ইলমা যেদিন আসলো
২৭ এপ্রিল,২০০৪। ভোর হলো, ফজরের আজান দিচ্ছে। আদ-দ্বীন হাসপাতালের লেবার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। একটা বাচ্চা কাঁদলো। একজন নার্স বের হয়ে এসে কাপড়ে মোড়া একটা ছোট বাচ্চাকে আমার কোলে দিলো। কিছুণ তাকিয়ে রইলাম। আমার চোখ ভরে গেলো। ডাঃ বললো ---- ওকে নিয়ে দোতলায় যান, একটা টিকা দিবে। ঘোরের মধ্যেই যেন গেলাম দোতলায়, আবার নীচে এসে ওকে ওর মার কাছে নিয়ে নিয়ে গেলাম। ওর মা একটু কাছে রেখে আমার কাছে দিয়ে দিলো। ওর মা আর আমি দুই বোন....আমার মামাতো বোন। ২৫ এপ্রিল রাত থেকে এই দুই বোন সারা রাত জেগে ছিলাম এই ছোট্র মেয়েটা আমাদের কাছে আসবে বলে। ২৬ এপ্রিল আমার বোন ভর্তি হলো হাসপাতালে। সারাদিন-সারারাত সে আমার হাত ধরে থাকলো। বেশী কষ্ট হলে হাত দুইটা চেপে ধরে। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি। সকাল হলে হাসপাতালে অনেকেই আসে। সবাই অবাক হয় কেমন করে আমি ওর সাথে সারারাত কাটিয়ে দিলাম! হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলাম.....দুইরাত ঘুমাইনি, বসিনি একটু। তবু না খেয়েই দৌড়ালাম পুচকুর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলে আমার বোন বলে..... ”জ্যোতি, আমি ঘুমাই, তুই ওর কাছে থাক।” সেই থেকে শুরু। ওর নাম রাখা হলো ইলমা। ইলমা আমার কাছে থাকে। আমি ওকে গোছল করাই। ওর মা দাঁড়িয়ে দেখে। তখন আমি অনার্স শেষ করলাম। কিন্তু আমি কোথাও যাই না। আমার জগৎ জুড়ে ইলমা। সে রাতে আমার কাছে ঘুমায়। শুধু মার কাছে গিয়ে সে খায়। রাত জেগে আমি টিভি দেখি, বই পড়ি, গান শুনি। ও আমার বুকের উপড় খাকে। বুকের উপড় ছাড়া ও আর ঘুমাতে পারে না। ইলমা বড় হচ্ছে। সে আমার কাছে থাকতেই পছন্দ করে। ঘুমানোর সময় বুকের উপড় শুয়ে সে জড়িয়ে ধরে রাখে। আমি একটু অস্থির মেয়ে ছিলাম। সে প্রথমেই শিখলো আমার মতো চিৎকার করা। মুগ্ধ হয়ে কথা বলা শুনে। সারাণ আদর করে। আমি বাইরে ঘুরতে গেলে ওকে নিয়ে যাই। ওর জীবনে বাবা-মা কারো তেমন গুরুত্ব নেই। ২০০৫ এর জানুয়ারীতে আমি চাকুরী শুরু করলাম। এক যন্ত্রণা শুরু হলো। ওকে আমি মিস করি, সেও আমাকে মিস করে। সারাদিন ছটফট করে....আমি বাসায় গেলে সে আমর আমাকে ছাড়ে না। দরজা দিয়ে ঢুকতেই কোলে উঠে। আর গলায় ঝুলে থাকে ...আমি আমার কাজ করি। মার্চ মাসে ওর যখন ১১ মাস বয়স তখন আমি চাকুরীর জন্য বাসা ছেড়ে কোয়ার্টরে উঠলাম। শুরু হলো কষ্ট। আমি যে রুমে থাকতাম। সে রুমে সে দৌড়ে যায়... গিয়ে তার মাম্মাকে খুঁজে। ওর দাদী আমাকে ফোন করে বলে যে , ওর বুক ফেটে যায় এটা কেউ সহ্য করতে পারছে না। আমি বলি না যে আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। বুকটা খলি খালি লাগে। প্রায় প্রতিদিন আমি যেতাম...রাতে ফিরে আসতাম কাঁদিয়ে রেখে। ইলমা কথা বলতে শিখলো..... ফোন করলেই বলে ”মাম্মা আসো।” ওকে বলতাম... তুমি আমার কে?বলে ”মেয়ে, জান, কলিজা।” বলেই জড়িয়ে ধরে থাকে। ওর নাকি আমার জন্য বুকের ভিতর কেমন লাগে। সে নাকি আমার মা। ছোট্র মা।।প্রায়ই আমাকে দেখতে ইচ্ছাা করে। আমি না গেলে আমার বাবাকে ফোন করে বলে মাম্মাকে আসতে বলো। আমার ছোট্র্র ইলমার বয়স আজ ৬ বছর হলো। তাকে একটা সুন্দর জামা কিনে দিতে হবে। সে এখন স্কুলে পড়ে। ফোন করলে আমাকে বলে ”’তুমি কেমন আছ? তুমি কি খেয়েছ? তুমি কেন আসনা? তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করে।” ওকে যদি ওর মা বলে কে বেশী সুন্দর? ও বলে মাম্মা। ওর মা হাসে , সবাই হাসে। আহারে আমার জান, সোনা মেয়েটা ! আরো অনেক বড় হোক। আমি বুড়া হলে সে আমাকে খাইয়ে দিবে। কত কি করবে! আমি হাসি। মেয়েটা অনেক বড়ো হোক। আদর ভালোবাসায় থাকুক।
তুমিতো দেখি দয়াবতী একটা বালা মাইয়া...
