলে ধরতে পারেন.........।
যাই, একটু ঘুমিয়ে আসি......, এই ধর্ম ব্যবসায়ী ধান্দাবাজদের কথা ভাবতে ভাবতে আর কুরানের যে অবমাননা করা হলো এটা দেশের মোমিনদের কেনো একবারও মনে হল না- এই কথাটা মনে করে কেমন জানি মাথাটা ঘুরছে।
মঙ্গলবার বিকালে বায়তুল মোকাররমের মার-পিটের মধ্যেই ছিলাম। সেই সময় উত্তেজনাসহকারে কাছ থেকে দেখেছি অনেককিছু। পোস্টটা তাই খুব চমৎকার তো লাগলোই, প্রিয়তেও গেল। দুলাভাইকে ২৯০০ তম পোস্টের শুভেচ্ছা এবং লাল সালাম।
তবে পুলিশ-জনগণ সবাই কিন্তু এই ভণ্ডদের ব্যপারে এবার খুব সজাগ। এমনকি জাতীয় মসজিদকে যে এভাবে রঙিন গরম পানি ছিটিয়ে অপবিত্র করে দেয়া হলো, সেটাকেও কোনো ইস্যূ হিসেবে দাঁড়া করাতে পারলো না ওরা। জামাতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী অবশ্য এটা নিয়ে কথা বলসে। কিন্তু তাতে দেশের মানুষের কিচ্ছু যায় নাই বা আসে নাই। ধর্মের ভেক ধরে এবার কোনো ধান্দাবাজি মানা হবে না।
জামাত শীর্ষ নেতৃত্বের মুক্তির দাবিতে ৯ তারিখ বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে সরকার বেশ হার্ডলাইনে। শিবির সেদিন মিছিল করতে পারে নাই মারের চোটে। আশা করছি, ৯ তারিখে জামাতকেও কোনো বিক্ষোভ করতে দেয়া হবে না। পিটিয়ে ছাতু বানানো হবে। আর নারীনীতি নিয়ে আন্দোলনে আসলে তো পাবলিকই দৌড়ানি দেবে। ডোন্ট ওরি ব্রাদার। জামাত-শিবির-রাজাকারের এইবার আর ক্ষমা নাই।
শুনে খুবই বালো লাগল।

আমিও তো হাসি নাই।
সুজন মালি
আর মহান নবীজিও না করতে পারলেননা, সুযোগ লুফে নিলেন।
অচিন দা তো ভুল জায়গায় হাত দিলেন
.। আমি আরো চিন্তা করতাছিলাম শেষ বয়েসে পিঠ বাচানোর জন্য ইসলাম গ্রহণ করা নিয়া
.. ট্রাই করুম ভাবতাছি
.
দুলাভাই, সালাম দিতে ভুলে গেছি।সালাম। অনেকদিন পর আসলেন, কোক খান।
ওয়ালাইকুম সালাম। তুমি কোক দিতে ছাইলে আর আমি 'না' করি কিভাবে!!!
দাও, গলাটা একটু ভিজিয়ে নেই।
পসন্দ বাটনে টিপি দিলাম।
পোস্টের জন্য থ্যাংকু।
এবারের হরতালে বকধার্মিকগুলারে সাদারণ পাবলিকও পিটাইছে
হায় হায়- একি করেছি! বাড়ি ভর্তি মেহমান এসে বসে আছে আর আমার কিনা কনো খবরি নাই।
মীর ও জয়িতা- ওয়ালাইকুম ছালাম। ভালো থেক।
টুটুল ভাই, তানবীরা, লীনা, বিষাক্ত মানুষ ও হাসান রায়হান সহ সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সবাই বালো থাকুন।
ভাইজান আমারও যে দাওয়াত খাইতে মন চায়
সালাম। একদম সময়মতো পোস্টা দিলেন।
দুলাল ভাই,
অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে শুনে চিন্তামুক্ত হলাম। ঠিক হওয়ার পর একটা পোস্ট দিয়েন। শুভকামনা রইল।
মন্তব্য করুন