ইলমার মঙ্গল হোক, তোমারও...
আমি আবার দয়াবতি হলাম কবে?ওর জন্র আমার আদর, মায়া। ওরও আমার জন্য অনেক আদর।
দোয়া করি মেয়েটার জন্য।
আমি আবার দয়াবতি হলাম কবে?ওর জন্র আমার আদর, মায়া। ওরও আমার জন্য অনেক আদর।
দোয়া করি মেয়েটার জন্য।
আদ-দ্বীন হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে আমিও কেদে ছিলাম- আমার ছেলের জন্মের সময়। ২০০২ সালের কথা। আপনার লিখা পড়ে সে কথা আবার মনে পড়ে গেল।
আপনার ছেলে ভালো থাকুকঅআমি জীবনেও ভুলবো না আদ দ্বীন হাসপাতালের এই মায়াভরা স্মৃতি। কেউ ভুলবে না। এখনও সবাই বলে ইলমা আমার মেয়ে।সে নিজেও বলে। সে আমার মা, আমার মেয়ে।
আহা, কি মায়া।
মেয়েটারে মায়া শিখাও, ভালবাসা শিখাও। কিন্তু কেমনে রাত জাগতে হয় এবং না খেয়ে থাকা যায় এইটা শিখাই্ও না।
মাসুম ভাই, মায়া-ভালোবাসা শিখানো যায় না। এটা প্রকুতি থেকে, ঈশ্বরের কাছ থেকে মানুষ পায়।
তবে এই মেয়েটা অনেক বড় হয়েও সলিড খাবার বিশেষ করে ভাত খেতো না। ফেলে দিতো মুখ থেকে। জোড় করেও খাওয়ানো যেতো না। অনেক কষ্ট করে ওকে ভাত খাওয়া শেখানো হইছে। ও ফিডার ভরে ভরে দুধ খেয়ে গাম্বুস হইছিলো। ওর মা আমাকে বলতো...তুই ওর সামনে মজা করে ভাত খাবি...ও খেতে শিখবে। ওর মা আমাকে আর ওকে মেখে খাইয়ে দিতো। ওর মা অবশ্য এখনও আমাকে খাইয়ে দেয়। এটা সে খুব এনজয় করে।
রাব্বি জিদনি ইলমা
আমি জানতাম আগেই যে রায়হান ভাই এমন একটা কথা কইব।
ওর নাম প্রথম ছিলো হৃদিতা। ওর মা এর অফিসের কার ময়ের নাম হৃদিতা তাই নাম বদলানো হলো।
বাহ, তোমাদের মায়া আরো নিবিড় হোক...অনেক মন ভালো করা লেখা.....অনেক শুভকামনা....
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ প্রিয় বিলাই। দোযা করো। ভালো থেকো।
মায়া ....... ভীষণ মায়া
ভীষণ মায়া ভাইয়া।ভীষণ। মেয়েটা এই ছোট্র পুতুল ছিলো। এখন কত বড় হচ্ছে! অবাক লাগে।
সন্তানকে ভালবাসার মত আনন্দ আর কিসে আছে?
একদম খাঁটি কথা।
আমার বড় বোনের মেয়েও আমার ছোট বোনের কাছে বড় হয়েছে, বড় বোন চাকরী করতো , তাই সারাদিন ওর দেখাশুনা সব ছোট বোন করতো এমনকি খাইয়ে দিত, রাতে ঘুমাতো ও ছোট বোনের সাথে।
জিজ্ঞাস করলে বলতো ওর মা ২ টা - মিতা মা (বড় বোন) আর মুনি মা (ছোট বোন)।
ইলমার জন্য অনেক দোয়া রইলো।
হা হা। বাচ্চারা এমনই।সবাই বড় হোক। ভালো থাকুক।
কাহিনী পইড়া তব্ধা গেলাম
রিয়েলি টাচড
আজকে আমার বোনের মেয়ে নওশিনের জন্মদিন!! এটাই ওর প্রথম জন্মদিন..।।। হসপিটালের মুহুর্তগুলোর লেখা পড়ে আপু'র সময়টা মনে পড়ছিলো। আর মায়ার ব্যাপারটাও মিলে যায়, তবে সেটা ভাইয়ের মেয়ে মাহি'র সাথে, আমিও ঘর ছেড়ে বার হতাম না, সারাদিন ওর সাথে থাকবো বলে, সেই বাচ্চা দূরদেশী, এখন কতো দূরে....... বুক ভেঙ্গে যাওয়া কষ্টটা বলে বুঝানো যায় না ...
মজার কথা জানো, তোমার আর বিমা'র জন্মদিনের সাথে আমার একটা ভাইঝি আর একটা ভাতিজা'র টা মিলে যায়... এখন আবার ইলমা ও যোগ হলো!!
নওশীনের জন্য অনেক আদর আর দোয়া।
জানো! আমিও কাজীদের পিচ্চিদের সাথে এমন মিশে যেতাম...কেউ অনেক দূরে। ওদরে মিস করি।মায়া ভরে থাকো। তোমার জন্যও কেউ হয়ত মায়া নিয়ে হাত বাড়াবে। দোয়া করি।
কাজী সাব, তব্দা কেন খাইছেন? জীবন এমনই। মায়া ভরা। বুঝতে হয়ত পারেন না, কেউ মায়অ দিয়ে ঠিক ঘিরে রাখে।এজন্যই জীবন সুন্দর।
হাঃহাঃহাঃ হয়তো!
জীবন সত্যিই সুন্দর আমরাই জটিল করি
সুন্দর
আপনাকে এখানে দেখে ভালো লাগছে ভাইয়া। কিন্তু নতুন পোষ্ট দেন না কেন? সেই কবে সুজাতার কথা লিখলেন!
আমার মেয়ে আর আমার (ছ)ট (ব)নের কথা মনে পড়ল, একই রকম শুধু ওন্য নামে - ধামে
তাতাপু, কেমন আছেন? আপনার নাচ দেখে তো ফিদা হয়ে গেছি। আপনি আসলে নাচ দেখবো।নয়া পুষ্ট দেন।আপনার কুড়মুড়ে পোষ্ট পড়তে মন্চায়।
আমার ভাগ্নীর নামও ইলমা। আড়াই বছর বয়স। মায়া কি মায়া!
আপনার ইলমার জন্য শুভকামনা।
বাহ। আপনার ভাগ্ণীর নামও ইলমা? বাহ বাহ।ইলমার জন্য আদর। আপনার ছোট পরীর জন্য ও।
আমার ভাগ্নীর নাম ও ইলমা!
আদর রইল ।
ভালো থাকুক আমাদের ইলমারা ।
মন ছুঁয়ে গেল
ইলমার জন্য শুভকামনা।
এমন ভয় পাওয়া হাসি কেনো লাগালেন?
আপনাকে ধন্যবাদ মন্ত্যব্যের জন্য।
অনেক পুরানো কথা মনে পরে গেলো।।এক এক করে কাহিনী লিখবো।বড় বোনের ২বাচ্চা, ছোট আপুর ২টা,আমার নিজের টা,শেষে ভাইয়ার টা নিয়া হাজার হাজার ঘটনা,কোনটা রাইখা কোনটা লিখি।।
এক এক করে সব লিখো। পড়ার জন্য গ্যালারীতে বসলাম।
আমি যা লিখতে চাইছিলাম রায়হান ভাই লিখে ফেলছে। তাই ধর্মঘট
ইলমার জন্য শুভেচ্ছা
নজরুল ভাই আমিও কইতে চাইছিলাম।
ইয়ে, ধর্মঘট টা দুই দিন পরে করলে হয় না?
লেখা পড়ে মনটা ভরে গেলো, অদেখা ইলমা আর তার মায়াবতী মাম্মার জন্য ! ভালো থাকুক ইলমা অনেক শুভ কামনা ।
অ:ট: আমি এই ব্লগে নতুন, আমাকে বাদ্য-বাজনা সহকারে স্বাগতম জানানো হউক ( ইমু কই পাই গো জয়িতাদি? )
ধন্যবাদ আপনাকে।
স্বাগতম ।প্রাণ খুলে লিখে যান।কে কোথায় আছ....বাজনা বাজাও। বাতি নিয়া মেসবাহ ভাই এর প্রিয় এক্টা গানের কথা মনে পড়লো।
আপনার পোস্ট পড়ে কতো কতো কচি মুখ মনে পড়ে গেলো। মায়া জিনিষটা বড়ই কঠিন।
কেমন আছেন? অনেকদিন পর দেখলাম আপনাকে।
মায়া !আহারে মায়া!বুক ভারী হয়।
হ
আহারে!
ইল্মার আর তোমার জন্য ভালবাসা ও অনেক শুভকামনা।
অফলাইনে গত রাতে পর্ছিলাম . তখন কিছু কইতারিনাই ,,, এখনো কি কমু বুঝতার্তাছিনা
কেমন আছেন আপু????????/
ভালো আছি। এ বি তে স্বাগতম।মন খুলে লিখেন।
সবাইকে ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
পড়লাম এবং ভালো লাগলো। ইলমার জন্য, আপনার জন্য, দু'জনের জন্যই শুভকামনা।
পড়ার এবং শুভকামনার জন্য ধইন্যা।
আর্দ্র লাগলো
মন্তব্য করুন